নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
মানুষ হয়ে জন্ম নিয়েছি, তাই যেদিকেই চোখ ফেরাই, শুধু দুঃখ কষ্টই দেখি। নিজের ব্যক্তিগত জীবন বাদই দিলাম, অন্যের কথা বলছি। ছোটবেলায় ভাব সম্প্রসারণ পড়তাম, "নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিশ্বাস / ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস।" তখনই বুঝতাম, এপার থেকে ওপারেরটা দেখা না গেলেও নদীর দুইপারেই ভাঙ্গন ঘটে। যদিও আমাদের অনেকেই বিষয়টা কেবল মুখস্ত করেন, বোঝার ক্ষমতা রাখেন না।
বাংলাদেশের কথাই ধরা যাক।
প্রচুর মানুষ কোটিপতি। লাখে লাখে মানুষের দামি ফ্ল্যাট, বাড়ি, গাড়ি, অফিস, ব্যবসা আছে। একই সাথে কোটি কোটি মানুষ আছেন যাদের কিছুই নেই। ইত্যাদিতে একবার একটি ভিডিও ফিচার দেখেছিলাম। গরিব এক ভদ্রলোকের সামান্য এক শতক জমি ছিল। সেটা মাত্র সাড়ে তিন হাজার টাকায় বন্ধক রেখে একমাত্র মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু জামাই মেয়েকে সংসারে তুলে নিচ্ছে না। কারন, বিয়ের সময়ে যৌতুক চেয়েছিল নগদ পনেরো হাজার টাকা এবং একটি সাইকেল। গরিব পিতা দিতে পারেনি, তাই বউকেও তুলে নেয়নি।
ভদ্রলোক সরিষার তেলের ব্যবসা করেন। ঘানি টেনে তেল বিক্রি করে সংসার চালান। ঘানি টানার জন্য তাঁর কোন পশু নেই, তাই নিজেকেই টানতে হয়। অমানুষিক প্ররিশ্রম শেষে তাঁর আয় দিনে মাত্র পঁচাত্তর টাকা। একদিন অসুস্থ হবার অনুমতি তাঁর নেই। অসুস্থ হলেই অন্নের যোগান বন্ধ। ও আচ্ছা, বলা হয়নি, তিনি থাকেনও অন্যের বাসায়। নিজের বসত ভিটে কিছুই নেই। আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রিত।
তা এই ঘটনা কেবল একটি পরিবারের না। এমন লাখে লাখ পরিবারে আমাদের বাংলাদেশ ভর্তি।
দেশের বাইরে অবস্থা আরও ভয়াবহ। কোথাও যুদ্ধ হচ্ছে, কোথাও দাঙ্গা বাঁধছে, কোথাও প্রাকৃতিক দুর্যোগে জনপদ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। কোটি কোটি মানুষ জানেন না সেদিন তাঁদের মুখে খাবার জুটবে কিনা। দিনের সূর্যোদয় দেখে ঘুম ভেঙেছে, কিন্তু সন্ধ্যা দেখার আগেই বোমা হামলার শিকার হবেন কিনা।
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ আমেরিকাতেই, যেখানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ধনী কিছু শহরের অবস্থান, বিশ্বের সেরা দশ ধনীদের বেশিরভাগই যে শহরগুলোতে থাকেন, সেই চাকচিক্যময় শহরগুলোতেই প্রচুর অন্নহীন, গৃহহীন মানুষের বাস। দুনিয়ার কোথাওই এমন কোন প্রদীপ খুঁজে পাওয়া যায়না যার নিচে ছায়া নেই।
স্বাভাবিকভাবেই এইসব দেখে আমাদের মনে একটি ভাবনার উদয় হয়। "আহারে! আমার যদি ক্ষমতা থাকতো! তাহলে আমি এইটা করতাম, সেটা করতাম।"
এমন ভাবনা আসা খুবই ভাল। এর মানে হচ্ছে, আপনি একজন ভাল মানুষ। আপনার হৃদয়ে মানুষের জন্য ভালবাসা আছে।
কিন্তু একই সাথে ভাবনাটাকে শুধু ভাবনার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেও সমস্যা। কারন এমন কোন দিনই আসবে না, যেদিন আপনি সব সমস্যার সমাধান করে ফেলবেন। আপনি যদি ইলন মাস্ক, বিল গেইটসও হয়ে যান, তারপরেও আপনি পৃথিবীর সবার মুখে খাবার ও মাথার উপর ছাদের ব্যবস্থা করতে পারবেন না। আপনার যদি বাস্তবেই মানুষের জন্য কিছু করার ক্ষমতা থাকে, তবে আপনাকে কাজে নামতে হবে আপনার সীমিত সম্পদ নিয়েই। আপনার হাতে মোট দশ টাকা আছে। এর মাঝে মাত্র এক টাকা দান করার ক্ষমতা রাখেন, কিন্তু আপনি সেটাই দিচ্ছেন না। আর লোকজনকে শুনিয়ে বেড়াচ্ছেন, "যদি আপনার কোটি টাকা থাকতো, তাহলে লাখ টাকা দিয়ে দিতেন।"
ভাইরে, এখনই এক টাকা দিতেই আপনার হাত খোলে না, লাখ টাকা দিবেন কিভাবে?
