নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
প্যালেস্টাইন সমস্যা নিয়ে বাংলায় কিছু লিখতে গেলে অনেক ভয় করে। কারনটা হচ্ছে, আমাদের দেশের লোকজন অতি সহজেই ইজরায়েলি/জায়ানিস্ট ইহুদি এবং সাধারণ ইহুদীর মধ্যে মিলায় মিশায়ে ব্যাপারটাকে অন্য একটা রূপ দিয়ে দেয়। দোষ দিব না, কারন বাংলাদেশে আমরা কখনই কোন ইহুদীর দেখা পাই না। ওদের মাঝে ভাল খারাপ বুঝবেন কিভাবে? যা খবর আসে, সবটাইতো ইজরায়েলের ইতরামির, এর মাঝে ওদের "ভাল" ভাববেন কিভাবে?
ব্যাপারটা আরেকটু ভেঙ্গে বলি।
আমেরিকায় একটা নিউজ চ্যানেল আছে, ফক্স নিউজ। ট্রাম্পের প্রিয় নিউজ চ্যানেল, নাম শোনারই কথা। ওদের জীবনের লক্ষ্য হচ্ছে মুসলিমরা কোথায় কি সমস্যা করেছে, সেটাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে উপস্থাপন করা। যদি মুসলিমরা কিছু নাও করে, সেটাকেও এমনভাবে টুইস্ট করে হাজির করবে যে আপনি ধরেই নিবেন আসলেই এই জাতটাই জঙ্গি। এমনকি, যেসব ক্ষেত্রে মুসলিমরা ভিকটিম, সেখানেও এরা মুসলিমদেরই দোষ দেয়।
এখন অতি স্বাভাবিকভাবে, যে ব্যক্তি কেবলমাত্র এই চ্যানেল দেখেই বড় হয়, যার বাড়িতে ট্রাম্পের মুরিদদের আদর্শ পরিবেশ বিরাজমান, যে জীবনেও কোন মুসলিমের দেখা পায়নি, সে কোন অবস্থাতেই মুসলিমদের আল কায়েদা, বা আইসিস বা এইরকম জঙ্গি সংগঠন থেকে আলাদা করতে পারবে না।
ঠিক এই কাজটাই আমাদের দেশের মানুষের ক্ষেত্রে ঘটে। আমরা ইহুদি মাত্রই ধরে নেই ওরা ইজরায়েলি দখলদারদের সাপোর্টার। তারপরে আমরা তুলে আনি ইসলামিক ইতিহাস, যেখানে ওরা কিভাবে আমাদের নবীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল। তারপরে আমাদের মাওলানারা ফতোয়া দেন, ইহুদিরা আমাদের জন্ম শত্রু। ওরা ষড়যন্ত্র করে আমাদের দাবিয়ে রাখছে। এর সাথে যুক্ত হয় প্রতিদিন দখলদার ইজরায়েলি বাহিনীর অত্যাচারের ভিডিও ফুটেজ। এরপরে ইহুদিজাতিকে গালাগালি না করার আর কোন কারন থাকেনা। আমাদের ইহুদি বিদ্বেষ এতটাই তীব্র আকার ধারণ করে যে আমরা হিটলারের মতন সাইকোপ্যাথ নরাধম পশুকেও নিজেদের বন্ধু ভেবে বসি। কারন সে ইহুদিদের হত্যা করেছিল।
দেখুন, আপনি যদি মানেন সব মুসলিম জঙ্গি না, তাহলে আপনাকে মানতেই হবে সব ইহুদি "জায়নিস্ট" না। আমাদের "শত্রুতা" জায়নিস্টদের সাথে, "ইহুদি জাতির" বিরুদ্ধে নয়। ওরা আহলে কিতাবী, আল্লাহ কুরআন শরীফে ওদের অধিকার নিশ্চিত করেছেন, আমি আপনি কে ওদের সেই সম্মান ছিনিয়ে নেয়ার? আপনি কি জানেন, এই আমেরিকাতেই এমন প্রচুর ইহুদি আছেন যারা ইজরায়েলের বিপক্ষের লোক? ট্রাম্প যখন এসেই সাতটি মুসলিম দেশের উপর ভ্রমন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল, কারা