নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
গতকাল লিখলাম পর্দা নিয়ে। এবারেরটা আরও সেনসিটিভ বিষয়। বিশেষ করে বাঙালি পিতামাতা আমাকে খুন করতে বঁটি হাতে দৌড়ানি দিবেন নিশ্চিত। তবে মাথা ঠান্ডা রেখে পুরো লেখাটি পড়ুন। তারপরে সাত-আটদিন নিজের পরিবারের ও আশেপাশের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ভাবুন। তারপরে মন্তব্য করুন।
যুগের পর যুগ ধরে বিশ্বের প্রতিটা সমাজেই ভদ্রলোকেরা বাইরে কাজ করতেন, এবং ভদ্রমহিলারা ঘর সামলাতেন। ব্যাপারটা কেবলই ইসলামিক না। চীন-ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে শুরু করে রোমান, পারস্য বা গ্রিক সভ্যতা - কোথাওই এর ব্যতিক্রম নেই।
আমাদের পূর্বপুরুষদেরই কল্পনা করুন। আমার দাদি, নানী - তাঁরা যতই তেজস্বীনি হন না কেন, তাঁদের দৌড় ঐ ঘর সামলানো পর্যন্তই ছিল। খুব কম মহিলা বাইরে কাজ করতে যেতেন। খুবই কম। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান যেকোন ধর্মের কথাই ধরুন। বাড়ির মহিলা বাইরে কাজে বেরিয়েছে? সমাজ ধরেই নিত গৃহস্বামীর যথেষ্ট আয় রোজগার নেই - তাই নারীকে কাজে বেরুতে হয়েছে। ব্যাপারটা ইজ্জতেরও প্রশ্ন ছিল বটে।
হ্যা, কোথাও কোথাও অবশ্যই রেফারেন্স পাবেন জমিদারগিন্নি জমিদারি সামলেছেন, কিংবা মহারানী সামলেছেন রাজ্য। আমি সাধারণ কাজ কারবারের কথা বলছি। গতর খাটনি যাকে বলে। নিতান্ত "ছোট ঘরের" কেউ না হলে এই কাজ কেউই করতো না।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলুশন ওয়েস্টার্ন সমাজ ব্যবস্থা পাল্টে দিল। দলে দলে নারী ফ্যাক্টরিতে কাজে যোগ দিলেন। সংসারে বাড়তি উপার্জন আসে। জীবন আরামদায়ক ও স্বচ্ছল হয়। এবং বাড়তি টাকা পয়সা সামাজিক নিরাপত্তাও দান করে। আগে উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যু বা কর্মহীন হয়ে যাওয়ায় একটি পরিবার ধসে যেত। এখন সেটা হয়না। লাইফ স্টাইলে পরিবর্তন আসে বটে, কিন্তু পথে বসতে হয়না। দুইজনই জীবিত ও সুস্থ থাকলে একজন আরেকজনকে সাপোর্ট দিয়ে আবারও সামলে উঠতে পারেন।
এখানেই এখন একটি দ্বন্দ্ব তৈরী হচ্ছে। "মেয়ে মানুষের বাইরে কাজ করা উচিৎ কিনা।"
অন্যান্য ধর্ম এই নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্চ না করলেও আমাদের বাংলাদেশী হুজুরগন ওয়াজ মাহফিল জমিয়ে রাখছেন এই এক টপিক দিয়েই। এক বাক্যে তারা নিষেধ করে দিচ্ছেন। সমস্যা হচ্ছে এদের ন্যারো মেন্টালিটি। কুয়ার ব্যাঙের মতন এদের মন মানসিকতা এতটাই ক্ষুদ্র যে ওরা দুনিয়ার সবার পরিস্থিতিকে একভাবে দেখে এক ফতোয়া জারি করে দেন। প্রশ্ন হচ্ছে, ইসলাম কী এমন? মোটেও না। সমাজ ভেদে ইসলামের নিয়ম কোথাও শিথিল, কোথাও কঠিন। একটি উদাহরণ দিলেই স্পষ্ট হবে।
আমাদের দেশে জুম্মার নামাজ আদায়ে কারোরই কোন সমস্যা হয়না। আমরা মুসলিম প্রধান দেশ। আমরা পাঁচওয়াক্ত ফরজ নামাজ না পড়লেও জুম্মার নামাজ মিস দেইনা। আলহামদুলিল্লাহ। আমাদের দেশে জুম্মা আদায় না করা কঠিনতম গুনাহ!
