নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

পর্দা প্রথার কারনে প্রসূতি মায়েরা প্রায়ই প্রাণঘাতী বিপদের সম্মুখীন হন

০৭ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ৯:১৬

ধরেন, যদি আমাদের জীবনে কোন ট্রাফিক আইন না থাকতো, তাহলে জীবনটা কেমন হতো? রাস্তায় যে যার ইচ্ছামতন গাড়ি চালাতো, কোন লাইসেন্সের কারবার থাকতো না। এ ওকে ধাক্কা দিত, সে তার সাথে ঘষা খেত। মারামারি, কাটাকাটি, ভিড়, জ্যাম ইত্যাদি লেগেই থাকতো। আপনি বলতে পারেন, বাংলাদেশের অবস্থাতো সেটাই। ঠিক। কাদের জন্য? যাদের লাইসেন্স নাই, যাদের গাড়ি ফিট না, যারা আইন মানে না ইত্যাদি কারণেইতো? বিদেশে দেখবেন প্রচন্ড জ্যামের মধ্যেও কেউ আইন ভাঙ্গে না। ফাঁকা রাস্তাতেও ট্রাফিক সিগন্যাল মেনে চলে। স্পিড লিমিট মেনে চলে। আনফিট গাড়ি রাস্তায় নামায় না। লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালাবার দুঃসাহস করেনা। তারপরেও কেউ না কেউ আইন ভাঙ্গে এবং এর ফলে এক্সিডেন্ট হয়। সবাই আইন মেনেছে আর একসিডেন্ট হয়েছে, এমন ঘটা অসম্ভব। এইটা ফ্যাক্ট।
একই যুক্তি দেশের সম্পূর্ণ আইন ব্যবস্থার উপরে ফেলুন। আইন আছে বলেই ইচ্ছা থাকা সত্বেও এ ওর সম্পদ, সম্পত্তি লুটে নেয় না। খুন করে ফেলতে মন চাইলেও খুন করেনা। ইচ্ছা থাকা সত্বেও অমুক তমুক মেয়েকে উঠিয়ে নেয়া যায় না। যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশগুলোর দিকে তাকান, কিছুদিনের জন্য যেসব দেশে আইনের অস্তিত্ব থাকেনা, দেখবেন কত লুটতরাজ চলে। "এনার্কি" যাকে বলে।
কাজেই, জীবনকে সহজ, সুন্দর ও স্বাচ্ছন্দময় করতে সমাজে আইনি শৃঙ্খলের প্রয়োজন আছে। কেবলমাত্র চোর বাটপাররাই আইন নিয়ে প্রশ্ন তুলে। চোর ডাকাতরাই বলে, "আমি পরিশ্রম করে উপার্জন করছি, এতে পুলিশ আর সরকার আমাকে জেলবন্দি করার কে?"