সবার আগে মুসলিমদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল জানেন? এই ইহুদিরাই। ওদের পূর্ব অভিজ্ঞতায় ওরা দেখেছে কিভাবে হিটলারের নাৎজি বাহিনী সিস্টেমেটিকভাবে ধাপে ধাপে ওদের গণশত্রু বানিয়ে হত্যাযজ্ঞে লিপ্ত হয়েছিল। ওরা দেখেছে, একই ঘটনা মুসলিমদের সাথেও এখন করা হচ্ছে। ইহুদীদের লম্বা দাড়ি ও ধর্মীয় বেশভূষা দেখে এক সময়ে ইউরোপিয়ানরা যেভাবে ভুরু কুঁচকাতো, এখন হিজাবি বা ইসলামিক বেশভূষার মুসলিমদের দিকে ঠিক একইভাবে ভুরু কুঁচকায়। খুব দ্রুতই এমন দিন আসবে যে "আমি মুসলিম" এই পরিচয় দেয়াটাও হাতে জ্বলন্ত কয়লা ধরে রাখার চাইতে কঠিন হবে।
আমরা ভুলে যাই, ইসলামের একদম সেই প্রথম শতক থেকেই ইহুদিরা এবং খ্রিষ্টানরা মুসলিমদের রাজত্বে কোন রকমের ঝামেলা যন্ত্রনা ছাড়াই বসবাস করে এসেছে। রোমানরা জেরুজালেমে তাঁদের প্রধান উপাসনাস্থলকে (বায়তুল মাকদিস) আস্তাকুঁড় বানিয়েছিল, আমাদের খলিফা উমার (রাঃ) সেই আবর্জনা নিজে নেমে পরিষ্কার করেছেন। কেন? কিংবা জেরুজালেম দখলের পরে খলিফা নিজে মদিনা ছেড়ে জেরুজালেমে এসে চাবি বুঝে নিয়েছেন। আর কোন শহরের ক্ষেত্রে তিনি এই কাজটি করেননি। কেন? কারন, বাইতুল মাকদিসকে সম্মান করতে, জেরুজালেমকে সম্মান করতে। উমার (রাঃ) কি সেখানে ইহুদি বা খ্রিষ্টানদের কোন পুরানো স্থাপনা ভেঙ্গেছিলেন? না। মুসলিমরা নিজেদের মতন মসজিদ বানিয়ে সেখানে আল্লাহর দরবারে মাথা নত করেছেন। কেন? কারন মুসলিমদের পাশাপাশি আহলে কিতাবীদের কাছেও এ শহর পবিত্র, আল্লাহর নির্দেশ, উমার (রাঃ) কে সেই অধিকার ছিনিয়ে নেয়ার?
এরপরে ক্রুসেডের ঘটনা আমরা সবাই জানি। কিভাবে ইউরোপিয়ানরা বর্বরোচিত হত্যাকান্ড চালায়। জেরুজালেমে বসবাসরত পাঁচ লক্ষাধিক অধিবাসী, যাদের মধ্যে ছিলেন মুসলিম, ইহুদি ও স্থানীয় খ্রিষ্টান - সবাইকে নির্মমভাবে হত্যা করে দীর্ঘ সময়ের জন্য দখল করে রাখে। সালাদিন আল আইয়ুবীর মাধ্যমে আল্লাহ শহরটি পুনরুদ্ধার করে দেন, এবং যাদের পূর্বপুরুষরাই আমাদের পূর্বপুরুষদের নির্মমভাবে হত্যা করেছিল, সালাদিন তাঁদেরই ক্ষমা করে দেন। জেরুজালেম আবারও খুলে দেয়া হয় তিন ধর্মের মানুষের জন্যই, যারা এই পবিত্র শহরে এসে ইবাদত করতে পারবে। এমনকি সেই খ্রিষ্টানদেরও স্বাগত জানানো হতো যারা সেই নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইউরোপ জুড়ে ইহুদি হত্যাকান্ড করেছে হিটলার, সে কোন মুসলিম ছিল না।
বাংলাদেশের মুসলিমরা এইসব ইতিহাস ভাল করেই জানে, কিন্তু তাঁদের মাথায় এইটা আসেনা যে যদি ইহুদিরা আমাদের জন্মশত্রুই হতো, তাহলে কিভাবে হাজার বছরের উপরে তাঁরা শান্তিতে বসবাস করে আসছিলেন?
