নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

উচ্চ রক্তচাপ একটি টাইম বম্ব

১৫ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:৪১

আপনার শরীরের ভিতর একটি টাইম বম্ব আছে, যেটা আপনার অজান্তেই চালু হয়ে যায়। আপনি যদি পাত্তা না দেন, যথাসময়ে এটি বিস্ফোরণ ঘটে, এবং আপনার ভবলীলা সাঙ্গ হয়।
বলছি উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশারের কথা। "হাইপার টেনশন" নামেও লোকে চিনে থাকে।

কিছুদিন আগে এক বন্ধু স্ট্যাটাস দিল যে তাঁদের অফিসে এনুয়াল হেল্থ স্ক্রিনিংয়ে (অনেক কোম্পানি তাঁদের কর্মচারীদের জন্য প্রতিবছর একটি সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষার আয়োজন করে, রক্তচাপ, রক্তে কোলেস্টেরল, সুগার ইত্যাদির মাপ ঠিক আছে কিনা এইসব পরীক্ষা করে জানায়) ধরা পড়ে যে তাঁর হাইপার টেনশন আছে। শুধু "আছে" বললেও সমস্যা ছিল না, সেটার পরিমান এতটাই বেশি যে তাঁকে সেই মুহূর্তেই হসপিটাল ইমার্জেন্সিতে ভর্তি হতে হয়েছে। তাঁর রিডিং আসছিল স্ট্রোক পর্যায়ের (১৮০/১২০ এর সমান বা উপরে)। যেকোন মুহূর্তে তাঁর মাথার রগ ফেটে যেতে পারতো, এবং স্ট্রোক হতো।
সে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে।
আমি তাঁকে খোঁজ খবর নিতে ফোন করলাম। কুশলাদি বিনিময় হলো।
জিজ্ঞেস করলাম "তুমি বুঝতেও পারো নাই?"
সে জানালো "না।"
"আল্লাহ! কি ভয়ংকর! সাবধানে থেকো।"
আলাপ শেষে ফোন রেখে দিলাম। এবং নিজেও বুঝতে পারিনি একই রোগ আমার নিজের শরীরে আমি ধারণ করে আছি। এবং আমি নিজেও বিন্দুমাত্র আঁচ করতে পারি নি।
এর এক দুইমাস পরে জানতে পারি আমার নিজেরও উচ্চ রক্তচাপ আছে।
ডাক্তারের সাথে শলাপরামর্শ করলাম। তিনি সব পরীক্ষা করে দেখেন। কোলেস্টরল লেভেল, সুগার লেভেল, শরীরের ওজন সবই ঠিক আছে। এত হাই ব্লাড প্রেশারের কোনই কারন নেই। তিনি কোন ওষুধ দিলেন না। শুধু বললেন দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন যাপন করতে। ব্যায়াম করতে। খাদ্যে নিয়ন্ত্রণ আনতে।
আমিও প্রথমে টেনশন ফ্রী রিল্যাক্সড হবার চেষ্টা করলাম। লাভ হলো না।
ব্যায়াম করলাম। খাবারে নিয়ন্ত্রণ আনলাম। আমার অক্সিজেন, আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন ও কারন, রেডমিট (গরু খাসির মাংস) ত্যাগে বাধ্য হলাম। জিন্দেগীতে যা কখনই শখ করে খাইনি, সেই ঘাস লতাপাতা, যাকে লোকে সম্মান করে ডাকে "ভেজিটেবল" তা চিবিয়ে খেতে বাধ্য হলাম! এমনও হয়েছে যে সকালে নাস্তা করেছি লেটুস পাতার সালাদ দিয়ে, দুপুরে লাঞ্চ করেছি সব সালাদ দিয়ে। এই দৃশ্য দেখে আমার বাড়িতে আমার বৌ, আমার মা, আমার বোনের মুখে যে হাসি ফুটলো, তা দেখে আমার মেজাজ খারাপ হলো। মাছ আর চিকেন খেতে শুরু করলাম। তারপরেও লাভ হলো না।
একরাতে ব্লাড প্রেশার এতটাই বাড়লো যে আমাকেও হসপিটাল ইমার্জেন্সিতে ভর্তি হতে হয়েছিল।
এরপর ওষুধ সেবন শুরু করি। শুরুতে অল্প ডোজের। উপকার না হওয়ায় ডোজ বাড়তে থাকে। এদিকে পাল্স রেট আশংকাজনক পর্যায়ে (একশোর উপরে) চলে যাওয়ায় ওষুধ পাল্টানো হয়। এইবার প্রচন্ড দামি ওষুধ প্রেস্ক্রাইব করা হয়। ইন্সুরেন্স পে করার পরেও নিজের পকেট থেকে শখানেক ডলার যাচ্ছে প্রতি মাসে শুধুমাত্র এই ওষুধ কিনতে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করেছে। এখন শুধু ধরে রাখতে পারলেই হলো। আশা করি দ্রুত এই ওষুধের বদলে কম মাত্রার সস্তা ওষুধ সেবন শুরু করতে পারবো। এবং ধীরে ধীরে বন্ধ করে দিতে পারবো।

