নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
দেশ ডিজিটাল হচ্ছে, সুখের কথা। আমরা যখন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, সেসময়ে লোকজন ব্যাংকের এটিএম কার্ড শো অফ করতো। ওর এটিএম কার্ড আছে, মানে সে বড়লোক। সমাজের এলিট ক্লাসের সদস্য। ভাবসাবই আলাদা। এটিএম থেকে মানি উইথড্র করার সময়ে পারলে পুরো শহরে ঘোষণা দেয় যে সে এটিএম কার্ডের মালিক!
বিদেশে এসে দেখি পথের ভিক্ষুকেরও দুই চারটা ডেবিট কার্ড থাকে। আমাদের ফুটানিটা ঠিক কি নিয়ে সেটা বুঝলাম না।
আমেরিকা থেকে প্রথম যখন দেশে গেলাম, ভিসা কার্ড ব্যবহার করলাম গুলশানের আলমাসে। কয়েকজন এমন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো যেন আমি বড়লোকের উচ্ছন্নে যাওয়া ছেলে। অল্প বয়সেই বাপ আমার হাতে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে আমাকে নষ্ট করে ফেলেছেন।
সুখের কথা এ দৃশ্যের বদল ঘটেছে। এখন ঘরে ঘরে মানুষের হাতে ক্রেডিট ডেবিট কার্ড। দোকানে দোকানে কার্ড সোয়াপ করার মেশিন আছে। বাংলাদেশের মতন দেশে এর প্রয়োজনীয়তাও আছে। আমার মনে আছে, লোকজনের মাসিক বেতন পাবার দিনে হাইজ্যাকিং খুব বেড়ে যেত। ঠিকমতন দাও মারতে পারলে এক সাথে অনেকগুলো টাকা হাইজ্যাকাররা পেয়ে যেত। লোকজন আতংকে ক্যাশ টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরতেন। পথে ছিনতাইকারীর কবলে পড়লে পুরো মাস মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকতে হবে। আশা করি এখন সব কোম্পানিই ডিরেক্ট ডিপোজিট করে দেয়। নিরাপদে অনলাইনে ব্যাংক থেকে ব্যাংকে টাকা ট্রান্সফার হয়ে যায়। এখন ছিনতাইকারীদের মাথায় হাত!
বাজারের ক্ষেত্রেও তাই। মাসিক বাজার করতে এখন আর ক্যাশ নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। সুপারশপে ঢুকবেন, পুরো মাসের বাজার করবেন, ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড ঘষবেন, পেমেন্ট হয়ে যাবে। ছিনতাইকারী যদি কার্ড ছিনতাই করে নিয়েও যায়, কার্ড কোম্পানিকে বলবেন কার্ড বন্ধ করে দিতে। ঝামেলা শেষ।
হ্যা, ছিনতাকারী আপনাকে ধরে এটিএম মেশিন থেকে টাকা তুলে দিতে বলতে পারে। সেখানেও একটা লিমিট সেট করা থাকে। সিসিটিভি ক্যামেরায় তার চেহারাও উঠে আসবে। ডিজিটাল পদ্ধতির কারনে আমাদের নিরাপত্তা অনেক বেড়ে যায়।
এছাড়া ধরেন সরকারি অফিসগুলোর কথা। বিদ্যুৎ বিল দিতে গিয়ে দেখেন বিশাল লাইন। এদিকে আপনার হাতে সময় নেই। আপনি করলেন কি কিছু ঘুষ দিলেন, লাইন স্কিপ করে আপনাকে প্রথমসারিতে নিয়ে গেল। দুর্নীতি এইভাবেই বেড়েছে দেশে।
কিন্তু ডিজিটাল হয়ে গেলে আপনি বাড়িতে, অফিসে, বাসে, রিক্সায়, টয়লেটে, ফুটপাথে হাঁটতে হাঁটতেও অনলাইনে বিল পরিশোধ করতে পারবেন। কোন ঝামেলা নেই। দুর্নীতি রোধেও দেশের ডিজিটাল হওয়া জরুরি।
তবে চোররাও স্মার্ট। ওরাও ডিজিটাল হয়ে গেছে। একেক দাওয়ে বিশাল অংকের টাকা ওদের পকেটে চলে আসে। কিভাবে? কিছু নমুনা দিচ্ছি।