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে, তাহলে জায়নিস্ট কারা? মূল ইহুদিদের সাথে পার্থক্য কি?
উত্তরটা অনেক বিশাল, তখন আবার বলবেন আমি বেশি লম্বা লেখা লিখি। তবে সংক্ষেপে বললে, জায়ানিস্টরা বিশ্বাস করে ও দাবি করে জেরুজালেম অঞ্চলটি শুধুমাত্র ওদের, আর কারোর সেখানে থাকার অধিকার নেই। মুসলিমদেরও না, খ্রিষ্টানদেরও না, অন্য কোন ধর্মেরও না।
ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো, মুসলিমদেরও একই বিশ্বাস, তবে সেটা অতীতের ঘটনা, বর্তমানে ওরা সেই অধিকার হারিয়েছে। কুরআন অনুযায়ী আল্লাহ ইহুদিদেরই এই ভূমি দিয়েছিলেন, এবং সেটাও ততদিনের জন্য যতদিন ওরা ঈমানের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। ওরা সেটা থাকেনি। যীশু (আঃ) এলেন, ওরা তাঁকে হত্যা করতে চাইলো (খ্রিষ্টমতে হত্যাও করলো)। মুহাম্মদও (সঃ) এলেন, এবং ওরা তাঁকেও অস্বীকার করলো। ওরা এখনও ওদের শেষ নবীর অপেক্ষায় আছে। ওদের কন্ডিশন একটাই, ওদের বংশ থেকেই আসবে, ওদের মন মতন কথা বলবে, ওদের হ্যাতে হ্যা, না'তে না বলবে, তাহলেই ওরা মানবে।
যাই হোক, জায়ানিস্টরা ইউরোপিয়ান ইহুদি। আরব ইহুদি এবং ইউরোপিয়ান ইহুদিদের মাঝেও পার্থক্য আছে। ওরা এসে হাজার বছর ধরে সেই পবিত্রভূমিতে বাস করা নাগরিকদের জোর জবরদস্তি করেই বিতাড়িত করে এখন ভূমি দখল করে রেখেছে। কার বুদ্ধিতে? ব্রিটিশদের। এই ব্রিটিশরা যেমন আমাদের উপমহাদেশের দুই টুকরা করেছে, মিডল ইস্টেও একই কাজ করে রেখেছে। ওরা সিদ্ধান্ত নেয়ার কে যে ওখানে কারা থাকবে আর কারা না? আজকে আমাদের দেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা যদি চীন বা তেমনই কোন বিদেশী শক্তির সহায়তায় কালকে চিটাগং, সিলেট, ঢাকা দখল করে বসে, আমরা কি খুশি মনে ছেড়ে দিব? ওয়াশিংটন থেকে এক বিদেশী গিয়ে ইজরায়েলে বাড়ি কিনে স্থায়ী হতে পারে, অথচ সেখানে হাজার বছর ধরে বাস করা কোন ফিলিস্তিনির পক্ষে সেটা সম্ভব না। ওদের নিজেদের বাড়ি থেকেই তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ধীরে ধীরে দখল করতে করতে এখন এই অবস্থা হয়েছে যে গুগল ম্যাপে প্যালেস্টাইন টাইপ করুন, ইজরায়েলের ভূখন্ড দেখবেন। ফিলিস্তিনিরা নিজ দেশেই প্রবাসী, গাজার লোকেরা "পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কারাগারে" বন্দি জীবন কাটায়। বিশ্বময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন কোটি কোটি ফিলিস্তিনি, ওদের প্রত্যেকে নিজ ভূখণ্ডে ফেরত যেতে চায়। সত্তুর বছর ধরে প্রবাসী হবার পরেও। কেন?
