নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
নেহা কাক্কার এবং সনু নিগাম আসলেন ডালাসে। বলিউড তারকাদের আমাদের শহরে আগমন নতুন কোন ঘটনা না। প্রতি মাসে বড় সর তারকার আগমন ঘটে। গত সপ্তাহে আমাদের শহরে এলেন সুস্মিতা সেন। তারপরে এলেন সনু-নেহা। আগামী মাসে আসবেন অরিজিৎ সিং, এবং তারপরের মাসে আসবেন হৃত্বিক রোশান, টাইগার শ্রফ, অমুক তমুক প্রমুখ।
তা সনু নিগামের ক্যালিবার নিয়ে কারোর কোন সন্দেহ নেই এইটা নিপাতনে সিদ্ধ। যার সন্দেহ আছে, সে সংগীত বিষয়ে মূর্খ। মূর্খের কথায় কান না দিলেও চলবে।
তবে তাঁর প্রতিভা কোন পর্যায়ের, সেটার সামান্য নমুনা দেখতে হলেও অবশ্যই তাঁকে মঞ্চে সামনা সামনি শুনতে হবে। তখন নিশ্চিত জানতে পারবেন, কিশোর কুমারের পরে ভারতীয় উপমহাদেশে সবচেয়ে প্রতিভাবান কণ্ঠশিল্পী হচ্ছেন এই সনু নিগাম। ৪১ বছর ধরে লোকটা গাইছে, শুরু বয়স যখন সেই চার ছিল। ভাবতে পারেন?
যাই হোক, এদেশে আসার পর থেকে বলিউডের সাথে আমার বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। বাড়িতে হিন্দি চ্যানেল নেই, কালেভদ্রে হলে গিয়ে হিন্দি সিনেমা দেখা হয়, তাও আমির খান না হলে চিন্তা ভাবনা করে হলে যাই। নতুন নায়ক নায়িকাদের অনেককেই চিনিনা। পোলাপান আলিয়া-সোনম করে, আমি এখনও সেই হাম দিল দে চুকে সনমের ঐশ্বরিয়ায় পড়ে আছি। বুঝেন আমি হিন্দি সিনেমা জগতে কত ব্যাকডেটেড। তাই নেহা কাক্কার যখন মঞ্চে উঠলো, আমি টাইট হয়ে বসে রইলাম। এতটুকুন সাইজের একটা বাচ্চা মেয়ে লাফালাফি করে গান গাইছে, আমার আশেপাশের লোকজন হাত পা ছোড়াছুড়ি করে নাচানাচি করছেন - আমার অবস্থা তখন দৈত্যকূলে প্রহ্লাদের মতন। পরীক্ষায় প্রশ্ন কমন না পড়লে পরীক্ষার্থী যেমন অসহায় চেহারায় এদিক ওদিক তাকায়, আমিও আমার আশেপাশের লোকজন দেখি।
আমার ইমিডিয়েট পাশেই এক আংকেল বসে ছিলেন। টাইট হয়ে বসার দিক দিয়ে তিনি আমার চেয়েও এগিয়ে। বুঝে নিলাম, আমি যেমন "হাম দিলের..." ঐশ্বরিয়ায় আটকে আছি, তিনি তেমন "তেজাবের" মাধুরীতে আটকায় আছেন। তিনিও আমার মতোই আশেপাশে নজর বুলাচ্ছেন।
নেহা বিদায়ের পরে এলো সনু। জীবন্ত কিংবদন্তি। গলা দিয়ে কি কি করার ক্ষমতা তাঁর আছে সেটা নির্দ্বিধায় শো-অফ করেন। আম জনতা মুগ্ধ হয়ে তাকায় থাকে।
সমস্যা হলো, সনুও গাইলেন তাঁর বেশ কিছু নতুন গান। এমন নতুন যা আমি আগে সেভাবে শুনিনি। মাঝে মাঝে পুরানো কিছু গান ধরেন, "প্রশ্ন কমন পড়েছে" ভেবে আমি ঠিক মতন নড়ে চড়ে উঠার আগেই তিনি লাফিয়ে আরেক গানে চলে যান। আমি আবার ফ্যালফ্যাল করে আমার আশেপাশের দর্শক দেখি। ঐ আঙ্কেল বেচারা আমার চেয়েও অসহায় ভাবে তাকিয়ে থাকেন। পরীক্ষায় নিশ্চিত ফেলুয়া ছাত্র আমরা দুইজন।
কনসার্ট শেষে বৌকে জিজ্ঞেস করলাম, "এনজয় করেছো?"
