নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল কেন জানেন? আমি যতদূর জানি, তা হচ্ছে, জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার জন্য। আর কোন উদ্দেশ্য ছিল কিনা জানিনা।
ধরুন আজকে যদি আমরা স্বাধীন অখন্ড ভারতের অঙ্গ রাজ্য থাকতাম, তাহলে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলে একটি বর্ডার ঘেঁষা অঞ্চল হিসেবে পড়ে থাকতাম। যেমনটা আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা রাজ্যগুলো আছে। আমাদের উন্নয়নে সরকারের কোন মাথা ব্যথা থাকতো না। রাজ্য সরকার যা করতো, তাতেই আমাদের তুষ্ট থাকতে হতো। আমাদের অঞ্চল থেকে জাতীয় পর্যায়ে উঠে আসতে শুধু কাঠ খড়ই না, আস্ত জঙ্গল পুড়াতে হতো। এই যে সাকিব আল হাসান বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার, ভারতীয় ক্রিকেট দলে সুযোগ পেত কিনা সেটাই হতো আসল প্রশ্ন। যে যার জাতিকে আগে প্রাধান্য দিত। যেহেতু বিসিসিআই পর্যন্ত কোন বাঙালির পৌঁছাতে যুগের পর যুগ পেরিয়ে যেত, আমাদের সাকিবও নিজের প্রাইম টাইম হারিয়ে ফেলতো। এছাড়া আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মতন একটা দাগি আসামি। কী হতো সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। হয়তো আজকে কাশ্মীরিদের সাথে যা হচ্ছে, সেটা তখন হতো পূর্ব বাংলার স্বাধীনতাকামী মানুষদের সাথে।
ভারত থেকে স্বাধীন হয়ে আমরা ছিলাম আমাদের "মুসলিম ভাই" পাকিস্তানিদের সাথে। কিন্তু মুসলিম ভাইয়েরা *দির ভাইয়ের মতন আচরণ করলো। এখানেও জাতীয়তাবাদ মুখ্য। বাঙালিদের প্রতি তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিকদের মতন আচরণ করা হলো। ট্যালেন্টেড হবার পরেও শুধু বাঙালি হবার অপরাধে আমাদের দাবিয়ে রাখা হতো। রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিক - সর্বক্ষেত্রে আমরা তখন শোষণের শিকার। এই নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলার নেই, সবাই জানেন, অথবা অনেকেই ইচ্ছা করেই জানতে চান না। ঠিক এই কারণেই আমরা আলাদা একটা রাষ্ট্র গড়লাম। কুঁড়ে ঘরে থেকে করবো শিল্পের বড়াই। প্রয়োজনে একবেলা আধপেটা খাবো, তবু মাথা উঁচু করে বাঁচবো। বিশ্ব জেনে নিবে বাংলাদেশ নামেও একটি দেশ আছে। বিদেশী কেউ "ইন্ডিয়ান" ভাবলে আমরা গর্বের সাথে ওদের ভুল ধরিয়ে দিয়ে বলবো, "না, আমরা বাংলাদেশী।"
এই পর্যন্ত কারোর দ্বিমত আছে?
থাকলে আওয়াজ দিন। শুনি আপনার অভিমত।
এখন আমি নিজের দেশ, নিজের সংস্কৃতিকে ভালবাসি বলে যে অন্যকে ঘৃণা করবো, এমন ছোটলোকি মতবাদে আমি বিশ্বাসী নই। আমাদের দেশের ছোটছোট বাচ্চারা বাংলা ও ইংলিশের পাশাপাশি হিন্দিতেও কথা বলতে পারে, বুঝতে পারে। মুসলিম বাচ্চারাতো আরবি লেখা পড়তেও পারে। এ নিয়ে আমার কোনই আপত্তি নেই। বরং এটি এডভান্টেজ। এই গ্লোবালাইজেশনের যুগে যে যত বেশি আন্তর্জাতিক ভাষা জানবে, সে তত এগিয়ে থাকবে। স্প্যানিশ ও চাইনিজ ভাষা যদি কেউ শিখে ফেলতে পারে, তাহলে আন্তর্জাতিক বাজারে কেল্লাফতে হয়ে যাবে। কিন্তু অবশ্যই এইটা মাথায় রাখতে হবে যে বিদেশী ভাষা শিখতে গিয়ে নিজের মাতৃভাষাকে ছোট করে দেখা চলবে না। আমি শেক্সপিয়ারের দালালি করতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথকে ছোট করার চেষ্টা করলে নিজের দ্বৈনতা বেরিয়ে আসবে। এই পর্যন্তও সবাই এক মত তো? নাকি আরও বুঝাতে হবে?