"কারন ওটা আমাদের বাড়ি!"
"হ্যা, কিন্তু ওটা এখন যুদ্ধক্ষেত্র, ওখানে যাওয়াটা অনিরাপদ, অবাসযোগ্য!"
ফিলিস্তিনিরা স্মিত হেসে উত্তর দেন, "বাড়ি কি কখনও অনিরাপদ হয়? অবাসযোগ্য হয়?"
কথাটা যেকোন প্রবাসীর একদম কলিজা নাড়িয়ে দিয়ে যায়। আমাদের মাতৃভূমির সামান্যতম সমস্যাতেও আমরা হায় হায় করে উঠি, গালাগালি করে বলি এইটা কেন করছে না, ওটা কেন না! আমরা বিদেশে আরাম আয়েশের জীবনে থেকেও চাই আমাদের দেশের মানুষেরাও সেই সুখ পাক যা তাঁদের অধিকার। সিস্টেমে কিছু পরিবর্তন করলেই সম্ভব।
আর তাঁদের মা এখন অন্যের কবলে। এই অতি আধুনিক বিশ্বেও দখলদারির রাজনীতির শিকার। ওদের কষ্ট উপলব্ধি করা আমাদের পক্ষে সম্ভব? একবার শুধু কল্পনা করুন, কি হতো যদি একাত্তুরে আমরা স্বাধীন না হয়ে পাকিস্তানের কাছে যুদ্ধে হেরে যেতাম? সেটাই এখন ওদের সাথে ঘটছে। আমাদের মিত্রপক্ষ ছিল ভারত ও রাশিয়া। ওদের কেউ নেই। পয়সার কাছে বিক্রি হয়ে গেছে, নাহয় ক্ষমতার কাছে আগেই মাথা নত করে ফেলেছে।
কথা হচ্ছে, দুনিয়ার আরও অন্যান্য অঞ্চলেও মুসলিমদের দুরবস্থা বিরাজমান। চায়নাতে, কাশ্মীরে, মায়ানমারে, ইয়েমেনে, আফগানিস্তানে ইত্যাদি বহু জায়গায়। কিন্তু ফিলিস্তিনের ব্যাপারেই সব মুসলিম এত সেনসিটিভ কেন?
উত্তর হচ্ছে, মক্কা মদিনা এবং জেরুজালেম, এই তিনটাই মুসলিমদের জন্য মহা পবিত্র তিনটি ভূখন্ড। মক্কার পবিত্র হারাম শরীফ, তারপরেই মদিনায় রাসূলের (সঃ) মসজিদ, এবং তারপরেই জেরুজালেমের আল আকসা মসজিদ। এই তিনটির বাইরে আমাদের ধর্মমতে পৃথিবীর আর সব স্থান, সব মসজিদ, সব ইবাদতখানা একই। কাজেই ঐ মহাপবিত্র স্থানের জন্যই আমাদের অনুভূতি ভিন্নভাবে কাজ করে। ফিলিস্তিনি ভূখন্ড কেবলই ফিলিস্তিনিদের নয়, মুসলিম হিসেবেই ওটা আমাদের অধিকার।
কালকে দেখলাম আল আকসার পাশে যখন দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে, কট্টরপন্থী জায়ানিস্টরা তখন ইজরায়েলের পতাকা হাতে উল্লাসে মত্ত। ওরা আর মানুষ নেই, অমানুষ হয়ে গেছে একেকজন।
আলহামদুলিল্লাহ। নিরীহ শিশু ও সিভিলিয়ানদের মৃত্যুতে যারা উল্লাস করে, বুঝে নিতে হবে ওদের পতনের আর দেরি নাই। অতীতে কত শক্তিশালী রাজ্য এভাবেই ধ্বংস হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে। আমাদের মাত্র নয় মাসে তিরিশ লক্ষের রক্তের পরিণতিতো হাতে নাতেই দেখলাম। এত এত মানুষের অভিশাপ, শুধু শুধু বৃথা যাবে?
