নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

সালমান খানের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবি, কী করলাম গেবনে?

১০ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৩:৪৭

এক পার্টিতে এক বন্ধুর ছেলে আরেক বন্ধুর মেয়ের মাঝে কথোপকথন চলছে। ছেলেটা মেয়েটাকে পটানোর চেষ্টা করছে, পাম্প পট্টি দিতে দিতে মাথায় তুলে ফেলছে। ছেলেটা বাংলাদেশ থেকে এসেছে, মেয়ে পটানো তেলবাজি তার কণ্ঠ থেকে উপচে উপচে পড়ছে।
বিদেশী জীবনে অভ্যস্ত মেয়েটা জীবনে এই প্রথম (বয়স কম বলে ধরে নিচ্ছি) বিপরীত লিঙ্গের কারোর কাছ থেকে এমন পাম্প পেয়ে ফুলে ফেঁপে উঠছে। ছেলেটার তকদির খারাপ, সেই টেবিলের উল্টো দিকে আমি আর তারেক বসে ছিলাম। পুরো ঘটনা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষন করলাম। এবং এরপরেই ছেলেটার জীবন যতভাবে দুর্বিষহ করা যায়, সব কিছু আমরা এপ্লাই করলাম।
ধরা যাক ছেলেটার নাম সালমান, মেয়েটার নাম ক্যাটরিনা। ছদ্মনাম ব্যবহার করছি যাতে ছেলে মেয়েদের মা বাবা বুঝতে না পারেন। তাঁরাও আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, এবং তারচেয়ে বড় কথা নিয়মিত পাঠক।
যেহেতু আমাদের বাঙালি কমিউনিটির দাওয়াতে ঘুরায় ফিরায় একই বন্ধুবান্ধবের দেখা হয়, সেহেতু সালমান ক্যাটরিনারও দেখা সাক্ষাৎ নিয়মিত ঘটে।
সালমান বলিউডের নায়ক সেজে প্রতিটা দাওয়াতে এসে উপস্থিত হয়। ইলেকশনের সময় ভোট প্রত্যাশী রাজনীতিবিদদের মতন মুখ থেকে গামলা গামলা মধু ঝরিয়ে মেয়েটির সাথে হৃদয় বিনিময়ের চেষ্টা করে।
আমি আর তারেক সালমানকে সবার সামনেই ডেকে জিজ্ঞেস করি, "কিরে, সালমান? আজকে যে খুব খুশি খুশি মনে হচ্ছে? এমনিতেতো কখনও এইভাবে ক্যালাইতে দেখিনা।"
ক্যাটরিনা কিছু বুঝে হাসে কিনা জানিনা, তবে হাসে।
সালমান এতে লজ্জা পায়, আমাদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে বলে, "ফাজলামি করবা না। একদম ফাজলামি করবা না।"
আমরা তখন বলি, "ওয়াও সালমান! আজকে দেখি সেজেগুজে নায়ক হয়ে এসেছো! বডিস্প্রের গন্ধেতো মাছি এসে কামড় বসাবে। এম্নিতেতো কখনও দেখিনা এতটা সাজতে।"
ছেলে আরও লজ্জা পায়। আমাদের ধাক্কাধাক্কি করে। চুপ করতে বলে। মেয়েটা হিরোর হিরোইজম দেখে আরও হাসে।
এবং তারপরেই দেখি ক্যাটরিনার পিছু পিছু সালমান আলাদা হয়ে যায়। পাম্প পট্টি চালু থাকে।
ক্যাটরিনার কোন কাজ করতে হলে সালমান যে উৎসাহের সাথে করে, সেই কাজ যদি নিজের মায়ের জন্য করতো, আজকে নিশ্চিত বেহেস্তের টিকিট পেয়ে যেত। ধরা যাক, তরকারি খেতে গিয়ে ক্যাটরিনার ঝাল লেগেছে। সালমান রকেটের বেগে ছুটে গিয়ে গ্লাস ভর্তি কোক নিয়ে আসবে। ক্যাটরিনা যদি বলে সে কোক খায় না, সাথে সাথে সালমান উড়ে গিয়ে নিমেষের মধ্যে ফান্টা নিয়ে হাজির। সাথে ডেজার্টের বাটি ভর্তি মিষ্টান্ন।
এই আলগা দরদ দেখে আমাদের বৌরা আমাদের দিকে বাঁকা দৃষ্টিতে তাকায়। ওই দৃষ্টিতে ওদের টক ঝাল মিষ্টিতে আমাদের কেন এমন প্রতিক্রিয়া হয় না এই অভিযোগ নিহিত থাকে।
আমরা অবুঝের ভঙ্গি করি। সালমানের এই আলগা পিরিতি আমাদের সংসারে অশান্তির কারন হয়। খুবই বিরক্ত হই ও মনে মনে মুষলধারে অভিশাপ বর্ষণ করি।
দিন এগিয়ে চলে।
ফেসবুকে সালমান ক্যাটরিনার ছবি আপলোড হতে থাকে নিয়মিত। দুই ছেলে মেয়ের দুই পরিবার লাঞ্চে যায়, ব্রাঞ্চে যায়, সিনেমা দেখতেও যায়। প্রতিটা ছবিতে সালমানকে দেখি ক্যাটরিনার পাশেই বসে আছে। খুশিতে বেচারা মুখে মূলার দোকান সাজিয়ে রাখে।
