নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

আপনারাও যারা মুলার তরকারি দিয়ে ভাত খান, কিংবা নাস্তায় ঝাল চানাচুর পেটে ভরেন,

৩০ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১০:৫৮

আমাদের অফিস জিমটা ফাইভ স্টার লেভেলের। সুইমিং পুল আর সনা ছাড়া মোটামুটি সবকিছুই আছে। কাজের ফাঁকে জিমে যাবার জন্য অফিস উল্টো বিপুল উৎসাহ দিয়ে থাকে। সপ্তাহের বিভিন্ন সময়ে জিমে কার্ডিও এক্সারসাইজ, ইয়োগা, সাইক্লিং, ওয়েট লিফটিং, কিক বক্সিং ইত্যাদি নানান ক্লাস হয়ে থাকে। এইসব ক্লাসের ইন্সট্রাক্টররা যেই সেই যদু মধু না, এক্সারসাইজ সায়েন্সের উপর ভাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁদের মাস্টার্স লেভেলের পড়াশোনা আছে। আছে জিম ইন্সট্রাক্টর হিসেবে কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা। কেউ যদি জসিম থেকে আর্নল্ড শোয়ের্জনেগার হতে চান, আমাদের অফিসে যোগ দিয়ে জিমে যাতায়াত শুরু করুন।
তারপরেও গত দুই বছর আমার যাওয়া হয়নি।
শুরু দিকে প্রথম প্রথম যেতাম। একবার এক বুড়ির সাথে (বয়স পঞ্চাশ ষাট হবে) ট্রেডমিলে দৌড় প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে শোচনীয়ভাবে হেরে গিয়ে নিরুৎসাহিত হয়ে গিয়েছিলাম। পরে অবশ্য জেনেছি মহিলা ম্যারাথনে দৌড়ে। বাই দ্য ওয়ে, কতজন জানেন যে দৌড়েরও নানান খুঁটিনাটি টেকনিক আছে? কিভাবে দৌড়ালে, দম নিলে কম সময়ে বিনা ক্লান্তিতে বহুদূর দৌড়াতে পারবেন সেগুলোই শেখানো হয়। আমরাতো দৌড় বলতে ভোঁ দৌড়ই জানি। এক মাইলেরও আগে আমার জিভ বেরিয়ে আসে।
যাই হোক, গতকাল বিপুল উৎসাহে দলবল সহ জিমে গেলাম। দলের সবাই জিমে যায়, আমি "মাসিক টাকা দেয়ার পরেও আলসেমি করি কেন" এই নিয়ে কথা শুনি। এই "অলস" "ফাঁকিবাজ" ইত্যাদি অপবাদ এড়াতেই দলের সাথে ব্যায়ামে যাওয়া।
কালকে ছিল কার্ডিও এক্সারসাইজ ক্লাস। এই বস্তু আমি জীবনেও করি নাই। ছোটবেলায় ডন বৈঠক দিতাম খুব। খুব বেশি হলে এক আধ মাইল দৌড়। আমার সব ব্যায়াম ছিল ডাম্বেল, ও সাইকেল কেন্দ্রিক। কিন্তু কালকে ইন্সট্রাক্টর সাহেব যা করতে বললেন, তাতে বুঝে নিলাম আগামী পঁয়তাল্লিশ মিনিট থেকে এক ঘন্টা আমার জীবনের উপর দিয়ে প্রলয়ংকারী ঝড় বয়ে যাবে। টর্নেডো, সাইক্লোন, সুনামি - যাই ডাকেন, তাই। আদৌ আধা ঘন্টাও টিকবে কিনা সন্দেহ।
এখানেও ডন বৈঠক হবে, সাথে লম্ফোঝম্প। কিন্তু সবকিছুই হবে ঘড়ি ধরে। এত সময়ের মধ্যে একটা লাফালাফি করেই এত সময়ের জন্য ডন বৈঠক। আবার লাফালাফি, আবারও ডন বৈঠক। তারপরে আধা মিনিটের বিরতি নিয়ে পানি খেয়ে আবার অন্য কোন ব্যায়াম।