তা এখন বাংলাদেশী মুসলিমরা কি করতে পারেন? দুর্ভাগ্যজনক সত্য হচ্ছে, আমাদের মুমিনরা প্রথমেই সাম্প্রদায়িকতা শুরু করে। শুরুতেই বলেছি, জায়নিস্টদের ঘৃণার বদলে আপনি সমস্ত ইহুদি এবং খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে পারেন না। আপনার প্রতিবেশী খ্রিষ্টান ভদ্রলোক, যার চৌদ্দগুষ্ঠির মধ্যেও কেউ ইজরায়েলি জায়নিস্ট না বা সাপোর্ট করে না, মাঝে দিয়ে বেহুদা বেয়াক্কেলের মতন তাঁর বিরুদ্ধে কেন আপনি চড়াও হবে? কোন ইহুদীর বিরুদ্ধেও কেবল ইহুদি হবার কারনে আপনি অসদাচরণ করতে পারেন না। সূরা আল মুমতাহিনা অষ্টম ও নবম আয়াতে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, "ধর্মের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদেরকে ভালবাসেন। আল্লাহ কেবল তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন, যারা ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেছে এবং বহিস্কারকার্যে সহায়তা করেছে। যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে তারাই জালেম।"
আয়াতদুইটি মুখস্ত করে নিন। যে ছাগল (মুসলিম/অমুসলিম ও ইসলামবিদ্বেষী) কুরআন দেখিয়ে বলবে মুসলিমদের নিষেধ করা হয়েছে অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব করতে, ওদের মুখ বরাবর এই আয়াত তুলে ধরবেন।
বাংলাদেশী মুসলিম হিসেবে আমাদের এখন প্রধানতম কাজ হচ্ছে আল্লাহর কাছে দোয়া করা। তাঁর সাহায্য ছাড়া সম্ভব না। তিনি মুসাকে (আঃ) সাহায্য করেছিলেন যখন তাঁদের পেছনে তৎকালীন পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী সেনাবাহিনী ছিল। তিনি নবীজিকে (সঃ) সেই গুহায় সাহায্য করেছিলেন যেখানে কুরাইশরা তাঁর থেকে মাত্র এক হাত দূরে ছিল। সেই আল্লাহ এখনও আছেন, যিনি চিরঞ্জীব, মহাপরাক্রমশালী। অবশ্যই তিনি সাহায্য করবেন মজলুমদের। প্রয়োজনে সাগর ফাঁক হবে, প্রয়োজনে মাকড়সা জাল গড়বে এবং পায়রা ডিম পাড়বে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ কি কোন মিরাকেলের চেয়ে কম ছিল? ওরাও একদিন স্বাধীন হবে ইন শা আল্লাহ। সময় হলেই হবে। সেই দোয়াটাই আমাদের করতে হবে।
দ্বিতীয়ত যে কাজ সেটা হচ্ছে এই বিষয়ে পড়াশোনা করা। নিজেরা শেখা ও অন্যকে শেখানো। আজকের যুগে জায়ানিস্টরা প্রচার করে বেড়ায় যে ইজরায়েলের বিরোধিতা করবে সে "এন্টি সেমেটিক" (নাৎজি জার্মানরা যা ছিল) আচরণ করবে। লোকজন তখন ভড়কে যায়। কমন সেন্স বলে যদি রোহিঙ্গারা কালকে বাংলাদেশ দখল করে ফেলে এবং আইন পাশ করে যে, যে ওদের বিরোধিতা করবে সে "মানবতাবাদ বিরোধী" কর্মকান্ড করবে, তাহলে চলবে? তোদের বিপদের সময়ে আশ্রয় দেয়া হয়েছে, আশ্রিত থাক। দখলবাজির চিন্তা মাথায় আনলে জুতিয়ে বিদায় করা হবে। এখানেও ঠিক তাই। আমরা যেন যথেষ্ট শিক্ষিত হতে পারি যাতে এইসব ব্যাপারে যুক্তি তর্ক খাটাতে পারি। মিডিয়া প্রচার করে বেড়াচ্ছে ওরা সেখানে শান্তি চায়, ফিলিস্তিনিরাই ঝামেলা করছে। কারোর বাড়ি দখল করবা, যারতার বাড়িতে মাঝরাতে বন্দুক হাতে ঢুকে যাবে, সন্ত্রাসী হিসেবে ট্রিট করবা, কাউকে যখন তখন গুলি করে মারবা, সে পাথর ছুড়ে মারলে তুমি রকেট ছুড়ে মারবা আর ওরা কিছু বললে বলবা ওরা অশান্তি চায়, এমন বুজরুকি কথাবার্তা বিশ্বাস করার মতন নির্বোধ যেন আমরা না হই।
