নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সিনেমা

২২ শে মে, ২০২২ রাত ১১:৩৪

রিচার্ড এটেনবোরো নির্দেশিত "গান্ধী" সিনেমাটা মুক্তি পেয়েছিল ১৯৮২ সালে। আমার জন্মও হয়নাই তখন। প্রথম দেখেছিলাম খুব সম্ভব ২০০১ সালে বা তারও পরে। আমার জীবনে দেখা অন্যতম ভাল সিনেমা। এখনও যদি দেখি, মনে হয় সম্প্রতি বানানো হয়েছে। সমান ভাল লাগে। চল্লিশ বছর পরেও অনুভূতিতে মরচে ধরে না। এগুলোকেই বলে "কালজয়ী।" আইএমডিবি রেটিং এখনও আটের উপরে।
যখন ঘোষণা করা হলো আমাদের বঙ্গবন্ধুকে নিয়েও সিনেমা তৈরী হবে, যার ডিরেক্টর শ্যাম বেনেগাল, তখন স্বাভাবিকভাবেই মানুষের মস্তিষ্কে এসেছিল তেমনই কোন কালজয়ী সিনেমাই তৈরী হবে। শ্যাম বেনেগালের দক্ষতা নিয়ে কারোরই কোন সন্দেহ নেই। খুব উচ্চ মাপের গুণী নির্মাতা।
একবার কথা উঠলো অনিল কাপুর অভিনয় করবে, তখন আশা আরেকটু বেড়েছিল। অনিল কাপুর বলিউডের অন্যতম শক্তিশালী অভিনেতা এবং বঙ্গবন্ধুর চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে তেমনই শক্তিশালী অভিনেতার প্রয়োজন। হ্যা, বাংলাদেশেও বহু শক্তিশালী অভিনেতা আছেন, যারা বিশ্বমানের শিল্পী, তবে বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে হয় তাঁদের উচ্চতা মার খায়, নাহয় স্বাস্থ্যগত গঠন বৈশিষ্ট্য, নাহয় অন্যকিছু। গান্ধী চরিত্রের জন্য যেমন বেন কিংসলে ছিলেন দুর্দান্ত, আমাদেরও প্রয়োজন তেমনই কেউ। বাংলাদেশে না পেলে প্রয়োজনে ভারতে যাও, নাহয় ইংল্যান্ড আমেরিকা - গ্লোবালাইজেশনের যুগে আমার মাঝে অত সংকীর্ণতা নেই। যদিও, আমি নিশ্চিত, অনিল কাপুর বা বিদেশী কোন তারকা অভিনয় করলে কোটি কোটি মানুষ বিদেশী জামা গায়ে বিদেশী ফোন বা ল্যাপটপ হাতে বিদেশী কোন পণ্য সেবন করতে করতে মুখ বাঁকিয়ে বলতো, "আমাদের নেতার জন্য আমাদের দেশের থেকে কাউকে নেয়া হলো না? জাতি হিসেবে আমাদের মেরুদন্ড কখন শক্ত হবে? দাসত্ব মন মানসিকতা থেকে কবে মুক্তি পাবো" ইত্যাদি ইত্যাদি। হু কেয়ার্স? এন্ড প্রোডাক্ট পারফেক্ট হওয়া নিয়ে কথা। ইন্ডিয়া পেরেছে সম পর্যায়ের আরেকটা "গান্ধী" নির্মাণ করতে?
পাত্রপাত্রীর নাম ঘোষণার পর আমার আগ্রহ চলে গিয়েছিল। আরেফিন শুভকে ছোট করার চেষ্টা করছি না, তবে কমার্শিয়াল অভিনেতা আর জাঁদরেল অভিনেতার মাঝে পার্থক্য আছে। নওয়াজুদ্দিনকে দিয়ে দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে বা জন আব্রাহামকে দিয়ে গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর করালে ভজগট লাগতো। এখানেও অনুমিতভাবেই লেগেছে। ট্রেলারে সেটাই ফুটে উঠেছে।
শ্যাম বেনেগাল এতদিন কাজ করে এসেছেন নাসিরুদ্দিন শাহ, ওম পুরি, মনোজ বাজপাঈ, শাবানা আজমী, স্মিতা পাতিল জাতীয় অভিনেতা অভিনেত্রীদের নিয়ে। এই ধরণের অভিনেতা অভিনেত্রীরা নিজে থেকেই চরিত্রে গভীরতা নিয়ে আসেন। ডিরেক্টরের কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়। আরেফিন শুভ বা অন্যান্য কমার্শিয়াল অভিনেতা অভিনেত্রী দিয়ে সেই গভীরতা আনা অনেক কঠিন। অভিনেতার দোষ না। আপনি টেন্ডুলকারকে যদি বলেন ম্যারাডোনার মতন গোল করে দেখাতে, তাহলে চলবে? কোচ হিসেবে খোদ ম্যারাডোনা থাকলেও সেটা সম্ভব হবেনা।
তার মানে কাস্টিংয়েই সমস্যা ছিল। গলা কেন মিলল না, অভিনয় মেকি লেগেছে ইত্যাদি অভিযোগ এখন তুলে লাভ নাই। ওর দ্বারা যা সর্বোচ্চ হয়েছে, সেটাই সে করেছে।
হ্যা, ডিরেক্টরের দোষ হচ্ছে সস্তা ভিএফএক্স ঢুকানো। ঠিক এই বিষয়টা বুঝাতেই উপরে গান্ধীর সূত্রটা টেনেছি। ৮২ সালের সিনেমা, ভিএফএক্সের অস্তিত্বই ছিল না, ডিরেক্টরও প্রয়োগ করেননি। তিনি তাঁর হাতের কাছে যা পেয়েছেন তা দিয়েই সিনেমা বানিয়েছেন। আমাদের "আগুনের পরশমনি" আরেকটি উদাহরণ। যুদ্ধ দৃশ্যের প্রয়োজন হয়নি (যদিও হাল্কা দেখানো হয়েছিল), কাহিনী বর্ণনাতেই ডিরেক্টরের মূল ফোকাস ছিল। বঙ্গবন্ধুর জীবনী দেখাতে হলে আকাশে ডগ ফাইট দেখানো জরুরি ছিল না। ব্রিজের বিস্ফোরণও না। ওগুলো দেখাতে গিয়েই বারোটা বেজেছে।
ইতিহাসের ছাত্ররা কিছু বেসিক ভুল ধরেছেন, যেমন তাঁর স্বাধীনতার ঘোষণা বাংলায় বলা (মূলটা ইংলিশে ছিল) বা মুক্তিযুদ্ধের পতাকায় মিসিং মানচিত্র (কেউ বলছেন উল্টা পিঠ, কিন্তু দুই পিঠেই কি মানচিত্র থাকার কথা না?) মঞ্চনাটকেও লোকে এমন ভুল করেনা।
নায়কের কণ্ঠস্বর নিয়েই সবার অভিযোগ। সেই ভরাট কণ্ঠস্বর আরেফিনের নেই। নেই তো নেই, এখন কি করার? অমিতাভ বচ্চনের চরিত্রে রাজপাল ইয়াদবের স্বর যেমন শোনায়, সেটাই হয়েছে। ডাবিং করালে কি এমন ক্ষতি হতো? মিমিক আর্টিস্ট প্রচুর পাওয়া যায় যাঁরা হুবহু কারোর কণ্ঠস্বর ধারণ করতে পারেন। তাঁদের কাউকে দিয়ে ডাব করলেই কি ভাল হতো না?