কিন্তু চীনের মুসলমানদের পরিস্তিতি ভিন্ন। তাঁরা নিজেদের মুসলিম পরিচয় দিলেই কমিউনিস্ট সরকার তাঁদের ধরে ধরে শূকরের মাংস, মদ ইত্যাদি খাইয়ে দেয়। জোর করে রমজান মাসে তাঁদের রোজা ভাঙ্গানো হয়। আরও চলে নানান ধরনের অত্যাচার। এই পরিস্থিতিতে তাঁদের প্রকাশ্যে জুম্মার নামাজ আদায় করা কতটা যৌক্তিক? ইসলাম বাধ্য করে? না।
এইটা নিশ্চই সবাই জানেন যে মক্কায় থাকতে আমাদের প্রিয় নবী (সঃ) জুম্মার হুকুম দেননি। জুম্মার প্রথম জামাত মদিনায় আদায় হয়েছে, এবং ইতিহাসের প্রথম জুম্মার জামাতে আমাদের নবীজি (সঃ) উপস্থিত ছিলেন না। মক্কায় মুসলিম পরিচয় দিলেই কুরাইশরা মারধর শুরু করে দিত, ইয়াসির সুমাইয়ারতো মৃত্যুই ঘটলো ইসলামের কারনে। সেখানে জুম্মা আদায় কতটা যৌক্তিক? আল্লাহ আমাদের জীবনকে সহজ করতেই ইসলাম দিয়েছেন, কঠিন করতে নয়।
তাই বলছি - কারোর ব্যাপারে কোন কিছু না জেনে কোন নেগেটিভ মন্তব্য করা আমাদের ধর্মে নিষেধ। কবিরা গুনাহ। তওবা ছাড়া মাফ নেই। অথচ আমরা সেটাই অহরহ করি।
কিছুদিন আগে এক ওয়াজে এক হুজুর বয়ান দিলেন "প্রসূতির সিজারিয়ান করা উচিৎ না। এইসব ডাক্তারের ষড়যন্ত্র। উল্টাপাল্টা ট্যাবলেট খাইয়ে রোগীনিকে সিজারিয়ানের জন্য তৈরী করে, যাতে সে বেশি টাকা কামাতে পারে। কুকুর বছরে সাত আটটা বাচ্চা দেয়, কখনও শোনা যায় না কুকুরের সিজারিয়ান হয়েছে। আমাদের মা দাদিরাও জীবনেও সিজারিয়ান করেন নাই। আর পুরুষ ডাক্তার মহিলার শরীর দেখলেইতো দোজখী হয়ে যাবেন।" ইত্যাদি ইত্যাদি রাবিশ সব কথাবার্তা।
সমস্যা হচ্ছে এরাই আলেম বনে আছেন, এবং এদের কথায় সাধারণ মানুষ উঠে বসে।
সবাইকে বুঝতে হবে চিকিৎসা শাস্ত্রের উন্নতি কয়েক ধাপেই হাজার বছর এগিয়ে গেছে। আমাদের দাদি নানীদের যুগে প্রসবকালীন সময়ে মাতৃমৃত্যুর হার ছিল আশংকাজনকভাবে বহুগুন বেশি। সম্রাট শাহজাহানের স্ত্রী মুমতাজ মহলের মৃত্যুও প্রসব করতে গিয়েই হয়েছিল। সন্তান জন্মের সময়ে জটিলতা দেখা দেয়ায় দিল্লির সম্রাট তাঁর স্ত্রীর কাছে রাজবৈদ্যকে পাঠাননি। পরপুরুষ তাঁর স্ত্রীর চেহারা দেখে ফেলবে! এ কী মানা যায়? বৌ মরার পরে আল্লাদি দেখাতে তাজমহল বানিয়েছেন, এবং পুরা বিশ্ব "প্রেমের নিশানী" বলে আহ্লাদে গদগদ হয়ে বাহ বাহ দেয়। কতবড় ফাজলামি!
