নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রিয়া শাহা

২৬ শে জুলাই, ২০১৯ ভোর ৪:০৩

প্রিয়া সাহার ব্যাপার নিয়ে (আমি বলেছিলাম ট্রাম্পের সামনে অমন কথা বলে তিনি কাজটি ঠিক করেননি) এক বড় ভাইর সাথে কথা হচ্ছিল (তিনি বলছেন তিনি ঠিক করেছেন)। মানে ব্যাপারটি থেকে আমি হাত ধুয়ে ফেললেও (আমার চোখে ব্যাপারটি এতটাই নগন্য, বরং গণপিটুনি, ডেঙ্গু বা বন্যা অনেক বড় ইস্যু) তিনি নিজের পয়েন্ট অফ ভিউ বলছিলেন আর কি। সেই কথোপকথনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ফুটে উঠেছে, যা এখানে বলা জরুরি বলে মনে করি।

১. এইটা ঠিক, বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের আগে পরে সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়ে আসছে। যে যাই বলুক না কেন, হাজার বছরের ইতিহাসে ভারতের মানচিত্রে ছুরি চালানো হয়েছেই আমাদের সাম্প্রদায়িক আচরণের জন্য। এইটা ঐতিহাসিক ফ্যাক্ট। এই অভ্যাস আমাদের রক্তে ইতিহাস জুড়েই মিশে ছিল। বলিউডের সিনেমায় যতই দেখাক না কেন যে আমরা হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিষ্টান এক জাতি ছিলাম, মিলে মিশে থাকতাম এবং ইংরেজরা এসেই আমাদের বিভক্ত করেছে, ব্লা ব্লা ব্লা; বাস্তবে সত্য হচ্ছে আমরা ঐতিহাসিকভাবেই একে অপরের বিরুদ্ধে লড়ে বড় হয়েছি। ভারতের ইতিহাস পড়ুন, মারাঠারা লড়েছে মুঘলদের সাথে, মুঘলরা লড়েছে রাজপুতদের সাথে, শিখরা লড়েছে মুসলিমদের সাথে, দক্ষিণীরা লড়েছে উত্তরের সাথে, আরিয়ানরা লড়েছে দ্রাবিড়দের সাথে, মুসলিমরা লড়েছে নিজেদের সাথে, এ লড়েছে তার সাথে, অমুক লড়েছে তমুকের সাথে.............। সহজ কথায়, ব্রিটিশরা কেবল একটি বাণিজ্য করতে আসা কোম্পানি হয়েও এত সহজে আমাদের জয় করতে পেরেছে কারন আমরা একতাবদ্ধ ছিলাম না। কখনই না। ব্রিটিশরা যদি উপমহাদেশের দখল না নিত, তাহলে বর্তমানে ভারত মাত্র তিনটি দেশে ভাগ হতো না। পাঞ্জাবের শিখদের একটি রাষ্ট্র থাকতো, মুসলিমদের থাকতো আরেকটা। বালুচিদের একটি রাষ্ট্র থাকতো, পশতু পাঠানদের আলাদা। দক্ষিণ ভারতের কয়টা রাষ্ট্র হতো কে জানে। কাশ্মীর, আসাম, ত্রিপুরা ইত্যাদি সব আলাদা থাকতো। বিশ্বাস না হলে প্রত্যেকের ইতিহাস বইয়ে একটু চোখ বুলান। সহজ কথায়, এর ওর পেছনে লাগার অভ্যাস আমাদের মজ্জাগত। সেই অভ্যাস এখনও আছে। এখনও আমরা সুযোগ পেলেই সংখ্যালঘুর পেছনে লাগি। যখন সংখ্যালঘু খুঁজে পাই না, আমরা তখন নিজেরা নিজেদের বিরুদ্ধে লাগি। আমি বিএনপি করলে আর ও আওয়ামীলীগ করলে আমরা লেগে যাই। এমনকি আওয়ামীলীগও আওয়ামীলীগের পেছনে লাগার ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই খবরে আসে। আসে না? চিটাগংয়ের লোকেরা নোয়াখালীকে দেখতে পারেনা, নোয়াখালীর লোকেরা বরিশালের লোকজনকে অপছন্দ করে। সিলেটের লোকেরাতো গোটা বাংলাদেশকেই বলে বেঙ্গলি। বুঝতে পারছেন আমরা কতটা সাম্প্রদায়িক দেশ? একতাবদ্ধ হয়ে থাকার মানসিকতা আমাদের নেই। আরও প্রমান লাগবে? নাকি এতেই বুঝে গেছেন? তাই "হিন্দুদের উপর আমাদের দেশে নির্যাতন হয়না" জাতীয় কথাবার্তা এক কথায় উড়িয়ে দিতে পারবেন না। আপনাকে স্বীকার করতেই হবে দেশে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন হয়।
আবার পাশাপাশি এও মানতেই হবে "শুধু" হিন্দুদের উপর আমাদের দেশে অত্যাচার হয়না। নির্যাতনের কাতারে হিন্দু মুসলিম তথা সাধারণ মানুষের সবাই আছেন। আমরা সাম্প্রদায়িক দেশ এই কথা সত্য, আবার আমরাই মিলেমিশে থাকি, এও সত্য। আমরাই পৃথিবীর গুটিকতক দেশের একটি যেখানে ঈদের দিনও ছুটি থাকে, পূজায়ও ছুটি থাকে। কত হিন্দুর বাড়িতে গিয়ে ভাত খেলাম, খাওয়ালাম, এইসব দোষগুণ নিয়েই আমরা বাঙালি।

