নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
“অমুক খুব শো অফ করে, দেখবা সে যে দামি গাড়ি চালায়, সেটা দেখানোর জন্য ও এসেই তোমার সামনে গাড়ির চাবি রাখবে।”
এক বন্ধুর সাথে কথা হচ্ছিল। একজন পরিচিতের প্রসঙ্গ উঠায় ও এই কথা বললো।
“আমাদেরও উচিৎ ওর সামনে নিজেদের গাড়ির চাবি রাখা। বুঝবে যে ও কত বোকার মতন কাজ করে।”
আমি যোগ করলাম, “আইডিয়াটা ভাল। কিন্তু আমিতো চালাই টেসলা, কোন চাবি নাই। মোবাইলে চলে। আমাকেতো ওর সামনে মোবাইল রাখতে হবে সামনে। ও কিছু বুঝবে? হাহাহা।”
বাংলাদেশে পোলাপান মোবাইল ফোন নিয়ে খুব শো অফ করলেও এদেশে এই যন্ত্রনা নাই। আল্লাহর অশেষ রহমত। খুবিই বিরক্তিকর। একবারের ঘটনা বলি। তবে তার আগে খানিকটা ব্যাকগ্রাউন্ড দেই।
আমি বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন চালিয়েছি একটা ফোন সেট দিয়ে। নোকিয়া ৮৩১০। শুরুর দিকে ফোনটার খুব ইজ্জত ছিল। নতুন মডেলের সব ফোনেরই থাকে। কিন্তু তখন প্রায় প্রতি সেমেস্টারেই একটা করে নতুন মডেল বাজারে আসতো। পোলাপান হুমড়ি খেয়ে পড়তো সেসব সেট কেনার জন্য। কারোর ফোনে গান বাজে, কারোর রিংটোন সুন্দর, কারোর সেটটাই সুন্দর। ফোন সেটের উপর লোকজনের যেন ইজ্জত ওঠানামা করে।
সেই হিসেবে আমার ইজ্জত একেবারেই তলানিতে। আমার সেট পুরানো। তারউপর এর বডি নিয়মিতই ভাঙ্গে। আমি নতুন বডি কিনে রিপ্লেস করি। আবার ভাঙ্গে, ময়লা জমে, তবু ফোন আমি পাল্টাই না।
প্রধানতম কারন ছিল এই যে আমি ফোন কিনতে চেয়েছিলাম নিজের টাকায়। আব্বুর কাছে ফোন বা নিজের বিলাসিতার জন্য হাত পাততে নিজেকে ছোটলোক মনে হতো। বড় হয়ে যাবার পরেও বাবা মায়ের ঘাড়ে চেপে থাকতে ইচ্ছা করতো না। টিউশন করে চার হাজার টাকা কামাতাম। ওসব দামি সেট কেনার সামর্থ্য ছিল না।
বন্ধু বান্ধব বা পরিচিতরা এতসব জানতো না। সেই ফোন দেখে অনেকে হাসাহাসিও করতো।
ধৈর্য্যের ফল পেলাম একদিন।
আমেরিকায় চলে আসা হলো। নিজে চাকরি করি, পড়াশোনা করি। নিজের আয়, নিজের স্বাধীনতা। তখন আমেরিকান বাজারে এলো আই ফোন।
আমি গেলাম দেশে। ঝটিকা সফর। মাত্র কয়েকদিন সময় হাতে আছে। এর মাঝে ঠিক করলাম রাতের বাসে চিটাগং গিয়ে দাদার কবর জিয়ারত করে মামা মামী আর খালার সাথে দেখা করে পরের রাতেই ঢাকা চলে আসবো। সোহাগ পরিবহনের বিজনেস ক্লাস টিকিট নিলাম এই কারণেই। ঘুমাতে ঘুমাতে যাব। সকালে গিয়ে যেন ক্লান্ত না থাকি।
যন্ত্রনা শুরু করলো আমার পাশের যাত্রী। ও নোকিয়া এন সিরিজের ফোন ব্যবহার করে, যার ভিতরে এমপি থ্রী চলে, এই তথ্যটা আমাকে না জানানো পর্যন্ত যেন ওর রাতে ঘুম আসবে না। চোখের সামনে মোবাইল মেলে রাখলো, এইটা গুতায়, ঐটা গুতায়। সে এক যন্ত্রনা! ক্লাসের অংক পরীক্ষায় কোন ব্যাক বেঞ্চার যখন একশোতে নব্বই পায়, তখন সে যেমন নিজের খাতা সবাইকে দেখাতে দেখাতে আসে, এই ব্যাটার কাজ কারবারও যেন তাই।
তখন বিরক্ত হয়ে আমি আমার ফোন বের করলাম। চালু করলাম নিড ফর স্পিড গেমটা। কোন বাটন না, ফোনের মুভমেন্টের সাথে স্ক্রিনের ভিতরের গাড়ির বাঁক খাওয়া সোজা থাকা কন্ট্রোল্ড হচ্ছে। এইটা যে একটা ফোন, এই তথ্যটা ব্যাটার বিশ্বাস করতে কতক্ষন লাগলো কে জানে।
ভদ্রলোক নিজের এমপি থ্রিওয়ালা এন সিরিজ নিজের পকেটে চালান করলেন।
আমিও যন্ত্রণার অবসান হয়েছে ভেবে ফোন পকেটে রেখে চোখ বুঝলাম। খুললাম দামপাড়ায় পৌঁছে।
এই হচ্ছে আমার মোবাইল শো অফের করুন ইতিহাস।
তা এই জীবনে গাড়ি কখনই শো অফ করতে পারলাম না। দীর্ঘ সময় চালাতাম টয়োটা ক্যামরি। এরপরে কিনলাম ভক্স ওয়াগন পাসাট। দুইটাই সাধারণ গাড়ি। এইগুলি নিয়ে শো অফ করলে লোকে উল্টা হাসবে।
টেসলা কেনার পরেও শো অফ করা হলোনা।
এর পেছনেও এক করুন ইতিহাস আছে। সেটা এখন বলা যাক।
তখন নতুন নতুন টেসলা কিনেছি। এক্সেলেটরে চাপ দিতেই গাড়ি হাওয়ার গতিতে ছুটে। এটা ওটা কত আধুনিক জিনিস পত্র যে আছে! হাইওয়েতে অটো স্টিয়ারিংয়ে গাড়ি দিয়ে দেই, গাড়িকে অটোমেটিক চলতে দেখে নিজেই মুগধ হয়ে যাই। বিজ্ঞান কোথায় গিয়ে ঠেকেছে!
