নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

"পড়ালেখা শেষ করে আমার ছেলে করবে বাবুর্চির কাজ? ছিঃ!"

১১ ই মার্চ, ২০২২ রাত ১:২৬

আমাদের দেশে এক জেনারেশন আগেও (নব্বই দশকে আমাদের শৈশবের কথাই বলছি) আমাদের বাবা মায়েদের লক্ষ্য ছিল ছেলেমেয়েদের ভাল স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা করিয়ে ভাল কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাইয়ে দেয়া। তাহলেই জীবন সফল।
ছেলেমেয়ের প্যাশন গান বাজনার প্রতি, ছেলে নিজের ব্যান্ড গড়তে চায়, রকস্টার হতে চায়। বাবা মায়ের উৎসাহ আছে ছেলের গান বাজনার প্রতি, কিন্তু একই সাথে লক্ষ্য থাকে, সে পুরোদস্তুর পেশাদার শিল্পী না হয়ে একটা চাকরি যেন অবশ্যই করে। ব্যান্ডশিল্পীদের কাছে লোকে নিজের মেয়ে বিয়ে দিতে চায়না। পেশাদার শিল্পীর সাথেও মেয়ের বিয়ে দেয়না। আইয়ুব বাচ্চুকেই লোকজন নিয়মিত জিজ্ঞেস করতো গান বাজনার পাশাপাশি তিনি কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরি বা ব্যবসা করেন কিনা। গিটার ভালবাসতো বলে জেমসের বাবা ঘর থেকেই বের করে দিয়েছিলেন।
ব্যবসায়ীর পুত্র না হলে কোন চাকরিজীবীর ছেলে ব্যবসায় নাম লেখাক, এ যেন দারুন অসম্মানের বিষয় ছিল। এ এক অদ্ভুত মেন্টালিটি। সবাই কোটিপতি হতে আগ্রহী, কিন্তু ব্যবসা করে নয়, চাকরির মাধ্যমে। চাকরির মাধ্যমেও হওয়া সম্ভব, তবে পদ্ধতিটা অনেক ধীর। এদিকে কারোরই ধৈর্য্য নাই। ঠিক এই কারণেই আমাদের দেশে যে যেভাবে পারে, লুটে।
আমার এক চাচা একদিন তাঁরই কাজিন আরেক চাচাকে দেখিয়ে হাসি ঠাট্টার ছলে আমাদের (ছোটদের) বলছিলেন, "ওকে দেখো, ম্যাট্রিক পরে আর পড়াশোনাই করেনি, ওকে এ নিয়ে লোকে কত কথা শোনাতো! এখন (ব্যবসা করে) ওই আমাদের পরিবারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধনী। আর আমি এমএ পাশ করেছিলাম বলে আমাকে নিয়ে কত গর্ব ছিল সবার! আমিই পরিবারের সবার মাঝে গরিব।"
তিনি কলেজের প্রফেসর ছিলেন। এমন না যে না খেয়ে ছিলেন। শহরে নিজের বাড়িও ছিল একটা। কিন্তু এই কারণেই তুলনা করেছিলেন যে কারোর কিছু না থাকলে (প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা) ধরে নেয়া ঠিক না যে ওকে দিয়ে কিছুই হবেনা। বরং ওই সবাইকে ছাড়িয়ে যেতে পারে।