আরেকটা মিসকনসেপ্শন আছে আমাদের মাঝে, সেটা হচ্ছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের ইহুদী নিধনযজ্ঞের ফলেই ইজরায়েল তৈরী হয়েছে। ঘটনা তা না। এর শেকড় বহু আগেই প্রোথিত হয়েছিল, সেই উনিশ শতকের গোড়া থেকেই। এ নিয়ে বিস্তারিত লিখেছিলাম, আপনারাও পড়ে ফেলুন।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী ওআইসি সম্মেলনে ইজরায়েলের কুকর্মের নিন্দাজ্ঞাপন করেছেন। এই কাজটা অবশ্যই প্রশংসনীয়। আরব বিশ্বের হারামজাদা কিছু নেতা যখন মাথা ঝুঁকিয়ে চলে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অন্তত এই সাহসটা থাকে যে ওদের খারাপকে খারাপ বলতে পারা।
ফিলিস্তিনি দূতাবাসের সামনে গিয়ে ওদের জানাতে পারেন যে আপনারা তাঁদের পাশে আছেন। ফ্রেঞ্চ বয়কটের সময়ে যেভাবে মিছিল বেরিয়েছিল, সেরকম মিছিল এই সময় বের করাটা বোকামি, যেহেতু করোনা চলছে। কিন্তু ওদের কাছে বার্তা পৌঁছে দেয়াটা খুবই সম্ভব। ফেসবুক ব্যবহার করতে পারেন। "বিপদের সময়ে তাঁদের কেউ ভুলে যায়নি, ওদের পাশেই আছে" এই সামান্য বিষয়টাই ওদের মনে হাতির বল দেয়।
এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি যা জরুরি, তা হচ্ছে, ওদের অর্থ সাহায্য প্রদান। প্রচুর মানুষের চিকিৎসা দরকার, খাবার দরকার, এতিম শিশুদের ভরণপোষণের খরচ আছে, বাড়ি ঘর মেরামত করতে হবে, পানির সাপ্লাই পর্যন্ত কেটে রাখে জালিমের দল! এই মুহূর্তে তাঁদের সাহায্য প্রয়োজন। ফিলিস্তিনি দূতাবাস বা বিশ্বস্ত কিছু চ্যারিটি অর্গানাইজেশন এইসব দায়িত্ব পালন করে থাকে। ওদের সাহায্য করুন। আমি ব্যক্তিগতভাবে irusa.org কে দেই, আপনার যদি আরও বিশ্বস্ত কোন প্রতিষ্ঠান থাকে, সেখানে সাহায্য করতে পারেন। এক দুই পয়সা হলেও ওদের সেটা অনেক কাজে আসে। সেই ঘটনা নিশ্চই জানেন, মুতাহ অভিযানে এক সাহাবী সমস্ত দিন পরিশ্রম করে এক মুঠ খেজুর পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন, তিনি তার থেকে অর্ধেক দিয়ে দিয়েছিলেন। মুনাফেকরা হাসাহাসি করে বলছিল, ঐ আধমুঠো খেজুরে কিই বা হবে। নবীজি (সঃ) বলেন, সেই আধমুঠো খেজুরের মূল্য আল্লাহর কাছে ওহুদ পাহাড়সম পরিমান সোনা রুপা প্রদানের চাইতেও বেশি। আমাদের দেয়ার আমরা দিব, না দিতে পারলে দোয়া করবো। বাকি আল্লাহ বুঝে নিবেন।
কেয়ামতের দিনে যখন আল্লাহর সামনে কারোর কোন সুপারিশ কাজে আসবে না, নির্যাতিত মানুষদের দিকে ফিরে আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন, কারা তোমার সেই হাল করেছিল?