এখন আমরা মানি অথবা না মানি, এইটা ফ্যাক্ট যে আমাদের দেশে বলিউডের প্রভাব খোদ ইন্ডিয়ার দক্ষিণাঞ্চল থেকেও অনেক বেশি। দক্ষিণের আম জনতা আমির খান, শাহরুখ খানকে চিনে না, আমাদের দেশের সিনেমার নায়ক নিজের বাচ্চার নাম পর্যন্ত শাহরুখের বাচ্চার নাম থেকে চুরি করে রাখে। এই হচ্ছে অবস্থা। সালমান, ক্যাটরিনা, কৈলাশ খের, সনু নিগমরা আমাদের দেশে ঘরে ঘরে পরিচিত মুখ। তাঁদের জনপ্রিয়তা সীমান্তের কাঁটাতার আটকে রাখতে পারেনি, রাখা উচিতও নয়। শিল্পকে কখনও কোন সীমারেখা দিয়ে আটকে রাখা যায় না। একটি ঘটনা বলি, তাহলে বুঝবেন। একবার কোন এক বিশেষ কারনে আমার ল্যাপটপে রুনা লায়লার ছবি উঠে এসেছিল। এক পাকিস্তানী লোক সেটা দেখে বললেন, "আমি এই মহিলাকে চিনি। ইনি রুনা লায়লা না? যে "দামা দাম মাস্ত কালান্দার" গেয়েছিল?"
পাকিস্তানে এই গানটা হচ্ছে আইয়ুব বাচ্চুর সেই তুমি, জেমসের মা বা এর চেয়েও জনপ্রিয় একটি গান। এই গানটি কভার করেছেন ওস্তাদ নুসরাত ফতেহ আলী খান, রাহাত ফতেহ আলী খান, আবিদা পারভীন থেকে শুরু করে হালের আতিফ আসলাম পর্যন্ত মোটামুটি সব লেজেন্ড ও গায়ক গায়িকারা। এর পরেও এই গানটি গাওয়ার জন্য ওদের বর্তমান জেনারেশনের লোকজনও রুনা লায়লাকে স্মরণে রেখেছে, তাহলে ঘটনার গুরুত্ব বুঝতে পারছেন? গর্বে বুক ফুলে উঠে না যখন আমাদের রুনা লায়লা বা জেমস বা কোন শিল্পী পাশের দেশের সংগীতানুষ্ঠানের বিচারকের আসন গ্রহণ করেন? ওরা যতটা আমাদের, ততটা বিশ্বের প্রতিটা সংগীতপ্রেমীদেরও। তেমনি, লতা মঙ্গেশকর বা দিলীপ কুমারের জীবন যখন সংকটে পড়ে, এই দেশের ভক্তদেরও দুই হাত উপরওয়ালার দরবারে ভিক্ষার জন্য ওঠে। আমি বলবো না বলিউডের শিল্পীদের বাংলাদেশে আসা উচিৎ না বা এই জাতীয় সংকীর্ণমনা কথাবার্তা। বরং দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর নিয়মিত শিল্পী সম্মেলন করা উচিৎ। সংস্কৃতিক ট্যুরিজম যাকে বলে।
তবে, সেসবের জন্য আলাদা সময়, আলাদা অনুষ্ঠান বেছে নেয়া উচিৎ। যেমন ছিল ফোক ফেস্ট। বিপিএলের মতন একটি অনুষ্ঠান, যেখানে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বিপুল সংখ্যক দর্শকের চোখ থাকে, সেখানে নিজের দেশের শিল্পীদের পেছনে রেখে হিন্দি গানের প্রোমোশনের কোন যৌক্তিকতা খুঁজে পেলাম না। তাও আবার এটির সাথে বঙ্গবন্ধুর নাম জড়িয়ে জন্ম শতবার্ষিকীর ট্যাগ দিয়ে এই ফাজলামির কোন মানে বুঝলাম না। আমাদের দেশে কী আসলেই শিল্পীর অভাব? আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে যাদের মঞ্চে তুল্লে আমাদের বেইজ্জতি হবে? চিরকুট যখন আমেরিকার বিখ্যাত মিউজিক ফেস্ট টেক্সাসের সাউথ বাই সাউথ ওয়েস্ট এসে অনুষ্ঠান মাতিয়ে যায়, আমাদের দেশের অডিয়েন্সের মন জয় করতে পারবে না? বিদেশিদের আস্থা আছে আমাদের শিল্পীদের উপর, দেশের আয়োজকদের নেই?
