নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ট্রলিং, বাঙালি জাতি ও খাদ্যে ভেজাল।

১৯ শে জুন, ২০১৯ রাত ১০:১৬

ট্রলিং বিষয়টা আমার অসহ্য লাগে। এমন না যে আমার সেন্স অফ হিউমার নেই, বা খারাপ। কিন্তু বাঙালি ট্রলিংয়ের সীমা পরিসীমা সম্পর্কে কোনই ধারণা রাখে না। ফাজলামি করতে করতে আমরা এমন পর্যায়ে চলে যাই যখন সেটা রীতিমতন দন্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবার যোগ্যতা রাখে।
ক্রিকেটারদের নিয়েই ট্রলিংয়ের কথা ধরা যাক।
বিদেশী দল বা ক্রিকেটারদের কথা বাদই দিলাম, আমরা আমাদের নিজেদের জাতীয় দলের খেলোয়াড়দেরই ছাড়ি না। এই যে সাকিব আল হাসান, একবার সে বলেছিল "আমাদের ছেলেরা ভাল পারফর্ম করবে কিভাবে? বিদেশী খেলোয়াড়রা ছোটবেলা থেকেই অরেঞ্জ জ্যুস খায়, আমরাতো সেটা পাই না।"
শুরু হয়ে গেল অরেঞ্জ জ্যুস খাওয়া নিয়ে "ট্রলিং।"
কেউ কী বিন্দুমাত্র চিন্তা ভাবনা করিনা যে ছেলেটা ভুল বলেনি? সাকিবের ব্যাকগ্রাউন্ড কী? গ্রাম থেকে উঠে আসা একটি ছেলে। আমাদের দেশের গ্রামের ছেলেরা কতটা পুষ্টিকর ও সুষম খাবার খায়? পেটে ভাত গেলেই হলো। তাঁদের মা বাবার কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ইত্যাদির হিসাব রাখেন? ভিটামিন, মিনারেল, ফলিক এসিড ইত্যাদি টার্ম জানেন? তাঁরাতো কেউই ডায়েটিশিয়ান নন। বিদেশী শিশুরা ছোটবেলা থেকেই এথলেটিক ট্রেনিং নিয়ে বড় হয়। রিকি পন্টিংয়ের বয়স যখন তিন, তখন থেকে তিনি একাডেমি ক্রিকেট খেলতেন। বার্সেলোনা, রিয়্যাল মাদ্রিদ সহ ইত্যাদি যাবতীয় বড় বড় ক্লাবগুলো শৈশব থেকেই এথলেট খুঁজে বের করে। তাঁদের ভাল মতন খাইয়ে দাইয়ে খেলোয়াড় হিসেবেই বড় করেন। আমাদের দেশে সেটা হয়? আমাদের ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলাকে পার্টটাইম একটিভিটি হিসেবে ধরা হয়। আমাদের বাবা মায়ের কাছে লেখা পড়া হচ্ছে প্রথম প্রায়োরিটি। তারপরে এইসব খেলাধুলা গানবাজনা ইত্যাদি আসে। যখনই রেজাল্ট খারাপ হয় (কারোর কাছে ১০০ জন ছাত্রছাত্রীর ক্লাসে সেরা তিনজনের মধ্যে আসতে না পারাটাও ব্যর্থতা) তখনই সবার আগে কোপ পড়ে খেলার সরঞ্জামের উপর। ছেলের শখের ক্রিকেট ব্যাট বা ফুটবল পুড়িয়ে দেয়া হয়। হয় না?
অথচ কেউ কী এই খোঁজ নেন যে শিশুটির জন্মের পরে তাঁর খাদ্যতালিকায় ব্রেন ডেভেলপিং খাবার থাকতো কিনা? "ওমেগা থ্রি" নাম শুনেছেন কয়জন? শিশুদের খাইয়েছেন কয়জন?
প্রতিটা বাবা মাই চেষ্টা করেন তাঁরা নিজেরা যা খেতে পারেননা, সেটাও সন্তানকে খাওয়াতে। দুধ, ডিম, মাংস ইত্যাদি। সমস্যা হচ্ছে, বাংলার মাটিতে যে দুধ শিশুদের খাওয়ানো হচ্ছে, সেটাতে গোয়ালা কর্তৃক পানি মেশানো হচ্ছে সেই নব্যপ্রস্তর যুগ থেকেই। গত কয়েক দশক ধরেতো সেখানে ফরমালিনও মেশানো হয়। আবার এক দশক আগে এক ভিডিও দেখেছিলাম যেখানে ইন্ডিয়াতে দিওয়ালি মৌসুমে শ্যাম্পু ও অন্যান্য কেমিক্যাল ব্যবহার করে কিভাবে দুধ প্রস্তুত করা হয় সেটা দেখানো হয়েছিল। যা ইন্ডিয়াতে ঘটে, অবশ্যই বাংলাদেশে সেটা ঘটতে বেশি সময় লাগার কথা না। এখন বলেন, এই দুধ খেয়ে শিশুরা যে বেঁচে আছে, এইতো আমাদের ভাগ্য!