২. তাহলে উপরের পয়েন্টে আশা করি এই ব্যাপারটা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে যে বিশ্বের আরও অন্যান্য যেকোন দেশের মতোই সংখ্যালঘু নির্যাতন বাংলাদেশে ঘটে। এখন গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা এই হতে পারে যে সেই ঘটনা কতটা ব্যাপক। যেমন, বাংলাদেশে পূজা মন্ডপ ভাংচুরের ঘটনা প্রতিবছর ঘটে। তাই এটি স্রেফ বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে আপনি একে ধামাচাপা দিতে পারবেন না। যদি দশ বারো বছরে একবার ঘটতো, তখন বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলা যেত।
সাথে, আপনাকে এও মাথায় রাখতে হবে যে হাজার হাজার পূজা মন্ডপের মধ্যে কয়েকশো মন্ডপ ভাংচুর হলে শতকরা হিসেবে সেটি কত দাঁড়ায়। এতটাই যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতন এক সাম্প্রদায়িক কীটতুল্য বদমাইশের কানে তুলতে হবে?
আমি একটু ছোট উদাহরণ দেই।
আমরা মুসলিমরা অ্যামেরিকায় মাইনোরিটি। আমি থাকি সাউথের স্টেটে, যেখানে রেসিস্ট মানুষ গিজগিজ করে। এরা এতটাই রেসিস্ট যে সাদা চামড়ার লোকেরা কেবলমাত্র সমমনা সাদা চামড়ার লোক বাদে কালো, মুসলিম, ইহুদি, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, চাইনিজ, জাপানিজ কাউকেই দুইচোখে দেখতে পারেনা। ইমিগ্র্যান্টদের ঘেন্না করে, সে ইউরোপিয়ান হলেও। তাই ট্রাম্প নির্বাচিত হবার পরপরই এক মুসলিম ভদ্রলোকের গাড়িতে আগুন জ্বালানোর ঘটনা ঘটেছিল। নিউইয়র্কের ফিফ্থ এভিনিউতে (এখানকার গাউছিয়া-নিউমার্কেট) এক হিজাবি মহিলার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছিল। মসজিদে আগুন দেয়ার ঘটনা অহরহই ঘটে। বোরখা পরিহিতা রমণীর দিকে ডার্টি লুক্স খোদ মুসলিমরাই দেয়, রেসিস্টদের নাম নেব কি। কিন্তু ওভারঅল হিসেবে এইসব ঘটনার পার্সেন্টেজ কত? এতটাই যে আমরা মুসলিম বিশ্বের নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করবো? নেতাদের কথা বাদই দেই, সন্ত্রাসী জঙ্গি সংগঠন আলকায়েদা, বা আইসিসকে কোন অ্যামেরিকান মুসলিম গিয়ে যদি বলে মুসলিম নারীর গায়ে আগুন জ্বালানো হয়েছে, মসজিদ আগুনে পুড়েছে - তাহলে কেমন হবে বিষয়টা? নিও নাৎজি, হোয়াইট সুপ্রিমিস্টদের নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছেও তেমনি এই অভিযোগ করলে ব্যক্তিগত লাভের চেয়ে বৃহত্তর ক্ষতির সম্ভাবনাই কী বেশি হবার কথা নয়?
বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নিয়ে আমি চিন্তিত না। তা এমনিতেও বিদেশিদের কাছে কোন ঘোড়ার আন্ডা ভাল নেই। কেন নেই জানেন? শুধুমাত্র কয়েকটা উদাহরণ দেই, বুঝতে পারবেন।
অ্যামেরিকা আসার জন্য যখন এক সময়ে ডিভি ভিসা নিয়ম আমাদের দেশে ছিল, তখন এমনও দেখেছি দশটি আলাদা নামে (অনেকের ক্ষেত্রে সংখ্যা একশো) একই লোক এপ্লাই করতেন। লটারিতে যেই নাম উঠবে, সেই নামে তিনি পাসপোর্ট আইডি বানিয়ে অ্যামেরিকা চলে আসবেন। এইটা কী প্রতারণা নয়?
সিটিজেন বিয়ে করে বিদেশে পাড়ি দেয়ার ঘটনা অতি কমন। আমরা কী শুরু করলাম? এক মেয়ে বিয়ে করে বড় ভাই অ্যামেরিকা চলে আসলাম। তারপরে কাগজে কলমে ডিভোর্স দেখিয়ে সেই মেয়ের সাথে ছোট ভাইয়ের বিয়ে দিয়ে ছোট ভাইকে এদেশে নিয়ে আসলাম। তারপরে আবার কাগজে কলমে ডিভোর্স দিয়ে অমুক তমুককে পাড় করলাম। তারপরে আরেক ব্যবসা শুরু হলো। কনট্র্যাক্ট ম্যারেজ। সিটিজেন মেয়ের সাথে বিয়ে হবে, ষাট সত্তুর হাজার ডলার ক্যাশ দিতে হবে। অর্ধেক এডভান্স। বাকিটা গ্রিন কার্ড হাতে পাবার পরে। কিংবা অ্যামেরিকায় ঘুরতে আসার ভিসা নিয়ে এসে থেকে যাওয়া। ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে, ইল্যিগ্যালি থেকে যাও। এইসব কী? ইমিগ্রেশন অফিস এই জিনিস জানার পরে ব্যাপক কড়াকড়ি আরোপ করেছে। আমাদের সাউথ এশিয়ার দেশের ক্ষেত্রেই এই কড়াকড়ি প্রযোজ্য। ক্যানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড বা ইউরোপিয়ান অনেক দেশের নাগরিকের ভিসাও লাগেনা বেড়াতে আসতে।
এখন সমস্যা হচ্ছে, এমনিতেও আমাদের রেপুটেশন খারাপ, তার ওপর যোগ হয়েছে এই অভিযোগ। এমনিতেও আমাদের দেশের স্টুডেন্ট বা কর্মীদের ভিসা পেতে জটিলতা বাড়ছে, এইসব তথ্য সেই জটিলতাকে আরও গিট্টু বাঁধাবে।
মাথায় রাখুন, নাফিস নামের এক ছেলে রিজার্ভ ব্যাংক ওড়াতে গিয়ে ধরা খেয়েছিল। আকাদুল্লাহ বোমা ফাটিয়ে ছিল। কিছুদিন আগেই আরেক ছাগল স্টিং অপারেশনে ধরা খেয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় এক ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট জঙ্গি চেতনায় বাড়ির মালিককে খুন করতে চেয়েছে। এইসবই ওদের রেকর্ডে আছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মাথায় অনেকদিন ধরেই চেইন ইমিগ্রেশন বন্ধ করার ফন্দি রান্না হচ্ছে। সেটা কার্যকর হলে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হবে আমাদের দেশের।

