নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
সিনেমা, নাটক বা মঞ্চে অভিনয়ের প্রধানতম শর্ত হচ্ছে যে যখন যে ভূমিকায় অভিনয় করে, তখন দর্শকের কাছে যেন মনে হয় অভিনেতা নয়, বরং চরিত্র কথা বলছে। আমির খান যখন একজন হরিয়ানার কুস্তিগীরের ভূমিকায় পর্দায় আসবে, দর্শকের কাছে যেন মনে হয় পর্দায় হরিয়ানার বয়ষ্ক কুস্তিগীর হাজির হয়েছেন, বলিউড সুপারস্টার চকলেট বয় আমির খান নয়। ম্যাথড এক্টিং একেই বলে। চরিত্রের মধ্যে ঘুলেমিলে যাওয়া। চরিত্রকে ভাঙতে ভাঙতে চূর্ণ বিচূর্ণ করে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম রূপে পরিবেশন করা। পরিচালক সবসময়ে আপনাকে সবকিছু শিখিয়ে দিবে না। আপনাকেই গবেষণা করে বের করতে হবে। আপনি যদি রিক্সাওয়ালার ভূমিকায় অভিনয় করেন, তাহলে ভাত খাবার সময়ে আপনার ঠোঁটের পাশে দুয়েকটা ভাত ঝুলে থাকতে হবে। আপনি যদি উচ্চবিত্তের ভূমিকায় অভিনয় করেন, তাহলে আপনার বাঁহাতে কাঁটা চামচ ও ডান হাতে ছুরি সঠিকভাবে ধরতে হবে। নাহলে কিছু দর্শককে ফাঁকি দিতে পারলেও বুদ্ধিমান ও অভিজ্ঞ দর্শকের হাতে ধরা খেয়ে যাবেন।
হলিউডে এই ধারার অভিনেতা পাওয়া অতি সাধারণ হলেও বলিউডে এমন অভিনেতা খুব কম আছেন। আমির খান যেমন একটি সময়ে একটি সিনেমা নিয়েই কাজ করেন। চরিত্রের ভিতরে প্রবেশের জন্য মাসের পর মাস সেই চরিত্রের জীবনই যাপন করেন। "পিকে" সিনেমায় অভিনয়ের জন্য মাস্টার রেখে ছয় মাস ভোজপুরি শিখেছিলেন। যেখানে আমির হিন্দি পড়তে ও লিখতে পারেন না। তাঁকে "হিংলিশে" (ইংলিশে হিন্দি লিখতে হয়) স্ক্রিপ্ট লিখে দিতে হয়। "গাজনীর" সময়ে জিমে গিয়ে ব্যয়াম করে শরীর ফুলিয়েছেন। পুঁচকে আমির খান পিটিয়ে দশ বারোজন ভিলেনকে সাইজ করে ফেলছে, এই ব্যাপারটা তাঁর নিজের কাছেই অবিশ্বাস্য ঠেকছিল। নিজেকে বিশ্বাস করাতেই তাই অমন পরিশ্রম।
"দাঙ্গালের" সময়েও ঠিক তাই। রিটায়ার্ড রেসলারের শরীর বানাতে প্রচুর খাওয়া দাওয়া করে মোটা হয়েছেন। সেই একই রেসলারের যৌবনের দুয়েকটা সিন পর্দায় তুলে ধরতে ছয় মাসের মধ্যেই দুর্দান্ত কুস্তিগীরের শেপে হাজির হয়েছেন।
কিন্তু সাধারণত বলিউডে কী দেখা যায়? শাহরুখ খানের "হ্যাপি নিউ ইয়ারই" নেয়া যাক। জীবনেও যারা নাচেনি, তাঁরা মঞ্চে উঠে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডান্স কম্পিটিশন জিতে নিয়েছে। কেন? কারন তাঁরা "দিলসে" ডান্স করেছে। হোয়াট আ লজিক! "ঝুম বারাবার ঝুম" সিনেমার টাইটেল সংও মনে হয় তেমনই কোন ডান্স কম্পিটিশনের দৃশ্যায়ন ছিল। এতটাই বিরক্তিকর ছিল যে মনেও নাই কী ঘোড়ার আণ্ডাটা দেখেছিলাম। এবং মনে হয় সেখানেও তাঁরা জিতেছিল। এখনও গানটা দেখলে বিরক্তিতে গা গুলায়। সিরিয়াসলি? অভিষেক বচ্চনের ঐ "ডান্স" (হাত পা নাড়াচাড়াকে যদি ডান্স বলে আর কি) পুরস্কার জেতার মতন নাচ?