পুরো বিষয়টাই ইসলামের ব্যাপারেও প্রযোজ্য। ইসলাম জীবনকে সহজ করতে আসছে, কঠিন করতে নয়। কুরআনে আল্লাহ বহুবার এই কথা বলেছেন, সূরা বাকারায় (১৮৫), সূরা হজ্জ্ব (৭৮), মায়েদাহ (৬), সূরা নিসা (২৮) ইত্যাদি। তারপরেও আমাদের মধ্যে একদল আছেন, যারা না বুঝেই ধর্মটাকে কঠিন বানিয়ে ফেলেন। ইসলাম বলছে পরকীয়া না করতে, আপনি করে বসলেন। তারপরে ধরা খেলেন, পুরো দেশব্যাপী বেইজ্জতি। ইসলাম নিষেধ করেছে মদ ও মাদক এড়িয়ে চলতে, আপনি খেলেন ধরা। আবারও দেশ বিদেশে বদনাম। এইভাবেই ইসলামে যা নিষেধ করা হয়েছে, তা যৌক্তিক কারণেই করা হয়েছে। বেহুদা কিছুই না। ইসলামে বরং হালাল সংখ্যা হারামের চাইতে বেশি। এবং ইসলামী ফিকহ শাস্ত্রের মূল নিয়মই হচ্ছে কোন কিছুকে হারাম ঘোষণা করার আগে আপনাকে অবশ্যই প্রমান করতে হবে, কেন এটি হালাল নয়।
আপনাকে কুরআন হাদিসের পন্ডিত হতে হবেনা, বেসিক জ্ঞান থাকলেই বুঝতে পারবেন আমি কি বুঝাতে চাইছি। ইসলাম কতটা সহজ সেটা বুঝাতে হলে আমাদের "চাচাতো ভাই" ইহুদিদের দিকে একটু তাকালেই হবে। এই দুই ধর্মই যেহেতু একই ঝর্ণা নিঃসৃত নদী, কাজেই এই দুইয়ের মাঝেই তুলনা করা সহজ ও যৌক্তিক।
আমাদের যেমন জুম্মা আছে, ইহুদিদের আছে সাবেথ। শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে (শনিবার) পরদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে সাপ্তাহিক "ইবাদত।" আমাদের জুম্মার নির্দেশ কি? জুম্মার নামাজ আদায় শেষে জমিনে ছড়িয়ে পড়ো উপার্জনের জন্য। মানে জুম্মার আগেও আপনি বাণিজ্যে থাকতে পারবেন, পরেও। মাঝের আধ ঘন্টা সময় শুধু মসজিদে যেতে হবে। যে কারনে আমরা প্রবাসী মুসলিমরা সহজেই অফিস থেকে লাঞ্চ টাইমে বেরিয়ে এসে নামাজ পড়ে আবার অফিসে কাজে চলে আসতে পারি।
কিন্তু ইহুদিদের এই আরাম নেই। সাবেথের সময়ে দুনিয়ার সবকিছু থেকে ওদের বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে হয়। দোকান, ব্যবসা, বাণিজ্য, চাকরি সব বাদ দিয়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাড়িতে বসে শুধুই ইবাদত চলে। সেলফোন, ফেসবুক, ইন্টারনেট সব বন্ধ। বাড়িতে এই সময়ে দুনিয়া সম্পর্কিত কোন কথাবার্তা বলা পর্যন্ত নিষেধ। এর একটি সুফল হচ্ছে এই যে এতে পারিবারিক বন্ধন অত্যন্ত সুদৃঢ় হয়। প্রতি সপ্তাহেই ওদের "থ্যাংক্সগিভিং" (আমেরিকানরা জানেন এর মাহাত্ম) উৎসবের ফিলিং হয়। তবে এই কারনে ওদের যদি চাকরিও চলে যায়, ওরা চাকরি ছেড়ে দেয়। এই সময়ে কোন ধার্মিক ইহুদিকে আপনি বাড়ির বাইরে পাবেন না। যত প্রয়োজনীয় কাজই হোক না কেন। মনে আছে বনু কুরাইজার কাহিনী? কুরাইশদের সাথে ষড়যন্ত্র করে ওরা মুসলিমদের আক্রমন করতে চেয়েছিল, এবং "শনিবার" ছিল বলে ওরা যুদ্ধে অংশ নেয়নি, এবং কুরাইশরা ভেবেছিল, ওদের সাথেও বেঈমানি করেছে? এই সেই "সাবেথ।" ওরা মরে যাবে, তবু সাবেথ ভাঙবে না। এই ওদের ধর্ম।
আমাদের জুম্মায় এত কাঠিন্য নেই।
তারপরে ধরেন ওদের ওযু করার সিস্টেম। বহমান পানি হতে হবে, আমাদের মতন যেকোন পানি হলেই হবেনা।
ওদের নামাজে জুতা ছাড়াই দাঁড়াতে হবে। আমাদের নামাজ জুতা পরেও পড়তে পারবেন। সাহাবীগণ জুতা পায়েই নামাজ পড়তেন। মদিনার তপ্ত গরমে জুতা ছাড়া চললে পা ঝলসে যেত। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক আমাদের প্রাণপ্রিয় মসজিদে নববীতে কোন সুবিশাল ছাদ ছিল না। শুরু হয়েছিল খেজুর পাতার ছাউনি দিয়ে, তাও প্রথম কয়েক কাতার পরেই যা ছিল না।
আমরা খাবারের শুরুতে "বিসমিল্লাহ" বললেই চলে, ওরাও "বিসমিল্লাহ" বলে, তবে ওদের খাবারের প্রতিটা উপাদানকে কেন্দ্র করে দোয়া পড়তে হয়। যেমন রুটিতে কামড় বসানোর আগে বলা "ইয়া আল্লাহ তুমি ময়দার এই রুটির উপর বরকত দাও।" বাটার খাবার আগে বলতে হবে, "ইয়াল্লাহ এই দুগ্ধপণ্যের উপর বরকত দাও।" তারপরে ডিম খাবার আগে দোয়া, সবজি খাবার আগে দোয়া। মাংসের আগে দোয়া, মাছের আগে দোয়া। মদের জন্য আলাদা দোয়া, দুধের জন্য আলাদা, আবার পানির জন্য আলাদা।
এইরকম আরও বহু মিল আছে আমাদের ধর্মে, কিন্তু ওদেরটা অনেক কঠিন। সেটা নিয়ে আলাদা পোস্ট করা যাবে যদি কেউ আসলেই জানতে আগ্রহী হয়। তবে আজকের লেখার বিষয় আলাদা। সেটা হচ্ছে, "ইসলাম আমাদের জীবনকে সহজ করতেই নাজেল হয়েছে।"

