নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
বাঙালির খাবার নাকি পান্তা ভাত, ভর্তা এবং মাছ। যে এইসব খায় না, সে নাকি বাঙালি না।
সেই হিসেবে মাথা চুলকে আমাকে ভাবতেই হচ্ছে, আমারও হয়তো নাগরিকত্ব বাদ যেতে বসেছে। জীবনে যতবার ভর্তা খেয়েছি, সেটা হাতে হাতেই গুনে বলে দিতে পারবো। পান্তাভাত জীবনেও খাই নাই।দুই একবার মুখে তুলেছি, গলা থেকে নামাতে পারিনাই। আর মাছ এমন এক বস্তু যা আমি খাবার আগে বিবেচনা করবো মাংস বা মুরগির ডিম আছে কিনা। যদি থাকে, তাহলে বাদ। আর যদি না থাকে, তবেই পাতে তুলবো।
আশেপাশে খোঁজ নিয়ে দেখি আমার মতোই আরও অনেক বান্দা আছেন। সবাই পুরুষ, একজনও মহিলা পাইনাই যে আমাদের মতন মাংসাশী। তাঁরা সবজি খেতে পছন্দ করেন, এবং তাঁদের স্বামীদের মাংস খাওয়া স্বভাবের কারনে শাপশাপান্ত করেন। তাঁদের এই রাগের যথেষ্ট কারনও আছে। বেশিরভাগ ভাই ব্রাদারই এই খাদ্যাভ্যাসের জন্য শরীরে অনেক জটিল রোগ বাঁধিয়ে বসেন। উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের জটিল ব্যারাম থেকে শুরু করে পাইলসের মতন কুৎসিত ও অস্বস্তিকর রোগ - সবই কারোর না কারোর আছে। তারপরেও তাঁরা সবজি মুখে তুলেন না। তাঁদের বৌরা টেনশন করবেন না তো কে করবেন?
আপাদের কিছু টেকনিক্যাল বুদ্ধি শিখিয়ে দেই। দেখেন কাজে লাগে কিনা।
মাংস রান্না শুরু করা যাক।
১. মাংস রান্নার আগে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন আপনারা চর্বি কেটে ফেলে দিচ্ছেন। চর্বি শরীরের জন্য বিষ বিবেচনা করবেন। তাই পারলে বিন্দুমাত্র চর্বি দিবেন না।
২. তেলের পরিমানটাও কমিয়ে দিবেন। কাউকে কাউকে তরকারিতে এত বেশি তেল দিতে দেখি যে পারলে আস্ত টাইটানিক জাহাজ সেখানে ডুবে যাবে। এই কাজটা করবেন না প্লিজ। হার্টের জন্য তেল ভয়াবহ ক্ষতিকর। না পারতেই নয় এমন তেল দিবেন।
৩. বেশি বেশি করে পেঁয়াজ দিবেন। কুঁচি কুঁচি করে কেটে দিবেন, আবার আলাদা করে বেটেও দিবেন। পেঁয়াজে ক্যালোরি কম থাকে, সোডিয়াম খুবই কম থাকে, কোন রকম চর্বি বা কোলেস্টেরল থাকেনা - কিন্তু ফাইবার থাকে, ফলিক এসিড থাকে। ভিটামিন B থাকে যা শরীরকে নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে। এছাড়া পেঁয়াজ ওবিসিটি, হৃদরোগ ও ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়ে। তাই অবশ্যই বেশি বেশি পেঁয়াজ দিবেন।
৪. এরপরে আসে রসুনের হিসাব। রসুনও স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। রসুনে থাকে এলিসিন, যাতে এন্টিব্যাকটেরিয়াল থাকে, থাকে এন্টিভাইরাস, এন্টিফাঙ্গাল এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট। রসুন আপনার হৃদযন্ত্রের জন্যও খুব উপকারী। হৃদপিন্ডকে সুস্থ রাখার চেষ্টার পাশাপাশি আপনার রক্ত প্রবাহ সচল রাখা এবং কোলেস্টেরল কমাতে রসুন লড়ে যায়। খাবারে তাই একটু বেশি রসুন দিন।
রসুনের মতোই আদারও নানান ভেষজ গুন আছে। আদা রসুনে তাই একটু বেশি ফোকাস করুন।
৫. এরপরে হলুদ গুঁড়া ধরে নিন। তাতে আছে Curcumin, যা আপনার শরীরে নানা রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। এন্টিঅক্সিডেন্ট বৃদ্ধি করে, হার্টের রোগের বিরুদ্ধে লড়ে সাথে ব্রেনের জন্যও উপকারী।
৬. লাল গুঁড়া মরিচ। এটি আপনার পাকস্থলীতে যে ব্যাক্টেরিয়া পাকস্থলীর ব্যারাম ঘটায়, তা মেরে ফেলে। ফলে আপনার জন্য উপকারী। তবে ঝাল কম খাবার অভ্যাস থাকলে এটি কমিয়ে কাঁচা মরিচ বাটা একটু বাড়িয়ে দিবেন।