যেমন ধরেন ট্যাক্স সিজন শেষে আমেরিকানরা একটা কল নিয়মিতই পায়, "আমি আইআরএস থেকে অমুক বলছি। তোমার ট্যাক্স ফাইলিং ঠিক মতন হয়নি। তোমাকে গ্রেফতার করার জন্য ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়ে গেছে, পুলিশও রাস্তায় আছে তোমাকে এরেস্ট করতে। তুমি এই মুহূর্তে পেনাল্টি সহ ডিফল্ট পেমেন্ট পরিশোধ করো, নাহলে গ্রেফতার হবে।"
খুবই স্বাভাবিক, লোকজন এতে ঘাবড়ে যায়। অ্যামেরিকায় মাত্র একবার যদি কারোর এরেস্ট রেকর্ড থাকে, তাহলে তাঁর জিন্দেগী শেষ। কোথাও ভাল চাকরি পাবেন না, কোথাও কিছুই করতে পারবেন না। কারন চাকরি বাকরির শুরুতেই আপনাকে ব্যাকগ্রাউন্ড চেক ইনফরমেশন ফর্ম ফিলাপ করতে হয়, যেখানে জিজ্ঞেস করা হয়, কখনও কি কোথাও এরেস্ট হয়েছিলে? যদি সেখানে কেউ "ইয়েস" দেয়, তাঁর এপ্লিকেশন সেখানেই বাতিল বিবেচনা করে ফেলতে পারেন। জেল খাটা কয়েদিকে কে চাকরি দিবে?
কাজেই লোকজন ভয়ে যা চাওয়া হয় তাই পরিশোধ করে।
"কোথায় টাকা দিতে হবে? কিভাবে দিব?"
"তোমার পাশে কোন ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন আছে? সেখানে গিয়ে আইআরএসকে এত টাকা দাও, আর পিন কোডটা আমাকে জানাও। আমি পুলিশের সাথে কন্টাক্ট করছি, তোমার টাকা পেলে আমি ওদের ওয়ারেন্ট ক্যানসেল করতে অনুরোধ করবো।"
এখানে কিছু কথা বলে রাখি। "আইআরএস" জীবনেও ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন বা এরকম কোন মানি ট্রান্সফার সার্ভিসের মাধ্যমে বিল গ্রহণ করবে না। তারচেয়ে বড় কথা, কাউকে ফোনে যোগাযোগ করবে না। আপনি একশো ডলার কেন, একশো কোটি ডলারও যদি ট্যাক্স ফাঁকি দেন, ওরা আপনাকে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করবে না। আপনার বাড়িতে চিঠি পাঠাবে। কাজেই কেউ যদি আইআরএসের পরিচয়ে ফোন করে, আপনি তার সাথে হাসি তামাশা মজাক করতেই পারেন। কোন সমস্যা নাই।
যেমন একবার আমি কল পেয়েছিলাম। এক লোক ফোনে বললো "আমার নাম বেঞ্জামিন হ্যাগার্ড, আইআরএস থেকে বলছি। তোমার নাম মঞ্জুর চৌধুরী?"
শালার ব্যাটা বেঞ্জামিন হ্যাগার্ডের কি মাথা নষ্ট হয়েছে যে সে কড়া ইন্ডিয়ান এক্সেন্টে কথা বলে? সাথে আইআরএসের নাম শুনেতো হেসেই দিলাম। বললাম, "জ্বি।"
"তুমি ডালাস, টেক্সাসে থাকো, ঠিক?"
কিছু তথ্য ওরা জেনেই আপনাকে ফোন দিবে। এবং আপনার সম্পর্কে অনেক কিছু জানে, এই ভাব নিয়ে আপনাকে ভড়কে দেয়ার চেষ্টা করবে। গুগল ফেসবুকের যুগে এইসব তথ্য পাওয়া কোন ব্যাপারই না।
আমি কিছুই বুঝতে পারছি না ভাব নিয়ে বললাম, "জ্বি।"
তারপরেই তারা তাদের চিরপরিচিত অস্ত্র ব্যবহার করলো, "তুমি এই বছরের ট্যাক্স ফাইলিংয়ে ভুল তথ্য দিয়েছো। তোমার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়ে গেছে। এখনই তুমি ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন করে ডিফল্ট পেমেন্ট পরিশোধ না করলে পুলিশ তোমায় জেলে নিয়ে যাবে। ওরা কিন্তু পথেই আছে।"
খুব ঘাবড়ে গেছি, এই ভঙ্গি করে বললাম, "এ কি বলছো তুমি! কত টাকা দিতে হবে?"
