নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

নোবেল ম্যান, প্রিয়া সাহা

১৬ ই আগস্ট, ২০১৯ রাত ১১:৪১

প্রিয়া সাহাকে মুক্তি দিয়ে নোবেলম্যান কুখ্যাত হয়ে গেল ফেসবুকে। এরমধ্যে ডেঙ্গু, ঈদ আরও কত কি এলো গেল। ভেবেছিলাম ব্যাপারটা পুরানো হয়ে গেছে, কিন্তু এখনও নিউজফিডে প্রায়ই দেখি ছেলেটাকে নিয়ে উল্টাপাল্টা কথাবার্তা চলছে। এতে আমাদের স্বভাবগত কিছু দোষ প্রকাশ ছাড়া লাভের লাভ কিছুই হচ্ছেনা। বুঝিয়ে বলছি, দেখুন আপনিও কী একই দোষে দুষ্ট কিনা।

যেকোন দেশের জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা সেই দেশের প্রতীক। সেই জাতীয় সংগীতকে বা পতাকাকে অপমান করা সেই দেশেরই অপমানের সামিল। এই "অবমাননা" কী, সেটাও সুস্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করা থাকে। দেশভেদে এটি ভিন্ন হয়। তাই এক দেশের নিয়ম অন্য দেশের উপর খাটানোর চেষ্টা না করাই ভাল।

উদাহরণ দিতে গেলে অ্যামেরিকা এবং বাংলাদেশের তুলনা করা যাক। তাহলে সহজে বুঝতে পারবেন।

অ্যামেরিকা দেশটির জন্মই হয়েছে ফ্রিডম অফ স্পিচ, এক্সপ্রেশন ও রিলিজনের উপর ভিত্তি করে। এই দেশে থাকলে আমি যা খুশি বলতে পারবো, যেই ধর্ম খুশি পালন করতে পারবো, অথবা কোন ধর্মই পালন করবো না, এবং কারোর ক্ষতি না করে নিজের ক্ষোভ যেভাবে খুশি প্রকাশ করতে পারবো। তারই একটি হচ্ছে সরকারের কোন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করতে গিয়ে জাতীয় পতাকা পোড়ানো। জ্বি, চোখ কপালে উঠে যেতে পারে। আমারও উঠেছিল যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে গভর্নমেন্ট ক্লাস নিয়েছিলাম। একটা ফেমাস কেসও আছে এই নিয়ে। একটা লোক পতাকা পোড়ানোর অভিযোগে দন্ডিত হয়েছিল। ব্যাটা ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে অন্যের পতাকা পুড়িয়ে ফেলেছিল, তাই আদালত তাকে "অন্যের সম্পত্তি বিনষ্টের" অভিযোগে অভিযুক্ত করে আইনি দণ্ড দেয়। পতাকা পোড়ানোর জন্য কোন শাস্তি হয়নি।

আমাদের দেশে এটি করার হুকুম নেই। আমাদের দেশে সুস্পষ্ট নীতিমালা লেখা আছে "পতাকা পোড়ানো যাবেনা। ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেলে একে সম্মানের সাথে কবরস্থ করতে হবে।"

অ্যামেরিকায় ফ্ল্যাগ ডিজাইনের ব্রা পেন্টি পায়ের স্যান্ডেল পাওয়া যায়। আমাদের দেশের নিয়মে লেখা, "রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানিত মৃতব্যক্তির শব আচ্ছাদন ব্যতীত জাতীয় পতাকা দিয়ে অন্য কেউ নিজের শরীর আচ্ছাদন করতে পারবেনা।" আমাদের দেশে প্রায়ই যে মহিলাদের শাড়িতে বা ছেলেদের জাতীয় পতাকার গেঞ্জি পাঞ্জাবি পড়তে দেখি - ওটাও জাতীয় পতাকার অপমান। সবচেয়ে মজা পেয়েছিলাম এক ছেলে জায়নামাজে পতাকা ব্যবহারে "হায় হায়" রব তুলছিল, এদিকে নিজের মাথায় পতাকার ব্যান্ডেনা বাঁধা ছিল। জাতীয় পতাকা পোশাক হিসেবে ব্যবহার করে সে নিজেও যে একই অপরাধ করে ফেলেছে, সেই বোধই নেই। এই হচ্ছে আজকের দিনের চেতনা! স্কুলে কী শেখে এরা?