শুরুতে ভেবেছি যেহেতু দুই আড়াই বছর পর ব্যায়াম শুরু করতে যাচ্ছি এবং বাকিরা মোটামুটি "প্রো" সবাই না আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করে।
কিন্তু দেখলাম আমার চেয়েও জঘন্য ব্যায়ামবীর এ তল্লাটে আছে। আমার জিভ আধা হাত বেরিয়েছে তো তাঁদের দশ হাত বেরিয়ে লটকে আছে। দর দর করে ঘামছে। সোজা হয়ে দাঁড়াতেই পারছে না। আহ! তাঁদের দেখে বুকে হাতির বল পেলাম! আমি একা নই! কী যে সুখ!
তবে আজকের লেখা আমার জিমানুভূতি ব্যক্ত করতে নয়। এক বীভৎস অভিজ্ঞতা শেয়ার করতেই আজকের টাইপরাইটার নাড়াচাড়া।
কার্ডিও এক্সারসাইজের মাঝামাঝি অবস্থায়, যখন পরিশ্রমে সবাই দরদর করে ঘামছি, সবার আলজিহ্বা বেরিয়ে এসেছে, নিজের পা নিজের শরীরের ভার তুলতে অক্ষম, তেষ্টায় বুক ফেটে চৌচির, নাকের ফুটো দিয়ে যথেষ্ট পরিমান অক্সিজেন ফুসফুসে যেতে পারছে না, তাই মুখ হা করে শ্বাস নিচ্ছি, ঠিক তখনই একটা বিভীষিকাময় কটু গন্ধ আমার নাকে এসে ঠেকলো। কেউ যদি চার পাঁচদিনের বাসি ডাল, গন্ধ ছাড়ানো সাদা ভাতে মিশিয়ে মুলা চটকে খেয়ে পেছন দিয়ে গ্যাস বোমা নিক্ষেপ করে, তখন এই ধরণের গন্ধ প্রসব করা সম্ভব। কেউ একজন জিমের কষ্ট নিতে না পেরে বায়ুদূষণ করে ফেলেছে। এবং আমি নিশ্চিতভাবে জানি অকাজটা কার। বেচারি ভিড় থেকে সরে এসে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেই আবার ভিড়ে মিশে গেছে। আমি বেকুবের মতন ওর জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছি! মরার উপর খাড়ার ঘা হচ্ছে আমি তখন মুখ খুলে শ্বাস নিচ্ছি। মানে ঐ গন্ধ সরাসরি আমার ফুসফুস ছাড়িয়ে পাকস্থলী পর্যন্ত পৌঁছে গেছে! পেট উল্টে বমি এলো! মহিলা আমার চেনা পরিচিত, আমারই দলের সদস্যা, এবং একজন ভাল মানুষ। কিন্তু বাকি জীবন তাঁর সাথে দেখা হলে তাঁর অতীত ভবিষ্যতের সব কীর্তি ছাপিয়ে এই কুকীর্তিটাই প্রথম মাথায় আসবে! এ কী কীর্তিনাশা কান্ড করলিরে বইন!?
দ্রুত স্থান পরিবর্তন করলাম। আমার পরে অন্য কেউ আসলে ভেবে বসবে এই প্যারানরমাল একটিভিটি আমার কীর্তি।
এর আগেও এমন অভিজ্ঞতা বহুবার হয়েছে। বহু বছর আগে এক কলসেন্টারে কাজ করার সময়ে ট্রেনিং ক্লাসে আমার পাশে এক সাদা ছেলে বসত। ওর পেটে নিশ্চই কোন গন্ডগোল ছিল। প্রতি আধাঘন্টায় একবার হিসেবে সে টানা আট ঘন্টা পারফরম্যান্স দিত। সকালবেলা কেউ খালি পেটে বাসি চানাচুর খেয়ে এলে এমন প্রেশার কুকারের সিটি বাজালেও বাজাতে পারে। অপরিচিত বলে ভদ্রতার খাতিরে কিছু বলতেও পারি না। সইতেও পারিনা। যোগব্যায়াম করি। দম বন্ধ......রিলিজ। আবারও গভীর নিঃশ্বাস নাও, দম বন্ধ.....রিলিজ।