সে বললো, "আমিতো করেছি, তুমি করেছো?"
অবাক হয়ে বললাম, "কেন করবো না? সনুর কনসার্টে সনু কাউকে বিনোদন না দিয়ে ছাড়ে?"
কথা সত্য। সনুর কনসার্ট এর আগেও দেখেছিলাম। একক কনসার্ট ছিল সেটা। সেখানে সে আরও খোলামেলা পারফর্ম করে। নিজের উঠান বলে কথা, গাইতে গাইতে স্ট্যান্ড আপ কমেডি পর্যন্ত শুরু করে দেয়। হাসাতে হাসাতে পেট ব্যথা হয়ে যায়।
বৌ বলল, "তোমাকে দেখেতো মনে হলো না। কেমন পাথরের মূর্তির মতন বসে ছিলে।"
আমি বললাম, "একেকজনের এক্সপ্রেশন একেক রকম হয়। সবাই নাচানাচি করে এক্সপ্রেস করে, আমি চুপচাপ বসে।"
সে বললো, "কই - অন্যান্য কনসার্টেতো তোমাকে এমন দেখি না।"
"অন্যান্য কনসার্ট মানে?" বেশ অবাক হলাম। "কার কনসার্টের কথা বলছো?"
'জেমসের.... "
বৌকে আর কথা শেষ করতে দিলাম না। চোখ বড় বড় করে বললাম, "তুমি জেমসের সাথে অন্যান্যদের তুলনা করছো? সিরিয়াসলি? তুমি জানো জেমস আমাদের কাছে কী? রিক্সাভাড়া বাঁচিয়ে জেমসের অ্যালবাম কেনার টাকা জমাতাম। প্রতি মাসে বের হওয়া মিক্সড এলবামের প্রথম কপি কেনার জন্য দোকান খোলার আগে দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতাম। প্রতি মাসের শেষ শুক্রবারে শুভেচ্ছা নামের একটা ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান দেখতাম শুধুমাত্র এই আশায় যে সেখানে জেমসের নতুন গানের মিউজিক ভিডিও দেখানো হতো। নগর বাউল যখন নতুন অ্যালবাম প্রকাশের ঘোষণা দিত, তখন তীর্থের কাকের মতন দিন গুনতাম। শুধুমাত্র জেমসের গান সামনা সামনি শুনবো বলে পয়সা জমিয়ে শেরাটন উইন্টার গার্ডেনের টিকিট কিনতাম। একই দিনে ঢাবি থেকে ছুটে গেছি মহাখালী। ব্যাক টু ব্যাক কনসার্ট শুনেছি, তবু প্রাণ ভরেনি।"
বৌ আর কথা বাড়ালো না। চুপ হয়ে গেল।
জেমস, আইয়ুব-বাচ্চা-হাসান....তাঁরা আমাদের কাছে কী সেটা কাউকে বুঝানো সম্ভব না। বাংলাদেশ ব্যান্ড সংগীতের সোনালী প্রজন্মে যারা বেড়ে উঠেনি, যাদের গায়ে সেই মোহনীয় মুহূর্তের হাওয়া লাগেনি - তাঁরা বুঝতে পারবে না।
জীবনের প্রথম উপন্যাস "সাক্ষী" লেখার সময়েও ঐ হাওয়া লেখায় চলে এসেছে। এমনি এমনি নয়।
গুরুর প্রতি ভালবাসা।
১৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১০:৪৮
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: হাই ফাইভ দেন
২| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৯ ভোর ৬:৪৭
অগ্নিবেশ বলেছেন: ইসলামিক পোস্ট দেবেন হিন্দি গান শুনবেন, বেশ বেশ।
১৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১০:৪৯
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: জ্বি, বেশ বেশ বেশ।
৩| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ৮:৩৯