যাই হোক, নোবেল ম্যান জাতীয় সংগীত বদলের প্রস্তাব দিয়েছে। সে বলেছে, তার কাছে প্রিন্স মাহমুদের গানটা আরও বেশি প্রিয়। যুক্তি হিসেবে বলেছে রবীন্দ্রনাথ "প্রতীকী ভাষা" ব্যবহার করেছেন, এবং প্রিন্স মাহমুদ ডিরেক্ট অ্যাকশনে গেছেন। তার মতে, জেমসের বাংলাদেশের আবেদন তার বয়সী তরুণদের কাছে বেশি।

অতি স্বাভাবিকভাবেই কাজটি সে অন্যায় করেছে, এবং এইজন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদটিও যৌক্তিক।

তবে বরাবররের মতই আমরা কোন কিছুর সমালোচনা করতে গিয়ে লাইনচ্যুত হয়ে যাই। ঐ অ্যামেরিকান লোকটির মতন, যে আবেগাক্রান্ত হয়ে অন্যের হাত থেকে পতাকা নিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। বা ঐ ছেলেটির মতন, যে নিজেই জাতীয় পতাকার অপমান করে অন্যের ভুলের দিকে আঙ্গুল নিক্ষেপ করছে।

নোবেলের সমালোচনা করতে গিয়ে সবাই বলছে ওর "ছাগলের মতন" দাড়ির কথা। তার কাজের সমালোচনার সাথে গালের দাড়ির কী সম্পর্ক এইটা কেউ ব্যাখ্যা করতে পারবেন? একই দাড়িতো স্বয়ং রবীন্দ্রনাথেরও ছিল। তিনিও কী ছাগলের মতন দেখতে? গানের সাথে চেহারার সম্পর্ক থাকে? হায়দার হোসেন যে এত সুন্দর গান গান, তাঁরতো দেড় হাত লম্বা সুন্নতি দাড়ি। তিনিও কী তবে ছাগল? বর্তমানে দেশের কোন ব্যান্ড শিল্পীর দাড়ি নেই? চেহারার উপর কণ্ঠস্বর নির্ভর করলে লতা মঙ্গেশকর হতেন বিশ্ব সুন্দরী আর ঐশ্বরিয়া হতো সর্বকালের সর্বসেরা পপ তারকা।

দাড়ি প্রসঙ্গ টেনে এনে নিজেই কী ছাগ্লামির পরিচয় দিচ্ছেন না? ব্যক্তি আক্রমণ ছাড়া আমরা কোন কথাই বলতে পারিনা।

দ্বিতীয় পয়েন্ট সবাই তোলে ওর গলা কতটা খারাপ এই বিষয়ে। একথা আমরা সবাই জানি যে ওপার বাংলা এপার বাংলায় নিজেদের অনুষ্ঠান চালাতে নোবেলকে ব্যবহার করেছে। মানলাম তাঁর এই গলা নিয়ে এত উপরে যাওয়ার যোগ্য সে না। ভারতীয় উপমহাদেশে সংগীতের শেষ কথা ক্লাসিক্যাল মিউজিক। ওটার উপর দখল না থাকলে বড় শিল্পী হওয়া কঠিন। জনপ্রিয় হওয়া ভিন্ন ব্যাপার। কিন্তু তাই বলে কী ওর কণ্ঠস্বরে কিছুই নেই? যারা যারা সমালোচনা করছেন, তাঁরা কেন নিজেরা সংগীত ভুবনে কোন ঘোড়ার আন্ডাটাও পাড়তে পারেননি? তার মানে আপনার চেয়ে সে ভাল গায়। যেহেতু আপনার চেয়ে ভাল কণ্ঠস্বর তাঁর আছে, কাজেই আপনার উচিৎ ওর গলা বাদ দিয়ে ওর এই কাজের সমালোচনায় ফোকাসড থাকা। এদিকে ওদিকে থুথু ছিটানোর চেষ্টা নিলে নিজের মুখই ভরবে।

এখন নোবেলের বয়সটা মাথায় রাখতে হবে। অল্প বয়সে ফেমাস হলে অনেকেই অনেক ভুল করেন। শাহরুখ খান অল্প বয়সেই নাম করে এক ইন্টারভিউতে বলেছিলেন "অমিতাভ বচ্চন গ্রেটেস্ট হতে পারেন, কিন্তু আমি গ্রেটেস্টের চেয়ে একটু ভাল।"

বয়স বাড়ার পর শাহরুখ বলেন যে তিনি এখন জানেন তিনি কতটা কম এক্টিং জানেন। তাঁকে আরও ভাল হতে হবে।

যেমনটা জ্ঞানী ব্যক্তি মাত্রই বুঝতে পারেন যে তিনি কতটা কম জানেন। তাঁকে আরও পড়তে হবে।

মূর্খরাই স্বল্পবিদ্যা নিয়ে লাফালাফি করে। নোবেল এখনও মূর্খ, বয়স কম, শেখার অনেক বাকি। তাই এই অর্বাচীনের মতন কথাবার্তা বলছে। ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে। ওর সমালোচনা করতে হলে সেই কাজের সমালোচনা করুন যে কারনে সে নিন্দিত হচ্ছে। অপ্রাসঙ্গিক ব্যক্তিগত আক্রমন খুবই বিরক্তিকর ও দৃষ্টিকটু।

কথাপ্রসঙ্গে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রসঙ্গই যখন উঠলো, তখন তাঁরই জীবনের একটি ঘটনা উল্লেখ করি।