যাই হোক, ইসলামে আপনাকে প্রায়োরিটি বুঝতে হবে। ঘিলু খাটাতে হবে। শূকর সর্বাবস্থায় হারাম, কিন্তু প্রাণ বাঁচাতে হলে অবশ্যই আপনি শূকর মাংস খেতে পারবেন। উদাহরণ দেই। যেমন ধরেন, আপনি প্লেনে করে কোথাও যাচ্ছেন। ক্র্যাশ করলো। আপনি একাই বেঁচে রইলেন। উদ্ধার কর্মীরা আসতে দেরি করছে। এর মাঝে ক্ষুধায় আপনার মরমর অবস্থা। ঘাটাঘাটি করে দেখেন কয়েক ক্যান শুকরের মাংসের সসেজ ছাড়া আর কিছুই নেই। এখন আপনি কী করবেন? অবশ্যই তখন সেটি আপনার জন্য হালাল হয়ে যাবে। ঠিক যেমনটা ওষুধে মিশ্রিত এলকোহল সেবন হালাল। অনেকে ডাক্তারদের বিরক্ত করতেই বলেন "এলকোহল মুক্ত ওষুধ দেন।" আপনাকে নেশার উদ্দেশ্যে এলকোহল সেবন নিষেধ করা হয়েছে, প্রাণ রক্ষার্থে নয়। আল্লাহর ওয়াস্তে ব্রেনের ইস্তেমাল করেন। প্রসূতি নারীর যদি জটিলতা দেখা দেয়, অবশ্যই তাঁকে কোন মহিলা ডাক্তারের কাছে নিন। যদি না পারেন, পুরুষ ডাক্তারের কাছেই নিন। মানুষের প্রাণ বাঁচানো অনেক অনেক বেশি জরুরি শরীর দেখানোর চেয়ে।
আরেকটা ব্যাপার, এই জটিলতা দূর করতেই মেয়েদের বেশি বেশি করে পড়ালেখা করান। গাইনি ডাক্তার বানান।
টপিকে ফিরি।
তা নারীদের বাইরে কাজ কী জায়েজ? "ঠিকমতন পর্দা রক্ষা করলে" অবশ্যই জায়েজ। এবং আধুনিক যুগে অবশ্যই কাজ করা উচিৎ। কারনটা একটু পরেই বলছি।
সাথে আরেকটি বিষয় তুলে আনি।
অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, বাইরে কাজ করতে গিয়ে বা পড়তে গিয়ে নারীর সাথে সহকর্মী/সহপাঠী পুরুষের "প্রেম" হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। আস্তাগফিরুল্লাহ! তাহলে কিভাবে নারীদের বাইরে কাজ জায়েজ হবে?