আমাদের খাদ্যে যে ভেজাল মিশ্রিত হয়, সেটা আজকের কালকের ঘটনা না। আমাদের দাদা দাদীরা লম্বা হায়াৎ পেয়ে বেঁচে ছিলেন। দুইজনই নব্বই পেরিয়েছেন। আমার নানা চেইন স্মোকার ছিলেন। তাঁরও বয়স সত্তুরের কোটা পেরিয়েছিল। আমার নানীর জন্ম থেকেই হার্টে ছিদ্র ছিল। সারা জীবন গিয়েছে তাঁর শারীরিক কষ্টে। অথচ তিনিও মাশাল্লাহ সত্তুর পেরিয়েছেন। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার আম্মুর নানীকে পর্যন্ত দেখার। তিনি আমার বোনের বিয়ে দেখেছেন, তাঁর সন্তানও দেখে যেতে পেরেছেন। অথচ আমাদের বাবা মায়ের জেনারেশনের লোকজন চল্লিশ পঞ্চাশ হতেই হার্ট অ্যাটাক বা ক্যান্সারে মারা যাচ্ছেন। স্কুল জীবনে আমার নিজের ক্লাসমেট, কিছুদিন আগে মারা গেল হার্ট অ্যাটাক করে। ক্যান্সারে এর আগেও ক্লাসমেট বা জুনিয়র পোলাপান মারা গেছে।
একদিকে নানান জটিল রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কার হচ্ছে সত্য, কিন্তু রোগের পরিমানও বেড়ে গেছে আশংকাজনকভাবে। কেন হঠাৎ এমন হলো ভেবে দেখেছি কখনও? কারন কী হতে পারে বলে আপনাদের ধারণা?
খাদ্যাভ্যাস!
আমরা যা খাই, তা আমাদের শরীরেই যায়। এবং সেটা বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। উল্টাপাল্টা কেমিক্যাল শরীর যন্ত্রের কলকব্জার হিসাব নিকাশ পাল্টে দেয়। যার ফল আমরা অচিরেই ভোগ করি।
রমজান মাস আসলেই কেবল ভ্রাম্যমান আদালতগুলোর অভিযান দেখা যায়। কেন? আর বাকি ১১ মাসে কী খাদ্যে ভেজাল মেশানো হয় না? একটি ভিডিও দেখেছিলাম মোবাইল কোর্টের আগমনের খবর শুনে বসুন্ধরা সিটির ফুড কোর্টের প্রতিটা দোকানের শাটার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আহা! চুরির এরচেয়ে বড় প্রমান আর কী হতে পারে? ওরা যদি সৎভাবেই ব্যবসা করতো, তাহলেতো ওদের ভয়ের কোন কারন ছিল না।
যত বড় দোকান, তত বড় বাটপারি। গুলশানের রেস্টুরেন্টে ব্যবহার করছে মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার, পশুর পঁচা মাংস, এবং তাদের রান্নাঘরগুলো আমাদের টয়লেটের চেয়েও নোংরা। তাহলে এত টাকা খরচ করে আমি কেন খেতে যাব?
ঢাকার বিখ্যাত ফুচকা, যা না খেলে আমাদের ঢাকা সফর বৃথা বলে গণ্য নয়, সেই ফুচকা তৈরী হয় এমন সব কারখানায় যেখানে অহরহ ইঁদুরের পায়খানা আবিষ্কৃত হয়। ইঁদুরের পেশাব যে মারাত্মক বিষ এইটা জানেন? এই বিষ খেয়ে বিদেশে প্রচুর মানুষ মারা যায়। আমরা এই বিষ হজম করে ফেলি।
মরিচের গুঁড়ায় ইটের গুঁড়া মেশানো থাকে, আচারে ব্যবহার করা হয় পঁচা ফল ও কেমিক্যাল, কেক পেস্ট্রিতে রং হিসেবে ব্যবহার করা হয় কাপড়ের রঙ.....আর কী কী বলবো? ওরা কী মানুষ?

আমাদের দেশে খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল মিশ্রণকে attempt to murder হিসেবে কবে থেকে গণ্য করা হবে? সেই অনুযায়ী শাস্তি কবে দেয়া হবে? Slow poison দিয়েইতো মানুষকে ধীরে ধীরে মেরে ফেলা হচ্ছে। আমরা আমরা বলেই "slow poison" বললাম, কারন আমরা লোহা হজম করে ফেলতে পারি। বাস্তবে ওসব মারাত্মক বিষ। Actual poison. মানুষ মারার ক্ষমতা রাখে।
বাস্তব উদাহরণ দেই।
আমার আপন চাচাতো ভাই, যার জন্ম ও বেড়ে ওঠা অ্যামেরিকায়, সে বেচারা গিয়েছিল বাংলাদেশ ভ্রমনে। ট্রেনে করে চিটাগং যাচ্ছি। লাঞ্চে ট্রেনের "ফ্রেশ" বার্গার কেনা হলো। আমি এবং আমার ফুপাতো ভাই তারেক গপাগপ খেয়ে ফেললাম। সে এক কামড় দিয়েই মুখ থেকে সেটা ফেলে দিল। তাঁর কাছে স্বাদটা "কেমন যেন" মনে হলো। সেই "কেমন যেন" বার্গারের কারনে বেচারার ফুড পয়জনিং হয়ে গেল। তিনদিন হস্পিটালে ছিল। যমে মানুষে টানাটানি চলেছে। বেচারা তাঁর বাপ চাচার শৈশবের শহরটি দেখতে পারেনি। তারপর যতদিন বাংলাদেশে ছিল, একবারের জন্যও বাইরের খাবার মুখে তোলার সাহস করেনি। যেকোন প্রবাসীর দেশে গিয়ে বাইরের খাবার খেলেই প্রথম কিছুদিনের মধ্যেই পেট খারাপ হয় কেন? আমরা আমরা বলেই বেঁচে যাই। বিদেশী আলো বাতাসে বেড়ে ওঠা ভেজালমুক্ত খাঁটি খাবার খাওয়া পাবলিক হলে কবেই মরে শেষ হয়ে যেত।
সাকিব আল হাসান তাহলে খুব কী ভুল বলেছিল? এ নিয়ে ট্রল করায় নিজের আহাম্মকীপনাই প্রকাশ হলো না?

প্রিয় পাঠক, আপনার যদি খাবারের ব্যবসা থাকে, তাহলে আল্লাহর ওয়াস্তে প্লিজ, নিজের পরিবারের ভবিষ্যতের জন্য হলেও, টেস্ট বাড়াতে বা বেশিদিন সংরক্ষণ করতে বা অন্য যেকোন কারণেই হোক এমন কিছু মেশাবেন না যাতে মানুষের ক্ষতি হয়। এতে আপনার দুই চার পয়সা লস হবে হয়তো, কিন্তু নিজের বিবেকের কাছেতো পরিষ্কার থাকবেন। সেই "শান্তি" মানুষ কোটি টাকা দিয়েও কিনতে পারেনা।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জুন, ২০১৯ রাত ১০:২৯

পাঠকের প্রতিক্রিয়া ! বলেছেন: আমাদের কী দোষ! আমরা তো চেষ্টা করি কিন্তু অপুষ্টিজনিত কারণে আমদের ট্রলটা ঠিকমত হয় না। এত এত ভেজাল, মেধার বিকাশ হবে ক্যামতে ...:P;)

২০ শে জুন, ২০১৯ সকাল ১০:১১

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: হাহাহা। :D :P

২| ২০ শে জুন, ২০১৯ রাত ১২:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: আমার সমস্যা হলো ক্ষুধা পেলে হাম হাম করে খেয়ে নিই। খাবার টা ভালো কিনা তা জানি না।

২০ শে জুন, ২০১৯ সকাল ১০:১০

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: দেশে থাকতে আমিও হাম হুম করেই খেতাম। টেস্টকে প্রাধান্য দিতাম, কোয়ালিটিকে নয়। :)

৩| ২০ শে জুন, ২০১৯ সকাল ৮:৫৪

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
ফল প্রিজার্ভেটিভ আমেরিকায়ও আছে। দিচ্ছে।
কানাডার আপেল, মেক্সিকোর আম গুয়েতেমালার কলা দিনের পর দিন ঝুলতেছে, বাসায় আনলে ৫ দিনেও পচে না

২০ শে জুন, ২০১৯ সকাল ১০:১০

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: যেকোন প্রিজারভেটিভ বা কেমিক্যাল একটা নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত টক্সিক হয় না। কলা আনছেন, পাঁচ দিনে পঁচে না (আমার কেনা কলাতো ভাই তিন চারদিনেই কালো হয়ে যায়, আমি অ্যামেরিকায় থাকি)। কিন্তু সেই কলা এক মাস দুইমাস অক্ষত থাকে না। দেশের অবস্থা এমন হয়েছে যে চার পাঁচ মাস পুরানো আপেলও পঁচে না। এমন ভিডিও করে ফেসবুকে দিয়েছে মানুষ।
আমার নিজের স্যারের বাড়িতে একবার তিনি বাজার থেকে কেনা রুই ফ্রিজে না রেখে এক সপ্তাহের জন্য বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে দেখেন মাছ অক্ষত।

৪| ২০ শে জুন, ২০১৯ দুপুর ১:২৭

পুলক ঢালী বলেছেন: এত ছোট দেশে এত মানুষের খাবার যোগাতে এখন সব হাইব্রীড হয়ে গেছে, জেনেটিক্যালি মডিফায়েড খাবার আমাদের জেনোম কোড বদলে ফেলছে তাই দাদা দাদীরা ১০০ বৎসর বাঁচলেও আমরা ৫০ এর মধ্যেই থাকি এর সাথে :D বোঝার উপর শাকের আঁটির মত ভেজালখাবার আর পেষ্টিসাইড ব্যবহার তো আছেই। :D
(মজা করলুম)

৫| ২০ শে জুন, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪১

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: আমাদের দেশে খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল মিশ্রণকে attempt to murder হিসেবে কবে থেকে গণ্য করা হবে? সহমত।

৬| ২০ শে জুন, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫৪

মেঘ প্রিয় বালক বলেছেন: এত জেল জরিমানা করার পরেও এরা থেমে নেই খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল মিশ্রণে। দিন যত বাড়ছে,তাদের অপরাধের সীমা বাড়ছে। মার্কেটে নতুন নতুন ভেজালে সয়লাভ।

৭| ২০ শে জুন, ২০১৯ রাত ১০:১৫

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: যারা ট্রল করে তারাও দেশ প্রামিক।সমস্যা হলো তাঁদের মাঝে আবেগ বেশী।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.