বলিউডের ফাজলামি এখনও চালু আছে। মিসেস বিরাট কোহলির কিছুদিন আগেই মুক্তিপ্রাপ্ত "সুই ধাগা" সিনেমা দেখতে বসেছিলাম। যেহেতু বলিউডের নায়ক নায়িকা, তাই ওরাও একটা বড় ফ্যাশন কম্পিটিশন জিতে যায়। কিন্তু কাহিনী হচ্ছে, তাঁরা খান্দানি দর্জি হলেও ড্রেস ডিজাইনিংয়ের উপর তাঁদের কোন প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা নেই। ফ্যাশন ডিজাইনিং এতটাই সস্তা বলিউড নির্মাতাদের কাছে। যেন কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাং ডিজাইন করলেই পুরষ্কার জেতা যায়! ওসবের যেন কোন মানেই নেই। সিনেমায় Ramp ওয়াকে বাপ মা বন্ধু বান্ধব পাড়াপ্রতিবেশীকে উঠিয়ে দিয়েছে, ফোন বাজছে, তারা রিসিভও করছে, দর্শক হাসছে, বিচারক বিরক্ত হচ্ছে - তারপরেও তাদের পুরষ্কার দেয়া হয়েছে। এখানেও "দিলসে" ফ্যাক্টর জড়িত।
এতটা আজগুবি গাঁজাখুরি না হলে কী চলে না?
বলিউডে বাস্তবঘেঁষা বাণিজ্যিক সিনেমা প্রথম বানাতে শুরু করেন রাম গোপাল ভার্মা। আগে অন্যরা আর্ট ফিল্ম বানাতেন। ক্রিটিক্যালি এক্লেইমড হতো ঠিকই, কিন্তু বক্স অফিসে পয়সা তুলতে পারতো না। রামুর সিনেমায় ফুটে উঠতো বাস্তবতা। বলিউডের শ্রেষ্ঠ গ্যাংস্টার মুভি, Satya সিনেমার কাল্লু মামা গানটির দৃশ্যায়ন এমন ছিল যে মুভি ক্রিটিকরা তখন বলতেন "এমন মনে হচ্ছিল যেন আমরা বিয়ারের গন্ধ নাকে পাচ্ছিলাম।"
রামুর সেই দিন আর নেই।
তাঁর শিষ্য অনুরাগ কাশ্যপ সে স্থান দখল করে নিয়েছে। অনুরাগের সিনেমাগুলোও হয় raw বাস্তবতা। গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর যেমন একটি মাস্টারপিস। এই সিনেমা বলিউডকে নাওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকীর মতন শক্তিমান অভিনেতা উপহার দিয়েছে। বলিউড শো অফ করতে পারবে, এমন কিছু প্রজেক্ট (গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর ছাড়াও আছে ব্ল্যাক ফ্রাইডে। Satya সিনেমার লেখক তিনি, সাথে নেটফ্লিক্স ব্লকবাস্টার sacred games সিরিজেরও ডিরেক্টর তিনি) তাঁর হাত ধরে বেরিয়েছে।
এখন অনুরাগের শিষ্যরাও সিনেমা তৈরিতে নেমেছেন।
নেটফ্লিক্সে মার্দ কো দার্দ নেহি হোতা তেমনই এক শিষ্যের (ভাসান বালা) নির্মাণ।
সিনেমার নামটা খুবই বিরক্তিকর ও সস্তা। স্টারকাস্টও খুব একটা আহামরি নয়। পরিচিত বলতে কেবল মহেশ মাঞ্জরেকার আছেন।
নায়কের পরিচয় হচ্ছে তাঁর মা ম্যায়নে পেয়ার কিয়া সিনেমার অমর নায়িকা, ভাগ্যশ্রী।
স্টার কিডদের ব্যাপারে আমার এলার্জি আছে। বেশিরভাগকেই দেখি অপর্চুনিটিকে গ্র্যান্টেড হিসেবে গ্রহণ করতে। সোনাক্সি সিনহা, সোনাম কাপুর, অর্জুন কাপুর, এশা দেওল, ববি দেওল, উদয় চোপড়া,তুষার কাপুর এবং এই তালিকা বিশাআআআল।