একদিন তাঁর অপর পাশের মেয়েটি আপন মনেই বলে উঠেছিল, "সামবডি হ্যাড রিয়েল ব্যাড ব্রেকফাস্ট!"
ছেলেটা নির্বিকার।
আরেকবার ঐ একই কল সেন্টারের ভিন্ন ট্রেনিং ক্লাসে আরেক দুর্ঘটনা ঘটলো।
আমরা কয়েকজন আলাদাভাবে ট্রেনিং নিচ্ছি। আমাদের ইন্সট্রাক্টর একজন কালো মহিলা। আফ্রিকান অ্যামেরিকান কালোদের একটি শারীরিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, ওরা হয় একদম রেসের ঘোড়ার মতন ফিট হবে, নাহলে গরম চুলায় পাতিলে উপচানো গরুর দুধের মতন শরীরের চারিদিকে চর্বি ও মাংস উপচে পড়বে। মাঝামাঝি কিছু নেই। আমাদের ইন্সট্রাক্টর দ্বিতীয় ক্যাটাগরির।
আমরা খুবই জটিল বিষয় খুবই মনোযোগের সাথে পড়ছি। হঠাৎ আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ ঘটলো। সবাই অবাক চোখে মহিলার দিকে তাকালাম। মহিলা বিস্ফোরণ থামাতে গিয়ে আরও ছোট খাটো কিছু আফটার শক ঘটিয়ে দিলেন। পরে হাল ছেড়ে দিয়ে চূড়ান্ত অগ্নুৎপাত ঘটিয়ে খুবই ক্যাজুয়াল স্বরে বললেন, "সবাই ট্রেনিংয়ে মন দাও। সমস্যা পেলে আমাকে বলো।"
শিক্ষকশ্রেণীর কারোর দিক থেকে এমন ঘটনার অভিজ্ঞতা আমার জীবনে প্রথম। কী করবো বুঝতে পারছি না। ক্লাসের অন্যান্যরা হোহো করে হেসে উঠলো। আমি বুঝতে পারছি না আমারও কী দাঁত ক্যালানো উচিৎ, নাকি আমি কিছুই টের পাইনি টাইপ গাম্ভীর্য চেহারায় ধরে রাখা উচিৎ!
আরেকবার এমন হয়েছিল লিফটে।
একজন বোধয় খুব কষ্টে প্রেশার চেপে রেখেছিলেন। লিফটে উঠেই রকেট সায়েন্স চালু করে দিলেন। লিফটের দরজা বন্ধ হতেই বেচারা টের পেয়েছেন কী সর্বনাশ ঘটিয়ে দিয়েছেন। তিনি ও দূষিত বায়ু দুইজনই তখন লোহার ঘরে বন্দি! এবং তখনই বেরসিকের মতন প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়া লিফটের দরজা খুলে লখিন্দরের সাপ হয়ে লিফটে ঢুকে পড়লাম আমি। এবং সাথে সাথে বুঝে নিলাম ক্রাইম সীনে ঢুকে পড়েছি।
ভদ্রলোক বিব্রত হেসে এমন ভাব নিলেন যেন কিছুই ঘটেনি। ঐ গন্ধ তিনি টের পাচ্ছেন না।
বিব্রতকর পরিস্থিতিতে একবার এক মহিলাকে পড়তে দেখেছিলাম। ভয়াবহ দুর্ঘটনা! আল্লাহ এমন পরিস্থিতিতে কাউকে না ফেলুন।
খুব জমকালো এক পার্টিতে চলছে। খাওয়া দাওয়া শেষে সোফায় বসে জম্পেশ আড্ডা চলছে। এমন সময় কেউ গ্যাস লিক করে ফেলেছেন। তিনি হয়তো নিজেও টের পাননি যে তাঁর কুকীর্তি সবাই টের পেয়ে যাবে।
যাই হোক, কিছুই হয়নি এমন ভাব নেয়ার চেষ্টা করতে করতে সবাই আড্ডা চালানোর চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু ততক্ষনে গীটারের তার ছিড়ে গেছে।
এবং তখনই পরিস্থিতি আরও জটিল করতে তিন বছরের এক পিচ্চি শার্লক হোমস আড্ডায় উপস্থিত সবার সামনে গিয়ে শুকতে শুকতে এক হেভি মেকাপ দেয়া সুন্দরী আন্টির সামনে থেমে বললো, "আন্টি....দিয়েছে!"