৭. কাঁচা মরিচ বাটা। একদম পিষে মিশিয়ে দিবেন যাতে ঝোলের সাথে, মাংসের সাথে মিশে একাকার হয়ে যায়। কারন কাঁচা মরিচে থাকে, প্রচুর ডায়েটারি ফাইবার। হজমের সহায়ক। প্রচুর ভিটামিন সি থাকে, আপনার ত্বকের জন্য বিশেষভাবে উপকারী।
৮. জিরা: আবারও এন্টি অক্সিডেন্ট সরবরাহ করে। আয়রনও সরবরাহ করে।
৯. ধনিয়া গুঁড়া: প্রচুর ডায়েটারি ফাইবার, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম থাকে।
ধনিয়া পাতায় থাকে ভিটামিন সি, ভিটামিন কে এবং উদ্ভিজ প্রোটিন। সাথে থাকে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম ইত্যাদি। শুনেছি এটি ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধেও লড়ে। তাই রান্না শেষেও মাংস পরিবেশনের সময়ে অবশ্যই ধনিয়া পাতা কুচি ছিটিয়ে দিবেন।
১০. সাধারণত এই পর্যন্ত মশলা দিয়ে আমরা কষাতে থাকি। কেউ আরেকটু বেশি দেন, যেমন গরম মশলা, এলাচ গুঁড়া, ষ্টার মশলা, জয়ফল জয়ত্রী ইত্যাদি। ওসব নিয়ে আমি ভাবছি না। ওগুলোরও উপকারিতা আছে। অত ডিটেইলে না গেলেও চলবে।
তা মশলা কষার পরে আপনারা এইবার টমেটো পেস্ট ঢেলে দিতে পারেন। এইটা অবশ্যই করবেন। কারন টমেটোর চেয়ে উপকারী সবজি খুবই কম আছে। দুনিয়ায় যাই রাধুন না কেন, টমেটো দিতে ভুলবেন না। কারন, টমেটো শুধু এন্টিঅক্সিডেন্টই না, আপনার হার্টেরই উপকার করবে না, এটি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করা আপনার সেরা অস্ত্রদের একটি।
আমার নানাজান এই তথ্য জানতে পেরে রোজ কাঁচা টমেটো খেতেন। তিনি চেইন স্মোকার ছিলেন। সিগারেট ছাড়তে পারেননি বলে টমেটোর পরিমান বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর বাগানের শখ ছিল। তাঁর হাতে প্রচুর ফলনও হতো। শেষ পর্যন্ত সিগারেটের কাছে টমেটো হার মেনেছিল, ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। কিন্তু যাদের এই বদভ্যাস নাই, তাঁরা অবশ্যই টমেটো বেশি বেশি করে খাবেন। মাংসের মধ্যে পেস্ট বা অতি কুচি করে কাটা টমেটো ঘুলিয়ে মিলিয়ে দিলে স্বাদ বেড়ে যায়, সাথে পাশে সালাদের সাথে চিবিয়ে খেয়ে ফেলবেন। আপনার আর কিছু নিয়ে চিন্তা করতে হবেনা।
এছাড়া টমেটোতে থাকে ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, পটাসিয়াম, ফোলাতে ইত্যাদি।
পারলে বাড়িতে টমেটো গাছ লাগিয়ে ফেলুন।
১১. এরপর মশলায় মাংস ঢেলে দিন। আগেইতো আপনি চর্বি ফেলে দিয়েছেন। মাংসের পরতে পরতে যে চর্বি মিশে থাকে, সেটাই আপনার শরীরের জন্য যথেষ্ট। এর বেশি যদি গ্রহণ করেন তাহলে অবশ্যই অবশ্যই আপনাকে প্রতিদিন দেড় দুই ঘন্টা ব্যায়ামের অভ্যাস থাকতে হবে। নাহলে আর্টারি ব্লক হয়ে অক্কা পাবেন।
১২. টক দই দিলে স্বাদও বাড়বে, আবার টক দই আপনার শরীরের জন্য উপকারীও। আপনার শরীরে হজমি উপকারী ব্যাকটেরিয়া জন্ম দিবে, এবং টুকটাক উপকারতো করবেই। তবে খেয়াল রাখবেন, দই যেন বাসি না হয়।
১৩. লবনের কথাতো ভুলেই গেছি। খবরদার, বেশি লবন খাবেন না। আয়োডিন যুক্ত লবন খাবেন। আয়োডিন আছে কিনা সেটা কিভাবে বুঝবেন
জানেনতো? লবনের মধ্যে লেবুর রস দিয়ে পরীক্ষা করবেন। যদি লবন নীলচে আকার ধারণ করে, তাহলে বুঝবেন লবনে আয়োডিন আছে। নাহলে সেটাতে নেই। অতিরিক্ত লবন আপনার হার্ট, কিডনি, ব্লাড প্রেশার ইত্যাদির জন্য ভয়াবহ ক্ষতিকর। তাই লবনে সংযত হন।
রান্না শেষে স্বামী মহোদয় যখন খাবার নিতে বসবেন, খেয়াল রাখবেন রাক্ষসের মতন যেন মাংস নিয়ে প্লেট ভরে না ফেলেন। রেড মিট হলে (গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ) দুই তিন পিসের বেশি খেতে নিষেধ করবেন। কেজিতে কেজিতে মাংস খেলে পাইলস সহ নানান বিশ্রী রোগ বাঁধিয়ে বসবেন।
