নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
ফেসবুকে বাংলাদেশিদের এই বিশ্বকাপের হট টপিক বাংলাদেশের সেমিফাইনাল সম্ভাবনা নয়, বরং এক দল দর্শকের পতাকার উপর দাঁড়িয়ে নামাজ আদায়। কয়েকটি ছবি শেয়ার হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাকে জায়নামাজ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এবং সংগত কারণেই এই বিষয়ে দেশ দুইভাগে ভাগ হয়ে গেছে। একদল দাবি করছে এতে পতাকার অসম্মান করা হয়েছে। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছেন তাঁরা।
অপরপক্ষ এতে কোনই দোষ খুঁজে পাচ্ছেন না। তাঁদের দাবি, মুসলিমদের জন্য সবচেয়ে পবিত্র বস্তুর একটি হচ্ছে তাঁর নামাজের স্থান। জাতীয় পতাকাকে তাই নামাজের জায়নামাজ হিসেবে ব্যবহার করায় তাই একে মোটেও অসম্মান করা হয়নি।
এখানে দুইটি ইস্যু উঠে এসেছে। জাতীয় পতাকা এবং নামাজ।
দুই ইস্যুতেই আমি আমার স্বভাবসুলভ কিছু বক্তব্য পেশ করবো। দেখুন যুক্তিযুক্ত মনে হয় কিনা।
প্রথমে জাতীয় পতাকা ইস্যুতেই আসা যাক।
সবার আগে লক্ষ্য করুন, কাজগুলো করছে প্রবাসী বাঙালিরা। আপাত দৃষ্টিতে অগুরুত্বপূর্ণ মনে হলেও এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট বলে আমি মনে করি। আমি নিজে প্রবাসী, এবং আমি exactly প্রবাসীদের পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে দেখতে পারছি তাঁদের অবস্থান।
প্রতিটা দেশের জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীতের কিছু নিয়ম আছে। দেশভেদে নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটে। আমি বাংলাদেশী - অ্যামেরিকান। অ্যামেরিকার জাতীয় পতাকার ডিজাইনের ব্রা পেন্টি, ছেলেদের আন্ডারওয়্যার, স্যান্ডেল ইত্যাদি অহরহ বিক্রি হয়। ওদের কাছে এটাও দেশপ্রেম। জাতীয় দিবসে কুকুরের গায়ে পতাকা মুড়িয়ে পার্কে হাঁটতে বেরোয়। লোকজন দেশপ্রেম দেখে বাহবাহ দেয়।
আপনি কী জানেন, অ্যামেরিকান জাতীয় পতাকা আগুনে পোড়ানোও কোন দন্ডনীয় অপরাধ নয়?
এই কাজগুলো আমাদের জাতীয় পতাকা নিয়ে করেন, আপনাকে ছিঁড়ে ফেলা হবে। আমাদের দেশে বেশ কিছু বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একটি ছেলে কোন এক জাতীয় দিবসে দেশপ্রেম দেখাতে গিয়ে নিজের পিটবুল কুকুরকে জাতীয় পতাকার জার্সি পড়িয়ে বাইরে হাঁটতে বেরিয়েছিল। লোকজনের গালাগালি শুনে সে অফ গিয়েছে। তবে, যতদূর মনে পরে ছেলেটির গায়েও জাতীয় পতাকার পোশাক ছিল। কেউ সেটি নিয়ে একটি বাক্যও বলেনি। ওটাও কিন্তু নিষেধ।
বা এক স্বনামধন্য অভিনেতার স্বনামধন্য স্ত্রীও নিজের কুকুরকে জাতীয় পতাকা জড়িয়ে ছবি দিয়েছিলেন। সেটি নিয়েও জল কম ঘোলা হয়নি।
বিদেশে লোকজন নিজের মৃত আত্মীয়স্বজনকে সম্মান জানাতে নিজের কুকুরের নাম তাঁর নামে রাখেন। আমাদের দেশে এই কাজ করলে কেয়ামত নেমে আসবে।
বা জেনিফার লোপেজ কিছুদিন আগে এক ইন্টারন্যাশনাল ডান্স কম্পিটিশনে এক ইন্ডিয়ান ডান্স গ্রূপের পারফরম্যান্স দেখে তাঁদের দিকে জুতা ছুঁড়ে মেরেছিলেন। তবে তিনি বলেছিলেন, "আমার সংস্কৃতিতে কারোর কাজে মুগ্ধ হলে আমরা জুতা ছুঁড়ে মারি। আমি জীবনে এই প্রথম তোমাদের দিকে আমার জুতা ছুঁড়ে দিচ্ছি।"
জুতার মূল্য ছিল পাঁচ কোটি রুপি!