আমাদের নামাজের ব্যাপারটাই ধরেন, সুস্থ থাকলে আপনি দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে হবে। অসুস্থ হলে বসে। আরও অসুস্থ হলে শুয়ে। আরও বেশি অসুস্থ হলে ইশারায়। সফরে আছেন, নামাজ ছোট করে পড়লেই হবে। কিবলা কোনদিকে বুঝতে পারছেন না, একদিক আন্দাজ করে আল্লাহু আকবার বলে দাঁড়িয়ে যান, আপনার নামাজ কবুল। চব্বিশ ঘন্টা সময়ের মধ্যে মাত্র পাঁচবার আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হয়। সব মিলিয়ে আধ ঘন্টাও লাগেনা।
নামাজ পড়তে ওযু লাগবে। পানি না থাকলে তায়াম্মুম।
রোজা রাখতে হবে। অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে রোজা মাফ। মাত্র একজনকে পেট ভরে খাইয়ে দিলেই কাফ্ফারা আদায় হয়ে যাবে।
সামর্থ্য থাকলে হজ্বে যাবেন, কুরবানী দিবেন, জাকাত দিবেন। পয়সা না থাকলে কোনই সমস্যা না। উল্টো সামর্থ্য নেই, এরপরেও আপনার মনে সাধ জেগেছে, এবং একই সাথে আল্লাহর সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন, আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞ হননি, কেবল এই কারণেই ধনী ব্যক্তি কোটি টাকা ও পরিশ্রম করে যে সওয়াব অর্জন করবে, আপনি ঘরে বসে বসেই তা পেয়ে যাবেন।
জ্বি, এই কারণেই আমরা বলি, ইসলাম আমাদের জীবনকে সহজ করতেই নাজেল হয়েছে। শুধু শুধু না বুঝে একে মানুষই কঠিন বানিয়েছে। ঠিক ইহুদিদের মতন। কুরআনের ঘটনা অনুসারে আল্লাহ যখন ওদের বললেন গরু কোরবান করতে, ওরাই প্রশ্ন করতে শুরু করলো কেমন গরু, দেখতে কেমন হতে হবে, রং কি হবে, এটা ওটা নানা প্রশ্ন। চুপচাপ কোরবান করে দিলে কিন্তু ওদের জন্যই সহজ হতো।
উপরে যে এত কঠিন নিয়মের কথা বললাম, সব ওদের নিজেদের কারণেই হয়েছে। ধর্মটাকে কঠিন না বানানো পর্যন্ত ওরা সন্তুষ্ট হতো না।
আমরা স্মার্ট। আমাদের নবীজি বা সাহাবীগণ শুধু শুধু ইসলামকে কঠিন বানাননি।

আরও কিছু উদাহরণ দেই। যেমন, ইসলাম বলে, মিথ্যা বলা মহা পাপ, ঠিকতো? কিন্তু তিন ক্ষেত্রে মিথ্যা বললে উল্টো সওয়াব হয়। যেমন, কারোর কলহ মেটাতে মিথ্যা বলা। ("তুই এখানে রাগ করে বসে আছিস, আর ও ঐদিকে তোর সাথে ঝগড়া করে আফসোসে মরে যাচ্ছে।" দুই ভাই/বন্ধুর ঝগড়া বন্ধ করতে আপনি যদি এমন কথা মিথ্যামিথ্যি বলেন, আল্লাহ আপনাকে সওয়াব দিবেন।) বা স্ত্রীর মন রক্ষার্থে মিথ্যা বলা। ("তোমার চেয়ে সুন্দরী নারী এই পৃথিবীতেতো বাদ, বেহেস্তের হুরও এমন হয় না।" বা স্বামীকে বললেন, "তোমাকে আজকে দেখতে এত হ্যান্ডসাম লাগছে!" এতে স্বামী বা স্ত্রী যে খুশি হবেন, তাতেই আপনার পুণ্যের খাতা ভরে উঠবে।) তৃতীয়টা দয়া করে নিজে খুঁজে পড়ে নিবেন।
তারপরে ধরা যাক আমাদের ধর্মে এলকোহল সেবন নিষিদ্ধ। কারন এতে নেশা হয়, বুদ্ধি লোপ পায়। ঠিকতো? কিন্তু আপনি যদি প্রাণ বাঁচাতে ওষুধ খান যেখানে এলকোহলিক উপাদান থাকে, তাহলে সেটা হালাল হয়ে যায়।
শূকর খাওয়া নিষেধ। কিন্তু ধরা যাক আপনি মরুভূমিতে আটকা পড়েছেন, এবং আপনার কাছে শূকরের মাংস ছাড়া আর কোন খাদ্য পানীয় নেই। তখন প্রাণ রক্ষার্থে আপনি শূকর খেতে পারবেন।
কিছুদিন আগে এই উদাহরণ দেয়ায় এক "ট্যাটনা" নিজেকে পন্ডিত প্রমান করতে জিজ্ঞেস করলো, "আপনি শুকরের মাংস নিয়ে মরুভূমিতে যাবেন কেন?" তা ঐ ট্যাটনাকে বললাম, "যদি কোন কারনে প্লেন ক্র্যাশ করে, এবং যাত্রীদের মধ্যে আপনি ছাড়া কেউ বেঁচে না থাকে, এবং কয়েক ক্যান শুকরের মাংস ছাড়া সব ধ্বংস হয়ে যায়, তখন?"
ট্যাটনা চুপ।
কোন অযাচিত কমেন্ট করার আগে চিন্তাভাবনা করে নিবেন। অহেতুক সময় নষ্ট বিরক্তিকর তারচেয়ে বড় সমস্যা, বিভ্রান্ত পাঠকের জন্য বিভ্রান্তিকর। এমন ট্যাটনামী না করে বরং খোঁজ নিবেন আসলেই আমি সত্য বলছি কিনা। এক্ষেত্রে "মরুভূমিতে আমি কেন শুকরের মাংস নিয়ে যাব" চিন্তা না করে চিন্তা করবেন "শূকর বা এলকোহল নিয়ে যে মন্তব্য করলাম, আসলেই কতটা সত্য?" দুইয়ের মাঝের পার্থক্য বুঝতে পারছেন? একটা জ্ঞানীর আচরণ, অন্যটা ট্যাটনামীর বৈশিষ্ট্য।

তা এত ঘটনা বলে যে ভূমিকা টানলাম, এখন তাহলে মূল প্রসঙ্গে আসি। তা হচ্ছে, ইসলামে পর্দা প্রথা একদম দিনের আলোর মতন পরিষ্কার। নামাজ পড়া, রোজা রাখা ইত্যাদির মতন নারী পুরুষ উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য হচ্ছে পর্দার বিধান। নারীদের যেমন বলা হয়েছে পর্দা করতে, পুরুষদেরও বলা হয়েছে চোখের পর্দা করতে। কার বৌ, কার মা, কার মেয়ে, কার বোন পর্দা করছে না, করলে সেটা কতটা সহীহ ইত্যাদি দেখার দায়িত্ব অন্য কোন পুরুষকে দেয়া হয়নি। নামাজ রোজা ইত্যাদির জন্য যেমন যার যার কৈফিয়ৎ নিজেকে দিতে হবে, তেমনই পর্দার ব্যাপারেও আল্লাহর কাছেই ওকে জবাবদিহি করতে হবে। "সাকিব আল হাসানের বৌ কেন পর্দা করলো না" এই অভিযোগ করার আগে আপনাকে জবাব দিতে হবে কোন নিয়তে বা অধিকারে আপনি নিজের চোখের পর্দার বিধান ছিন্ন করে সেদিকে নজর দিলেন। তখন কি জবাব দিবেন?

তা, এই পর্দা প্রথার কারনে প্রসূতি মায়েরা প্রায়ই প্রাণঘাতী বিপদের সম্মুখীন হন। সেটি হচ্ছে, "পুরুষ ডাক্তারের কাছে যাওয়া যাবেনা।"
স্বাভাবিকভাবেই, মেয়েলি বিষয়ে পুরুষ ডাক্তারের সামনে বেশিরভাগ মেয়েই স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন না। গাইনি বা মহিলারোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হিসেবে তাই মহিলাদেরই ডিমান্ড বেশি। বিশ্বব্যাপীই ঘটনা এক। আমার বৌ, এবং আমার পরিচিত যত ভাবি, বোন, আন্টি আছেন, বেশিরভাগেরই ডাক্তার মহিলা ছিলেন। তারপরেও, আমাদের দেশের কথা চিন্তা করলে, যেখানে জনসংখ্যার তুলনায় এমনিতেই ডাক্তারের সংখ্যা কম, সেখানে দেশের সব জায়গায় পর্যাপ্ত নারী ডাক্তার পাওয়া অনেক ক্ষেত্রেই অসম্ভব একটি ব্যাপার। শুধু প্রসবের কথাই বলছি না, আরও অনেক ইমার্জেন্সিতেই দেখা যায় মহিলা রোগীর অভিভাবকরা পুরুষ ডাক্তার দেখাতে চান না, এতে রোগীর প্রাণ সংশয় ঘটলেও তারা পাত্তা দেন না। "পর্দা রক্ষা" উনাদের কাছে এমনই গুরুতর বিষয়। অথচ একই লোকের অন্ডকোষে যদি ফোঁড়া হয়, এবং সেজন্য ডাক্তার দেখাতে হয়, তখন কিন্তু উনি "নাভির উপর থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত" পর্দার বিধান ভুলে যান। কোন মহিলা ডাক্তার উনার শরীর স্পর্শ করে ফেললে উনার তখন সমস্যা হয়না।
এই যে লোকজন পয়সা খরচ করে তাজমহল দেখতে যান, "প্রেমের স্মৃতি" বলতে বলতে গদগদ হয়ে যান, তাজমহলের পেছনের মূল ঘটনা ছিল, সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মুমতাজ মহল প্রসবকালীন সংকটে পড়েন, সম্রাট শাহজাহান রাজবৈদ্যকে (দেশের সেরা ডাক্তার) স্ত্রীর কাছে পাঠাননি কারন পরপুরুষ মহারানীর শরীর দেখে ফেলবেন। এটা কি পরোক্ষভাবে হত্যা নয়? বৌ মারার পরে আপনি তাজমহল বানান কি বদমহল বানান, কিছু যায় আসে?
যাই হোক, এখন নিশ্চই বুঝে গেছেন উপরে এত লম্বা উদাহরণ কেন দিলাম। জ্বি, জীবন মরনের প্রশ্ন যেখানে উপস্থিত, সেখানে পর্দা মানা না মানা গুরুতর কিছু না। কারন ইসলামে পর্দার চাইতে মা ও শিশুর জীবন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারন একটি মানুষের জীবন আল্লাহর কাছে কাবা ঘরের চাইতেও বেশি পবিত্র। কথাটা আমার না, আমাদের রাসূলুল্লাহর (সঃ) নিজের মোবারক কণ্ঠ থেকে নাজেল হওয়া। বিশ্বাস না হলে ইব্ন মাজাহর ৩৯৩২ নম্বর হাদিস দেখে নিন।