সিনেমার বাজেট কত ছিল সে বিষয়ে কোন নির্ভরশীল সূত্র নেই। কেউ বলে চল্লিশ কোটি, কেউ বলে পঞ্চাশ, কেউ বলে একশো। তা যতই হোক, কোটি কোটি টাকা যে গেছে, সে ব্যাপারে কোনই সন্দেহ নাই। এত টাকা ঢালার পরে এই মাল দেখলে মানুষ খেপবে, সেটাই স্বাভাবিক। কেউ শ্যাম বেনেগালকে সিনেমা কিভাবে বানাতে হয় সেটা শিখাচ্ছে না, বরং অভিযোগ করছে, শ্যাম বেনেগাল ডিরেক্টর হবার পরেও এই জিনিস কিভাবে ও কেন পয়দা হলো। দুইয়ে পার্থক্য আছে। হিরো আলমকে দিয়ে বানালে লোকে এই সমালোচনা করতো না। এক্সপেক্টেশনই তেমন থাকতো।
সমস্যা হচ্ছে, কিছু মানুষ এই বিষ্ঠা প্রোডাকশনকেও জাস্টিফাই করছে। বলছে দেশের সাধারণ মানুষের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে। চাষা ভুষাদের জন্য বানানো হয়েছে, প্রান্তিক মানুষের জন্য বানানো হয়েছে যারা ভিএফএক্স বুঝে না। এই সিনেমাকে দেখে ওরা বঙ্গবন্ধুকে চিনবে, অন্তরে ধারণ করবে ইত্যাদি ইত্যাদি। আবেগী পোস্ট, কিন্তু পুরাটাই ফাঁকা। প্রান্তিক লোকের জন্যই যদি বানানো হতো, তাহলে শ্যাম বেনেগাল কেন? কোটি টাকা বাজেট কেন? আমাদের দেশে গুণী নির্মাতার অভাব ছিল? আপনি এলন মাস্ক বা জেফ বেজোসকে সিইও পদে চাকরি দিয়ে "আলমের একনম্বর পঁচা সাবান ফ্যাক্টরি" চালাবেন? কেউ কথা বললে এমন ভাব নিবেন যেন দেশের বিরুদ্ধে বলে ফেলেছে, নেতার বিরুদ্ধে বলে ফেলেছে! এই ধরনের তেলবাজি চামচাদের কারণেই বাংলাদেশ এখনও সিঙ্গাপুর বা মালয়েশিয়া হতে পারেনি। সব কথাতেই "ঠিক ঠিক" বলে গলাবাজি করে। আজকে যদি বিএনপি এই সিনেমা বানাতো, তাহলে এই এরাই বলতো, "বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মজাক করা হয়েছে। দেশের মানুষের কষ্টের টাকা বিদেশে পাচার করে এই কার্টুন বানানো হয়েছে।" তখন প্রান্তিক ফ্রান্তিক যুক্তি মুক্তি আসতো না। এদের প্রিন্সিপালেই সমস্যা।
আমি সত্যিই অবাক হয়েছি যে এখনও কিছু আওয়ামী সমর্থক বলেন নাই যে শ্যাম বেনেগাল বিএনপির লোক। সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতেই এই জিনিস বানিয়েছে।
আমাদের দেশে কিছু মুরিদ আছে না, হুজুর যদি বলে বিবিকে তালাক দিয়ে দাও, ওরা সাথে সাথে তিন তালাক দিয়ে বলে, জ্বি হুজুর!
হুজুর যদি বলে আমি গত রাতে তাহাজ্জুদ শেষে আফ্রিকায় মাহফিল করে সেখান থেকে হেঁটে হেঁটে বাংলাদেশে এসে ফজরের জামাত পড়িয়েছি, এরা বলে "সুবহানাল্লাহ!"
এই সমস্ত চ্যালা চামচারাও তেমন। নেতা যাই করবে, তাতেই লেজ নাড়তে হবে। আরে, উল্টা নেতার নিজেরই খ্যাপার কথা। আমার জাতির পিতাকে নিয়ে বানানো সিনেমায় এই ঘোড়ার আন্ডা পয়দা করা হয়েছে? বাজেটের অভাব ছিল? স্ক্রিপ্টে সমস্যা ছিল? তারপরেও এই ফাইজলামি?
ট্রেলার দেখে আমার যা মনে হয়েছে সেটা বললাম। এখন দেখা যাবে কিছু আঁতেল আসবে আমাকে দেশদ্রোহী প্রমান করতে। বেকুবের দল বুঝেনা, সিনেমার সাথে দেশপ্রেমের সম্পর্ক নেই। উল্টা দেশের টাকায় দেশের আইকনকে নিয়ে নির্মিত এই বিষ্ঠা ট্রেলারের (এখনও সিনেমা যেহেতু বের হয়নি তাই আস্ত সিনেমাকে কিছু বললাম না) প্রশংসা করাটাই দেশদ্রোহিতা।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সবার সুবুদ্ধির উদয় ঘটান।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে মে, ২০২২ রাত ১১:৫১

মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: ১০০ কোটি গেলো কই?

২| ২৩ শে মে, ২০২২ রাত ১২:২৬

নূর আলম হিরণ বলেছেন: আমার এলাকায় এমন একজন লোক আছে তার কন্ঠস্বর শুনলে আপনি ভাববেন বঙ্গবন্ধু কথা বলছে কোথায় থেকে! আমার মনে হয় ৯৫% এক্যুরেসিতে সে বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠস্বরে কথা বলতে পারে।

২৭ শে মে, ২০২২ রাত ১:১৮

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: সেটাই, আমাদেরই অনেক ট্যালেন্ট আছে, প্ল্যাটফর্ম পায় না।

৩| ২৩ শে মে, ২০২২ রাত ১:০৫

প্রতিদিন বাংলা বলেছেন: যুক্তিযুক্ত বিশ্লেষণ

৪| ২৩ শে মে, ২০২২ দুপুর ১২:০৯

খাঁজা বাবা বলেছেন: যা শুনছি তাতে অনেক ভজগট লেগে গেছে।
আমার মনে হচ্ছে বাংলাদেশী কোন পরিচালক কাজটা করলে আরো ভাল করতেন।

২৭ শে মে, ২০২২ রাত ১:১৯

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: অবশ্যই। বেনেগালের "বোস" সিনেমাটা ছিল তেমনই আরেকটা গু গোবর সিনেমা। এইটাও হবে তাই।

৫| ২৩ শে মে, ২০২২ দুপুর ১২:৫৪

রাজীব নুর বলেছেন: আমি ভেবছিলাম আপনি বয়সে আমার বড় । এখন দেখছি তা না।

২৭ শে মে, ২০২২ রাত ১:১৭

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: হাহাহা। অনেকেই তাই ভাবে।

৬| ২৫ শে মে, ২০২২ বিকাল ৩:১৪

শোভ বলেছেন: আমি যারপর নাই হতাশ !!! এমন বাজে ম্যাকাপ কি ভাবে দিল , তারছ্যড়া ভাদাইমা (আহাছান আলি ) এর ম্যাপাক ও এর চেয়ে হাজারগুন ভালো হয় । শুভ কে মনে এনিমেশন।

২৭ শে মে, ২০২২ রাত ১:১৭

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: তেলের উপর কিছু নাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.