৩. সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি বেদখলের ঘটনা নিয়ে একটি অভিযোগ আছে।
এখানে একটি বিষয় স্পষ্ট করে বলি। আমি (মঞ্জুর) মুসলিম, আমার বাবা (আশরাফ) মুসলিম ছিলেন, আমার দাদা (আজিজুর রহমান) মুসলিম ছিলেন, তাঁর বাবাও (হবিবুসসামাদ) মুসলিম ছিলেন - এইভাবে সাত পুরুষ পর্যন্ত আমার পূর্বপুরুষ যারা ছিলেন, তাঁদের নাম আমরা জানি এবং তাঁদের নাম থেকেই বলতে পারি তাঁরা সবাই মুসলিম ছিলেন। এখন কথা হচ্ছে, আমার দাদার আমলেও আমাদের গ্রামের দিকের বেশ কিছু জমি (একরের হিসেবে অনেক বিশাল এলাকা) বেদখল হয়েছিল। সেই মামলা এখনও আদালতে ঝুলে আছে। আমার বাবার আমলে আমার দাদির কেনা সিলেট শহরের জমির একটা বড় অংশ বেদখল ছিল। অনেক মামলা মোকদ্দমা করেও উদ্ধার করতে পারিনি। পরে নিজেদের আত্মীয় দিয়ে সেই জমি কিনিয়ে আপোষে জমি উদ্ধার করেছি। এবং বাবার কেনা বিছনাকান্দি অঞ্চলে (টুরিস্ট এলাকা, অনেকেই চিনেন) প্রায় চার একর জমি এখন বেদখল হয়ে আছে। যেহেতু সরকারি দলের আশীর্বাদ আছে তাদের উপর, তাই উদ্ধারের আশা আপাতত নাই। এবং আমি বাপ দাদার শিক্ষা থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশে এক পয়সা বিনিয়গের পক্ষপাতি নই। আমি কোমর ভেঙে পরিশ্রম করবো যাতে সরকারের মদদপুষ্ট একদল শূকর সেটা লুটেপুটে খায়, না ভাই। আমার এতটাও দেশপ্রেম নেই। আমি স্বার্থপর? জ্বি ভাই, নিজের কামানো টাকাপয়সার প্রতি যদি কারোর মায়া থাকাকে বা নিজের পরিবারের লোকেদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হওয়াকে যদি স্বার্থপরতা বলে, তাহলে আমি স্বার্থপর। আপনি নিজের সম্পত্তি লুটেরাদের মধ্যে বিলিয়ে দিন। গুড লাক।
তা এখন এই বিষয়টাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন? আমরা কী সংখ্যালঘু? সাত পুরুষেরও বেশি সময় ধরে মুসলিম স্থানীয় এক পরিবারের কোটি কোটি টাকার জমি বেদখল হয়েছে। খোঁজ নিন, আপনার আশেপাশে হাজারে হাজার বাঙালি খুঁজে পাবেন যাদের জীবনেও এমন ঘটনা ঘটেছে। হয় তাঁদের সম্পত্তি কেউ দখল করেছে, নাহয় তারাই কারোর সম্পত্তি বেদখল করেছে। আমাদের দেশের ট্রেন্ডই এইটা। নিজেদের আপন আত্মীয়রাই লুট করছে আপনাদের সম্পত্তি। ভাইয়ের সম্পত্তি খাচ্ছে ভাই। কেবলমাত্র সংখ্যালঘুদের সাথে এমনটা ঘটে না। এখনতো স্বীকার করুন, বিশ্ব মানচিত্রে আমরা কতটা বর্বর জাতি। এভাবেই আমাদের দেশ চলেছে, কত বছর চলবে কে জানে?