জবাব হচ্ছে, "প্রেমে পড়া হারাম" এই বাক্যটি কোথায় পেলেন? হালাল হারাম নির্ভর করে কিভাবে সেটিকে হ্যান্ডেল করবেন সেটার উপর। আমাদের নবীর (সঃ) প্রেমে খাদিজা পড়েননি? তিনি কী করলেন? বিয়ের প্রস্তাব দিলেন। এইটাই নিয়ম। আপনি প্রেমে পড়ে বনে জঙ্গলে চাইনিজ রেস্টুরেন্টে ঘুরে বেড়ালেন - এইটা কোন অবস্থাতেই উচিৎ না। বিয়ের পরে যত খুশি ঘুরুন, কোনই সমস্যা নাই। বিয়ের আগে এইসব করলে ৯৯% ক্ষেত্রে সম্ভাবনা থাকে বিয়ে পর্যন্ত সম্পর্ক না গড়ানোর। আশেপাশে দেখলেই ভুরি ভুরি উদাহরণ পাবেন। আপনার যদি ধারণা হয় "আপনার জানু তেমন না" - তবে আপনি ভুল। আপনার জানুর উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে গেলে আপনার কোন মূল্য থাকবে না। তখন নতুন জানুর উদ্দেশে আপনার জানুও চলে যাবেন। পুরুষ মানুষকে এইভাবেই সৃষ্টি করা হয়েছে। কিছু করার নাই।
আপনাকে একটি ব্যাপার এখন অবশ্যই মেনে নিতে হবে, আপনার শৈশব, আপনার পিতার শৈশবের চেয়ে যেমন ভিন্ন ছিল, আপনার সন্তানের শৈশব আপনার শৈশবের চেয়ে বহুগুন বেশি ভিন্ন। পৃথিবী একদম ছোট হয়ে এসেছে, এবং পাল্টেও গেছে নিয়মরীতি। আপনাকে যুগের সাথে বদলাতেই হবে - নাহলে নিজের সাথে সাথে নিজের সন্তানের জীবনও দুর্বিষহ করে তুলবেন। এমন অনেক পরিবারকে চিনি, মেয়েদের পড়ালেখা করতে দেয়নি। মেধাবী মেয়ে ছিল, ইচ্ছা করেই মফস্বলের মহিলা কলেজে পড়িয়েছেন। বাড়ির থেকে দূরে পড়তে পাঠানো? লোকে কী বলবে? ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে, মেডিকেলে পড়তে দেননি, মেয়ের প্রেম হয়ে যাবে বলে। শুরুর দিকে ভাল ভাল এবং চরিত্রবান যুবক তাঁদের পছন্দ করতো - বাড়িতে কড়াকড়ি আরোপ করে সেইসব যুবকদের শায়েস্তা করা হয়েছে। পাশ করার পরে মেয়েদের চাকরি করতে দেয়া হয়নি। মেয়ে মানুষের আবার চাকরি কিসের? ভাইয়ের আয়ে সংসার চলবে।সমস্যা হয়েছে তখন যখন ভাইয়ের নিজেরও বিয়ে হয়েছে। একে বেচারা উপার্জন করে কম, অন্যদিকে তাঁর দিকে হা করে তাকিয়ে থাকেন বৃদ্ধ মা বাবা এবং অবিবাহিতা একাধিক বোন। এবং নিজের সংসারের শখ আহ্লাদের কথাতো বাদই দিলাম। এই ছেলে পাগলের মতন পরিশ্রম করেও কিছু করতে পারছে না। এতগুলো হাত তাঁকে টেনে নামিয়ে রেখেছে। মেয়েগুলোর বিয়ে হচ্ছে না। যখন তাঁদের রূপ ছিল, যৌবন ছিল, তাঁদের প্রতি যুবকদের আগ্রহ ছিল - তখন মা বাবা অতিরিক্ত কড়াকড়ি আরোপ করে বিয়ে দিলেন না।
"যে ছেলে প্রেম করে, সে আবার ভাল ছেলে হয়?"
