নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
মনে আছে, বহু বছর আগে টেক্সাসের এক মায়ের ঘটনা বলেছিলাম, যেখানে তিনি তাঁর সন্তানদের নিজ হাতে হত্যা করেছিলেন? ভদ্রমহিলা ছিলেন "পোস্ট পার্টাম" ডিপ্রেশনের রোগী। মহিলাদের প্রসবকালীন বিষণ্ণতা, হরমোনের চরম ইম্ব্যালেন্সের কারনে ঘটে থাকে, কারোর কারোর ক্ষেত্রে এই ধরনের ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে, কেউ নিজে আত্মহত্যা করেন, কেউ খুন করেন, কেউ স্বামী সন্তানকে ছেড়ে পালিয়ে যান - মোট কথা এমন সব কাজ করেন যা সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ করতে পারেনা। কিন্তু আমাদের দেশে যেহেতু এই বিষয়ে সচেতনতা নেই, কাজেই আমরা দোষ দেই মা'টিকে।
"কিভাবে কেউ নিজের পেটের সন্তানকে খুন করতে পারে!"
"কিভাবে মাগি এত ছোট বাচ্চা ফেলে আরেক ব্যাটার সাথে ভাগলো!" ইত্যাদি ইত্যাদি।
প্রতিবছরই আমরা এমন সব খবর পত্রিকায় দেখি, একবার পড়েছিলাম এক মহিলা নিজের সব সন্তান সহ চলন্ত ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়েছেন। বিস্তারিততে গিয়ে দেখি কোলে ছিল তিন মাস বয়সী সন্তান।
যাই হোক, লেখার সাথে সাথে হাজার হাজার একাউন্ট সেটি শেয়ার করেছিল, হাজারে হাজার একাউন্ট সেই লেখা কপি পেস্ট করে নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছিল, প্রথম আলোয় প্রকাশ হয়েছিল, আরও বহু জায়গায় লেখাটি ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। কারন কেবল একটাই ছিল যে হাজারে হাজারে নারী তাঁর নিজের জীবনের সাথে ঘটনার মিল খুঁজে পেয়েছিলেন।
সন্তান প্রসবের পরে বিষণ্ণ হননি এমন নারী খুঁজে পাওয়া কঠিন। কারোর ক্ষেত্রে কম, কারোর ক্ষেত্রে বেশি হয়েছে, কিন্তু হয়েছে নিশ্চই। এটি কোন দেশ সমাজ বা গাত্রবর্ণ নির্ভর সমস্যা না, "নারী"দেহের অতি জটিল ক্রিয়াকলাপের কারণেই এটি হয়ে থাকে।
আমাদের দেশের স্বামীরা, শ্বশুরবাড়ির লোকেরা এমনকি নিজের মা পর্যন্ত এই বিষন্নতা বুঝার চেষ্টা করেননা। কেউ বলেন ঢং কম করতে, কেউ বলেন ধৈর্য্য ধরতে। অথচ এই বিষন্নতার চিকিৎসা প্রয়োজন। মনোরোগ বিশেষজ্ঞই পারেন এর সঠিক সমাধান দিতে।
গতকালই যেমন আমার প্রতিবেশী শহরের একটি ঘটনায় গোটা পৃথিবীর নানান প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাঙ্গালিরা বিস্ময়ে হতভম্ভ হয়ে গেছেন। দুইটি বাঙালি ভাই নিজের পরিবারের প্রতিটা সদস্যকে অতি ঠান্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করে নিজেরা আত্মহত্যা করেছে। এতদিন বিদেশিদের মধ্যে এমন ঘটনা দেখে এসেছি, লং আইল্যান্ডের বিখ্যাত ভৌতিক বাড়ি এমিটিভিলের ঘটনাও এমন, কিন্তু সবই আগে ঘটতো সাদা চামড়ার আমেরিকানদের ক্ষেত্রে। এই প্রথম বাদামি চামড়ার বাংলাদেশি আমেরিকানদের কোন পরিবারে এমন ঘটনা নিঃসন্দেহে অনেককেই নাড়িয়ে দিয়ে গেছে। সবাই নির্বাক হয়ে ভাবছি, "কিভাবে হলো! কিভাবে সম্ভব!"