আর আমাদের দেশে জুতা ছোড়া মানে কী সেটা ব্যাখ্যায় নাই বা গেলাম।
তাই বিভিন্ন দেশের সভ্যতা ও সংস্কৃতির সাথে অমিল রেখেই আমাদের জাতীয় পতাকার কিছু নিয়মাবলী আছে যেগুলো কয়জন জানেন এবং মানেন দেখা যাক।
১. আপনি পোশাকের (চাদর) মতন গায়ে জড়াতে পারবেন না। আপনি জাতীয় পতাকা নির্মিত পোশাকও পড়তে পারবেন না। একবার এক মহিলাকে দেখেছিলাম জাতীয় পতাকার শাড়ি গায়ে জড়িয়েছেন। কেবলমাত্র কোন মৃতব্যক্তিকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় কবর দিতে হলে তখনই কেবল জাতীয় পতাকায় আচ্ছাদিত করতে পারবেন। ক্রিকেট খেলায় দর্শকের গ্যালারিতে লোকজনকে এমনকি মাঝে মাঝে ক্রিকেটারদের পর্যন্ত পতাকা গায়ে জড়ানো অবস্থায় যে দেখি, সেটিও কিন্তু জাতীয় পতাকার নিয়ম লঙ্ঘন। কয়জন জানেন?
একই ব্যাপারে আমার প্রশ্ন হচ্ছে, অনেক জ্বালাময়ী তরুণ তরুণীকে দেখি মাথায় জাতীয় পতাকা জড়িয়ে স্লোগান দিতে, বা দেশপ্রেম প্রকাশ করতে। নিয়মাবলীতে এই বিষয়ে স্পষ্ট কোন নির্দেশনা পাইনি। তবে যতদূর মনে হলো এটিও পোশাকের মতোই গৃহীত হবে এবং নিষিদ্ধ হবে। কী মনে হয় আপনাদের?
২. আমাদের জাতীয় পতাকা আপনি উত্তোলন করলে সন্ধ্যার মধ্যে তা সসম্মানে নামিয়ে আনতে হবে। রাতের অন্ধকারে জাতীয় পতাকা উড়তে পারবে না।
৩. জাতীয় পতাকা পুরানো হয়ে গেলে, ব্যবহারের যোগ্যতা হারালে, আপনি তা যেখানে সেখানে ফেলে দিতে পারবেন না। আপনাকে সসম্মানে কবরস্থ করতে হবে।
আমাদের যেকোন জাতীয় দিবসে আমরা কাগজের পতাকা হাতে নিয়ে ঘুরাঘুরি করি, ছবি তুলি, এবং কাজ শেষে আস্তাকুড়ে ফেলে দেই। ঘটনা এমনটাই ঘটেনা?
৪. জাতীয় পতাকার উপর কোন কিছু লেখালেখি করতে পারবেন না। কোন অনুষ্ঠানের মঞ্চের পেছনের পর্দা হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন না। একবার এক মুক্তিযুদ্ধের অনুষ্ঠানে এই কাজ করতে দেখেছিলাম। পতাকার উপর লিখেছে "অমুক আলোচনা সভা।" ডুড জেনারেশন যখন অনুষ্ঠান আয়োজন শুরু করে, তখন এই কান্ড হয়।
ইত্যাদি ইত্যাদি আরও নিয়ম কানুন আছে। আমি নিচে সেই সুবিশাল তালিকা দিয়ে দিচ্ছি। অবশ্যই পড়ে নিবেন। তবে এখন মূল বক্তব্যে ফেরা যাক।
তা আমি কিভাবে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার নিয়ম জানি? কারন আমি জীবনের অর্ধেকের বেশি সময় বাংলাদেশে বড় হয়েছি, স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশের পড়াশোনা সেখানেই, এবং আমাদের যুগে ফেসবুক ছিল না। স্কুলে থাকতেই আমাদের জাতীয়পতাকার নিয়মকানুন শেখানো হতো। যদিও স্কুলের সব সিলেবাস মন দিয়ে পড়তাম না, কেন যেন এই বিষয়টা মুখস্ত ছিল আমার।
প্রবাসীরা সেই সুযোগ পাচ্ছে? না। ওদের বেশিরভাগের স্কুল কলেজ ইত্যাদি পড়াশোনা প্রবাসে। তাঁদের স্কুলে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার নিয়ম শেখানো হবে কেন এইটা আমাকে কেউ ব্যাখ্যা করতে পারলে করেন।
তাই ওরা বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের সময়ে বুকে হাত দিয়ে গায়। দেশেও অবশ্য অনেককে দেখি এইভাবে গাইতে। এইটা কিন্তু নিয়ম বহির্ভূত। জানেন?