৪. ইন্ডিয়াতে আমাদের মুসলিম ভাইদের সাথে কী ঘটছে সেটা দিয়ে নিজের দেশের হিন্দুদের অবস্থান জাস্টিফাই করতে আসবেন না। আমরা যেহেতু ইন্ডিয়াতে থাকিনা, তাই সেই দেশের উদাহরণ টানা চরম মূর্খামি। ওরা গু খেলে আমাদের গু খাওয়া জাস্টিফাইড হয়না। আমরা আমাদের হিন্দুভাইদের প্রতি অন্যায় করলে সেটা অন্যায় হবে। এক অন্যায়ের প্রতিবাদ অন্য অন্যায় দিয়ে হয়না।
আমাদের স্ট্যান্ডার্ড বার উপরে তুলতে হবে। ইন্ডিয়া পাকিস্তানকে স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে নিলে আমরাও জীবনে আগাতে পারবো না। ওরা ওদের ফলো করার মতন আহামরি কিছু করে দেখায়নি।

৫. অনেককেই দেখছি মহিলাকে ডিফেন্ড করতে তার কথার ট্রান্সলেশন করে পজিটিভ ইন্টারপ্রিটেশন করছেন। তারা বলছেন, মহিলা বলেছেন, সাড়ে তিনকোটিরও বেশি সংখ্যালঘু দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। একাত্তুর থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত সংখ্যাটি এত।
কথা হচ্ছে, মহিলা স্পষ্ট উচ্চারনে "ডিজাপিয়ার" শব্দটি উচ্চারণ করেছেন। পৃথিবীর কোন ডিকশনারিতে লেখা আছে ডিজাপিয়ার মানে "দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়া" আমি জানিনা, আমি যেই ডিকশনারি দেখে শব্দটি শিখেছিলাম, সেখানে লেখা এর মানে হচ্ছে, "অদৃশ্য হত্তয়া" "অদর্শন হত্তয়া" "vanish, evanish, be lost, dissolve, evaporate." মানে "গুম।" আমাদের দেশে যেটা এখন অহরহই ঘটছে। তিনি যদি "এক্সপেল" শব্দটি উচ্চারণ করতেন, তাহলে কিছুটা যুক্তি থাকতো। কারন আমি নিশ্চিত, ট্রান্সলেশনকারী না জানলেও ডোনাল্ড ট্রাম্পও ভাল করেই জানেন "ডিজাপিয়ার" এবং "এক্সপেল" দুই শব্দের মধ্যে কতটা পার্থক্য আছে।
এবং মহিলা "৭১ পরবর্তী সময়ের কথা" বলেননি, মহিলা সেই প্রসঙ্গই টানেননি। মহিলার কথা শুনে বরং অতি সাম্প্রতিক ঘটনা বলেই মনে হবে। তাই যিনি সেই মহিলার কথার অমন মিষ্টি ট্রান্সলেশন করেছেন, তিনি আসলে দশে শূন্য পেয়েছেন। তাঁর ইংলিশ টিচার ভাল ছিলেন না।

৬. নিজেকে ডিফেন্ড করতে গিয়ে মহিলা বলেছেন আমাদের মাননীয়া প্রধানমন্ত্রীর থেকে তিনি শিখেছেন। কারন, যখন তিনি তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ছিলেন, তখন তিনি রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে গিয়ে দেশের নামে অমন কথা বলেছেন। এখন তিনিও বলছেন।
কথা ঠিক। আমার মনে আছে ২০০৩ এর দিকে মনে হয়, জর্জ বুশ প্রেসিডেন্ট থাকাবস্থায় শেখ হাসিনা বলেছিলেন "বাংলাদেশ তালেবানে ভরে গেছে।" তখন আফগানিস্তান-অ্যামেরিকা যুদ্ধ চলছে। অবস্থা সঙ্কটময়। এবং একজন নেত্রীর অমন উক্তি। তখনকার সময়ে যারা অ্যামেরিকান ভিসার এপ্লাই করেছিলেন, তাঁরা জানেন কতটা নিবিড়ভাবে তাঁদের ব্যাকগ্রাউন্ড চেক চলেছে।
শুধুমাত্র শেখ হাসিনাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমাদের প্রতিটা রাজনৈতিক নেতা নেত্রী এই কাজ করে এসেছেন। বিদেশে গিয়ে হাত পাতেন, বলেন আমরা কতটা ফকির মিসকিন জাতি। আমাদের ভিক্ষা দাও। তখন অন্যান্য দেশও মুক্ত হস্তে দান করেন। যে যার মতন দেশের পিঠে ছুড়ি মারে। তাই বিদেশিদের কাছে আমাদের রেপুটেশন বরাবরই খারাপ।
একই ভুল এই মহিলাও করলেন। তবে তিনিই প্রথম এই ভুল করেননি। অসংখ্য মানুষের ভিড়ে তিনি একজন মাত্র।