তারেক_মাহমুদ বলেছেন: একসময় আব্দুর নুর তুশার ভাই বিটিভিতে শুভেচ্ছা নামের একটা অনুষ্ঠান করতেন অনুষ্ঠানের সর্বশেষ আকর্ষণ ছিল ব্যান্ড সংগীত, যেখানে গাইতেন আইয়ুব বাচ্চু জেমস হাসান শাফিনরা শুধু এই শেষের একটা গানের জন্য অনুষ্ঠানটি ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা পায়। সত্যি দারুণ লিখেছেন নস্টালজিক হলাম।
১৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১০:৪৯
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: জ্বি, আমিও শুভেচ্ছা দেখতাম শুধু ব্যান্ডের গানের জন্যই।
৪| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ৮:৫৮
রাজীব নুর বলেছেন: এক সময় অনেক গান শুনতাম। এমনও হয়েছে সারারাত গান শুনে পার করে দিয়েছি। আহা সেই দিন গুলো আজ হারিয়ে গেছে।
১৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১০:৫০
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: আমারও
৫| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ১:২৯
আরাফআহনাফ বলেছেন: "জেমস, আইয়ুব-বাচ্চু-হাসান....তাঁরা আমাদের কাছে কী সেটা কাউকে বুঝানো সম্ভব না। বাংলাদেশ ব্যান্ড সংগীতের সোনালী প্রজন্মে যারা বেড়ে উঠেনি, যাদের গায়ে সেই মোহনীয় মুহূর্তের হাওয়া লাগেনি - তাঁরা বুঝতে পারবে না।" - হাজার কথার এক কথা - সহমত সম্পূর্ণভাবে। কী সব সোনালী দিনগুলো !! !!!
১৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১০:৫০
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ভালবাসাময় দিন।
©somewhere in net ltd.
১| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৩:৫০
ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: জেমস্, বাচ্চু ভাই, মাইলস, মাকসুদ.... এরা বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীতের উজ্জ্বল নক্ষত্র। বাংলা ব্যান্ড নিয়ে কিছু লিখতে গেলে উনাদের পাশ কাটিয়ে যাওয়া অসম্ভব। আমরা যারা আশির দশকের শুরুতে জন্মেছি, তারা সবাই এদেরকে শুনেই বড় হয়েছি, ব্যতিক্রম থাকতে পারে, তবে সেটা খুব কম। ৯৩-এ মাইলসের "প্রত্যাশা", ৯৪-এ ফিডব্যাকের "বঙ্গাব্দ-১৪০০", ৯৫-এ আইয়ুব বাচ্চুর "কষ্ট" এ্যালবাম যখন রিলিজ হলো তখন আমি প্রাইমারি স্কুলের ছাত্র। ৯৭-এ জেমসের "দুঃখিনী দুঃখ করোনা" এ্যলবাম রিলিজ হলো আমার হাই স্কুলে উঠে। প্রত্যেকটা এ্যালবামের সাথে অজস্র স্মৃতি জড়িয়ে আছে। সমক্ষেত্রে এদের সাথে তুলনা করার মতো কোন ভারতীয় শিল্পী নেই। সিডির যুগ উঠে যাচ্ছে, আর এমপিথ্রিতে শুনতে ভালো লাগেনা, তাই এবার দেশে গিয়ে ফিরে আসার সময় প্রত্যেকটা সিডি কিনে এনেছি। যতদিন আমি বেঁচে আছি, এই সিডিগুলোও আমার কাছে থাকবে, গানগুলোও থাকবে।
আপনার লিখার জন্য ধন্যবাদ।