এখন, কথা হচ্ছে, বাংলাদেশে বেড়ে ওঠা লোকজনের সবাই কী জাতীয় পতাকার নিয়ম জানেন? না। কারন, স্কুল কলেজে কতটা গুরুত্বের সাথে এই বিষয় পড়ানো হয় তা নিয়ে একটা প্রশ্ন থাকে। পড়ালেও কয়জন ছাত্রছাত্রী মন দিয়ে তা পড়েন, সেটা নিয়েই ডাউট আছে।
গণজাগরণ মঞ্চের একদম শুরুর দিকে আমি খুবই হতভম্ভ হয়ে গিয়েছিলাম যখন ফেসবুকে দেখেছিলাম রাজাকারের ফাঁসি দাবি করা একদল তরুণ তরুণী জাতীয় পতাকাকে কার্পেটের মতন শাহবাগের রাস্তায় বিছিয়ে রেখে তাঁর উপর বসে স্লোগান দিচ্ছে। ভিড়ের ঠ্যালায় কেউ কেউ পতাকার উপরও দাঁড়িয়ে গেছে। অনেকেরই হয়তো ঘটনাটি মনে পড়বে।
বিষয়টা ফটোশপড ছিল না। যে আপলোড করেছিল, সে নিজে গনজাগরনের পক্ষের লোক, রাজাকারের বিপক্ষের লোক, এবং সে খোলা মনেই ছবিটা আপলোড করেছিল। সে এতে কোন "ভুল" আছে বুঝতে পারেনি। যখন বুঝতে পেরেছে, তখন ডিলিট করেছে।
ভাগ্য ভাল কারোর নজরে পড়েছিল, ধমক দিয়ে হলেও এই ফাজলামি বন্ধ করেছিল।
একই ঘটনা এখন দেখছি নামাজের ক্ষেত্রে। লোকজন জায়নামাজ বানিয়ে জাতীয় পতাকার উপর দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের পতাকার উপর পা দেয়ার অধিকার কোন বাঙালির নাই। এটা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। আপনার মনে যতই দেশপ্রেম থাকুক না কেন, আপনি যতই পরিষ্কার মনে তা করে থাকেন না কেন। আপনি যদি নিজের বাবাকে শ্রদ্ধা করেন, তবে আপনাকে কিছু আদব কায়দা মেনেই সেই শ্রদ্ধা ভালবাসা প্রদর্শন করতে হবে। বাবাকে চড় থাপ্পড় দিয়ে যদি দাবি করেন ভালবাসেন, তাহলেতো সমস্যা।
যেহেতু ছবির বেশিরভাগই প্রবাসী, তাই ধরে নিচ্ছি ওরা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার নিয়মকানুন জানেনা। যেখানে উপরে উল্লেখ করা কয়েকটি ঘটনায় একদল তরুণ তরুণী দেশে থেকেও জানে না, প্রবাসীদের থেকে এইটা আশা করাটা একটু বেশি বেশিই হয়ে যায়।
তাহলে সুষ্ঠুভাবে সমাধান কিভাবে করা যায়?