পুলিশের তদন্তের কাজ পুরোপুরি সহজ করে দিয়েছে ছেলেটির আত্মহত্যার স্বীকারোক্তি। অফিসের কাজে অতি ব্যস্ত থাকায় আমার পুরোটা পড়া হয়নি, তবে শুরুতে যেটুকু পড়েছি, বুঝেছি ছেলে দুইটি ভয়াবহ ডিপ্রেশনের রোগী ছিল। ডিপ্রেশন কোন পর্যায়ে সাইকোপ্যাথে পরিণত করেছে ওরা বুঝতেই পারেনি। ভোঁতা অস্ত্র দিয়ে নিজের শরীর কেটে কেটে আনন্দ নেয়া থেকে শুরু করে পরিবারের প্রতিটা সদস্য সহ নিজেদের শেষ করে দেয়ার চরম সিদ্ধান্ত, এবং সেটাও অতি ঠান্ডা মাথায় চমৎকারভাবে গুছিয়ে লিখে যাওয়া - এসবই মানসিক রোগীর লক্ষণ। মানসিক চিকিৎসাও চলছিল, কিন্তু তারপরেও লাভ হয়নি। চূড়ান্ত ফল আমরা দেখতে পেলাম গত শুক্রবার রাতে, অতি ঠান্ডা মাথায় নিজের পরিবারের প্রতিটা সদস্যদের নিজ হাতে খুন করার ঘটনার মধ্য দিয়ে। ওদের কাছে কিন্তু ঘটনাটিকে মোটেও পাপ বা অন্যায় বলে মনে হয়নি। ওরা এটা করেছে তাদের প্রয়াণে ওদের পরিবারের সদস্যরা যেন "কষ্ট" না পায়, সে উদ্দেশ্যে। বুঝতে পারছেন, মস্তিষ্ক আমাদের নিয়ে কতটা খেলতে পারে যে এত ভয়াবহ অপরাধেও লজিক খুঁজে কনভিন্স করতে পারে?
আল্লাহ আমাদের মাফ করুন।
এবং সেই সাথে সবাই সতর্ক হন।
আপনার পরিবারেই কেউ হয়তো ডিপ্রেশনের রোগী আছেন। আপনি চিকিৎসা করতে পারবেন না নিশ্চিত, আপনার আমার বা সাধারণ মানুষের সেই যোগ্যতা নেই, কিন্তু আমরা যা করতে পারি তা হচ্ছে, তাঁদের সমস্যা রেকগনাইজ করা। ওরা যে সমস্যায় আছে, ওরা যে কাউকে সেটা বলার জন্য হাহাকার করছে, এগুলো ননজমেন্টালভাবে স্বীকার করা। খবরদার, কখনও বলতে যাবেন না, "তোমার সমস্যাতো কিছুই না, আমি এরচেয়েও বড় ডিপ্রেশনে ছিলাম....।"
আপনাকে বিষয়টা বুদ্ধিমানের মতন হ্যান্ডেল করতে হবে। নিজেকে বড়, মহান প্রমানের চেষ্টা পরে করুন, আপাতত তাঁর কথা শুনুন, সিচুয়েশন বুঝার চেষ্টা করুন। যদি বুঝেন আসলেই ভয়াবহ অবস্থা (এখানে যেমন ভোতা ছুরি দিয়ে নিজের হাত কাটাকাটি করতো) তখন অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। মনে রাখবেন, বিষণ্নতা, মানসিক রোগ ইত্যাদির সাথে পাগলামির কোনই সম্পর্ক নেই। ছেলেগুলো মেধাবী ছিল, একজন ইউটি অস্টিনে (আমাদের রাজ্যের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়) পড়তো। মানে হচ্ছে, কেউ পড়ালেখায় ভাল হলেই এ নয় যে তাঁর মানসিক ব্যাধি/সমস্যা বিষণ্নতা থাকতে পারবে না। টাকা ছিল, মেধা ছিল, হাসিখুশি পরিবার ছিল, গার্লফ্রেন্ড ছিল - কিন্তু তারপরেও ছেলেগুলো বিষণ্ণ ছিল। খুঁজে বের করতে হবে সমস্যা কোথায়। আমরা