নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
একটা শিশু যখন বেড়ে উঠছিল, তখন সে নিয়মিতই দেখতো ওর বাবা ওর মাকে পেটাচ্ছে। ছেলেটা চাইতো মাকে সাহায্য করতে, কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই যেহেতু ওর বয়স কম, শরীরে শক্তি কম, সে কিছুই করতে পারতো না।
শিশুটির যখন বয়স নয় বছর, তখন ওর বাবা ওর সামনেই ওর মাকে এমনভাবে ঘুষি মারলো যে ভদ্রমহিলার মুখ থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়লো। ছেলেটা তখনও অসহায়ভাবে পুরো ঘটনা হজম করলো। এবং মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো, ও যখন নিজের সংসার করবে, তখন যাই ঘটুক না কেন, সে নিজের পরিবারের ক্ষতি হতে দিবে না। সে তাই করবে যা পরিবারের একজন কর্তার করা উচিৎ।
শিশুটির নাম উইল স্মিথ। ওর জীবনী গ্রন্থে এই ঘটনাটাই সে লিখেছে। এই ঘটনাটাই এখন মাথায় রাখুন। কারন আমাদের ঘটমান জীবনের প্রতিটা ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার পেছনেই আমাদের অতীতের ঘটনার অবদান থাকে।
এখন মূল প্রসঙ্গে যাই।
সে ক্রিস রককে একটা চড় দিয়েছে। যেই সেই চড় না, আমরা দেশি ভাষায় এই থাপ্পরকেই বলি "বন চটকানা।" কানে তালা লেগে যায়, মাথা চক্কর দিয়ে উঠে।
এরা দুইজনই যেহেতু হলিউডের মহা তারকা, স্বাভাবিকভাবেই গোটা দুনিয়া এই নিয়ে আলোচনা করলো। এই আলোচনা আরও কয়েকদিন চলবে। পক্ষে বিপক্ষে দুইধরনের মতই মানুষ দিচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে, দুই পক্ষই দোষ করেছে। হ্যা, উপরে যে ঘটনা উল্লেখ করলাম, সেটা ব্যাকগ্রাউন্ডে থাকার পরেও যেকোন পক্ষ বেছে নেয়া মানেই এক পক্ষের অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া।
বুঝিয়ে বলি।
শুরু করি জোকসটা দিয়ে। ক্রিস রক কমেডিয়ান। রং তামাশা করাটাই তাঁর পেশা। অস্কার মঞ্চে তাঁকে ডাকাও হয়েছে হাসি ঠাট্টা করার জন্যই। বিখ্যাত বিখ্যাত তারকাদের পঁচিয়ে মজা নেয়া হবে, তাহলেই দর্শক বেশি মজা পাবে। এটাই নিয়ম।
ওর ঠাট্টাটা ছিল উইল স্মিথের বৌয়ের টাক মাথা নিয়ে। এতেই অস্কারজয়ী অভিনেতা রেগে গিয়ে ওকে চড় মেরে বসেন।
এখানে মাথায় রাখতে হবে দেশের নাম আমেরিকা। ফ্রীডম অফ স্পীচ এবং এক্সপ্রেশনের পুণ্যভূমি। আমাদের দেশের মতন না যে কিছু বলবেন আর পুলিশ এসে আপনাকে ধরে নিয়ে জেলে ভরে দিবে। এদেশে আপনি প্রেসিডেন্টের বাড়ির সামনে গিয়ে ওর কার্যকলাপ নিয়ে সমালোচনা করতে পারেন, গালাগালি করতে পারেন, প্রয়োজনে আমেরিকান পতাকাও পোড়াতে পারেন। পুলিশ ততক্ষন পর্যন্ত আপনাকে কিছুই বলবে না যতক্ষন আপনি ফিজিক্যালি কিছু করছেন না। জর্জবুশের এক অনুষ্ঠানে আমেরিকান এক সৈনিক যুবক দর্শকসারি থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলতে থাকে, "তুমি আমাদের মিথ্যা বলেছো। তুমি বলেছিলে ইরাকে wmd আছে। তোমার কথা শুনে আমি যুদ্ধে গেছি। মিলিয়ন খানেক ইরাকি মারা গেছে, আমার বন্ধুরা মারা গেছে তোমার মিথ্যা শুনে। তোমাকে পাবলিকলি ক্ষমা চাইতে হবে!"