১. প্রিয় দেশবাসী ভাইয়েরা ও বোনেরা, আল্লাহর ওয়াস্তে, জাতীয় পতাকা হাতে তোলার আগে ভালভাবে এর নিয়ম কানুন জেনে নিন। ওটা কোন ফাজলামির বিষয় না। ওটার মূল্য তিরিশ লক্ষ প্রাণ।
২. যদি কখনও দেখেন কেউ জাতীয় পতাকার উপর দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ছে, সাথে সাথে ছবি তুলে ফেসবুকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিয়ে লোকজনের মধ্যে ঘৃণা অশান্তি না ছড়িয়ে বরং ওদের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলুন কাজটি অন্যায় হচ্ছে। জাতীয় পতাকা মাটিতে বিছানো নিষেধ, এবং তাঁর উপর দাঁড়ানোও অন্যায়। আপনি বুঝালে সাথে সাথে তারা মানতে চাইবে না। তখন অবশ্যই আপনি রেফারেন্স/নিয়মাবলী দেখিয়ে দিতে পারেন। যে মোবাইলের ছবি তুলে আপলোড করার ক্ষমতা আছে, সেই একই মোবাইলে জাতীয় পতাকার নিয়মাবলী খুঁজে বের করারও অপশন আছে। এখন বিষয়টা আপনার উপর যে আপনি কী ওদের শুধরে দেয়ার মতন ভাল কাজের সাথে যুক্ত থাকতে ইচ্ছুক কিনা।
৩. আমাদের সবারই বেনিফিট অফ ডাউট দেয়ার অভ্যাস থাকতে হবে। আমাদের বুঝতে হবে সংগত কারণেই প্রবাসীরা দেশের সাধারণ নিয়ম কানুনের ব্যাপারে অজ্ঞ। যে কাজগুলো করেছে, সে দেশকে সাপোর্ট দিতেই পতাকা হাতে স্টেডিয়ামে গিয়েছে। দেশপ্রেম তাঁরও আছে বলেই কাজটা করেছে। অজ্ঞতার কারনে মূর্খের মতন আচরণ করেছে, কিন্তু হয়তো তাঁর মন পরিষ্কার। মনের খবর যেহেতু আমরা জানিনা, তাই বেনিফিট অফ ডাউট দিচ্ছি। সাধারণ বুদ্ধি বিবেচনা বলে যে যদি অপমান করতেই চাইতো, তাহলে স্যান্ডেল জুতা পাশে রেখে খালি পায়ে পতাকার উপর দাঁড়াতো না। জায়নামাজ অপমানের মাধ্যম না।
৪. মুসলিম ভাইদের জন্য প্রশ্ন, নামাজ পড়ার সময়ে জায়নামাজ থাকা কী জরুরি? উত্তর হচ্ছে, না। স্থান পবিত্র হতে হবে এইটা শর্ত। কিন্তু বিদেশের মাটিতে যেখানে সেখানে কফ থুথু বা পেশাব পায়খানা থাকেনা। মাটি এমনিতেই পবিত্র। পানি না থাকলে আমরা তায়াম্মুম করি কী দিয়ে? তাই মাটিতে সিজদা দিতে কোন দ্বিধা থাকা উচিৎ না। একটি সহীহ হাদিস বর্ণনা করা যাক। আমাদের নবীর (সঃ) মসজিদে কোন ছাদ ছিল না। বৃষ্টির পানিতে মেঝেতে কাদা পানি জমে যেত। তখনও তিনি সেখানে নামাজ পড়তেন। সিজদাহ দিতেন। "সুবহানা রাব্বিয়াল আলা" বলে মাথা তুললে দেখা যেত তাঁর কপাল, মুখ সব কাদা আর মাটিতে মাখামাখি। যদি রাসূলুল্লাহর কোন সমস্যা না হয়ে থাকে, আপনি আমি কে যে আমাদের কপালে সামান্য ধূলিকণা লাগতে পারবে না? তারপরেও যদি মনে খুঁতখুঁত থাকে, তাহলে স্যান্ডেল জুতা পায়ে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ুন। আপনাকে খালি পায়েই নামাজ আদায় করতে হবে এমন শর্ত নেই। সাহাবীগণ জুতা পায়েই নামাজ আদায় করতেন। এবং সিজদার স্থানে একটি টিস্যু, এক টুকরা কাগজ, কিংবা রুমাল রেখে দিন। এই সামান্য কাজটা করলেই অনেক বড় জটিলতা থেকে বেঁচে যাবেন।
বাংলাদেশী হলে জাতীয় পতাকার সম্মান করতে শিখুন।
নিচের তালিকা থেকে জেনে নিন জাতীয় পতাকার নিয়মাবলী: (ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত)