লজিক মিলে?
এইটা শুনে আশ্বস্ত হন, দুনিয়ার সবার সব সমস্যা দূর করার দায়িত্ব দিয়ে আপনাকে পাঠানো হয়নাই। আপনার নিয়্যত এবং কাজের উপর আপনাকে বিচার করা হবে। আপনি কতটুকু সফল, সেটার উপর না। আপনি আপনার পক্ষ থেকে যেটুকু সম্ভব চেষ্টা নিয়েছেন, এতেই চলবে, আপনি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ সহ পাশ! কিন্তু "আমার এক টাকায় কি হবে? এরচেয়ে অপেক্ষা করি, যখন সামর্থ্য হবে, তখন দেখা যাবে" জাতীয় ধারণার কারণেই আপনি ফেল করে বসবেন। এক টাকায় কি হয়, সেটা বিদ্যানন্দ দেখিয়ে দিয়েছে।
এখন ধরেন আপনার টাকা নেই। আপনি লাখ টাকার চাকরি করেন ঠিকই, কিন্তু আপনার খরচ কোটি টাকা। আপনার কাঁধে পরিবারের দায়িত্ব, ঋণের বোঝা ইত্যাদি ইত্যাদি। কাজেই আপনি এক টাকাও দান করার ক্ষমতা রাখেন না। হতেই পারে। তখন আপনি কি করতে পারেন? আপনি তখন শ্রম দিতে পারেন। যেমন, আপনি শিক্ষক হলে দুয়েকটা গরিব ছাত্র ছাত্রীকে ফ্রিতে পড়াতে পারেন। আপনি উকিল হলে মাঝে মাঝে গরিব কাউকে বিনামূল্যে আইনি পরামর্শ "দান" করতে পারেন। এই যে সেদিন আমি চাকরির ইন্টারভিউ নিয়ে কিছু পরামর্শ দিলাম, বিনা পয়সায়, সেটা আমেরিকায় কোন প্রফেশনালের কাছ থেকে পেতে হলে আপনাকে কমসে কম হাজার ডলার খরচ করতে হতো। বিনামূল্যে এই পরামর্শগুলো দিলাম শুধু এই কারণেই যেন যারা চাকরি খুঁজছেন, তাঁদের কিছুটা হলেও উপকার হয়। ভাল ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ করেও প্রফেশনাল চাকরি না পাওয়ার যন্ত্রনা যেন তাঁদের ভোগ করতে না হয়।
আমার সব লেখালেখির উদ্দেশ্যও তাই। যখন কোথাও টাকা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে তখন চেষ্টা করি টাকা নিয়ে এগিয়ে আসতে। যেমন কারোর চিকিৎসার প্রয়োজন, সেখানে নিঃসন্দেহে টাকার প্রয়োজন। আমি লাইক শেয়ার দিয়ে পাশে থাকলে কারোর মেডিকেল বিল পরিশোধ হবেনা। পাঁচ দশ টাকা হলেও (কিপ্টেমি করে নয়, নিতান্তই অসমর্থ্য হলে) আমাকে এগিয়ে আসতেই হবে। এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে এই পাঁচ টাকা যেন পঞ্চাশ, পাঁচশো, পাঁচ লাখ টাকার বরকত নিয়ে কারোর উপকার করে।
সেটা হয়ও। দেখা যায় আমি হয়তো সাহায্য করতে পারিনি, কিন্তু আমারই কোন বন্ধু লাখ টাকা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন।
যখন অর্থ সামর্থ্যে হয়না, তখন যা জানি, যা কারোর উপকারে আসবে, সেই জ্ঞান বিলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করি। আমি হয়তো অমুকের চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারবো না, কিন্তু আমি কোন ডাক্তার বা হাসপাতালকে চিনি যারা একটা ডিসকাউন্টের ব্যবস্থা করে দিতে পারবে, আমি তখন সেই "নেটওয়ার্ক" নিয়ে হাজির হই। কাউকে চাকরি পাইয়ে দিতে পারছি না, কিন্তু কিভাবে ইন্টারভিউর প্রস্তুতি নিতে হবে, সেই পরামর্শ দিতে পারি। বুঝাতে পারছি?