এখন উল্টো মেয়েরা বোঝা হয়ে যাওয়ায় দোষ দিচ্ছেন কেন তাঁরা কারোর সাথে ঝুলে গেলেন না।
অথচ সংসারটা অনেক সুন্দর হতো যদি,
১. মেয়েগুলো তাঁদের মেধানুযায়ী ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়তেন।
২. যখন তাঁদের প্রতি ভাল "চরিত্রবান" যুবকদের আগ্রহ ছিল, তখন তাঁদের পরিবারের সাথে বসে বিয়ের এবং ভবিষ্যৎ জীবনের কথাবার্তা পাকাপাকি করে ফেলা। ছেলেরা যদি তাঁদের বৌদের প্রতি সৎ থাকে, তাহলে আপনাতেই সংসার সুখের হয়। আমরা বাহ্যিক ব্যাপারগুলোকে এতবেশি গুরুত্ব দেই যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেকারনে পথভ্রষ্ট হই।
৩. মেয়েগুলো পাশ করার পরে ভাল চাকরি পেলে অবশ্যই স্বামী স্ত্রীর দুইজনের ঐক্যমতে চাকরি করা বা না করা। "কেউ চাকরি করে ভাল, আর না করলে ভাল না" - এইটা খুবই ফালতু ধারণা। কার কী প্রায়োরিটি আমরা কিছুই জানিনা। কাজেই ফালতু বক্তব্য দিয়ে নিজেকে ছোট করার কোনই মানে হয়না।
মেয়েদের চাকরি না করলে কী যন্ত্রনা হয় সেটার শুধু একটা উদাহরণ দেই। এক নারী কিছুদিন আগে ইনবক্সে (আগের আইডির) জানালেন তাঁর স্বামী পরকীয়ায় লিপ্ত। কয়েকবার ধরা খাবার পরেও চালিয়ে যাচ্ছে। তালাক দিতে পারছেন না কারন তাঁকে তিন সন্তান সহ পথে বসতে হবে। তাঁর কোন আয় উপার্জন নেই। আর মানতেও পারছেন না। এইভাবে চললে তাঁর আত্মহত্যা ছাড়া উপায়ও নেই।
মহিলা যদি ন্যূনতম আয়ও করতেন, তাহলেও এইরকম পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না - এইটা নিশ্চই মানেন?
এখন আপনার নিজের মেয়েকে এই পরিস্থিতিতে দেখতে চান? নিজের বোনকে? না চাইলে তাঁকে এমনভাবেই বড় করুন যাতে এই ধরনের পরিস্থিতির জন্য সে প্রস্তুত থাকে। পরিস্থিতি না আসলে আলহামদুলিল্লাহ, আর যদি আসে, তবে সে তৈরীই ছিল।
এখন আপনি ভাবতে পারেন, "আমার চয়েজ করা জামাই এই কাজ করতেই পারেনা।"
খুবই ফালতু ধারণা। নবীর (সঃ) সাহাবীও জেনাহ করেছিলেন, আপনার পছন্দ করা পাত্র কোন ঘোড়ার আন্ডা না যে ঐ পথে যাবেনা। মানুষের জন্মই হয়েছে পাপ করার ক্ষমতা নিয়ে। নাহলে আমরা ফেরেস্তা হতাম।
আমাদের দেশে এই কিছুদিন আগেও বিয়ের সময়ে মেয়ের মতামতের কোন গুরুত্ব দেয়া হতো না। অথচ তাঁরই মত সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিয়েটা সে করছে। আপনি আমি নই। আসমা বিনতে আবু বকরকে (রাঃ) উমার (রাঃ) ইবনে খাত্তাব বিয়ে করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। আসমার বোন আমাদের মা আয়েশা (রাঃ) জিজ্ঞেস করেন, "তুমি আমিরুল মু'মিনিনের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে?"
উমার (রাঃ) তখন ইসলামের খলিফা। দুনিয়ার সবচেয়ে ক্ষমতাবান ব্যক্তি।
আসমা (রাঃ) জবাবে বলেন, "উমার(রাঃ) একটু বেশিই কট্টর। তাঁর লাইফ স্টাইল আমার পছন্দ না।" (ভাবানুবাদ)
মানে বুঝতে পারছেন? মহিলা সাহাবীগণের অধিকার ছিল নিজের জন্য পাত্র নির্বাচনে হ্যা না বলার, আমাদের দেশের মেয়েদের সেই অধিকার নেই। আমরা তাঁদের চেয়েও আদর্শ মুসলিম!