অনুষ্ঠান সঞ্চালক এবং সিকিউরিটি বারবার বলতে থাকেন, "এইটা সেই অনুষ্ঠান না যেখানে এ নিয়ে আলোচনা হবে" - ছেলেটা থামেনি। অনুষ্ঠান চালানোর জন্যই ওকে জোর করে বের করে দেয়া হয়। অন্যান্য দেশ হলে অনায়াসে গ্রেফতার হতো, নাহয় গুম হতো। হয়তো জেলেই ওর মৃত্যু হতো।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ওর বাড়ি ও অফিসের সামনেই লোকজন সাইন বোর্ড টানিয়ে রাখতো "ট্রাম্প লাইড (কোভিড নিয়ে), সো ৬০০,০০০+ আমেরিকানস ডাইড।"
এদেশে ফ্রিডম অফ স্পিচ কোন পর্যায়ের, সেটা না দেখলে বাঙালি কল্পনাও করতে পারবে না। একারনেই এদেশের সরকারকে, অফিসের বসকে বা কাউকেই তেলিয়ে চলতে হয়না। আপনার কিছু প্রয়োজন হলে যোগ্যতা অনুযায়ী পাবেন, তেলের কারনে নয়। আর কিছু ভাল না লাগলে, সেটা সরাসরিই বলতে পারেন। কিছু বেয়াক্কেল মনে করে আমি আমেরিকান সিটিজেনশিপের জন্য সরকারকে তেল দেই, তাই ওদের এই তথ্য জানিয়ে রাখলাম। আমি ইতিমধ্যেই সিটিজেন। রাষ্ট্রদ্রোহ বা এই জাতীয় বড় অপরাধ ছাড়া এই পাসপোর্ট কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। কাজেই, কাউকে তেলানোর আমার কোন ঠ্যাকা নেই।
তা সেই অর্থে ক্রিস রক খারাপ কিছু করেনি। এদেশে নিয়মিতই এরচেয়েও ভয়ংকর ইস্যু নিয়ে রং তামাশা চলে। একটা মহিলার টাক মাথাতো কিছুই না।
ওয়েল, এখানেই টুইস্ট। মহিলা ইচ্ছা করে মাথার চুল ফেলেননি। ওটা ওর মেডিকেল কন্ডিশন। একটা অন্ধ লোককে যদি তাঁর অন্ধত্ব নিয়ে মজা করেন, আপনি আইনত দিক দিয়ে অপরাধ করবেন না, কিন্তু সেই রসিকতাটা অতি নিম্নশ্রেণীর কুরসিকতা হবে। এমনও না যে মিসেস স্মিথের এই রোগ সম্পর্কে রক জানতোই না। গোটা দুনিয়া জানে।
এখন আরেকটু গভীরভাবে চিন্তা করি। নিজেকে তাঁর অবস্থানে বসান।
সাধারণত একটা মহিলার কাছে তাঁর সবচেয়ে বড় অহংকারের বিষয় তাঁর রূপ। আমাদের সমাজটাই এমন যে রূপবতী নারী যতই মূর্খ হোক, দুশ্চরিত্রা হোক, ওর কদর করার লোকের অভাব কখনই হয়না। উল্টো একটি নারী প্রচুর পড়ালেখা করে ডিগ্রি অর্জন করতে করতে নোবেল জিতে ফেললেও দিন শেষে ওকে কোন রূপসীর সাথেই প্রতিযোগিতা করতে হয়।