এখন আমার সেটাও করার সামর্থ্য নেই। তখন দোয়া করি, একদম মন থেকে, যেন তাঁর সেই বিপদ কেটে যায়।
এগুলিই আমার "সদকা।" আপনাদের থেকে আমার কিছু পাবার নেই, আমাকে আমার মালিক কমসেকম দশগুন ফেরত দিবেনই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তিনি বোনাস সহ দেন। সত্তুর থেকে সাতশোগুন বেশি! ওটাই তাঁর সাথে আমার কন্ট্রাক্ট। বিশ্বাস না হলে সূরা বাকারার ২৬১ পরবর্তী আয়াতগুলো পড়ে দেখতে পারেন। কন্ট্রাক্ট টার্মস এন্ড কন্ডিশনস সবই লেখা আছে ওখানে।
যখন আমার কিছুই করার থাকেনা, এমন কোন পরিস্থিতি যার কোন জ্ঞান আমার নেই, অর্থও নেই, তখন আল্লাহর কাছে, কেবলই তাঁর কাছে নিজের অসামর্থ্যের জন্য বিচার দেই। তিনি যেন আমাকে সময় বুঝে সামর্থ্য দান করেন।
তবে এই দোয়ারও একটা রিস্ক ফ্যাক্টর থাকে। আমি দোয়া করলাম সামর্থ্য দানের। তিনি আমাকে সামর্থ্য দিলেনও। তারপরে যদি আমি সাহায্য না করি, তখন এটাই আমার জন্য ব্যাকফায়ার করবে। এই জন্য খুব বেশি অর্থ সম্পদের মালিক হওয়াটাও কিন্তু অভিশাপ। "অমুককে কেন সাহায্য করলে না, তমুককে কেন খাওয়ালে না, তোমার প্রতিবেশী না খেয়ে ছিল, তুমি কেন খোঁজ নিলে না," ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর দেয়ার ক্ষমতা আমার অন্তত নেই। বিরাট দায়িত্ব।
এখন কথা হচ্ছে, ধরেন কেউ সামর্থ্য থাকার পরেও সাহায্য করলো না। ধরেন বিশাল গাড়ি বাড়ির মালিক ভদ্রলোক কোন ফান্ড রেইজিং ইভেন্টে মাত্র একশো টাকা দান করলেন। যেখানে অতি সাধারণ মধ্যবিত্তও হাজার টাকা নিয়ে হাজির হয়েছেন। তখন আমি কি তাঁকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে পারবো?
নিজেই বিভিন্ন ফান্ড রেইজিং ইভেন্টে অংশ নেই, এবং প্রায়ই এমনটা ঘটে বলেই বলছি।
উত্তর হচ্ছে, "না। এই অধিকার আমার নেই।"
কারন আমি জানিনা তাঁর সংসারে কি ঝামেলা চলছে। হয়তো তিনি কোন এতিমখানার স্পন্সর। মাস শেষে তাঁর উপার্জনের একাংশ চলে যায় সেই এতিম শিশুদের থাকা, খাওয়া, পড়ালেখার পেছনে।
হয়তো তিনি কোন গরিব আত্মীয়কে চিকিৎসার খরচ দিচ্ছেন। লাখ টাকা সেখানে যাচ্ছে, এখানে একশো টাকা যে দিচ্ছেন, এও অনেক বেশি।
আবার এমনও হতে পারে যে মধ্যবিত্ত ভদ্রলোক হয়তো সমস্ত বছরে এই একটাই দান করছেন। তাই তিনি সব টাকা এই এক অনুষ্ঠানেই দিয়ে দিলেন। অন্যদিকে এই ধনী ভদ্রলোক হয়তো প্রতি সপ্তাহেই এখানে ওখানে দান করে থাকেন। প্রতিটা ইভেন্টে একশো দুইশো টাকা করে দিতে দিতে বায়ান্ন সপ্তাহে তিনি কমসেকম পাঁচ হাজার দুইশ টাকা এমনিতেই দেন। এর উপর নিচে আরও কিছু ব্যয় হচ্ছে। কাজেই, কিছু না জেনে বুঝে কাউকে গালাগালি করে বসা আমাদের মোটেও উচিৎ না।
এইবার আসি আরেক বিষয়ে।
ধরেন, কেউ কোন প্রতিষ্ঠান চালান। মাদার তেরেসার উদাহরণ নেই। কলকাতার কুষ্ঠরোগীদের জন্য তাঁর একটি প্রতিষ্ঠান আছে। তিনি বিশ্বব্যাপী প্রচার করে বেড়ালেন তাঁর এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকান্ড নিয়ে। বিশ্বব্যাপী তাঁর প্রচুর নাম ডাক ছড়ালো। তারপরেও একদল লোক ঠিকই পাবেন যারা বলবে, "তিনি লোক দেখাতে এইসব করছেন। তিনি যেন নোবেল পান, এই তাঁর মতলব। বড় বড়লোকদের মন পেতে এই কাজ করছেন।"
আল্টিমেটলি তিনি একদিন নোবেল পেলেন। তাঁর প্রতিষ্ঠান ভ্রমনে এলেন মাইকেল জ্যাকসন, প্রিন্সেস অফ ওয়েলস লেডি ডায়ানা সহ বিশ্বের সব নামজাদা ব্যক্তিত্ব। তখন এরাই চোখ টিপে বলবে, "দেখেছো? আমি আগেই বলেছিলাম। সব ধান্দাবাজি!"
সমস্যাটা কি হবে জানেন? এদের কারনে অনেকের মনই বিষিয়ে উঠবে। অনেকেই আছেন, তখন মানসিক দোটানায় ভুগবে যে "এখানে দিব কি দিব না! যা শালার, লোক দেখানো পার্টিকে দিবই না!"
আল্টিমেট লস কাদের হলো? ঐ অসুস্থ কুষ্ঠ রোগীদের।
কথা হচ্ছে, এই ধরনের মানসিকতা খুবই নিম্নশ্রেণীর প্রাণীরও থাকেনা। একটা কুকুরকেও যদি আপনি বিস্কিট এগিয়ে দেন, সে লেজ নাড়তে নাড়তে খায়। অন্যান্য কুকুররা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে না "ঐ লোকটা কুকুরের মন জয় করতে কাজটা করছে।" দেখবেন, অন্যান্য কুকুররাও লেজ নাড়তে নাড়তে আপনার কাছ থেকে খেতে ভিড় জমাচ্ছে।
কেবলমাত্র মানুষের দ্বারাই এমন কুৎসিত মনোভাব পোষণ সম্ভব।
আমাদের দেখতে হবে, আমরা যারা কুৎসা করছি, তারা কুষ্ঠরোগীদের জন্য কি করছি? কিছুই না। উল্টো দূর দূর করে তাড়িয়ে দিচ্ছি। সেখানে এক বিদেশিনী ভিন্ন ধর্মের মহিলা মহিলা মানুষ নির্ধারিত কাঁটাতারের সীমানা, জাতপাতের ঊর্ধ্বে উঠে এইসমস্ত রোগীদের আপন করে নিচ্ছেন। লোকদেখানো মনোভাবেও যদি করে থাকেন, তবুও তিনি ওদের আশ্রয় দিচ্ছেন, চিকিৎসা ও অন্নের যোগান দিচ্ছেন। কুষ্ঠ রোগীকে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন, তাঁর কাছে কে মহান? আপনি, আমি নাকি ওদের "মা" তেরেসা, যাকে আমরা লোক দেখানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করছি?