দুই পরিবারে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে, সাথে সালমানের পাম্পপট্টির পরিমানও বাড়ে। আমরা মজা নেই। এদেশে আমাদের বিনোদনের বড়োই অভাব।
কিছুদিন পরে আবারও এক পার্টিতে সালমান ক্যাটরিনার সাথে দেখা। আমরা অভ্যাসমতন টিটকারি শুরু করতেই সালমান "ম্যায়নে প্যায়ার কিয়ার" রোমান্টিক হিরো থেকে "টাইগার জিন্দা হ্যায়"র পুরো দস্তুর অ্যাকশন হিরো বনে গিয়ে আমাদের উপর ঝাঝিয়ে উঠে বলে, "তোমরা এত স্টুপিডের মতন কথা বলছো কেন? স্টুপিডের মতন হাসছো!"
ক্যাটরিনা অন্য ঘরে খেলছে তখন। সালমান তখন আর আগের মতন দৌড়ে গিয়ে ক্যাটরিনা সেবায় ব্রত হয় না।
বুঝে গেলাম কোন দুর্ঘটনা ঘটেছে। এক বন্ধু সরাসরিই বলে, "আব্বু, তুমি ছ্যাকা খেয়েছো?"
যেন বারুদে বিস্ফোরণ হলো তখন। যেন জুপিটার গ্রহে আগ্নেয়গিরি ফেটে পড়লো তখন।
সালমান অগ্নিশর্মা হয়ে বলল, "কিসের ছ্যাকা? কেন ছ্যাকা? ছ্যাকা আবার কী? স্টুপিডের মতন কথা বলছো! স্টুপিড!"
তেজ দেখাতে দেখাতে সালমান খান একা একা খেলার চেষ্টা করেন। এতদিন ফোকাস বিন্দু ক্যাটরিনা হওয়ায় অন্য কারোর সাথে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেনি বেচারার। আজ ক্যাটরিনাহীন দুর্যোগময় মুহূর্তে তাঁর পাশে কেউ নেই। এই সময়টাতেই বদ বন্ধুবান্ধব নির্লিপ্ত মুখে ব্যাগ থেকে মদের বোতল বের করে এগিয়ে দেয়। ভালগুলি মুখে দুঃখী ভাব ফুটিয়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করলেও ভিতরে ভিতরে লুঙ্গি ডান্স নাচে। বেচারার বদ কোন বন্ধু নাই। ভালও নাই। আফসোস।
ঘটনা হচ্ছে জন্ম থেকেই প্রবাসী ক্যাটরিনা সালমানকে জাস্ট ফ্রেন্ডস হিসেবেই গণ্য করে এসেছে। এদিকে বাংলাদেশী আলো হাওয়া জলে বেড়ে ওঠা সালমান "হাসি তো ফাসি" থিওরি অনুযায়ী স্বপ্নের জাল বড়শি নেট সব বুনে বসে আছে। মেয়েটা সরাসরি ফিরিয়ে দেয়ায় ছেলেটা নিশ্চিত মনে মনে বলেছে, "শালী! তোর জাস্ট ফ্রেন্ড হওয়ার জন্য আমি তোরে এতদিন পামপট্টি দিছি? তোর পিছনে এত ইনভেস্ট করেছি? আমার যৌবনের সোনালী সময়টা নষ্ট করলাম তোর জাস্ট ফ্রেন্ড হওয়ার জন্য? ফাজিলের ফাজিল! বদের ঘরের বদ!"
ফেসবুকে আবারও দুই পরিবারের লাঞ্চ, ব্রাঞ্চ, ডিনারের ছবি আপলোড হয়। এইবার আর সালমান ক্যাটরিনাকে পাশাপাশি সিটে দেখিনা। সালমানের মুখের মূলার দোকানও বন্ধ হয়ে গেছে সেই কবেই।
আলগা পিরিতি বন্ধ হওয়ায় আমাদের বৌদেরও বাঁকা দৃষ্টি আমাদের উপর নিক্ষিপ্ত হয় না। আমাদেরও গৃহে শান্তি ফিরে আসে।
যাই হোক।
ছ্যাকা খাওয়ার কয়েকদিন পরেই দেখলাম সালমান খান আরেক মেয়ের সাথে সেটিং করার চেষ্টা করছেন। এইবারও প্রবাসী কন্যা। এইবারও খাঁটি দেশীয় পাম্পপট্টি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এইবারও বেচারা ধরা খাবে। এইবারও মেয়েটা তাঁকে জাস্ট ফ্রেন্ডই বিবেচনা করবে। অথবা সরাসরি ভাইই বানিয়ে দিবে।
বলা হয়নি, সালমান, ক্যাটরিনাদের বয়স একটারও দশ পেরোয়নি। আমি আর তারেক ঐ বয়সে জুতার ফিতা ঠিক মতন বাঁধতে পারতাম কিনা সেটাই বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি না। আমার এক বন্ধু এগারো বছর বয়সে ক্লাসরুমে হাগু করে পুরো স্কুলে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল এইটা স্পষ্ট মনে আছে ।
সালমান খানের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবি, কী করলাম গেবনে?