এর আগেও একবার এমন গ্লোবাল ইভেন্টে এ আর রেহমানকে এনেছিল বিসিবি। তখনও দেশের প্রথমসারির শিল্পীদের রীতিমতন অপমান করা হয়েছিল। ভারতের ক্রিকেটারদের যে টুর্নামেন্টে খেলানো যায় না, তাঁদের শিল্পীদের দিয়ে গান গাওয়ানো হয় কিসের যুক্তিতে? আমাদের শিল্পীদের যদি এমন গ্লোবাল ইভেন্টে অবহেলা করে বিদেশীদের গোলামী করা হয়, তবে আমাদের শিল্পীদের আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মটা দিবে কারা?
আবারও মনে করিয়ে দেই, আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম বিশ্ব মঞ্চে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে। এক্সট্রার ভূমিকায় অভিনয় করতে করতে এই সুযোগের অপেক্ষায় থাকতে যে একদিন লিড রোল আমাদের হবে। সুযোগ পেলেই যেন আমরা এগিয়ে এসে সব আলো কেড়ে নিতে পারি। প্রতিযোগিতা বড় কঠিন! কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নয়। সেখানে নিজের দেশের লোকেরাই যদি নিজেদের পা টেনে ধরে উইংয়ের বাইরে নিয়ে যায়, তাহলে আমরা এগুবো কিভাবে?
২| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১:৪২
মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: আপনার সাথে সহমত ও দু:খ প্রকাশ ছাড়া কিছুই করার ক্ষমতা নেই আমার। তবে পোস্টটি সত্যি অসাধারণ পোস্ট।
৩| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ৮:৫৬
প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন বলেছেন: আপনার সাথে কিঞ্চিত নয় সম্পূর্ন একমত। একই কথা আমিও আমার ব্লগে লেখতে চেষ্টা করেছি, কিন্তু আপনার মত গুছিয়ে বলতে পারিনি। আপনি আমার চেয়ে সুন্দর ভাবে গুছিয়ে বলেছেন, ভালো লাগলো।
৪| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:৩৮
রাজীব নুর বলেছেন: অভিজিতের লেখার একটা লাইন, "একদিন ছোটবেলায় জিজ্ঞাসা করলাম – ‘বাবা তুমি ইন্ডিয়া যাওনি কেন, জ্যেঠু আর কাকুর মত?’ বাবা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ইন্ডিয়া তো আমার দেশ নয়, ওখানে যাব কেন?’"
©somewhere in net ltd.
১| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:৩১
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
অসাধারণ মুল্যবান কথা সমৃদ্ধ পোষ্ট
অন্তরের অন্তস্থলহতে অভিনন্দন রইল।