অল্পবয়স থেকেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাহিত্যে নাম কুড়াতে শুরু করেন। তরুণ বয়সে তিনি ‌‌‌‌‌মেঘনাদবধ কাব্যের একটি আলোচনা লিখেছিলেন। ‌‌এ আলোচনার দৃষ্টিভঙ্গি ছিল আক্রমণাত্মক। আলোচনার শেষে তরুণ কবি লিখেছিলেন, ‍'আমি মেঘনাদ বধের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ লইয়া সমালোচনা করিলাম না। আমি তাহার মূল্য লইয়া, তাহার প্রাণের আধার লইয়া সমালোচনা করিলাম, দেখিলাম তাহার প্রাণ নাই। দেখিলাম তাহা মহাকাব্যই নয়।"

যেখানে পৃথিবীর আনাচে কানাচে ছিটিয়ে থাকা যে কোন সাহিত্যপ্রেমী এক বাক্যে স্বীকার করে নেয় যে বাংলা সাহিত্যে যদি একটাও সফল মহাকাব্য রচিত হয়ে থাকে, তবে সেটা মাইকেলের মেঘনাদ বধ, সেখানে জোড়াসাঁকোর তরুণ কবি, দুই চারটা কবিতা হিট হয়েছে বলে মাথায় চড়ে বসেছে, সে বলে কিনা "ওটা মহাকাব্য নয়!?"

তখনকার যুগে সোশ্যাল মিডিয়া থাকলে গ্যারান্টি দিচ্ছি এতক্ষনে রবিন ঠাকুরকে দাড়ির কারনে ছাগু ডাকা হতো, ,বৌদির সাথে প্রেমের কারনে লুইচ্চা বানানো হতো, জিমদারির কারনে অর্থলোভী, অত্যাচারী ইত্যাদি ট্যাগানো হতো এবং আরও অনেক অনেক সমালোচনা করা হতো যা তাঁর সাহিত্য জীবনে প্রভাব ফেলতো।

রবীন্দ্রনাথের বয়স বাড়ার সাথে সাথে জ্ঞানের পরিধি বেড়েছে। তিনি মাইকেলের মহাকাব্য আবার পাঠ করেছেন। এর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ তাঁকে আষ্টে পৃষ্টে জড়িয়ে ধরাশায়ী করেছে। এর প্রাণের আধারে তিনি লুপ্ত হয়েছেন। তারপরে খোলা মনেই তরুণ বয়সের ধৃষ্টতা স্বীকার করে নিয়েছেন।

যদিও ইতালির ফ্যাসিস্ট নেতা বেনিতো মুসোলিনির কিছু কবিতা ও আতিথ্যে খুশি হয়ে তিনি এই বদমাইশকে "মহান নেতা" বলে ফেলেছিলেন। অসুবিধা নাই। মানুষকে বিশ্বাস করা, প্রশংসা করা দোষের কিছু না। ওটা বরং রবীন্দ্রনাথের বড় মনের পরিচয় দেয়।

আবারও কথা প্রসঙ্গে, সেদিন একদল ছেলেকে দেখলাম কোরবানির পশুর পাছায় জিয়াউর রহমানের ছবি একে বলছে, "আমিন না বলে যাবেন না।" বোঝাই যাচ্ছে এরা আওয়ামীলীগের পোলাপান। এখন বিএনপির ছেলেপিলেরা যখন একই কাজ শেখ মুজিবকে নিয়ে করবে, তখন আবেগী আহ্লাদী কথাবার্তা এই একই গোত্রের ছেলেদের মুখ থেকে বেরুবে। অন্যের সম্মান পেতে হলে নিজেরও যেন লাইন ক্রস না হয়, সেটা লক্ষ্য করা কী জরুরি না?

যাই হোক, এই লেখায় কারোরই কিছুই যাবে আসবেনা। সবাই তারপরেও লোকের সমালোচনা করার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত আক্রমন জারি রাখবে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৯ দুপুর ১২:১৭

রাজীব নুর বলেছেন: আমাদের দেশে সমালোচনা করাই ফ্যাশন।

২| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৪:৩৯

শায়মা বলেছেন: ঠিক তাই ভাইয়া। মান্ধাতার আমলের শেখা ধ্যান ধারনা অন্যের পিছে লেগে যাওয়া এসব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কে কি কেনো বললো কেনো করলো সেসব নিয়ে নিজেকেই ভাবতে হবে। প্রয়োজনে শিখিয়ে দিতে হবে। বুঝিয়ে দিতে হবে।

নতুবা সেই সব নিয়ে একের পিছে অন্যের লেগে থাকা অব্যাহত রাখলে ঐ ১০০ বছর পিছে পড়ে থাকা গ্রাম্য পলিটিক্স মনোভাব যাবে না আমাদের কোনোদিনও।

যার যত জ্ঞান কম সে তত লাফাবে।

কথায় আছে অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী বা অল্প পানির মাছ লাফায় বেশি কিংবা খালি কলসী বাজে বেশী !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.