চেষ্টা করবেন প্রতিবেলায় ভাতের সাথে যেন লেবু খাবার অভ্যাস থাকে। প্রচন্ড উপকারী।
সালাদে গাজর, লেটুস পাতা দিন। আমাদের দেশে শশা প্রধান সালাদ বানানো হয়। শশা উপকারী, পানি থাকে প্রচুর, কিন্তু খুব ভাল হয় যদি সালাদে গাজর, লেটুস পাতা, মাশরুম (অত্যন্ত উপকারী), টমেটো ইত্যাদির পরিমান বেশি দেন। খাবার আগে বা নাস্তায় "সিজার সালাদ" (ইন্টারনেটে দেখে নিন রেসিপি, অতি সহজ) খাবার অভ্যাস করুন। এবং প্রতিদিন একটা দুইটা মৌসুমী ফল অবশ্যই খাবেন। কলা হোক, আম হোক, আপেল হোক, আঙ্গুর ইত্যাদি যাই হোক। ও আচ্ছা, ভুলে গেছি, এক গ্লাস খাঁটি দুধ খেতে অবশ্যই ভুলবেন না যেন।
খাবারের সময়ে একটি বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখবেন। পেটকে মনে মনে তিনভাগ করে এক ভাগ খাবার দিয়ে ভরবেন, একভাগ ভরবেন পানীয় দিয়ে এবং বাকিটা অংশ খালি রাখবেন। অনেকে রাক্ষসের মতন গলা পর্যন্ত খায়। এই কাজটা করবেন না। তাহলে অনেক রোগের হাত থেকে বেঁচে যাবেন।
বেশি বেশি চিবিয়ে খাবার অভ্যাস করুন। অনেকেই আমাকে বলে আমি অনেক ধীরে খাই। সমস্যা কী? আমাকেতো আর দৌড়ে ট্রেন ধরতে হবেনা। খাবার বেশি চাবালে হজমে কখনই সমস্যা হবেনা।
এই যদি হয় খাদ্যাভ্যাস, তাহলে "সবজি খায়না" "সবজি খায়না" বলে কান্নাকাটি করতে হবেনা তাহলে।
উপরে যা বললাম, পুরোটাই আমি নিজে আবিষ্কার করেছি। আমার বৌও আপনাদের দলে। আমার সবজি না খাওয়া নিয়ে হাহুতাশ করে। আমি যে ভিটামিন মিনারেল ইত্যাদি দিয়ে শরীর ভরে ফেলছি বোকা মেয়েমানুষ বুঝতেই রাজি না। তাঁর ধারণা লাউ মিষ্টি কুমড়া করলা ইত্যাদি না খেলে শরীরে পুষ্টি ঢুকে না।
১৯ শে এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ৭:২৮
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: হাহা।
আমরা দুই অবাংগালি ভাই,
আমাদের কোন গতি নাই।
২| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ১১:১০
রাজীব নুর বলেছেন: বাঙ্গালীরা খেতে পছন্দ করে।
তারা খুঁজে বেড়ায় কোথায় কোন রেস্টুরেন্টে ভালো ভালো খাবার পাওয়া যায়।
২৩ শে এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১২:২৩
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: আমিও ভাই খেতে খুব পছন্দ করি।
৩| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১১
অজ্ঞ বালক বলেছেন: সুন্দর কইরা লিখসেন। আমার মাংস রান্নার প্রণালি অনেকটা আপনার মতনই। তবে ঐ বাড়তি মশলা আমি অনেক দেই আর হচ্ছে কাঁচামরিচটা কাঁইটা দেই, বাঁটা দেয়া হয় না। সালাদও ভাল্লাগে তবে আমি হইলাম শতভাগ মাছ খোর। মাছ থাকলে মাংস খাই না। সবজিতে সমিস্যা আছে, পান্তা ভাত তো এক্কেবারে খাই না।
২৩ শে এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১২:২৪
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: হাহাহা। ভাল বলেছেন।
৪| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৯:২৫
মাহমুদুর রহমান বলেছেন: পড়লাম।
©somewhere in net ltd.
১| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৯ ভোর ৫:৫৯
স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলেছেন: ভর্তা ও মাছ আমার খুবই প্রিয় | কিন্তু পান্তা আপনার মতোই দুএকবার ট্রাই করেও পারি নাই, আমার গলা দিয়ে নামে না | আমার নাগরিকত্ব কি তাহলে অর্ধেক বাদ হয়ে যাবে ?