সব কথার শেষ কথা, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করবেন না। কুরআন পড়বেন, হাদিস পড়বেন, নবীজির পাশাপাশি সাহাবীদের জীবনীও পড়বেন এবং তাহলেই বুঝবেন শুধু শুধু আল্লাহ বলেননি, "আমি তোমাদের মধ্যপন্থী সম্প্রদায় করেছি" (২:১৪৩)। "মধ্যপন্থী" মানে কি সেটা আগে বুঝার চেষ্টা করবেন। তাই শুধু শুধু ধর্মটাকে কঠিন বানাবেন না। নিজের জন্যও না, অন্যের জন্যও না।

মন্তব্য ৩০ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (৩০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ৯:৪৩

জ্যাকেল বলেছেন: হক কথা বলেছেন।

০৮ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ২:৪০

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ০৭ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১০:৪১

বিটপি বলেছেন: সম্রাট শাহজাহান লাগামহীন ব্যভিচারের সময় শরীয়ত চোখে দেখেননা - প্রাণের চেয়ে প্রিয় স্ত্রী মমতাজের চিকিৎসার সময় শরীয়ত খুঁজে বেড়ান। এরকম হিপোক্রেট সম্রাট ছিল বলেই ইন্ডিয়ানরা বাকি দুনিয়া থেকে এত পিছিয়ে পড়ে আছে।

আমাদের দেশে মনে হয়না এরকম বাড়াবড়ি এখনো কেউ করে। নোয়াখালী অঞ্চলে দেখেছিলাম এক পীর বাড়িতে যেখানে সবাই কঠোর পর্দা মেন্টেন করে, বাইরে বেরুনোর সময় কালো গ্লাভস আর মোজা পড়ে বের হয়। নেকাব এমনভাবে দেয়, যেন চোখও দেখা না যায় - সেই বাড়ির বউয়ের ডেলিভারি হয়েছে সরকারী হাসপাতালে পুরুষ ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে। এ প্রসঙ্গে পীর সাহেবের বক্তব্য ছিল - আল্লাহ্‌র বান্দাকে নিরাপদে দুনিয়াতে আনতে যা করার দরকার, তাই করা হয়েছে। এখানে কোন যিনা বা পাপ কার্যের সম্ভাবনা না থাকায় কেউ আপত্তি করেনি।

০৮ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ২:৩৩

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: শাহজাহান শরীয়তের কারনে করেছেন তা নিশ্চিত না। সে সময়ে হিন্দু মুসলিম পুত্তলিক বা খৃষ্টান - কোন সম্রাটই নিজের সম্রাজ্ঞীকে পরপুরুষের সামনে আনতেন না।