"জরিমানা সহ চার হাজার ডলার।"
ওরা বিশ্বাসযোগ্য কিছু এমাউন্টই বলে। এক লাখ ডলার চাইলে আপনি সহজেই বুঝে ফেলবেন ওরা বাটপার।
"বল কি! চার হাজার ডলার! আমিতো গত বছর এত টাকা উপার্জনই করি নি।"
ব্যাটাও ভড়কে গেল।
"সমস্ত বছরে চার হাজার ডলার তোমার আয় ছিল না বলতে চাও?"
"জ্বি। এত টাকা রোজগার করলে আমি পরেরদিনই রিটায়ার করে ভেগাসে গিয়ে ফুর্তি করতাম।"
"আমি চার হাজার ডলারের কথা বলছি, চার লাখ না।"
"আমিও চার হাজার ডলারের কথাই বলছি। চার লাখতো আমি স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারি না। ওটা বিল গেটসদের ইনকাম।"
ব্যাটা বুঝে গেল আমি ফাজলামি করছি। কিন্তু টাকার লোভও সামলাতে পারছে না।
"দেখো, পুলিশ কিন্তু তোমাকে গ্রেফতার করতে রাস্তায় আছে। একবার এরেস্ট হলে আমরা কিছু করতে পারবো না।"
"তোমার কিছু করতেও হবেনা। অনেকদিন জেলে যাই না, শরীরটা ম্যাজম্যাজ করছে। থাকা খাওয়ার টেনশন নেই, চিকিৎসা আছে, লাইব্রেরি জিম সবই আছে। দাঁত ব্যথা করছে। ভাবছি জেলে গিয়েই ডেন্টিস্ট দেখাবো। আর কিছু বন্ধুবান্ধবকেতো খুব মিস করছি। কয়জনের এর মধ্যে ফাঁসি হয়ে গেছে কে জানে! আসুক পুলিশ। ভালই হবে। কতদূর তারা? আমি হাতের কাজটা গুটায় ফেলি।"
এইবার বেঞ্জামিন হ্যাগার্ড খাঁটি বিহারি এক্সেন্টে একটি গালি দিল। ধরা যাক গালিটা হচ্ছে, "কুত্তার "
আমি বুঝতে পারিনি, এমন ভাব করে বললাম, "এক্সকিউজ মি! তুমি কি বললে আমি বুঝতে পারছি না। একটু কষ্ট করে ইংলিশে বলবে কি?"
সে তৎক্ষণাৎ ইংলিশ তরজমা করলো, "Dog's baby."
আমি হোহো করে হেসে দিলাম। আমি যত হাসি, ব্যাটা তত খ্যাপে।
তবে পরিচিত অনেকেই ওদের ফাঁদে ধরা খেয়েছেন। তাই বিষয়টা নিয়ে আমি মজা করলেও, ঘটনা কিন্তু যথেষ্টই সিরিয়াস।
এপলের ঘটনাটাও বলা যাক। এইটাও আরেকটা মজার ঘটনা।
ইউজিন বা এই ধরনের কোন আমেরিকান নাম নিয়ে আরেক ইন্ডিয়ান ফোন দিল আমাকে। আমার ফোন নাকি হ্যাক্ড হয়েছে, আমার এপল আইডি আর পাসওয়ার্ড চায়।
বললাম, তোমার নাম কি বললে?
"ইউজিন।"
আমিই জেরা শুরু করে দিলাম,
"লাস্ট নেম?"
"স্মিথ।"
"মিস্টার ইউজিন স্মিথ, তোমার ইমেইল এড্রেস কি?"
বলদটা শুরুতেই টেকনিক্যাল ভুল করলো, "ইউজিনস্মিথ@জিমেইল.কম"
এপলের এম্পলয়ী অফিসিয়াল কাজে জিমেইল একাউন্টের ইমেইল কেন ব্যবহার করবে?
তারপরে ও কথা কয়, আমিও কথা প্যাঁচাই। ওর এমপ্লয়ি আইডি জিজ্ঞেস করি, কোত্থেকে ফোন করেছে জিজ্ঞেস করি। সুপারভাইজারের নাম জিজ্ঞেস করি। সবকিছুর উত্তর রেডি। আমি খাজুরা আলাপ জুড়ে দেই।
"ও, তুমি অমুক লোকেশনে কাজ করো? ওখানেতো আমার কাজিনও কাজ করে, অমুক নাম। (পুরাটাই চাপা।) চেন তাঁকে?"