তা সে সময়ে ক্রিকেটার-ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখাটা ছিল রীতিমতন অপরাধ। বাংলাদেশের ক্রিকেট ছিল আইসিসি টুর্নামেন্ট জয়, এবং বিশ্বের যেকোন দলের কাছে মান ইজ্জত বাঁচানোর সংগ্রাম করতে করতে পরাজয়। প্রচুর ক্রিকেটার এমন ছিলেন যারা খেলা ছাড়ার আগে ও পরে সংসারের আয় উপার্জন নিয়ে রীতিমতন হিমশিম খেতেন। রিটায়ার করার পরে কেউ পাত্তাই দিত না। এখন বিপিএল, আইপিএল, পিএসএল, বিবিএল ইত্যাদি আসায় যায় উপার্জন যা একটু বেড়েছে। নাহলে কিংবদন্তি ইমরান খানের মতন ক্রিকেটারও একদিন বলেন, "আমি দেশে বিদেশে তারকা হয়ে গেছি, ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে একই সিরিজে চল্লিশের বেশি উইকেট নিয়ে নিয়েছি, তারপরেও আমার বাবা আমাকে জিজ্ঞেস করেন, 'ব্যাটা, তুমি পেশার (চাকরি/ব্যবসা) ব্যাপারে কবে সিরিয়াস হবে?'"
সুখের কথা, এখন ধীরে ধীরে যুগ পাল্টাচ্ছে। ছেলে যদি শৈশবে ঠিক মতন ব্যাট ধরতে পারে, বাবা মা নিজ উদ্যোগেই একাডেমিতে ভর্তি করিয়ে আসছেন। এক বোরখা পরিহিতা মা তাঁর ছেলের সাথে ক্রিকেট খেলছেন, এমন সুখকর দৃশ্যও আমাদের দেশে দেখা যাচ্ছে। এথলেট বা শিল্পী পুত্র কন্যাকে নিয়ে বাবা মা আজকাল গর্ব করেন। আমাদের সময়ে মেডেল জিতে আসলেও বাবা মা বলতেন "এই মনোযোগটা পড়ালেখাতেও একটু দাও।"