না পারলেও চিকিৎসকরা নিশ্চই পারবেন। ওদের সাথে কথা বলে বলে তাঁরা ঠিকই বের করে ফেলবেন। আপনার নিজের সমস্যা যেখানে, অন্যের সমস্যা সেখানে নাও থাকতে পারে। কাজেই বিষণ্ণতাক্রান্ত রোগীকে সাপোর্ট দিন, কখনই দূরে ঠেলে দিবেন না। ছেলেগুলোর একজনের যেমন বন্ধুবান্ধবরা ওকে ত্যাগ করায় ওর রোগ আরও বেড়েছে, সবার ক্ষেত্রেও তাই হবে, বাড়বে।
আমি জানি বিষণ্ণ বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আমরা কেউই থাকতে চাইনা। আমরা চাই আড্ডায় আনন্দ ফুর্তি হৈ হুল্লোড় করতে। বিষণ্নরোগীর আশেপাশে থাকলে নিজেরাও বিষণ্ণ হয়ে যাই। কিন্তু যে ছেলে/মেয়েটিকে আমরা ত্যাগ করছি, ওর একটা গতি করে দেয়াটাও বন্ধু/বান্ধবী হিসেবে আমাদেরই দায়িত্ব। মানুষ হিসেবে এটি সামাজিক দায়িত্বও বটে। ওর পরিবার, ওর কাছের মানুষদের ওর সমস্যাটা ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা, এদেশের স্কুলগুলোতে যেমন কাউন্সিলর থাকেন, তাঁদের কাছে বিষয়টা এড্রেস করা, নিজের পরিচিত কোন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নাম ঠিকানা দিয়ে রেফার করে দেয়া ইত্যাদি আমরা করতেই পারি।
এর ফলে ডিপ্রেশন পৃথিবী থেকে দূর হয়ে যাবে এমনটা কখনই ঘটবে না, কিন্তু আমরা আমাদের দায়িত্ব সেরে রাখলে এই ভয়াবহ পরিণতিগুলো অনেকটাই কমে যাবে।
আবারও বলি, ডিপ্রেশন যেকোন বয়সে যেকোন মানুষের জীবনেই আসতে পারে। এতে লজ্জার কিছু নেই। জ্বর সর্দি কাশি যেমন শারীরিক ব্যাধি, ডিপ্রেশনও তেমনই মানসিক ব্যাধি। অতি স্বাভাবিক। আমরা প্রত্যেকেই জীবনে কখনও না কখনও কমবেশি এই রোগে আক্রান্ত হয়েছি। একে কোন অবস্থাতেই হালকাভাবে নিবেন না, এবং সামাজিক ট্যাবু হিসেবেও ঘোষণা করবেন না। কখনই বলবেন না "ও পাগলের ডাক্তারের কাছে যায়, ও পাগল!"
কারোর সন্তান বিষণ্ণতায় ভুগলে সেই পরিবারের জীবনকে কঠিন করে তুলবেন না। আপনার আমার একটা বেয়াক্কেলের মতন আচরণও ওদের এমন ভয়াবহ পরিণতির দিকে ঠেলে দিতে পারে।
মোট কথা, সচেতন হন, সঠিক চিকিৎসা নিন। সুস্থ থাকুন।
০৮ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ৭:১১
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: পুরো প্রবাসী কমিউনিটি শোকাচ্ছন্ন।
©somewhere in net ltd.
১| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১:২০
রাজীব নুর বলেছেন: টিভি তে নিউজ টা দেখে খুব খারাপ লেগেছে।
এদিকে তাদের বাড়ি পাবনা। বাড়ির লকজন কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছে।