নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

মরোক্কোর খেলোয়াড়দের ছিদ্রান্বেষণ

১২ ই ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:২০

লেখালেখির শুরুর দিকে ইন্ডিয়ার একটা বাঙালি গ্রূপে যুক্ত ছিলাম। "যুক্ত" বলতে একটিভিটির কথা বলছি। সেখানে নানা বিষয় নিয়ে তর্ক বিতর্ক হতো। ধারালো যুক্তি, অকাট্য প্রমান ইত্যাদি দিয়ে আমি ঘায়েল করতাম তো ওদেরও যথেষ্ট শক্তিশালী অস্ত্র থাকতো আমার বিরুদ্ধে।
কিন্তু একবারও কাউকে দেখতাম না আমার প্রোফাইল ঘাটাঘাটি করে, আমার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে, আমার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের টেনে এনে আমাকে আক্রমন করার চেষ্টা করতে। আমি নিজেও এই অরুচিকর, ছোটলোকিপনা কাজটা কখনও করিনা। আপনার সাথে আমার ঝগড়া হলে জীবনেও শুনবেন না আমাকে বলতে যে "তোর বাপতো অমুক না? অমুক অপরাধে একবার জেলে গিয়েছিল?" বা "তোর বাপতো অমুক অফিসে কাজ করে, ঘুষখোর!"
যে বিষয় নিয়ে তর্ক চলছে, সেই বিষয়ের বাইরে যাবার যুক্তিই আমি খুঁজে পাই না।
কিন্তু আমার "বাংলাদেশী" ভাই ব্রাদাররা শুরুতেই আমার প্রোফাইল ঘাটাঘাটি করে সেখান থেকে হয় আমার বা আমার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের টেনে এনে কমেন্ট করা শুরু করতো। এবং সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার, আমার সাথে যারা ততক্ষন ঝগড়া করছিল, ওরাই তখন এই ছোটলোকের কমেন্টে উল্টো "অপ্রাসঙ্গিক কমেন্ট" "ব্যক্তি আক্রমন নিষিদ্ধ" ইত্যাদি কমেন্ট করতেন। মুখ বরাবর জুতার বাড়ি, ঠিকতো?
এই জিনিস আমাদের বাংলাদেশী ফেসবুক ইউজারদের মধ্যে আমি পাইনাই। আমার সাথে অমুকের ঝগড়া হচ্ছে, শুরু করে দিবে ব্যক্তি আক্রমন, এবং সেইসব কমেন্টে একের পর এক লাইক পড়বে। এক জাতভাই, আরেক জাতভাইকে সাপোর্ট দিয়ে নিজের পরিচয় তুলে ধরবে।
আসলে পার্থক্যটা শিক্ষায়। শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নয়, পারিবারিক শিক্ষা, স্বশিক্ষা, মূল্যবোধ, ব্যক্তিত্ব, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয় প্রতিবেশীর ব্যাকগ্রাউন্ড ইত্যাদি সবকিছুই আমাদের আচার আচরণের উপর প্রভাব ফেলে।
আর্জেন্টিনার বাংলাদেশী ফ্যান পেজের মেয়েদের তিন দিন লাগেনি আমাদের সেক্সুয়ালি ফ্রাস্ট্রেটেড ছেলেদের চিনে নিতে। ঝাঁকে ঝাঁকে তরুণী তওবা করে গ্রূপ ত্যাগ করছে, কারন আমাদের বাংলাদেশি পোলাপান ওদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে ইনবক্সে নানান অশ্লীল ম্যাসেজ পাঠানো শুরু করে দিয়েছিল।
বলতে খারাপ লাগছে, কিন্তু এগুলো সত্য, কিছুতো বানিয়ে বলছি না। আর কতদিন চেপে রাখবো? আমরা বুঝেও এতদিন চেপে রেখেছি বলেই এইসবের পরিমান দিন দিন বাড়ছেই।