নারীর সৌন্দর্য্যের সবচেয়ে বড় একটি অঙ্গ তাঁর চুল। এবং সেই চুলই যখন কাউকে বাধ্য হয়ে ফেলে দিতে হয়, তখন তাঁর মানসিক অবস্থাটা কল্পনা করতে পারেন? আপনার কোটি কোটি টাকা থাকার পরেও কিছুই করার নেই, ধরে রাখতে পারছেন না। লোকজন আপনার সামনে সান্তনার বাণী শোনাবে, কিন্তু আপনিও জানেন একটু আড়ালেই এই লোকেরাই আপনাকে "টাকলি" বলে ডেকে মজা নিবে। প্রতিটা দিন, প্রতি মুহূর্তে যতবার আপনি আয়নায় নিজের টাক মাথা দেখেন, তখন আপনার মনে কি ঝড় চলে সেটা আপনিই ভাল জানেন। এবং আপনাকে অতি কাছ থেকে দেখছে আপনার স্বামী। সে কিছুটা হলেও বুঝতে পারছে আপনার মনের ঝড়।
বুঝার সুবিধার জন্য একটা ছোট্ট উদাহরণ দেই। ধরা যাক এক নারীর শারীরিক সমস্যার কারনে সে কখনও মা হতে পারবে না। লোকজন এইসব জানার পরেও তাঁকে নানাভাবে খোঁচা দেয়। স্বামী বাঁধা দিতে গেলে শোনে "আমরাতো তোমার ভাল চাই।"
স্বামী বাড়ি ফিরে দেখে বৌ কাঁদছে। প্রতি রাতে সে দেখে বালিশ ভেজা। কতদিন সে সহ্য করবে?
এখানেও ঘটনা তাই। ক্রিস রক জোক করেছে। উইল স্মিথ নিজেই হেসেছে। কিন্তু যেই মুহূর্তে ওর নজর গেছে বৌয়ের দিকে, সে বুঝেছে বৌয়ের ঠিক কোন ঘায়ে সে আঘাত করেছে। অস্কার অনুষ্ঠানে উপস্থিত বা বিশ্বজুড়ে লাখে লাখে মানুষ কিন্তু এই মহিলার সাথে এক বাড়িতে থাকেনা। জানেনা মহিলার মনের অবস্থা। যে জানে, তাই সে তখন উঠে দাঁড়িয়েছে। "আমরাতো তোমার ভাল চাই" এর মতন "এইটাতো সামান্য জোকস" অনেক হয়েছে। উইলের মাথায় আছে নয় বছর বয়সে সে তাঁর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারেনি। আবারও সে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে দিবে না। সে প্রতিবাদ করতেই উঠে দাঁড়িয়েছে।
এই পর্যন্ত পড়ে মনে হতে পারে, উইলই সঠিক। অবশ্যই চটকানা খাওয়া উচিৎ। কারোর মেডিকেল কন্ডিশন নিয়ে ফাজলামি করার মতন ছোট মন মানসিকতা যাদের, তাদের জুতা পেটা করা উচিৎ।
উচিৎতো বটেই, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আমরা অতি সভ্য জগতে বাস করি। আপনি আজকে জোকসের কারনে একটা কমেডিয়ানকে চড় মারবেন, কালকে সরকার আপনাকে পত্রিকায় সরকারের সমালোচনা করে কার্টুন আঁকার কারনে জেলে ভরবে, বাসে তেলবাজ কোন মহিলা আপনার লাইভ ভিডিও করে "সরকারের সমালোচনা করে, গ্রেফতার করাবো তোদের" বলে হিস্টেরিয়ার রোগীর মতন আচরণ করবে, এবং "ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে" কিংবা "ও কাফের/মুরতাদ/মুনাফেক হয়ে গেছে" অভিযোগে লোকজন কোপাকুপি শুরু করে দিবে। সবই ইন্টারকানেক্টেড। একটাকে জাস্টিফাই করে অন্যটাকে অন্যায় বলার সুযোগ থাকেনা। বুঝাতে পারছি ঘটনাটা?