১। এমন কোন স্থানে পতাকা টানানো যাবে না যেখানে পতাকার সম্মানহানি হতে পারে।
২। পতাকা দিয়ে মোটরযান, রেলগাড়ি অথবা নৌযানের খোল, সম্মুখভাগ অথবা পেছনের অংশ কোন অবস্থাতেই ঢেকে দেওয়া যাবে না।
৩। যেক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের পতাকা অথবা রঙিন পতাকার সাথে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ উত্তোলন করা হয়, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের পতাকাকে সম্মান প্রদর্শনের জন্য স্থান সংরক্ষিত থাকবে।
৪। যেক্ষেত্রে কেবলমাত্র দুইটি পতাকা অথবা রঙিন পতাকা উত্তোলন করা হয়, সেক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ ভবনের ডানদিকে উত্তোলন করা হবে।
৫। যেক্ষেত্রে পতাকার সংখ্যা দুইয়ের অধিক হয়, সেক্ষেত্রে অযুগ্ম সংখ্যক পতাকার ক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ মধ্যখানে এবং যুগ্ম সংখ্যক পতাকার ক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ মধ্যভাগের ডানদিকে উত্তোলন করা হবে।
৬। যেক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ অন্য পতাকার সাথে আড়াআড়িভাবে কোন দণ্ডে দেয়ালের বিপরীতে উত্তোলন করা হয়, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের পতাকা অন্য পতাকার ডানদিকে আড়াআড়িভাবে থাকবে (আড়াআড়িভাবে যুক্ত পতাকা দুইটির দিকে মুখ করে দণ্ডায়মান ব্যক্তির বামদিকে) এবং পতাকা দণ্ডটি অন্য পতাকা দণ্ড থেকে কিছুটা সামনে স্থাপিত হবে।
৭। ‘বাংলাদেশের পতাকা’র উপরে অন্য কোন পতাকা বা রঙিন পতাকা উত্তোলন করা যাবে না।
৮। ‘বাংলাদেশের পতাকা’ শোভাযাত্রার মধ্যভাগে বহন করা যাবে অথবা সৈন্য দলের অগ্রগমন পথে (Line of March) শোভাযাত্রার ডানদিকে বহন করতে হবে।
৯। মর্যাদার প্রতীক সম্বলিত ঢালে (escutcheons) অযুগ্ম সংখ্যক পতাকার ক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ মধ্যভাগে এবং সর্বোচ্চ কেন্দ্রে থাকবে এবং যুগ্ম সংখ্যক পতাকার ক্ষেত্রে ঢালের ডানদিকে শীর্ষে (ঢালের দিকে মুখ করে দণ্ডায়মান ব্যক্তির বামদিকে) বাংলাদেশের পতাকা স্থাপন করা হবে।
১০। যেক্ষেত্রে অন্য কোন দেশের সহিত ‘বাংলাদেশের পতাকা’ একত্রে উত্তোলন করা হয়, সেক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ প্রথমে উত্তোলন করতে হবে এবং নামানোর সময় সবশেষে নামাতে হবে।
১১। যেক্ষেত্রে দুই বা ততোধিক দেশের পতাকা প্রদর্শিত হয়, সেক্ষেত্রে প্রতিটি পতাকা পৃথক পৃথক দণ্ডে উত্তোলন করা হবে এবং পতাকাসমূহ প্রায় সমান আয়তনের হবে।
১২। যেক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ অর্ধনমিত থাকে, সেক্ষেত্রে প্রথমে সর্বোচ্চ চূড়া পর্যন্ত উত্তোলন করা হবে এবং অতঃপর নামিয়ে অর্ধনমিত অবস্থায় আনা হবে। ঐ দিবসে পতাকা নামানোর সময় পুনরায় উপরিভাগ পর্যন্ত উত্তোলন করা হবে, অতঃপর নামাতে হবে।