এইভাবে বিশ তিরিশ মিনিট কথাবার্তা বলার পরে ব্যাটা হিন্দিতে গালাগালি করতে করতে ফোন রেখে দেয়। আমিও তখন বাংলায় কিছুক্ষন ভোকাবুলারি পরীক্ষা দেই। চিটাগং জন্ম, ঢাকায় ছিলাম কয়েক বছর; আমগো গাইল হুনলে পরে মুরদাভি খাড়ায়া যায়, আর এতো এক ছ্যাচড়া চোরা!
লোকজন আরও অনেক ধরনের স্প্যামিংয়ের শিকার হন। আপনার কাছে কল আসলো, বলল যে আপনার ক্রেডিট কার্ড কোম্পানি থেকে কল করেছে। আপনি থাকেন ঢাকা, কিন্তু ফরিদপুরে কিছু সন্দেহজনক গতিবিধি লক্ষ্য করা গেছে। আপনার কার্ডের ইনফরমেশন কারোর কাছে গেছে। আপনি কি ফরিদপুরে শপিং করেছেন?
স্বাভাবিকভাবেই আপনি আঁতকে উঠে বলবেন, "আমি কত দশ বছরে ফরিদপুর যাই নাই। আমার কার্ড গেল কিভাবে?"
মধুর কণ্ঠ উত্তর দিবে, "আমরাও সেটাই সন্দেহ করেছিলাম। স্যার, আপনি কি আপনার কার্ডের নাম্বার ভ্যারিফাই করবেন প্লিজ?"
আপনি হড়বড় করে কার্ড নাম্বার দিয়ে দিলেন।
"ধন্যবাদ। এক্সপাইরেশন তারিখ এবং সিকিউরিটি কোড?"
আপনি দিলেন, এবং ধরা খেলেন। ফরিদপুর না, সিঙ্গাপুরে হয়তো কেউ আপনার কার্ড ব্যবহার করে আপনাকে ফতুর বানিয়ে দিবে।
আপনি বুদ্ধিমান হলে ফোন নাম্বার মিলাবেন। দেখবেন কার্ডের পিছনে যে ফোন নাম্বার দেয়া, সেটা যে কল করেছে সেই নাম্বারের সাথে মিলে যায়।
কিন্তু ওরা আপনার চেয়ে এক ডিগ্রি বেশি চতুর। ওরা বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার করে যেখানে ওরা সহজেই ক্রেডিট কার্ড কোম্পানির নম্বর ব্যবহার করে এবং আপনার ফোনের কলার আইডিতে সেই নাম্বারটাই দেখাবে। এক্ষেত্রে বাঁচার উপায় কি?
আপনি বলবেন, "আমি এখন ফোন রেখে আপনাদের আবার কল ব্যাক করছি। দাঁড়ান।"
চোর হলে এখানে সে আপত্তি করবে। সে নানান ছলচাতুরি করবে। "লাইন কেটে দিলে আমাকে আপনি পাবেন না।" বা অন্য কিছু। কিন্তু আসল কোম্পানি এইসবের পরোয়া করবে না। যেকোন এজেন্টই আপনাকে সাহায্য করার কথা। এবং আপনি কল করলে কোম্পানির কাছেই যাবে, এবং ওরা সহজেই আপনার ক্রেডিট কার্ড ট্রানজেকশন দেখে বলে দিতে পারবে কোথায় কোথায় কবে কবে কার্ড ব্যবহার হয়েছিল।
সাবধান থাকবেন। আমাদের মুরুব্বিরা নিয়মিতই এই ধরনের ফাঁদের শিকার হচ্ছেন। ওদের টার্গেটও থাকেন তাঁরা। প্রথমত, বয়স্কদের টাকার পরিমান বেশি। এবং তারচেয়ে বড় কথা, এইসব টেকনিক্যাল ব্যাপারে সচেতনতা কম।
অফিসে নিয়মিতই এমন ঘটনা ঘটে। আপনার সিইওর কাছ থেকে ইমেইল আসবে। বলবে এই মুহূর্তে উনার এই ঐ তথ্যের প্রয়োজন। আপনি কিছু বুঝে না বুঝে ঘাবড়ে গিয়ে তথ্য দিয়ে দিলেন। পরেরদিন দেখলেন অফিসের ব্যাংক একাউন্ট থেকে এত কোটি টাকা গায়েব! আমার আগের কোম্পানিতে একবার আট মিলিয়ন ডলার গায়েব হয়ে গিয়েছিল শুধুমাত্র একজন কর্মচারীর অসাবধানতায়। পরের বছর আরেকজনের কারনে নয় মিলিয়ন। অনেক সাবধানতা, অনেক ট্রেনিংয়ের পরেও কেউ না কেউ ভুল করেই। মাথায় রাখবেন, আপনার বস, বা অফিসের যে কেউ অফিসের কাজে