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৯ ভোর ৫:০৫

স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলেছেন: ঠিকই তো । কি করলাম গেবনে ?

২| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৯ ভোর ৫:২৯

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:

গেবন অনেক বিরাট বড়।
কত কিছু করার বাকি থাকে!

৩| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৯ ভোর ৬:১৭

ইনাম আহমদ বলেছেন: গেবন বড়ই কষ্টের :((

৪| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৯ ভোর ৬:৫৩

Sujon Mahmud বলেছেন: :|| :||

৫| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৯ ভোর ৬:৫৩

Sujon Mahmud বলেছেন: :|| :||

৬| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ৮:৩৪

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: হা হা হা

আফসুসিত গেবন ;)
শেষটায় পুরাই টাস্কিত! বয়স মাত্র দশ পোরোয়নি!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
:-/

সত্যি চমকালেন বটে! ;)

++++

৭| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ৮:৫৪

রাজীব নুর বলেছেন: বাহ!
কি সুন্দর করে লিখেছেন।

৮| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ৯:৫৪

শামছুল ইসলাম বলেছেন: হা...হা...
সুফিয়া কামালের 'আজিকার শিশু' কবিতাটা মনে পড়ছে। একটু প্যারোডি করে লিখলাম,
"আমাদের যুগে আমরা যখন হাগু-মুতু করে সারা
তোমরা এ যুগে সেই বয়সেই প্রেম করছো পাগল পারা।"

৯| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ১১:১৮

বাংলার মেলা বলেছেন: পামপট্টি দিয়ে আজকাল কোন মেয়ে পাওয়া যায়না। আমার আকদ করা বউকে শাদী করা বউ বানাতে যে কী পরিমাণ কষ্ট করতে হয়েছে - এই দুনিয়ায় একমাত্র সে জানে। প্রথমবার পামপট্টি দেবার চেষ্টা করতেই যে আচরণ করল, তাতেই বুঝে গেছি আজকালকার বাজারে পামপট্টির সিকি পয়সাও দাম নাই।

১০| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৩:৩৯

সম্রাট ইজ বেস্ট বলেছেন: গেবনটা তো ভায়া মিছে হয়ে গেল! B:-)

১১| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৫:৫৫

অজ্ঞ বালক বলেছেন: ফাইভের পোলাপাইনও আজকাল চুটাইয়া প্রেম করে। আর আমি শালা ওগোর থেইকা সাত বচ্ছর লেইটে ছিলাম। বেশী না। যাই হোক, প্রেম করুক। এক দুইটা ব্রেক আপ খাইয়া সাইজ হইয়া যাইব।

১২| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১৫

অন্তরা রহমান বলেছেন: ঐ দিন এক রেস্টুরেন্টে ক্লাস সেভেন-এইটে পড়া মেয়েদের কথাবার্তা শুনে কান-টান গরম করে টেবিল ছেঁড়ে উঠে যেতে বাধ্য হয়েছি। এক অদ্ভুত সময় পার করছি আসলে আমরা।

১৩| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪৯

হাবিব বলেছেন: আ...হা....রে......

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.