“এই গাড়ি শো অফ করা যেতে পারে।” এই না যখন ভাবনা মাথায় এলো, সেদিনই পরিচিত এক সাদা ভদ্রলোকের বাড়িতে গেলাম। উনাদের বাড়ি ধনী এলাকায়। এক একর জায়গার নিচে সেখানে কোন বাড়ি বিক্রির নিয়ম নেই। প্রতিটা বাড়িই মিলিয়ন ডলার মূল্যের।
তো কি হয়েছে? আমিও আধুনিক গাড়ি চালিয়ে এসেছি। আমিও যা তা লোক না।
তা খুব ফিটফাট হয়ে গাড়ি থেকে নামলাম। তখনই ভদ্রলোকের একটা ডোবারম্যান, একটা জার্মান শেফার্ড এবং একটা জাত না চেনা বিশালাকৃতির কুকুর ঘেউ ঘেউ করে আমাদের দিকে ছুটে এলো। আমরা যে গতিতে গাড়ি থেকে নেমেছিলাম, তার একশোগুন বেশি গতিতে আবার ভিতরে ঢুকে গেলাম।
টিভি বিজ্ঞাপন দেখে বড় হয়েছি যে কেউ কোন ডিওড্রেন্ট গায়ে মাখলে সুন্দরী মেয়েরা ঝাপায় পড়ে।
কেউ অমুক রেজার দিয়ে দাড়ি কামালে সুন্দরী মেয়েরা ঝাপায় পড়ে।
কেউ নির্দিষ্ট নামের চুইং গাম খেলেও মেয়েরা ঝাপায় পড়ে।
গাড়ির কোন বিজ্ঞাপন আছে কি এমন? আমাদের উপর একদল বিশালাকৃতির কুত্তা ঝাপায় পড়লো!
তিন কুকুর তখন আমাদের ঘিরে ঘেউ ঘেউ করছে। মালিক হাসতে হাসতে আদুরে গলায় কুকুরগুলিকে বলছে, “কাম অন চিল্ড্রেন! বিহেভ!”
এখানে লোকজন কুকুর বিড়ালকে নিজের সম্তানের মতোই লালন করে। নিজের গাড়ির পেছনে স্টিকার লাগায় “ডগ মম” লিখে। আমাদের দেশে “কুত্তার বাচ্চা” “শুয়োরের বাচ্চা" একটা গালি। এখানে বাবা মা নিজেদের বাচ্চাদেরই কুকুরের বা শুকরের ড্রেস পরান যেখানে “পিগলেট” বা “পাপি” লেখা থাকে।
কুকুরগুলি “বিহেভ” করতে সময় নিল। ওদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পরে আমরা বের হলাম, এবং ওরা এমন দৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকিয়ে গর্জাতে লাগলো, যেন কুকুরের ভাষায় ওরা বলছে, “তোগো লাইগা আমগো মালিক আমগোরে চেইন দিয়া বান্ধছে! একবার যদি কেউ চেইন খুইলা দিতরে.....”
তখনই বুঝলাম, আমি যদি বুগাটি বা রোলস রয়েস বা লম্বা লিমুজিন থেকেও নামতাম, তাইলেও তিন কুত্তার দাবড়ানি খাইতাম। মানুষের মতন বেকুব প্রাণী ছাড়া দুনিয়ার আর সব প্রাণীর কাছেই ব্র্যান্ডের ভ্যালু দুই পয়সা।
মোরাল অফ দ্য স্টোরি, সেই গাড়ি, বাড়ি, ঘড়ি, পোশাক নিয়ে কিসের শো অফ যেগুলিরে কুত্তায়ও সম্মান করেনা?!
১৮ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১:১৯
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ওরা কুকুর পালে ওদের ছেলেমেয়েদের বিকল্প হিসেবে। আমরা বুঝবো না এই প্রেম।
২| ১৫ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ১:২৫
রাজীব নুর বলেছেন: এ যুগ হলো দেখানোর যুগ। যার যা আছে সে দেখায়। লোকজনকে দেখিয়ে এক ধরনের শান্তি আর আনন্দ পায়। তবে আমাদের মতো এরকম দরিদ্র দেশে বিলাসিতা করা অন্যায়।
১৮ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১:২০
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: শো অফ একটি মানসিক ব্যাধি। অন্যকে জ্বালিয়ে নিজে সুখ পাওয়া।
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ১:২১
হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
কুকুর উপকারি। যাদের বড় ইয়ার্ড ও লন সহ বাড়ী আছে তাদের কুকুর পালা উচিত।
যারা ছোট এপার্টমেন্টে থাকে এরপরো ভেতরে কুত্তা রাখে, খুবই বিরক্ত লাগে।