কথা হচ্ছে, আমরা কেউই উচ্চরক্তচাপ, হাইপার টেনশনকে সেভাবে পাত্তা দিয়ে অভ্যস্ত নই। আমাদের বেশিরভাগেরই বাড়িতে ব্লাড প্রেশার মেশিন থাকেনা। থাকলেও সেটা বয়ষ্ক মুরুব্বিদের জন্য, বাড়ির যুবক যুবতীদেরও যে সেটা ব্যবহার করতে হয়, আমরা মানতেই চাই না।
প্রথম কারন হয়তো, আমরা বুঝতেই পারিনা ভিতরে কি চলছে। কোন মাথা চক্কর না, কোথাও কোন ব্যথাও অনুভূত হয়না। দিব্যি সুস্থ মনে হয় নিজেকে। এমনকি দীর্ঘ পরিশ্রমেও ক্লান্তি আসেনা। অথচ ভিতরে রক্তের গতিতে তোলপাড় চলছে। কিডনি-হার্ট নষ্ট করে ফেলছে, স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ছে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না আনলে অকালে মৃত্যুর সম্ভাবনা বাড়তেই থাকে।
আমরা প্রায়ই শুনিনা যে একদম যুবক বয়সে সুস্থ্য সবল মানুষগুলো হঠাৎ করেই মারা যান? জীবিতাবস্থায় খোঁজ নিলে হয়তো জানা যেত তাঁদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ছিল না।
প্রায়ই শোনা যায় যুবক বয়সেই অনেকের কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। কেন? কারন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ছিল না। অতি রক্তচাপ, বা নিম্নচাপ, দুইটাই কিডনির জন্য ক্ষতিকর। ব্লাড প্রেশারের রোগীর ডাক্তার কিডনি পরীক্ষা করেন। আপনি ভাবতে পারেন ব্যাটা কমিশন ও পয়সা খাবার জন্য কাজটা করছে। আসলে তা না। ওটা পরীক্ষা করা আসলেই জরুরি।
আমাদের অনেকেরই কাঁচা লবণ খাবার অভ্যাস। খাবারে লবণ কম লাগলে আলাদা করে লবণ যোগ করে খাই। কেউ কেউ খাবার শুরুই করি কাঁচা লবণ দিয়ে। সালাদে বাড়তি লবণ দেই। বাদাম, আমড়া, শশা খাই কাঁচা লবণ দিয়ে, অন্যান্য কাঁচা ফলও খাই লবণ যোগ করে। আপনার যদি উচ্চ রক্তচাপ থাকে, এবং আপনি জানেন না আপনার শরীরে সেটি আছে, তাহলে আপনি কি জানেন যে এই কাঁচা লবণ আপনার মৃত্যুর কারন হতে পারে? লবণের সোডিয়াম আপনার রক্তচাপ এতটাই বৃদ্ধি করবে যে আপনি স্ট্রোক করে মারা যেতে পারেন। জ্বি, সামান্য লবনেরই এতটা ক্ষমতা। এবং সামান্য লবণই এতটাই বিপজ্জনক!
সিগারেট মদের অভ্যাসতো আরও ভয়ংকর। যাকে বলে প্রাণঘাতী!

তা এই ভয়ংকর টাইম বম্ব নিয়ন্ত্রণে কী করতে হবে?
সবার আগে বাড়িতে একটি ব্লাড প্রেশার মাপার মেশিন রাখতে হবে। যেহেতু আমরা বেশিরভাগই ডাক্তার না, এবং ম্যানুয়াল মেশিনে রক্তচাপ মাপার টেকনিক জানিনা (থিওরি অনুযায়ী খুবই সহজ, স্টেথেস্কোপে যেখানে পালস শুনতে শুরু করবেন, এবং যে রিডিংয়ে বন্ধ হবে, সেটাই আপনার মাপ) তাই ডিজিটাল মেশিন রাখাই ভাল। মেশিন আপনার রক্তচাপ মেপে নাম্বার বলে দিবে। আমার নিজের পছন্দ Omron. এখন পর্যন্ত যত ডাক্তারের কাছে গেছি, সবাই এই মেশিন দিয়েই রক্তচাপ মাপেন। অন্য ব্র্যান্ড হলেও সমস্যা নাই, যতক্ষণ পর্যন্ত সেটা সঠিক মাপ দিচ্ছে। স্বাভাবিক ব্যক্তির রক্তচাপ উপরেরটা ১২০ (systolic) এবং নিচেরটা ৮০ (diastolic) এর আশেপাশে থাকে। এর বেশি কম মানেই কোন সমস্যা আছে। চেষ্টা করুন সেটা ধরে রাখতে। নাহলে ডাক্তারের কাছে দ্রুত যান।

রক্তচাপের পাশাপাশি পাল্স রেটটাও গুরুত্বের সাথে নিবেন। সুস্থ্য মানুষের রেস্টিং পাল্স রেট (বিশ্রামের মুহূর্তে) ৬০-১০০ এর মাঝে থাকে। যদি একশোর বেশি চলে যায়, তাহলে বুঝে নিবেন সমস্যা আছে। আপনার হার্টের অনেক সেল অক্সিজেনের অভাবে মারা যেতে পারে। বেশিদিন এই ঘটনা ঘটলে হার্ট ফেইলরে মানুষ মারা যাতে পারে।