হাদিস অনুযায়ী দানের শর্ত "ডান হাত দিল, অথচ বাম হাত টের পেল না" হলেও, হাদিস অনুযায়ীই অনেক সময়ে প্রচারের প্রয়োজন আছে। নাহলে আমরা কিভাবে জানলাম যে তাবুক অভিযানের সময়ে আবু বকর (রাঃ) নিজের সম্পদের ১০০% এবং উমার (রাঃ) ৫০% নিয়ে এসেছিলেন? কিভাবে আমরা জানলাম এক সাহাবী নিজের সমস্ত দিনের হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পর প্রাপ্ত মুঠোভর্তি হাতে গোনা কয়েকটি খেজুরের অর্ধেকটাই নিয়ে হাজির হয়েছিলেন? উসমানের (রাঃ) দানকৃত সম্পদের পুরো তালিকা এখনও সংরক্ষিত আছে। কাজেই অনেক সময়েই প্রচারের প্রয়োজন আছে এই কারনে যেন আপনি উপলব্ধি করতে পারেন, মাদার তেরেসা এক বিদেশিনী হয়ে আমার ভাইবোনদের কষ্টে এগিয়ে এসেছেন, আর আমি আসতে পারবো না?
অথবা, আমি কারোর জন্য কিছু করতে চাইছি, কিন্তু সঠিক চ্যানেলের সন্ধান পাচ্ছি না। মাদার তেরেসার চিকিৎসা কেন্দ্রের খোঁজ জানার পরে আমি সেখানে যোগাযোগ করে বলবো, "কিভাবে উপকার করতে পারি?"
সাবেক বিশ্বসুন্দরী সুস্মিতা সেন অল্প বয়সেই ভারতের মতন দেশে অবিবাহিত অবস্থাতেই দুইটি এতিম কন্যা শিশুকে দত্তক নেয়ার সাহস করেছিলেন এই মাদার তেরেসার এতিমখানা ভ্রমন করার ফলেই। পুরুষ শিশুদের সবাই দত্তক নিতে চায়, কন্যাদের দায়িত্ব কেউ নেয় না। এইটা আমাদের উপমহাদেশের মতন এক হাজার বছর পিছিয়ে থাকা সমাজের স্যাড রিয়েলিটি। সুস্মিতা বললেন, তিনি কন্যাই নিবেন। সমসাময়িক আরেক নায়িকা রাবিনা ট্যান্ডনও কন্যা শিশু দত্তক নিয়েছিলেন। তাঁদের দেখেই অনেকে এগিয়ে এসেছেন।
"যদি ওরা পারে, আমরা কেন নয়?"
কিন্তু এইটাও ঠিক, অনেকেই আছেন যারা এইসব শুনে বলবেন, "এইসব করে লাভ কি? ওরাতো পর্দা করেনা, মুসলিম না, সিনেমার নায়িকা.....।"
তা তুমি মুসলিম হিসেবে কি ঘোড়ার আণ্ডাটা পেড়েছো যে এই ধরনের কথা বলো? লজ্জা করেনা?
কথা প্রসঙ্গে বলে ফেলি, ইসলামে দত্তক নেয়া অতি উচ্চ পর্যায়ের ইবাদত। এতিমের দায়িত্ব নেয়ার সমপর্যায়ের "ইবাদত" খুবই কম আছে। আমাদের নবী(সঃ) নিজে ছিলেন এতিম, তাঁর বহু সহীহ হাদিস আছে এই স্পেসিফিক ব্যাপারে। সবচেয়ে প্রসিদ্ধটি হচ্ছে, তিনি একদিন নিজের হাত তুলে দুই আঙ্গুল দেখিয়ে বলেছিলেন, "পার্থিব জীবনে যে এতিমের দেখভাল করবে, কেয়ামতের দিন তাঁর সাথে আমার দূরত্ব এই পরিমান হবে।"
সহজ ভাষায়, আল্লাহ এবং নবীর (সঃ) মন জয়ের সবচেয়ে সবচেয়ে সহজতম উপায় হচ্ছে এতিমের দায়িত্ব নেয়া।
অথচ আমাদের মুসলিমদের মধ্যে একটি ভুল ধারণা প্রচলিত আছে যে ইসলামে দত্তক নেয়া হারাম!