অফিসের ইমেইল ছাড়া বাইরের কোন ইমেইল এড্রেস (ইয়াহু, জিমেইল ইত্যাদি) ব্যবহার করবে না। যদি করে, তাহলে বসকে সরাসরি ফোন জিজ্ঞেস করবেন তিনি বাইরের একাউন্ট থেকে ইমেইল করেছেন কিনা। দ্বিতীয়ত, ধরেন আপনার কোম্পানির নাম "Realdeal" এবং আপনাদের সবার ইমেইল এড্রেসেই থাকে [email protected]. তা যে ইমেইল পাঠাবে, সে হয়তো বানানে একটু এদিক সেদিক করে ইমেইল পাঠাবে। যেমন [email protected]. দেখে এক মনে হতে পারে, কিন্তু deal বানানটা লক্ষ্য করুন, aর বদলে e দিয়েছে। খেয়াল না করলে মিস করবেন এবং ধরা খাবেন। কারন ওরা এতই নিখুঁত যে কোম্পানির লোগো, সিল সবই নকল করে ফেলতে পারে।
সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো এমন ইমেইল পেলে সরাসরি সেই ব্যক্তির কাছে ফোন করুন অথবা তাঁর অফিসে গিয়ে বলেন, "তুমি আমার কাছে তথ্য চেয়ে ইমেইল করেছো দেখলাম। ভ্যারিফাই করতে আসলাম আসলেই তুমিতো, নাকি কোন হ্যাকার।"
সাবধানের মাইর নাই।
ডেসপারেট মানুষগুলি ধরা খায় আরও বেশি।
যেমন আপনার ইমেইলে হঠাৎ আপনি দেখবেন কোন সুন্দরী ললনার ছবি সহ ইমেইল এসেছে। মেয়ে দেখতে মডেল। থাকে বিদেশে। ক্ষেত্র বিশেষে বিদেশিনী চরিত্রেই ওরা অভিনয় করে। রাশিয়ান মডেলের ছবি আপলোড করে দাবি করছে এটা তার আসল প্রোফাইল। আপনাকে ফেসবুকে দেখে প্রেমে গদগদ হয়ে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে। ও কোথাও পড়েছে বাঙালি পুরুষ প্রেমিক হিসেবে বিশ্বের সেরা হয়। প্রথম দেখাতেই প্রেম হয়ে গেছে। ওর জীবন পাল্টে গেছে। ফুল লতাপাতা নদী নালা সব রঙিন মনে হচ্ছে। এত সুখ এর আগে তাঁর জীবনে কখনও আসেনি। আপনাকে সে মনের কথা খুলে বলতে চায়। ও ভালবাসে! ভালবাসে!! ভালবাসে!!!
আপনি হচ্ছেন অতি সাধারণ মনুষ্য। ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটাকে ভালবেসেছেন, কিন্তু সবচেয়ে সাধারণ দর্শন মেয়েটিও আপনাকে পাত্তা দেয়নি কখনও। গার্লফ্রেন্ড নাই বলে হীনমন্যতায় ভোগেন। আপনার সব সমস্যার সমাধান হয়ে এসেছে বিদেশী সুন্দরী। আপনি স্বপ্ন দেখছেন ওর সাথে আপনার প্রেম হয়ে গেছে। ও নিজের দেশ, পরিবার সব ছেড়ে আপনার টানে বাংলাদেশ চলে এসেছে। আপনাদের নিয়ে দেশের প্রধান পত্রিকা দ্বিতীয় আলো নিউজ ছেপেছে। আপনাদের সুন্দর সুন্দর পুতুলের মতন বাচ্চা হয়েছে। বন্ধুবান্ধবদের বুকে আগুন জ্বালিয়ে আপনি আপনার বিদেশী বৌ আর সেমি বিদেশী বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে মোটর সাইকেলে করে শহরে চক্কর দিচ্ছেন। এমন সময় ক্লাসের পুরানা ক্রাশের সাথে দেখা! আপনি আপনার স্লিম ট্রিমড মডেল বৌ নিয়ে ঘুরছেন, আর সে তার ভটকা আধা টাক মাথার বিশাল ভুঁড়িওয়ালা জামাই নিয়ে বাজার করছে। কোলে একটা অপুষ্টিতে ভোগ শিশু ট্যা ট্যা করে কাঁদছে। চোখের পানি, নাকের জলে শিশুর চেহারা মাখামাখি। সাবেক ক্রাশ আপনার সুখ দেখে জ্বলছে। আহা! এই নাহলে শান্তি!