ঠিক এই কারণেই লোকজন উইল স্মিথেরও সমালোচনা করছে। আপনি কিছুতেই "ফিজিক্যাল এসল্ট"কে জাস্টিফাই করতে পারবেন না। যেকোন পরিস্থিতিতেই এটি খারাপ। বিশেষ করে অস্কারের মতন একটি মঞ্চে, যেখানে গোটা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের দৃষ্টি থাকে, সেখানে এই ধরনের ঘটনা সত্যিই বিস্ময়কর ও অকল্পনীয়। দেখবেন খুব দ্রুতই হয়তো বিশ্বের অনেক প্রান্তেই এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে।
ক্রিস রকতো দারুণভাবে ঘটনা সামলেছে। সেও যদি পাল্টা চড় মেরে বসতো? পুলিশে অভিযোগ করলে পুলিশ কিন্তু উইল স্মিথকেই গ্রেফতার করবে। আইন সেটাই বলে।
ক্রিস রকের যেমন কারোর শারীরিক/মানসিক দূর্বলতা নিয়ে রসিকতা করা উচিৎ হয়নি, উইল স্মিথের এইভাবে চড় মারা উচিৎ হয়নি। সভ্যভাবে সে এর প্রতিবাদ করতে পারতো। বৌকে নিয়ে তখনই উঠে অনুষ্ঠান ত্যাগ করতে পারতো। ইতিহাসে বহু তারকা এমনভাবেই প্রতিবাদ করেছেন। হয়তো কাজ হয়নাই, তারপরেও এছাড়া প্রতিবাদের আর কোনই পথ খোলা নেই। সভ্য জগতে বাস করার সবচেয়ে বড় সমস্যা এটাই, সবাইকেই সভ্য আচরণ করতে হয়।
২| ৩১ শে মার্চ, ২০২২ রাত ১২:২৬
হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
বউয়ের হয়ে আরেক পুরুষকে ফিজিক্যালি অ্যাসল্ট করার ‘হিরোইজম’ জঘন্য!
একজন পেশাদার উপস্থাপক স্টেজে দাঁড়িয়ে একটা ফান করছে, তার জন্য তার স্বামীকে স্টেজে উঠে আসতে হবে! এত বড় অনুষ্ঠানে প্রকাশ্য পুরান ঢাকাইয়া ভায়োলেনন্স?
আমার জানা মতে এরকম একটি বড় অনুষ্ঠানে সকল রুলস ডিসিপ্লিন প্রতিটি স্টেপ কঠিন ভাবে মাপা।
কি বলা যাবে আর কি কি বলা যাবেনা সে নিয়ে আগেই নির্ধারিত থাকে। স্টেজে গিয়ে থাপ্পড় মারা বাদে হাজার পদের প্রতিবাদের উপায় ছিল।
কিন্তু আমরা ক্রসফায়ারে বিশ্বাসি এই চিপ অ্যাকশনগুলো আমরা বড় ভালবাসি!
৩| ৩১ শে মার্চ, ২০২২ রাত ১:২৮
রাজীব নুর বলেছেন: খুবই ভুল কাজ করল, ওর জায়গায় আমি থাকলে ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে সবার সামনে ট্রল করার জন্য নাকে একটা সপাটে ঘুষি ঝাড়তাম, তাতে কে কি ভাবত বা ফল কি হত তার পরোয়া করতাম না, কমেডিরও একটা সীমাবদ্ধতা থাকে।
৪| ৩১ শে মার্চ, ২০২২ রাত ১:৩৩
রাজীব নুর বলেছেন: যাঁর হাতে এমন চরম লাঞ্ছিত হলেন ক্রিস রক, ঠিক আধঘণ্টা পরে তাঁকেই কিনা ডাকতে হল সেরা অভিনেতার পুরস্কার নিতে ।
৫| ৩১ শে মার্চ, ২০২২ সকাল ৯:২৮
সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: এতবড় লেখা পড়ার সময় হয়না।
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে মার্চ, ২০২২ রাত ১১:৩৮
নূর আলম হিরণ বলেছেন: উইল স্মিথকে এই জোকসের ব্যপারে আগেই অবহিত করা হয়েছে। তখন সে নিষেধ করেনি এইটা স্ক্রিপ্ট থেকে বাদ দিতে। কিন্তু জোকসটি বলার পর ওর স্ত্রী সেটাকে ভালোভাবে নেয়নি দেখে সে সেন্স হারিয়ে ফেলে। এবার বলুন অপরাধ কার?