নিজের জন্য "সঠিক পাত্র/পাত্রী" খুঁজে বের করার ট্রেনিং আপনার সন্তানকে শৈশব থেকেই দিন। বিয়ে একদিন হবেই, সেটা নিয়ে এত লাজলজ্জার কী আছে বুঝিনা। একজন আদর্শ পাত্র পাত্রীর কী কী গুন থাকা প্রয়োজন সেসব তাঁর মনের মধ্যে ঢুকিয়ে দিন, সে ভবিষ্যতে নিজের জীবন সঙ্গী/নী নির্বাচনে ভুল করবে না।
আরেকটা ব্যাপার - ভাল গুন বলতে টাকা পয়সা, রূপ, সামাজিক মর্যাদা ইত্যাদির কথা বলবেন না। আপনার সন্তান যেমন, তেমনই খুজুন। আপনি কোটিপতি হলে সেও যেন কোটিপতি খুঁজে, আর আপনি রিক্সাওয়ালা হলে সেও যেন নিজের জন্য রিক্সাওয়ালা পরিবারেরই কাউকে খুঁজে। এতে আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ে সমস্যা হবেনা। বিয়েতে এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এক পরিচিতা মেয়ে নিজে পার্টিবাজ। বন্ধুবান্ধব নিয়ে আড্ডা দিতে, পার্টি করতে খুব পছন্দ করে। মেয়ে বন্ধুর চেয়ে ছেলে বন্ধুর সংখ্যা কয়েকগুন বেশি। যদিও মেয়েটির চারিত্রিক ত্রুটি নেই। এদিকে স্বামি খুঁজে সুফী সাধক পর্যায়ের। কোন পার্টি শার্টি করবে না। কোন মেয়ের দিকে তাকাবে না। ইত্যাদি। ফল হচ্ছে এই পর্যন্ত তিনবার বিয়ে করেছে, তিনবারই বেচারির সংসার টিকেনি। মেয়েটির হয় নিজের লাইফস্টাইল বদলানো উচিৎ, নাহয় নিজের মতোই পার্টিবাজ কাউকে খোঁজা উচিৎ।
আবারও বলি, দেশ সময় যুগ ক্ষনে ক্ষনে বদলাচ্ছে। জীবনও পাল্টে যাচ্ছে উল্কার বেগে। আপনাকেও সেইভাবেই এডজাস্ট করতে হবে। আমাদের যুগের স্কলারদের কুরআনের বাণী, নবীর (সঃ) জীবনী, হাদিস ঘাটাঘাটি করতে হবে। নিজের যুগের, নিজের সমাজের প্রেক্ষাপটে বসিয়ে নিয়ম খুঁজতে হবে। মধ্যযুগের অনেক ফতোয়া আমার সময়ে এপ্লিকেবল নাও হতে পারে। আমেরিকান মুসলিম, বাংলাদেশি মুসলিম, ফিলিস্তিন, কাশ্মীর ও চীনের মুসলিম আলাদা আলাদা সমাজব্যবস্থায় আছেন - ইসলামের মূল স্তম্ভ বাদে অন্যান্য বিষয়ে আমাদের নিয়মকানুনে পার্থক্য থাকবেই।
আমাদের নবীকে (সঃ) একবার এক সাহাবী সরাসরি জিজ্ঞেস করেন, "আমি অমুসলিম এলাকায় (তখনকার যুগে "দেশ" ছিল না) থাকি। আমার জন্য সেখানে থাকা কী জায়েজ?"