৭. কিছুদিন আগে স্টুডেন্টরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নেমেছিল, মনে আছে? তখন এক সাংবাদিক বিদেশী সংবাদ মাধ্যমে মিথ্যা বানোয়াট কথা বলে দাঙ্গা বাঁধিয়ে দিয়েছিল। এক অভিনেত্রী হিট হওয়ার আশায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে গুজব ছড়িয়ে আবেগী এক লাইভ ভিডিও শেয়ার করে দাঙ্গা বাঁধাতে গিয়েছিল। ঘটনাগুলো মনে আছে? এখানেও ব্যাপারটা তাই হতে পারতো। "তিনকোটি সত্তুর লক্ষ অমুসলিম গুম হয়েছে, আরও আঠারো মিলিয়ন অমুসলিম দেশে আছি। আমাদের সাহায্য করুন। আমরা দেশ ছাড়তে চাইনা।" - খুবই সিরিয়াস আবেদন।
এইসব ব্যাপার অত্যন্ত সেনসিটিভ ইস্যু। ভুল সংখ্যা, ভুল শব্দ চয়ন করে যাকে তাকে যখন তখন এইভাবে বলা যায় না। নিজের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে লোকে লাথি মারে সত্য, কিন্তু সেই লাথিতেও বিবেচনাবোধ থাকতে হয়। নিজের বন্ধুর পেটে লাথি মারা কোন কাজের কথা না।

৮. এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া নিয়ে কিছু কথা বলা যাক।
লোকে যেভাবে এর প্রতিবাদ করেছে, বেশিরভাগেরই সাম্প্রদায়িক রূপটা বেরিয়ে এসেছে। এক ছাগল কিছু দফা দিয়ে আবেদন করে হিট হওয়ার চেষ্টা করেছে। আমি নিশ্চিৎ আপনাদের অনেকেই সেই দাবিদাওয়া ইনবক্সে পেয়েছেন।
"মহিলাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করা হোক।" কেন? তাঁর জন্ম হয়েছে এই দেশে। ওর অধিকার আছে এই দেশে থাকার। তুই কে তাঁকে বের করার? তোর যদি তাঁর পাশে থাকতে আপত্তি হয় তাহলে তুই বিদায় হ।
"মহিলার স্বামীকে চাকরিচ্যুত করা হোক।" - মহিলার স্বামী কী ট্রাম্পের সাথে কথা বলেছে? মহিলা যদি তাঁর স্বামীর সাথে আলোচনা করেও থাকে, তারপরেও তাঁর স্বামীকে এই ইস্যুতে টানার মতন মূর্খামি কেবল অমন পাতা খাওয়া প্রাণীর মাথায়ই আসতে পারে।
"মহিলার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হোক।" - এই যে আসল চেহারা বেড়িয়েছে। সব ঐ অন্যের সম্পদ লুটার ধান্দাবাজি। অন্যে কষ্ট করে কামাবে, আর এইসমস্ত চোর বাটপারের দল ছোটখাটো ইস্যুতে সেই সম্পত্তি দখল নিয়ে বগল বাজাবে।
"মহিলা দেশদ্রোহী।" - মহিলা কতটা দেশদ্রোহী আর এ কতটা দেশপ্রেমী সেটা এক ভিডিওর এক ক্লিপেই প্রমান হয়ে গেল?
এই সমস্ত লোকেরাই মানুষকে "কাফের" "মুনাফেক" "নাস্তিক" "জাহান্নামী" ট্যাগ দিয়ে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে। এদের অবিলম্বে জেলে নিয়ে দুটা ডলার ব্যবস্থা করা উচিত।