বরং স্ট্রাগল করে আসা লোকজনকেই বেশি সফল হতে দেখা যায়। উপরে উল্লেখ করা নাওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী যেমন একটা সময়ে ধনিয়া পাতাও বিক্রি করেছেন সামান্য কিছু লাভের আশায়। কঙ্গনা রানাউত পুরো বলিউডের বিরুদ্ধে একা লড়াই করে এখনও "কুইন" হয়ে আছে। আর চাঙ্কি পান্ডের মেয়ে কিনা বলে তাঁর যোগ্যতা গুড লুক্স, গুড লুক্স এবং গুড লুক্স। সিনেমার সেটে কাজ করেই অভিনয় শিখে ফেলেছে।
এই সিনেমার নায়িকা রাধিকা মদনকে এর আগে দেখেছি "পাটাখা" সিনেমায়। ডিরেক্টর যদি হয় বিশাল ভরত্বাজ, তাহলে তিনি গরুর চেহারা থেকেও এক্সপ্রেশন বের করে সীন তৈরী করতে পারবেন। কাজেই রাধিকার অভিনয় যে ভাল ছিল তাতো বলার অপেক্ষা রাখেনা। তাঁর আসল পরীক্ষা বরং এই সিনেমায় হয়েছে।
আগেই বলেছি, সিনেমার ডিরেক্টর ভাসান বালা অনুরাগের শিষ্য। এর আগে তাঁরা দুইজন মিলে কিছু প্রজেক্টে কাজ করেছেন। কাজেই বিসমিল্লাহ বলে সিনেমা দেখা শুরু করলাম।
সিনেমা শেষে রিভিউতে কেবল এইটা বলবো, আমরা ছোট বেলায় ব্রুসলি, জ্যাকি চ্যানের সিনেমা দেখতাম না? ৯৫% অ্যাকশনের মধ্যে ৫% কাহিনী ঢুকানো থাকতো? এমন কনসেপ্টে ইন্ডিয়ায় এটাই বোধয় সফলতম সিনেমা। নায়ক নায়িকা কনভিন্সিংলি ভাল অ্যাকশন করেছে। দর্শকের মনে প্রশ্নই জাগবে না তাঁরা কারাটে পারে কিনা। ফারাহ খানের "ষাঁড়ের গোবর" কনসেপ্ট না যে "দিলসে মারামারি করেছে, তাই ভিলেন আপনাতেই শুয়ে কাইত হয়ে গেছে।" জেনুইন অ্যাকশন এবং সেইরকমই সিনেমাটোগ্রাফি ও এডিটিং। পর্দায় যেভাবে পরিবেশন করা হয়েছে, বুঝতে পারবেন পরিচালক এবং তাঁর দলবল ভালই পরিশ্রম করেছেন, সবাই মেধাবী এবং তাঁরা তাঁদের কাজ ভালই জানে।
পুরো সিনেমা কমেডি আর অ্যাকশন নির্ভর। সাথে আছে ভাল কাহিনী। অ্যাকশন এতটাই ভাল হয়েছে যে অভিনয়ের খুঁটিনাটি দেখার প্রয়োজন হয়নি। তবুও যেটুকু প্ৰয়োজন ছিল, তাঁরা ভাল অভিনয় করেছে। টাইগার শ্রফকে দিয়ে করালে হয়তো এরচেয়েও দুর্দান্ত অ্যাকশন পাওয়া যেত, সাথে দুর্দান্ত ডান্সও পেতেন, কারন এই মুহূর্তে বলিউডের সেরা ডান্সার এবং অ্যাকশন সুপারস্টার এই জুনিয়র শ্রফ। কিন্তু বিন্দুমাত্র অভিনয় পেতেন না যা ভাগ্যশ্রীর ছেলে অভিমন্যু দাসানি করেছে।
অ্যাকশন সিনেমা পছন্দ করলে দেখতে পারেন। ভাল সময় কাটবে। নেটফ্লিক্সে আছে।
১৮ ই জুন, ২০১৯ রাত ১০:৩২
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: সাউথ ইন্ডিয়ান মুভি একটু বেশিই ড্রামাটিক।
©somewhere in net ltd.
১| ১৪ ই জুন, ২০১৯ দুপুর ১২:২৫
রাজীব নুর বলেছেন: মুভিটা দেখেছি।
তবে ইদানিং সাউথ ইন্ডিয়ান মুভি খুব দেখছি।