তাঁরা তখন নির্দ্বিধায় জালিমদের দিকে আঙ্গুল তুলে দেখাবেন।
ওদের তখন কে রক্ষা করবে?
তারপরে একই মানুষদের কাছে আল্লাহ জানতে চাইবেন, তোমাদের সেই দুঃসময়ে কারা তোমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল?
তাঁরা কি আমাদের দিকে আঙ্গুল তুলতে পারবেন?
#pray_for_Palestine
২| ১৩ ই মে, ২০২১ ভোর ৬:১১
জিকোব্লগ বলেছেন:
জায়নিস্ট ইহুদিদের /ইসরায়েলের জন্য আমার যেমন ঘৃণা
ঠিক তেমন হামাস/প্যালেস্টাইনের জন্য। এইটা এজন্য যে
তারাএকটা আত্নঘাতি পন্হা হাতে নিয়েছে তাদের প্রতিবাদের।
এভাবে পন্হাটা নিয়েছে বলেই তাদের অনেক পরে অনেক দেশ
সহিংস যুদ্ধে অনেক শক্তিশালী দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জিতেছে,
কিন্তু তারা পারে নাই নিজেদের অধিকার আদায়ে। আর
আত্মঘাতি প্রতিবাদের ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে সারা বিশ্বে।
৩| ১৩ ই মে, ২০২১ সকাল ৮:০২
চাঁদগাজী বলেছেন:
আপনার ভাবনায় ভুল আছে, দোয়া করলেও এটা ঠিক হবে না।
১৫ ই মে, ২০২১ ভোর ৪:৩০
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: তাই? তা ইতিহাসে এখন পর্যন্ত কোন ঘটনা ঠিক হয়েছে একটু বলেন শুনি। হিটলারও হার মেনেছে, স্টালিনও মরেছে, মঙ্গলরাও মুসলিম হয়েছে।
৪| ১৬ ই মে, ২০২১ সকাল ৯:০৬
ইমরান আশফাক বলেছেন: অনেকে মনে করে বা আশা করে যে শীঘ্রই পৃথিবীতে শান্তির সুবাতাস বইতে শুরু করবে, সকল প্রকারের হানাহানী বন্ধ হয়ে যাবে। এরা আসলে বোকার স্বর্গে বসবাস করছে। বরং হানাহানী, যুদ্ধ, হিংসা ইত্যাদি আগামীতে আরও বাড়বে। এমনকি যে খুন হবে, সে জানবে না কি কারনে তাকে খুন করা হয়েছে। অপরপক্ষে যে খুনটা করল, সে জানবে না কি কারনে সে খুনটা করল। কাজেই তথাকথিত শান্তিবাদীদের কথায় কান না দিয়ে নিজেদের সেভাবে প্রস্তুত রাখতে হবে আসন্ন সমস্যা মোকাবেলার জন্যে। জাতীসংঘের পরিনতি লীগ অব নেশনসের মতই হবে যদি না এটির আমূল সংস্কার করা হয়। মুসলমানরা সংখ্যায় অনেক বেশী থাকলেও একতার অভাবে মার খাবে খুব।
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই মে, ২০২১ রাত ২:৩২
রাজীব নুর বলেছেন: আমি চাই শান্তি। সারা বিশ্বের মানুষ শান্তিতে থাকুক।