১৩। যেক্ষেত্রে দণ্ডের উপর ব্যতীত অন্যভাবে কোন দেয়ালের উপর ‘পতাকা’ প্রদর্শিত হয়, সেক্ষেত্রে তা দেয়ালের সমতলে প্রদর্শিত হবে। কোন পাবলিক অডিটোরিয়াম বা সভায় ‘পতাকা’ প্রদর্শন করতে হলে তা বক্তার পশ্চাতে উপরের দিকে প্রদর্শিত হবে। যেক্ষেত্রে রাস্তার মধ্যখানে পতাকা প্রদর্শিত হয়, সেক্ষেত্রে তা খাড়াভাবে প্রদর্শিত হবে।
১৪। কবরস্থানে ‘জাতীয় পতাকা’ নিচু করা যাবে না বা ভূমি স্পর্শ করানো যাবে না।
১৫। ‘পতাকা’ কোন ব্যক্তি বা জড় বস্তুর দিকে নিম্নমুখী করা যাবে না।
১৬। ‘পতাকা’ কখনই তাঁর নিচের কোন বস্তু যেমন: মেঝে, পানি বা পণ্যদ্রব্য স্পর্শ করবে না।
১৭। ‘পতাকা’ কখনোই আনুভূমিকভাবে বা সমতলে বহন করা যাবে না, সর্বদাই ঊর্ধ্বে এবং মুক্তভাবে থাকিবে।
১৮। ‘বাংলাদেশের পতাকা’ কোন কিছুর আচ্ছাদন হিসাবে ব্যবহার করা যাবে না, তবে শর্ত থাকে যে, কোন বিশিষ্ট ব্যক্তি যাঁকে পূর্ণ সামরিক মর্যাদা বা পূর্ণ আনুষ্ঠানিকতাসহ সমাধিস্থ করা হয়, তাঁর শবযানে পতাকা আচ্ছাদনের অনুমোদন প্রদান করা যেতে পারে।
১৯। ‘পতাকা’ এমনভাবে উত্তোলন, প্রদর্শন, ব্যবহার বা সংরক্ষণ করা যাবে না, যাতে সহজেই ছেঁড়া যেতে পারে বা যে কোনভাবে ময়লা বা নষ্ট হতে পারে।
২০। কোন কিছু গ্রহণ, ধারণ, বহন বা বিলি করার জন্য ‘পতাকা’ ব্যবহার করা যাবে না।
২১। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক আরোপিত কোন শর্তাবলী (যদি থাকে) এবং লিখিত অনুমোদন ব্যতীত, কোন ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য, সম্বোধন, পেশা বা অন্য যে কোন উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের ‘পতাকা’ কোন ট্রেড মার্ক, ডিজাইন, শিরোনাম অথবা কোন প্যাটেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
২২। যেক্ষেত্রে ‘পতাকা’র অবস্থা এমন হয় যে, তা আর ব্যবহার করা যাবে না, নষ্ট হয়ে গেছে, সেক্ষেত্রে তা মর্যাদপূর্ণভাবে, বিশেষ করে সমাধিস্থ করে নিষ্পত্তি করতে হবে।
২৩। ‘পতাকা’ দ্রুত উত্তোলন করতে হবে এবং সসম্মানে নামাতে হবে।
২৪। ‘পতাকা’ উত্তোলন ও নামানোর সময় এবং প্যারেড পরিক্রমণ ও পরিদর্শনের সময় উপস্থিত সকলে ‘পতাকা’র দিকে মুখ করে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে।
২৫। যেক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘পতাকা’ উত্তোলন করা হয়, সেক্ষেত্রে একই সাথে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে হবে। যখন জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয় এবং ‘জাতীয় পতাকা’ প্রদর্শিত হয়, তখন উপস্থিত সকলে ‘পতাকা’র দিকে মুখ করে দাঁড়াবেন। ইউনিফর্ম-ধারীরা স্যালুট-রত থাকবেন। ‘পতাকা’ প্রদর্শন না করা হলে, উপস্থিত সকলে বাদ্য যন্ত্রের দিকে মুখ করে দাঁড়াবেন, ইউনিফর্ম-ধারীরা জাতীয় সঙ্গীতের শুরু হতে শেষ পর্যন্ত স্যালুট-রত থাকবেন।
২৬। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি ব্যতীত, ‘জাতীয় পতাকা’ অর্ধনমিত করা যাবে না, তবে শর্ত থাকে যে, বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনের প্রধান (যে দেশের নিকট তিনি আস্থাভাজন) ইচ্ছা করলে ঐ সকল দিবসে ‘পতাকা’ অর্ধনমিত রাখতে পারবেন, যে সকল দিবসে উক্ত দেশে, সরকারীভাবে ‘পতাকা’ অর্ধনমিত রাখা হয়।