উপসংহার টানবো কেবল এইটা বলে যে, যেকোন ঘটনায় আগে পিছে, ডানে বামে উপর নিচ দেখে তারপরে পদক্ষেপ ফেলুন। একজন আমার জমি দখল করেছে। বাড়ি পুড়িয়েছে। সেটা কী আমি মুসলিম, এই কারনে? নাকি ভূমি দখলের লোভে?
এর প্রতিবাদ আমি করবো। আমার দেশে কোন বিচার আমি পাবো না জানি, কিন্তু তাই বলে ট্রাম্পের কাছেও কী বিচার পাবো? ট্রাম্প কী করতে পারবে? কিছু করার ইচ্ছা কী আদৌ হবে? মাঝে দিয়ে অন্যদের বাঁশ মেরে দিব নাতো?
একমহিলা চরম ভুল (ধরলাম অপরাধ) করে ফেলেছেন, এখন সেই অপরাধে তাঁকে কোন সীমা পর্যন্ত আমি প্রতিবাদ করবো? আমার কথায় মহিলার কথারই সত্য প্রমান ঘটবে নাতো, যে আমরা সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র? আপাতত সেটাইতো ঘটছে।
এই ফালতু বিষয় বাদ দিয়ে বরং আমার কী এখন উচিত না গণপিটুনিবিরোধী ও ডেঙ্গু সচেতনতামূলক সামাজিক কার্য্ক্রম পরিচালনা করা? দেশের একটি বিশাল অঞ্চল পানিতে ডুবে আছে, সেই দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানো? কোনটা বেশি জরুরি?
ফালতু বিষয়ে নিজের সময় নষ্ট করার জন্য রাগ লাগছে। আপনাদেরও সময় নষ্টের জন্য দুঃখিত।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জুলাই, ২০১৯ ভোর ৪:৩২

ডার্ক ম্যান বলেছেন: বিশাল পোস্ট এবং যুক্তিসঙ্গত কথা।

২৯ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ১১:৫৪

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ২৬ শে জুলাই, ২০১৯ দুপুর ১২:৪১

রাজীব নুর বলেছেন: এই পোষ্ট আরো আগে দিলে ভালো হতো।
আসলে প্রিয়া সাহার চেয়ে এখন বড় সমস্যা দেশে বন্যা। লাখ লাখ মানুষ পানি বন্ধী।

২৯ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ১১:৫৩

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: সামু ব্লগে লগিন করতে পারছিলাম না। কোন একটা সমস্যা হয়েছিল।

৩| ২৬ শে জুলাই, ২০১৯ দুপুর ১:৪৯

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: যুক্তিযুক্ত পোস্ট।

আমাদের দেশপ্রেমের সাথে ধর্ম, রাজনীতি... ইত্যাদি জড়িত। তাই দেশের স্বার্থবিরোধী বক্তব্য পরবর্তী সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া বক্তব্যদানকারী ব্যক্তিভেদে আলাদা আলাদা হয়।

২৯ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ১১:৫৪

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ঠিক বলেছেন

৪| ২৬ শে জুলাই, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:২১

ঢাকার লোক বলেছেন: দীর্ঘ লেখা, তবে যথার্থ বলেছেন। প্রায় বছর দেড়েক আগে আমি একটা লেখা পোস্ট করেছিলাম, অনেকটা কাছাকাছি বক্তব্য । আমার মনে হয় আয়নায় আমাদের নিজেদের দেখা এবং সেই সাথে শোধরানো আবশ্যক। এখানে আমার সে লেখাটির লিংক দিলাম, সময় পেলে দেখতে পারেন । ধন্যবাদ !

https://www.somewhereinblog.net/blog/dhakarlok/30218900

২৯ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ১১:৫৩

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.