নারে ভাই, ইসলামে হারাম হচ্ছে কারোর "জন্মদাতা" পিতার নামের স্থানে নিজের নাম জুড়ে দেয়া। মানে আমার পিতার নাম আশরাফুর রহমান চৌধুরী। কেউ আমাকে দত্তক নিল। সে আমার পিতার নামের স্থানে "করিমুল্লাহ সওদাগর" লিখে দিতে পারবে না। সে লিখতে পারে "দত্তক পিতার
নাম: করিমুল্লাহ।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, বাংলাদেশের মতন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে না হলেও "ইহুদি নাসারার দেশ" আমেরিকায় যেকোন ফর্ম ফিলাপের সময় ইসলামী রীতিটাই এপ্লাই করা হয়। "বায়োলজিক্যাল চাইল্ড" নাকি "এডপ্টেড" সেটা ক্লিয়ার করে লিখতে হয়। নানান বৈজ্ঞানিক কারনও আছে এর পেছনে। সবচেয়ে সহজটাই বলি, ডিএনএ ট্র্যাকিং। বিস্তারিত লিখতে গেলে অনেক লম্বা লেখা হয়ে যাবে। এমনিতেই প্রসঙ্গ থেকে সরে আসছি।
তা মূল প্রসঙ্গ হচ্ছে, সামর্থ্য অনুযায়ী কারোর উপকার করুন। অর্থ, বিত্তে না হলে শ্রম দিয়ে, মেধা দিয়ে। সেটা না হলে সুন্দর কথাবার্তা দিয়ে, ভাল আচরণ দিয়ে। একটা হাসিও অনেক বড় চ্যারিটি, যা আমরা উপলব্ধিই করিনা। তাও না পারলে মন থেকে তাঁর জন্য দোয়া দিয়ে। তবু কারোর অপকার করবেন না। কোন অবস্থাতেই না জেনে বুঝে কাউকে ছোট করার চেষ্টা করবেন না। কে সাহায্যে এগিয়ে এসেছে, কে না, কেন না, ইত্যাদি ইত্যাদি। তাঁদের বদনাম না করে তাঁদের জন্য দোয়া করতে পারেন। যে ব্যক্তি কারোর অভুক্ত থাকার কথা শুনে বলে "সামর্থ্য নাই, কিন্তু লাইক ও শেয়ার দিয়ে পাশে আছি ভাই" - অথচ দেখলেন সেদিনই তিনি কোন ফ্যান্সি রেস্টুরেন্টে গিয়ে হাজার টাকার বার্গার খেয়ে ফেসবুকে ছবি দেয়, তাঁর জন্য দোয়া করতে পারেন সে যেন একদিন অভুক্তের কষ্ট উপলব্ধি করতে পারে। যে মুহূর্তে সে সেটা উপলব্ধি করবে, সেদিন দেখবেন সে আপনার চেয়ে বেশি নিয়ে এগিয়ে এসেছে। কেন? কারন সে তখন গিল্টি ফিলিংসে ভুগবে। "এককালে সে কাওকে অভুক্ত রেখে দামি বার্গার খেয়েছিল" - এই অপরাধবোধ থেকেই সে বেশি বেশি করে দান করবে। নিজের চোখে এমন ঘটনা দেখেছি, তাই এত কনফিডেন্সের সাথে বলতে পারছি।
২| ২৩ শে মার্চ, ২০২১ রাত ১২:৫৩
রাজীব নুর বলেছেন: আপনার পোষ্ট পড়ে উপলব্দি করলাম- সুখের চেয়ে স্বস্তিতে থাকা ভালো। আমি স্বস্তিতে আছি।
৩| ২৩ শে মার্চ, ২০২১ সকাল ৭:৫৬
কবিতা ক্থ্য বলেছেন: আপনার চিন্তা সুন্দর।
শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
৪| ২৩ শে মার্চ, ২০২১ সকাল ৮:১২
আহমেদ জী এস বলেছেন: মঞ্জুর চৌধুরী,
সুন্দর অনুভব।
একজন মানুষ কুষ্ঠ রোগ সারিয়ে ছিলেন । আমরা কেবল জনে জনে কুষ্ঠ রোগ ছড়িয়ে যাচ্ছি ।
৫| ২৩ শে মার্চ, ২০২১ বিকাল ৩:৪৩
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: বড় লিখা বলে মাঝখানে অনেকখানি পড়া হয় নাই। তবে যতটুকু পড়েছি ভালো লেগেছে। পরে সময় করে পড়ব।
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে মার্চ, ২০২১ রাত ১১:২৯
আমি সাজিদ বলেছেন: সরাসরি প্রিয়তে৷