৩| ০৭ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১০:৫১

নতুন বলেছেন: কিছুদিন আগে এই উদাহরণ দেয়ায় এক "ট্যাটনা" নিজেকে পন্ডিত প্রমান করতে জিজ্ঞেস করলো, "আপনি শুকরের মাংস নিয়ে মরুভূমিতে যাবেন কেন?" তা ঐ ট্যাটনাকে বললাম, "যদি কোন কারনে প্লেন ক্র্যাশ করে, এবং যাত্রীদের মধ্যে আপনি ছাড়া কেউ বেঁচে না থাকে, এবং কয়েক ক্যান শুকরের মাংস ছাড়া সব ধ্বংস হয়ে যায়, তখন?"
ট্যাটনা চুপ।


বেশি পাকনামি কিছু মানুষ করবেই। আন্দিজ পর্বতে প্লেন ক্রাসের জীবিতোরা সম্ভবত বাচার জন্য মানুষের মাংস খেয়েছিলো।
https://en.wikipedia.org/wiki/Uruguayan_Air_Force_Flight_571

০৮ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ২:৩৪

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: জ্বি, আমি একবার পড়েছিলাম একদল বাঙালির কথা, যারা সমুদ্রে হারিয়ে গিয়েছিলেন এবং বেঁচে থাকার জন্য সহযাত্রীদের মাংস খেয়েছেন।

৪| ০৭ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১১:০৬

এভো বলেছেন: বিটপি বলেছেন: সম্রাট শাহজাহান লাগামহীন ব্যভিচারের সময় শরীয়ত চোখে দেখেননা

সম্রাট শাহজাহান কখনো ব্যভিচার করেন নি, দাসী বা দাসী তুল্যদের সাথে যৌনাচার শরিয়ত সম্মত । সে আমলে রাজা বাদশাহদের দাসীর অভাব ছিল না ।

৫| ০৭ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১১:৩১

বিটপি বলেছেন: @এভো, সম্রাট শাহজাহান কি আপনাকে ব্রান্ড এম্বাসেডর নিয়োগ করেছিল? নইলে তার চামচামি কেন করছেন? মমতাজ মহলের ছোট বোন বা তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী - এরা কি শাহজাহানের দাসী ছিল? এদের সাথে বিবাহ বহির্ভূত যৌনাচার কিভাবে শরীয়ত সম্মত হয়? দুই বোনকে একসাথে বিবাহ করা শরিয়তসম্মত না হওয়াতে সম্রাট বড় বোনকে বিবাহ করেন এবং একই সাথে ছোট বোনের সাথে ব্যভিচার চালান শরীয়তকে মূলা দেখিয়ে।

আপনি পড়াশোনা জানা ব্লগার হয়েও যখন বেয়াক্কেলের মত মন্তব্য করেন - তখন খুব খারাপ লাগে।

৬| ০৭ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১১:৪৯

ফুয়াদের বাপ বলেছেন: তথ্য যুক্তির সন্নিবেশনে যথার্থ লিখেছেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুক।

০৮ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ২:৪১

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: আমিন! ধন্যবাদ।

৭| ০৭ ই অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১২:৩৭

মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: কিছু লোকের ইসলাম না বুঝার কারণেই মূলত ইসলামে এত মতভেদ।

০৮ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ২:৪১

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ঠিক বলেছেন।

৮| ০৭ ই অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১:৪৭

ইমরান আশফাক বলেছেন: পোষ্টের মন্তব্যগুলিও অসাধারন, বেশ উপভোগ্য। আচ্ছা, ইহুদিদের ধর্মের আচার-আচারন সম্মন্ধে আরও জানতে চাই আপনার নিজেস্ব লিখনীতে।

০৮ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ২:৩৫

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: হবে ইন শা আল্লাহ, একদিন। :)

৯| ০৭ ই অক্টোবর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩০

তানভীরএফওয়ান বলেছেন: ধন্যবাদ।
অনেক কিছু জানতে পারলাম ইহুদি ধর্ম সম্বন্ধে এ ব্যাপারে আরো পোষ্ট আশা করছি আপনার কাছ থেকে।

