নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
জঙ্গি সংগঠন জেএমবি তখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। শায়খ আব্দুর রহমান, বাংলা ভাইরা তখন বাংলাদেশের প্রতিটা ঘরে ঘরে মূর্তিমান বিভীষিকা। নিয়মিত বিরতিতে আত্মঘাতী বোমা হামলায় প্রচুর মানুষ মারছে।
সিনেমা হলে বোমা বিস্ফোরণ হচ্ছে, কোর্ট প্রাঙ্গনে হচ্ছে, রমনার বটমূলে হলো, গোটা দেশে একই সময়ে একই সাথে সিরিজ বোমা বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটলো। লোকজন তখন ভয়াবহ আতংকে দিশেহারা। নিতান্ত ধর্মান্ধ, সাম্প্রদায়িক লোকটিও তখন আতংকে চুপসে গেছে। ভিড়ের বাসে চড়তে ভয় করে। ফুটপাথে হাঁটতে ভয় করে। কখন না জানি কোথায় বিস্ফোরণ ঘটে, এবং শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে অকালে প্রাণ হারাই। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে, শপিং মলের প্রবেশদ্বারে, কনসার্ট ভেন্যুতে সব স্থানে তখন মেটাল ডিটেক্টরের ছড়াছড়ি। সবাইকে নির্দিষ্ট গেটের মধ্য দিয়ে যেতে হয়, সিকিউরিটির লোকজনের কাছে ব্যাগ, পার্স পকেট খুলে দেখাতে হয়। এর আগে আমাদের দেশে এসবের অস্তিত্বই ছিল না। আমরা বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ নগরী ছিলাম না সত্য, কিন্তু এতটাও খারাপ ছিলাম না কখনই।
সেই সময়ের বাংলাদেশে যারা থাকেন নি, তাঁরা কিছুতেই অনুমান করতে পারবেন না কেমন দুঃস্বপ্নের নাম ছিল জেএমবি নামের সংগঠনটি।
এমন না যে পুলিশ rab ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংগঠন তখন ঘুমাচ্ছিল। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দিন রাত এক করে ক্যান্সারের মতন দেশব্যাপী ছড়িয়ে যাওয়া ব্যাধিটির নিরাময়ে তাঁরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
নৃশংস জঙ্গি ধর্মান্ধতায় উন্মাদ এই সমস্ত জানোয়ারদের একে একে পাকড়াও করা হতো। একটাকে ধরলেই তখন অন্যগুলি প্রতিশোধ নিতে বোমা বিস্ফোরণ ঘটাতো। আরও কিছু সাধারণ মানুষের অকালে প্রাণ ঝরে। তাই যখনই খবর আসতো জেএমবির অমুক তমুক সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তখনই বুকের ধুকপুকানি বেড়ে যেত। খুব শীঘ্রই যে প্রতিশোধমূলক হামলা ঘটতে চলেছে, এর শিকার না জানি কার স্বজন হয়!
বোঝা যাচ্ছিল, এ লড়াই ততক্ষন পর্যন্ত থামবে না যতক্ষন না ওদের মাথা গুড়িয়ে দেয়া হয়।
ওদের প্রধান, বাংলাদেশের মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী, শায়খ আব্দুর রহমান সিলেটের এক বাড়িতে লুকিয়ে ছিল।
বদমাইশটাকে বাড়ি ঘেরাও করে গ্রেফতার করে Rab.
ঢাকার গুলিস্তান/বায়তুল মুকাররম এলাকা থেকে ওদের এক অনুচরকে অনুসরণ করে, ওর করা ফোন কল ট্র্যাক করে, যা সিলেটের ঐ নির্দিষ্ট টাওয়ারে হিট করেছিল, সেটা থেকেই ধীরে ধীরে সার্চ ন্যারো ডাউন করে করে ঐ বাড়িতে এসে পিন পয়েন্ট করা হয়। কী নির্ভুল নিশানা! সেখানেই লুকিয়ে ছিল পালের গোদা।
গ্যাস, বিদ্যুৎ সব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে, rab আহ্বান করে ভালোয় ভালোয় বেরিয়ে আসতে।
গোটা দেশবাসী, আমার মতন প্রবাসী, সবাই তখন দম বন্ধ করে অপেক্ষায় আছি, কখন কী ঘটে!