খাদ্যে নিয়ন্ত্রণ রাখুন। কাঁচা লবণ (সোডিয়াম বেশি আছে এমন যেকোন খাবার), রেডমিট (গরু-খাসি-ভেড়া-মহিষ-উটের মাংস), তেলে ভাজা যেকোন কিছু, ইত্যাদি কমিয়ে দিয়ে ঘাস লতাপাতা (সবুজ সবজি) খেতে থাকুন। ধূমপান, মদ্যপান ইত্যাদির বদভ্যাস ত্যাগ করুন। এই সুযোগে চিনি খাওয়াও কমিয়ে দিন। সাদা চিনি, যা আমরা খাই, এটিও কিন্তু ভয়ংকর বিষ! ব্লাড প্রেশারের জন্য না হলেও অন্যান্য রোগের কথা চিন্তা করে মিষ্টি খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করুন।

সবচেয়ে জরুরি বিষয়, প্রতিদিন ব্যায়ামের অভ্যাস করুন। হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার, সাইক্লিং ইত্যাদি অত্যন্ত জরুরি। আমরা মনে করি মাসল না বানালে কিসের ব্যায়াম করলাম? কিন্তু মাসল বানানোর (ওয়েট লিফটিং) ব্যায়াম থেকে কার্ডিও এক্সারসাইজ অনেক বেশি উপকারী।
আরও অনেক কিছুই আছে। তবে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। নিজে ডাক্তারি ফলাতে যাবেন না।
প্রতিবছর বা ছয়মাসে একবার ডাক্তারের সাথে এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষার অভ্যাস গড়ে তুলুন। পরিবারের সবার জন্য, যেকোন বয়সেরই হোক না কেন, সবার জন্যই একই ব্যবস্থা রাখুন। রক্তে কোলেস্টেরল, সুগার (গ্লুকোজ), ওজন ও উচ্চতা অনুযায়ী BMI ইত্যাদি পরীক্ষা করেন, চার্টে টুকে রাখুন, এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিন।
একটু টাকা খরচ হবে ঠিকই, কিন্তু ফালতু কাজে প্রচুর টাকা নষ্ট করে আমাদের অভ্যাস। এইসব হচ্ছে জীবনের প্রায়োরিটি, এইসবে টাকা খরচ করুন, অন্যান্য ফালতু কাজে অপচয় রোধ করুন।

সুস্থ্য থাকুন, বেঁচে থাকুন, জীবন উপভোগ করুন। আপনার জীবন আপনার একার না, আপনার বাচ্চার, আপনার পরিবারের লোকজনের কাছে আপনার মূল্য অনেক। ওদের কারনে হলেও আপনাকে সুস্থ্য তাকাতেই হবে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ ভোর ৬:০৮

ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: অত্যন্ত মূল্যবান লিখার জন্য ধন্যবাদ। বাবার মৃত্যুর পর আমি এতটাই ভেঙ্গে পড়েছিলাম যে, আমারও বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছিলো ছ'মাসের মধ্যে। যাইহোক, উচ্চ রক্তচাপ না থাকলেও ডক্টর শরীরের ওজন কমাতে বলেছেন। বলেছেন, আপনার মতো ঘাষ, লতা-পাতা খেতে। গরুর মাংস আমার অত্যন্ত প্রিয় খাবারগুলোর একটি সেটাও রীতিমত বিসর্জন দিতে হয়েছে। ছ'মাস ধরে দু'বেলা আটার রুটি খাচ্ছি সাথে ভাজি। প্রতিদিন ৬-৭ কিলোমিটার হাটছি ওজন কমিয়েছি ১০-১২ কেজি। আরোও নাকি কমাতে হবে। দেখা যাক কপালে কি আছে। আল্লাহ আপনাকে আমাকে, আমাদের সবাকেই সুস্থ জীবন যাপন করার তৈফিক এবং মানসিক শক্তি দিক। আমিন।

২| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৭:৫৫

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: উচ্চ রক্তচাপ আমাকেও প্রায় মৃত্যুর কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছিল।

৩| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:৫৩

রাজীব নুর বলেছেন: দীর্ঘদিন রোগে শোকে না ভূগে হুট করে স্ট্রোক করে মরে যাওয়া ভালো।

৪| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:২৬

শের শায়রী বলেছেন: দু বেলা অষুধ খেতে হচ্ছে ভাই, তার পরো ঠিক থাকে না, মাঝে সাঝেই বেগড়বাই হয়।

৫| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:১১

রিফাত হোসেন বলেছেন: আমি মাঝে একটু সচেতন হই, যেই না শরীরটা ভাল হয় অমনি আগের মত অবহেলা করি। চেষ্টা করছি, ঠিক হবার।

৬| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২০ ভোর ৪:৩০

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
খুবই মুল্যবান একটিপোষ্ট ।
সকলেরই স্বাস্থ্য সচেতন হ ওয়া খুবই জরুরী।
শুভেচ্ছা রইল

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.