০৮ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ২:৩৫

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: হবে ইন শা আল্লাহ, একদিন।

১০| ০৭ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ৮:৪৮

কামাল১৮ বলেছেন: কোন সাহাবীদের জীবনী পড়তে হবে।ওসমানকে সাহাবীরাই পিটিয়ে মেরে ফেললো কোরান বিকৃতির অপবাদে।ওসমানের জীবনি পড়বো না কি যারা পিটিয়ে মেরে ফেলছে তাদের জীবনী পড়বো।

০৮ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ২:৩৮

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: কোন সাহাবী ওসমানকে (রাঃ) হত্যা করেছে? উনাকে হত্যা করেছে বিদ্রোহীরা, যারা ইরাক অঞ্চলের নব্য মুসলমান, ওরা "সাহাবী" হলো কবে? বেসিক বই দিয়েই শুরু করেন। আবু বকর, উমার (রাঃ), উসমান (রাঃ), আলী (রাঃ), আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রাঃ), খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ), সাদ বিন আবু ওয়াক্কাস (রাঃ), বিলাল (রাঃ)......লিস্ট অনেক লম্বা।

১১| ০৭ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ৯:২৬

মনিরা সুলতানা বলেছেন: এর সত্যতা আমি ও পেয়েছি , মা ও শিশুদের নিয়ে কাজ করতে যেয়ে ।

০৮ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ২:৪২

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: শেয়ার করেন।

১২| ০৭ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১১:০৩

রাজীব নুর বলেছেন: কিছু মানুষের অধপতনের কারন ধর্ম। আবার কিছু মানুষের পথ সহজ করে ধর্ম।

০৮ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ২:৪২

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ঠিক বুঝলে ধর্মে মুক্তি, ভুল বুঝলে সোজা জাহান্নাম।

১৩| ০৭ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১১:৩৯

তানভির জুমার বলেছেন: কামাল১৮ বলেছেন: কোন সাহাবীদের জীবনী পড়তে হবে।ওসমানকে সাহাবীরাই পিটিয়ে মেরে ফেললো কোরান বিকৃতির অপবাদে।ওসমানের জীবনি পড়বো না কি যারা পিটিয়ে মেরে ফেলছে তাদের জীবনী পড়বো।
ভাই আপনারা এইসব আজগুবি ইতিহাস কোন জায়গা থেকে পান? হযরত উসমান রা কে হত্যার মুল কারণ ছিল রাজনৈতিক এবং একটি মিথ্যা চিঠি নিয়ে। কোরান বিকৃতির কথার ইতিহাস আসছে মিথ্যা উপর ভিত্তি করে।

০৮ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ২:৩৯

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: আজাইরা ইতিহাস পড়ার সময় থাকে, সঠিক জীবনী পড়ার সময় নাই। :/

১৪| ০৮ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১২:০৩

নূর আলম হিরণ বলেছেন: ইসলাম ধর্মকে হাদিসেই কঠিন করে ফেলেছে। বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী এর জন্য দায়ী।

০৮ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ২:৪০

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: তাই নাকি ভাই? হাদিস গ্রন্থ না থাকলে কুরআন বুঝতেন কিভাবে?

১৫| ০৮ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১২:২৪

এপোলো বলেছেন: দূরদৃষ্টি সম্পন্ন লেখা। ভাল লেগেছে।

০৮ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ২:৪০

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ।

১৬| ০৮ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ৯:০৯

নূর আলম হিরণ বলেছেন: লেখক বলেছেন: তাই নাকি ভাই? হাদিস গ্রন্থ না থাকলে কুরআন বুঝতেন কিভাবে? নবী মৃত্যের দুইশ বছর পর হাদিস লিখা হয়েছে। এই দুইশ বছর কিভাবে মানুষ কোরআন বুঝেছে?

১৭| ১০ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১০:৩১

সোহানী বলেছেন: চমৎকার কিছু বাস্তবিক কথা। সহমত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.