কেউ জানেনা, নিজেদের নেতাকে উদ্ধার করতে জঙ্গিরা একযোগে হামলা চালায় কিনা। কেউ জানেনা, ছোট ছোট অশিক্ষিত মূর্খ ছেলেপিলেকে আত্মঘাতী হামলায় উদ্বুদ্ধ করা শায়খ নিজে আত্মঘাতী হবে কিনা। দম বন্ধ পরিবেশে কাটলো দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনী।
ফায়ার ব্রিগেডের পাইপ দিয়ে পানি ছিটানো হয়, তারপরেও বেরোয় না।
অবশেষে যখন দুই হাত উঁচিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম নিকৃষ্ট অমানুষটা বেরিয়ে এসে ধরা দিল, দেশবাসী এক চরম স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। আমরা উপলব্ধি করি, আত্মঘাতী বোমা হামলার আতংকের এই সমাপ্তি ঘটলো।
আসলেই তাই হয়েছিল।
জঙ্গি সংগঠনটির মাথা গুড়িয়ে দেয়ার পরে ওরা বহুবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবার চেষ্টা করলেও, সেভাবে সফল হয়ে উঠতে পারেনি। এখনও তারা সেই চেষ্টায় আছে, সন্দেহ নেই। তবে ক্ষনিকের জন্যতো আমরা শান্তিতে আছি!
নৃশংস ঐ ঠান্ডা মাথার খুনিদের সংগঠনের প্রধানকে গ্রেফতার করে দেশব্যাপী রাতারাতি হিরো বনে যান Rab প্রধান, কর্নেল গুলজার।
আমাদের দেশে তখনও সাকিব আল হাসান টাইপ খেলোয়াড়দের আগমন ঘটেনি। আমরা তখন সত্যিকারের সুপারহিরোদের নিয়েই গর্ব অনুভব করি।
এর কয়েক বছরের মধ্যেই ভদ্রলোকটিকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়। খুনি, তাঁরই দেশের একদল বখে যাওয়া সন্তান।
তাঁর সাথে ছিলেন আরও কিছু বীর সহযোদ্ধা। এদের একেকজনকে তৈরী করতে সেনাবাহিনীর বছরের পর বছর সাধনা করতে হয়।
দেশের অন্যতম বীর সন্তানদের লাশ গুলিতে ঝাঁঝরা করে নর্দমায় ফেলে দেয়া হয়। কারোর শরীরে আগুন ধরানো হয়। কাউকে কাউকে স্রেফ মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়।
২০০৯ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি আমাদের ইতিহাসের এমনই এক কালো অধ্যায়।
বিচার হয়েছে। দেশের ইতিহাসের কোন বিচারে সেই বিচারেই সর্বাধিক ফাঁসির রায় দেয়া হয়েছে।
নিহতদের স্বজনদের জিজ্ঞেস করতে ভয় লাগে, "বিচার পেয়েছো?"
তাঁরা কান্নায় চোখ ফুলিয়ে নীরবে তাকিয়ে থাকেন। তাঁদের বুকের ভিতরের হাহাকার দূর থেকেও শুনতে পাওয়া যায়।
শেষ বিচারের দিনেই কেবল তাঁরা ন্যায় বিচার পাবেন। ততদিন, শহীদ বীরসেনানীদের প্রতি রইলো, ভালবাসা।
২| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:৩১
পদ্মপুকুর বলেছেন: যত সরলীকরণ করেছেন, বিষয়টা অতটা সহজ হয়তো নয়। কর্নেল গুলজারের মৃত্যু স্রেফ একদল বখে যাওয়া সন্তানের হাতে হয়েছে ভাবলে ভুল হবে।
৩| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:৫৩
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
দেশের ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাকাণ্ড, পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের একাদশ বার্ষিকী আজঃ দেশের এই বীর শহীদদের স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়
৪| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:০৪
শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: হত্যার রাজনীতি। পিলখানার হত্যাকান্ড অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। প্রশ্নের উত্তর বিভিন্ন কোণ থেকে মেলানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু নিহত অফিসারদের ফেরানো যায় না, যাবে না। সবার আত্মা শান্তিতে থাকুক।
©somewhere in net ltd.
১| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:১০
রাজীব নুর বলেছেন: সবাই ধর্মের সঠিক পথে আসুক।
দেশে উন্নয়নে ভরে যাক।