* উপরোক্ত নিয়ম গুলো 'বাংলাদেশ পতাকা রুলস, ১৯৭২ তে তালিকাভূক্ত আছে।
বিজয়ের মাসে পতাকা টাঙানোর আগে খেয়াল করুন:
১। পতাকার আদর্শ মাপ ১০:৬। সঠিক মাপ ও সঠিক রঙ এর পতাকা তৈরি করে সোজা দন্ডের চূড়ায় উড়াতে হবে।
২। মোটর গাড়ী, নৌযান এবং উড়োজাহাজ ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সূর্যোদয় হতে সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত ‘পতাকা’ উত্তোলিত থাকবে। সুর্যাস্তের পূর্বে পতাকা নামাতে হবে।
৩। যেক্ষেত্রে মোটর গাড়ীতে ‘পতাকা’ প্রদর্শন করা হয়, সেইক্ষেত্রে গাড়ীর চেসিস অথবা রেডিয়েটর ক্যাপের ক্ল্যাম্পের সাথে পতাকা দন্ড দৃঢ়ভাবে আটকাতে হবে।
৪। পতাকায় কোন কিছু লিখে বা অঙ্কন করে উড়ানো যাবে না।
৫। ভবনে ব্যবহারের জন্য পতাকার বিভিন্ন মাপ হলো—১০ ফুট/৬ ফুট, ৫ ফুট/৩ ফুট, ২.৫ ফুট /১.৫ ফুট। মোটরগাড়িতে ব্যবহারের জন্য পতাকার বিভিন্ন মাপ হলো—১৫ ইঞ্চি/৯ ইঞ্চি, ১০ ইঞ্চি/৬ ইঞ্চি।
অবমাননার শাস্তি:
২০১০ সালের জুলাই মাসে এই আইন সংশোধিত হয়। এই সংশোধনীতে সর্বোচ্চ ২ বছর পর্যন্ত শাস্তি এবং ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ডে বিধান রাখা হয়।
২৮ শে জুন, ২০১৯ রাত ১২:৩১
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: যেই ব্যাটা ছবি ছড়িয়েছে, তার ইনটেনশন খারাপ ছিল বলেই কাজটা করেছে।
উল্টো যারা পতাকায় নামাজ পড়েছে, তাঁদের ইনটেনশন খারাপ ছিল বলে মনে হয় না।
অথচ লোকজন বদমাইশ ও দাঙ্গা সৃষ্টিকারী ফাজিল ফটোগ্রাফারের পোস্টের পক্ষ নিয়েই হৈচৈ করেছে। আফসোস!
২| ২৬ শে জুন, ২০১৯ রাত ১:০৮
রাজীব নুর বলেছেন: ছবিটা দেখেছি।
সহজ ভাবেই দেখেছি বিষয়টা। মাথায় রক্ত উঠে যায়নি।
লেখা সুন্দর হয়েছে। সহমত।
২৮ শে জুন, ২০১৯ রাত ১২:৩২
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: আপনি সহজভাবে নিয়েছেন কারন আপনার মনটা পরিষ্কার। অতি চেতনাবাজরা চেতনার ঠ্যালায় ফাজলামি শুরু করে। আজকে "নামাজ পড়েছে" বলে যাদের চিৎকার করতে দেখছি, শাহবাগের পতাকার অসম্মানের ঘটনায় কাউকে দেখলাম না সেভাবে প্রতিবাদ করতে। ওদের সমস্যাটা মনে হয় "নামাজে।" স্লোগানে না।
৩| ২৬ শে জুন, ২০১৯ বিকাল ৪:২৪
মাহমুদুর রহমান বলেছেন: মানুষ আজ নিষিদ্ধ জিনিসকে সিদ্ধ রুপে গ্রহন করছে আর সিদ্ধ জিনিসগুলোকে নিষিদ্ধ রুপে গ্রহন করছে।আর এই ব্যাপারটা কেয়ামতেরই আলামত।
২৮ শে জুন, ২০১৯ রাত ১২:৩৩
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন:
©somewhere in net ltd.
১| ২৫ শে জুন, ২০১৯ রাত ১১:৩৭
পাঠকের প্রতিক্রিয়া ! বলেছেন: পতাকার উপর নামায পড়ার ছবি যে তুলেছে ঐ ব্যাটাও ভন্ড। লাইক, কমেন্ট, হিট আর ভাইরাল হবার জন্য এটা করেছে।
পোস্ট প্রিয়তে, কাজে লাগবে।
পুনশ্চঃ ড্রয়ারের মধ্যে পতাকা রাখার কোন নিয়ম আছে নাকি?