কয়েকদিন প্রেম চলবে। একদিন প্রেমিকা সেই কথা বলবে যা শোনার জন্য আপনার কর্ণকুহর তৃষিত ছিল।
"আমি তোমার কাছে ছুটে আসতে চাই।"
আপনি দেখতে পাচ্ছেন চোখের সামনেই স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে।
প্রেমিকা কাঁদো কাঁদো ইমোজি ব্যবহার করে লিখবে, "কিন্তু মস্কো থেকে ঢাকায় আসার ফ্লাইটের ভাড়া আমার নেই। সুইটহার্ট! তুমি কি কষ্ট করে আমাকে এক লাখ টাকা পাঠাতে পারবে?"
আপনি তখন মায়ের গহনা চুরি করে হলেও ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন বা মানিগ্রাম করে টাকা পাঠিয়ে দিবেন। তারপরে আর সেই মেয়ের কোন খোঁজ পাওয়া যাবেনা। খোঁজ নিয়ে জানবেন কিসের মস্কো? জিঞ্জিরা শাখা থেকে সেই টাকা তোলা হয়েছে।
আপনার মাথায় হাত।
এই ঘটনাও নিয়মিতই ঘটছে। ডিজিটাল চুরি। এই ব্যাপারে সাবধান হবেন কিভাবে? নিজের যোগ্যতা নিজেকেই বুঝতে হবে। আপনার চেহারা ফিগার অভিনয় দক্ষতা জনি লিভারের মতন, আপনি দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গের নায়ক পদে নিজেকে কল্পনা করবেন কেন? তারপরেও প্রেম চালিয়ে যেতে চাইলে যেতে পারেন, কিন্তু যেই মুহূর্তে দেখবেন প্রেমিকা/প্রেমিক পয়সা চাইছে, অমনি বুঝবেন ঘটনায় সমস্যা আছে। সরে পড়ুন। যেই মুহূর্তে টাকা দিবেন, ধরেই নিবেন নর্দমায় ফেলে দিলেন। ও টাকা আর আসবে না।
শুধু পুরুষই না, এদেশে বয়স্ক বিধবা/ডিভোর্সি/সিঙ্গেল মহিলাদের প্রায়ই এমন ফাঁদে পড়ে দেউলিয়া হতে দেখা যায়। আমি নিশ্চিত বাংলাদেশেও এমন ঘটনা ঘটছে।
আমার মায়ের সাথে এইরকম এক বাটপার যোগাযোগ করে। ও নাকি ইউরোপ আর চায়নাতে বিরাট ধনী। আমেরিকায় ব্যবসা খুলতে চায়। লোকেশন হিসেবে ডালাস পছন্দ হয়েছে। কিন্তু ইমিগ্রেশন জটিলতায় ওর লাইসেন্স হচ্ছেনা। ওর একজন পার্টনার দরকার যে সিটিজেন অথবা গ্রীনকার্ড। ও বিজনেসের ৯৯% টাকা দিবে, মাকে এক পার্সেন্ট দিলেও চলবে। কোম্পানি চালুও হবে মায়ের নামে। পরিচালনা আর হিসাব নিকাশের সব দায়িত্ব তার। মা শুধু প্রফিট গুনবে। তাও ফিফটি ফিফটি।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, "কত টাকা বাজেট?"