উপকূলবর্তী এলাকায় দশ নম্বর বিপদ সংকেত ঘোষণাকালে যেমন শান্ত পরিস্থিতি বিরাজ করে, আড্ডাস্থল তেমনই নিস্তব্ধ হয়ে গেল। পিচ্চি পার্টি হোস্টের ছেলে। কেউ চড়থাপ্পড়ও মারতে পারছে না। পিচ্চির মা অগ্নিশর্মা হয়ে বললেন, "এখুনি তোমার রুমে যাও!"
মহিলা বিব্রত কাষ্ঠহাসি হাসতে হাসতে পিচ্চিটার গাল টিপে বললো, "অনেক সুইট ছেলে। হিহিহি।"
শেষ করি পিচ্চিদের কুকীর্তির আরেকটি বর্ণনা দিয়ে।
বৌর সাথে একটা বেশ ভাল রেস্টুরেন্টে গেছি। আমাদের পাশের টেবিলে এক নব দম্পতি বসে। ছেলে নিচু স্বরে রসিকতা করছে, মেয়েটি খিলখিল করে হাসছে। হাসতে হাসতে হাসির দমকে হঠাৎই "মচাৎ" করে একটি শব্দ হলো। রেস্টুরেন্টটি ব্যস্ত হলেও বেশ জোরে শব্দটা হওয়ায় সেই টেবিলের আশেপাশের মোটামুটি সবার কর্ণকুহরে সে ধ্বনি প্রতিধ্বনি তুললো। লোকজন সবাই ভদ্র। কেউ কোন এক্সপ্রেশন দিল না। একেই বলে পোকার ফেস।
শুধু ইমিডিয়েট পেছনের সিটের এক পিচ্ছি হোহো করে হেসে উঠলো।
পিচ্চির বাপ সাথে সাথে নিচু স্বরে ধমক দিয়ে বললেন, "এমন করে না।"
কিন্তু পিচ্চিরা কবে বড়দের কথা শুনেছিল?
সে তাৎক্ষণিক হাসি বন্ধ করলেও এক ফাঁকে ঠিকই মহিলার পাশে এসে মহিলাকে সামনে থেকে দেখে বদমাইশি হাসি হেসে চলে গেল। যে চাহনি দিল, সেটা কোন পুলিশ অফিসার চোরকে দেখে দেন। "তোমার চাতুরী আমার চোখে ধরা পেয়েছে বৎস!"
আহারে! আমি নিশ্চিত, সেই মহিলা ভবিষ্যৎ জীবনে প্রাণ খুলে হাসার আগে একশোবার এই ঘটনার কথা স্মরণ করবেন।
ঠিক যেমনটা আমার টিম মেট মহিলার সাথে ভবিষ্যৎ জীবনে আমার যতবার দেখা হবে, আমি জিমের দুর্ঘটনার কথাই সবার আগে স্মরণ করবো।
আপনারাও যারা মুলার তরকারি দিয়ে ভাত খান, কিংবা নাস্তায় ঝাল চানাচুর পেটে ভরেন, তাঁরা একটু সাবধানে চলাফেরা করবেন। কারন একটি দুর্ঘটনা, বাকি জীবনের কান্না।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১১:২৬

মাহের ইসলাম বলেছেন: পড়তে পড়তে মনে করার চেষ্টা করছিলাম, এমন অভিজ্ঞতা কতবার ভোগ করতে হয়েছিল?

২| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১২:৫৫

ডার্ক ম্যান বলেছেন: এই ধরনের অভিজ্ঞতা প্রায় সবার হয়েছে বলে আমার ধারণা । মুলা কখনও খেয়েছি বলে মনে পড়ছে না

৩| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৯ দুপুর ১:৫৬

রাজীব নুর বলেছেন: আমার দিন তো গেল সন্ধ্যা হল

দয়াল চাদের দয়া পাইলাম না

আমি ক্ষণে ক্ষণে ডুবে মরি

সে কেন গো ডেকে লয় না......।।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.