তবে এখানে আরেকটা পেশা নিয়ে কিছু বলতে চাই। সেটা হচ্ছে, রান্না। আমাদের দেশে "শেফ" মানেই বাবুর্চি, সাধারনের কাছে ফাইভস্টার শেফ এবং বিসমিল্লাহ বিরিয়ানি হাউজের বাবুর্চির মাঝে কোনই পার্থক্য নেই। মেয়েরা রান্না করলে খুবই ভাল, গর্বের বিষয়, কারন স্বামীর বাড়িতে যত ভাল রান্না করবে, ততই তাঁর কদর বাড়বে। কিন্তু কোন ছেলে যদি রান্নায় কিছুটা আগ্রহ দেখায়, তাহলেই সর্বনাশ! একটা সময়ে ছেলেদের রান্নাঘরে যাওয়াই নিষেধ ছিল। যেহেতু এখন পোলাপান বিদেশে যায় পড়াশোনা করতে, কিংবা চাকরি করতে, তাই রান্না শিখতেই হয়। এবং এই কারনে বাবা মায়েরা কিছুটা সহনশীল হয়েছেন। কিন্তু ছেলে যদি বলে বড় হয়ে সে শেফ হতে চায়, তাহলেই সর্বনাশ! শিক্ষিত বাড়ির ছেলে বড় হয়ে বাবুর্চি হবে? জাত গেল জাত গেল রব উঠে। অথচ রান্না কি কোন শিল্পের চেয়ে কম? কেউ যদি রান্না করে আনন্দ পায়, খাদ্যে কোন ভেজাল না মিশিয়ে, মানুষকে খাইয়ে উপার্জন করতে চায় - এটিতো ১০০% হালাল উপার্জন। এটা ভাল, নাকি সরকারি ঠিকাদারি করে, রডের জায়গায় বাঁশ দিয়ে, সিমেন্টে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বালু মিশিয়ে, মানুষের জীবনের পরোয়া না করে চুরির টাকায় সম্পদ গড়া ভাল? আমাদের দেশেই কিছু বাবুর্চির আয় বছরে কোটি টাকা। তাঁরা বেশিরভাগই স্বল্প শিক্ষিত। এখন যদি তাঁদের রান্নার ট্যালেন্টের সাথে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও উন্নত ট্রেনিং যুক্ত হতো, তাহলে তাঁরা কোথায় চলে যেতেন কল্পনা করতে পারেন? রেস্টুরেন্ট ব্যবসাও একটি পুরোদস্তুর বিজ্ঞান। এখানে রেস্টুরেন্ট ম্যানেজমেন্ট, মানি ম্যানেজমেন্ট, একাউন্টিং (ইনভেন্টরি, পেরোল, এপি, এআর, জিএল সব যুক্ত), ফাইন্যান্সিং (বাজেটিং, ফোরকাস্টিং ইত্যাদি), এইচআর, মার্কেটিং ইত্যাদি ইত্যাদি সব শিখতে হয়। শুধু মুখস্ত বিদ্যা না, যে যত বেশি এই বিদ্যা কাজে এপ্লাই করবে, সে তত বিখ্যাত হবে। আপনার ছেলে যদি গর্ডন রামসি (হেলস কিচেন) বা নুসরেত গোকে (উচ্চারণ জানিনা, সল্ট বে'র মালিক) হয়, সমস্যা কি? এই যে আমাদের দেশের এক মেয়ে অস্ট্রেলিয়ান রান্নার প্রতিযোগিতায় এত ভাল করলো, আমরা গর্বে শেষ। কাজটা কোন ছেলে করলেও গর্বিত হতাম। কিন্তু একই সাথে সেই একই ছেলে যদি শৈশবে বলতো সে বড় হয়ে রন্ধনশিল্পী হতে চায়, তখন ওরই আত্মীয়স্বজনরা হায় হায় করে উঠতো। বাবা মা ঐ আত্মীয়স্বজনের কাছে মুখ দেখবেন কি করে, এই টেনশনে মুখ গোমড়া করে রাখতেন। বিদেশে পাঠালেন ছেলেকে পড়তে, সে হলো বাবুর্চি, সমাজে মুখ দেখাবেন কি করে? ভারত-পাকিস্তানেই কিছু বাবুর্চি আছেন যারা খান্দানি বাবুর্চি। সেই রাজা মহারাজাদের খাওয়াতেন কোন এক পূর্বপুরুষ, এখন জেনারেশনের পর জেনারেশন ধরে তাঁরা রন্ধনশিল্প দিয়ে বিশ্ববাসীকে মুগ্ধ করে আসছেন। দূর দূর থেকে মানুষজন তাঁদের কাছে খেতে আসে, ভিডিও করে তাঁদের রান্নার। দেশের বড় বড় পদের গুরুত্বপূর্ণ লোকেরা তাঁদের ডেকে নিয়ে যান বিভিন্ন অনুষ্ঠানের খাবারের দায়িত্ব দিয়ে। আমাদের দেশেও এমন প্রচুর রন্ধনশিল্পী আছেন। তারপরেও সমস্যা সেই একটাই, কোন শিক্ষিত লোককে বাবুর্চির কাজ করতে দেখলেই আমরা হৈহৈ করে উঠি। এবং একজন অভিনয়শিল্পী, কণ্ঠশিল্পীকে নিয়ে যে হৈচৈ করি, একজন রন্ধনশিল্পীকে নিয়ে তা করিনা। অথচ রন্ধনশিল্প কোন অংশেই কম না।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই মার্চ, ২০২২ সকাল ৯:০৮

ডঃ রুহুল আমিন চৌধুরী। বলেছেন: কোনো পেশাই অসম্মানের নয় - সেবা প্রদান হোতে হবে মানব জিবনের প্রধান লক্ষ্য - দেশপ্রেম থাবতে হবে প্রতিটি মানব শিশুর -

২| ১১ ই মার্চ, ২০২২ দুপুর ১:৪৭

রাজীব নুর বলেছেন: এখন দেশ সমাজ অনেক বদলে গেছে।
ইন্টারনেটের কল্যানে মানুষ অনেক কিছু জানে। বুঝে।
শেফ বা বাবুর্চি যাই ই বলেন, তাদের কদর আছে।
আমার এক ভাগ্নি মস্ত বড় শেফ হওয়ার জন্য আমেরিকাতে লেখাপড়া করছে।

১৫ ই মার্চ, ২০২২ রাত ৯:৩৭

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: শুনে খুবই ভাল লাগলো। আমার এক পরিচিত ছেলে শেফ, কিন্তু তাঁর বাবা শহরের নামকরা ডাক্তার। লোকে যে কত কটুকথা বলে ওকে নিয়ে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.