"দশ মিলিয়ন দিয়ে শুরু করতে চাই। পরে আরও ঢালবো।"
শালা, আধা মিলিয়নে গ্রিন কার্ড বিক্রি হয়, সেটা না কিনে মারফতি আলাপ জুড়ার চেষ্টা চালায়! কিন্তু আমি নিশ্চিত, কেউ না কেউ ঠিকই চীনা বাটপারের বাটপারির ফাঁদে পা দিয়েছিল।
সবচেয়ে বড় কথা, নিজের আইডি, পাসওয়ার্ড ইত্যাদি কারোর সাথেই শেয়ার করবেন না। কোন পাবলিক প্লেসে কম্পিউটার ব্যবহার করে আপনার ব্যাংকে বা ক্রেডিট কার্ড একাউন্টে ঢুকবেন না। কোন পাবলিক ওয়াইফাই যেখানে পাসওয়ার্ড লাগে না, সেটা থেকেও এইসব জায়গায় ঢুকবেন না। অন্যের কম্পিউটার/সাইবার ক্যাফের কম্পিউটার ব্যবহার করে এইসব জায়গায় ঢুকবেন না। নিজের ক্রেডিট কার্ড অচেনা কম্পিউটারে ব্যবহার করবেন না। কার্ড ইনফরমেশন সেভ করবেন না। পর্ন ওয়েবসাইট বা যেসব ওয়েবসাইট প্রোটেক্টেড না, নিজের ল্যাপটপ কম্পিউটার থেকে সেসব ওয়েবসাইটে যাবেন না। ভাইরাস, ম্যালওয়ার ইত্যাদি ঢুকে আপনার সব তথ্য তাদের কাছে দিয়ে দিবে। ব্যাংক, ক্রেডিট কার্ড কোম্পানির সাথে কথা বলে নিজের একাউন্টের সিকিউরিটি বাড়ান। সেগুলো হচ্ছে, নির্দিষ্ট ফোন, ল্যাপটপ বা কম্পিউটার ছাড়া অন্য যেকোন ডিভাইস থেকে লগ ইন করার চেষ্টা করা হলে সাথে সাথে যেন আপনাকে নোটিফাই করা হয়। আপনার এপ্রুভাল পেলে তবেই যেন লগইন করতে পারে। নির্দিষ্ট পরিমান টাকার বেশি বা নির্দিষ্ট শহরের বাইরে ট্রানজেকশন হলেই যেন আপনাকে কল দেয়।
আরও অনেক কিছুই আছে। সব লিখতে গেলে বলবেন লেখা বেশি বড় করে ফেলি। তাই এখানেই সমাপ্তি টানছি।
মূল কথা হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশে সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে সচেতন হন। সাবধান হন। আপনার কষ্টের উপার্জিত টাকা, কেন চোরকে ভোগ করতে দিবেন?
২০ শে মার্চ, ২০২১ ভোর ৫:৩৪
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: আপনার বোধয় ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদি কিছুই নেই। আপনার প্রয়োজনে না লাগতে পারে, অন্যের ঠিকই উপকারে এসেছে পোস্ট।
২| ১৯ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ১২:০০
শেরজা তপন বলেছেন: আপনার দারুন সব মুল্যবান তথ্যের জন্য ধন্যবাদ। লেখাটা পড়ে নিশ্চয়ই কেউনা কেউ উপকৃত হবে
২০ শে মার্চ, ২০২১ ভোর ৫:৩৫
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ইন শা আল্লাহ, এটাই উদ্দেশ্য। একজনেরও উপকার হলে লেখা স্বার্থক।
৩| ১৯ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ১:৩৪
রাজীব নুর বলেছেন: ডিজিটাল নিরাপত্তা হলো- সরকারের নিরাপত্তা। রাজনীতিবিদদের নিরাপত্তা, মন্ত্রী এমপিদের নিরাপত্তা। যেন তাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলতে না পারে।
২০ শে মার্চ, ২০২১ ভোর ৫:৩৩
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ওটাকেই আমরা নিজেদের নিরাপত্তায় বদলে ফেল্লাম।
৪| ১৯ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ২:১৯
মোঃ ইকবাল ২৭ বলেছেন: ভাল লেগেছে।
২০ শে মার্চ, ২০২১ ভোর ৫:৩৫
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ।
৫| ২০ শে মার্চ, ২০২১ ভোর ৬:১০
স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলেছেন: নিরাপত্তা হলো গৌরী সেনের সম্পদ লুটেরাদের জন্য। পাবলিককে নিরাপত্তা দেয়ার সময় আছে কারো ?
২২ শে মার্চ, ২০২১ রাত ১১:০৭
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন:
©somewhere in net ltd.
১| ১৯ শে মার্চ, ২০২১ ভোর ৬:৫৬
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: প্রয়োজনিয় কথার থেকে অপ্রয়োজনিয় কথা বেশি।