মাথায় রাখুন, ততদিনে মদিনা (দারুল ইসলাম) প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। মুসলিমদের স্বাধীন ভূখন্ড।
নবীজি (সঃ) বলেন, "যতক্ষণ তুমি নামাজ পড়ছো, রোজা রাখছো, ইসলামের সব ফরজ বিনা বাধায় সুষ্ঠুভাবে আদায় করছো এবং বড়
গুনাহ এড়িয়ে চলছো, পৃথিবীর যেকোন স্থানে থাকাই তোমার জন্য জায়েজ।"
আমাদের সন্তানরা যদি আল্লাহকে ভালবেসে, মেনে বড় গুনাহ এড়িয়ে চলে, তাহলেই আমাদের আলহামদুলিল্লাহ বলা উচিৎ।
আমাদের বুঝতে হবে প্রায়োরিটি কী। আমাদের বুঝতে হবে ইসলাম কী। ইসলামে যা নেই - সমাজ, সংস্কৃতি, পরিবার ইত্যাদির দোহাই দিয়ে শুধু শুধু চাপিয়ে দিয়ে নিজের আপনদের উপর জুলুম করে আমরা কারোরই কোন লাভ করছি না। উল্টো ক্ষতি করছি অপরিসীম।
২| ০২ রা মে, ২০১৯ দুপুর ১২:২০
ওমর মোহাম্মদ ফারুক বলেছেন: লিখায় মুন্সীয়ানার চাপ পরিষ্কার। সংস্কারের মশালে তেল যেন ফুরিয়ে না যায়।
৩| ০২ রা মে, ২০১৯ দুপুর ১২:২৮
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: অনেক দির্ঘ পোস্ট ছিল। তবুও পড়লাম, ভাল লেগেছে।
শেষ লাইন পড়ে মনে হল লিখাটা প্রথমে ফেসবুকে দিয়েছিলেন।
আরেকটি কথা যেখানে মুসলমান স্বাধীন ভাবে জিবন যাপন করতে পারেনা সেখানে জুমার নামাজ পড়া জায়েজ নাই।
৪| ০২ রা মে, ২০১৯ রাত ৮:১৮
মাহমুদুর রহমান বলেছেন: শাইখ উসাইমিন(রহ.) বলেন, “নারীরা যেখানে কাজ করবে, সে কর্মক্ষেত্র শুধুমাত্র নারীদের জন্যে হতে হবে। যেমন- বালিকাদের শিক্ষাদান, কারিগরি সহায়তা পরিচালনা, নিজ ঘরে মহিলাদের জন্য নারী দর্জি এবং অন্যান্য। পুরুষদের সাথে মাঠে কাজ করা নারীদের জন্য জায়েয নয়, কারন পুরুষের সাথে তাকে মিশতে হতে পারে, যা মারাত্মক ফিতনাহ (কুকর্মে প্ররোচনা এবং নানা সমস্যার উৎস) তাই এটা উপেক্ষা করা উচিত।
উল্লেখ্য, রাসুলুল্লাহ(সাঃ) বলেছেন, “আমি পুরুষের জন্য নারীর চেয়ে বড় আর কোন ফিতনাহ রেখে যাচ্ছি না। আর,বনী ইসরাইলের প্রথম ফিতনাহই ছিলো নারী সংক্রান্ত। সুতরাং লোকদের উচিত তাদের পরিবারকে ফিতনাহ এবং ফিতনাহর উপকরণ থেকে দুরে রাখা। [ফতোয়ায়ে আল-মার'আহআল মুসলিমাহ : ২/৯৮১]
৫| ০৫ ই মে, ২০১৯ সকাল ১১:১৪
গরল বলেছেন: সহমত, সন্তানরা যেন তাদের উপযুক্ত ও রুচিশীল সঙ্গী খুঁজে নিতে পারে এবং প্রতারিত না হয় তার জন্য ট্রেইনিং দরকার।
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা মে, ২০১৯ রাত ২:৫১
রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: সুন্দর, সুস্থ একটা লেখা। গভীরতা আর বাস্তবতার ছাপ আছে।