তা সম্প্রতি বিশ্বকাপে মরোক্কোর সাফল্যে ফেসবুকে গত দুইদিনে কয়েক রকমের পোস্ট চোখে পড়ছে।
একটি হচ্ছে মরোক্কান প্লেয়ার ম্যাচ জয়ের পরে তাঁর মাকে নিয়ে আনন্দ করছে। পুরো দল একসাথে সিজদাহ দিচ্ছে। ইত্যাদি।
এই পোস্টে কোনই সমস্যা নাই। ভাল জিনিস বেশি বেশি করে শেয়ার হওয়া প্রয়োজন। ব্রাজিলের কান্নারত খেলোয়াড়দের বুকে জড়িয়ে, চুমু দিয়ে দিয়ে সান্তনা দিচ্ছে লুকা মদ্রিচ, বা ভেঙে পড়া নেইমারকে সান্তনা দিচ্ছে ক্রোয়েশিয়ার তারকার ছোট্ট শিশুটা, মেসি গোল করে পুরানো সতীর্থকে উৎসর্গ করে বুঝিয়ে দিচ্ছে, সে ভুলেনি তাঁকে, এইসব দৃশ্য বারবার শেয়ার হওয়া উচিত।

দ্বিতীয় ছবি হচ্ছে মরোক্কান প্লেয়ারের স্ত্রীর বুক বের করা একটি ছবি। বুঝিয়ে দেয়া "মুসলিম" মরোক্কানের স্ত্রীর ছবি।

এই প্রসঙ্গে কথা বলতেই উপরের ঘটনা উল্লেখ করলাম। খেলোয়াড়ের ব্যক্তিগত জীবন কেমন, সেটাকে ঘেঁটে ঘেঁটে তাঁর স্ত্রীকে টেনে এনে, ছবি পোস্ট করার অভ্যাসটা অতি মূর্খ, অশিক্ষিত, ছোটলোকের পরিচয়। এতে ফুটবলার, ওর স্ত্রী যতটা নিচু হলেন, তারচেয়ে বেশি নিজেকে ছোট করা হলো না? হ্যা, আপনার লেভেলের বন্ধুবান্ধবরা বাহবাহ দিবেন, হিরো বানাবেন, কিন্তু "সভ্য" জগতে আপনি ছোটলোকই প্রমাণিত হলেন।

তা মুসলিমদের খোঁচা দিতেই যেহেতু এই ধরনের পোস্ট, তাহলে আমি বলি, এইভাবে মুসলিমরা ছোট হয়না। কারন, আদি পিতা আদমের (আঃ) এক ছেলে ছিল খুনি, আপন ভাইকে খুন করেছিল। প্রথম রাসূল নূহ (আঃ) নবীর ছেলেই কুফরীর অপরাধে পানিতে ডুবে মরেছিল। ইব্রাহিম (আঃ) নবীর পিতা ছিল প্রধান পুরোহিত, ইয়াকুব (আঃ) নবীর একাধিক ছেলে নিজেদের ভাই ইউসুফকে (আঃ) মারতে চেয়েছিল। লূত (আঃ) নবীর স্ত্রী ছিলেন অপরাধী। আমাদের নবী মুহাম্মদের (সঃ) চাচা ছিল আবু লাহাব, যাকে নাম উল্লেখ করে আল্লাহ কুরআনে অভিশাপ দিয়েছেন। তাঁর বিরোধিতাকারী কুরাইশ বংশের সবাই ছিল তাঁর আত্মীয়। কাফের সম্রাট আবু জাহেলের পুত্র ছিল ইকরিমা (রাঃ), একজন সাহাবী, এবং পরবর্তীতে শহীদ বীর। মুনাফেক সম্রাট আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইর পুত্র ছিল একজন সৎ সাহাবী। আবু লাহাবের মুসলিম মেয়ের সাথেই বিয়ে হয়েছিল আমাদের বিখ্যাত সাহাবী যাইদের (রাঃ)। আমাদের ধর্ম স্পষ্টতঃই বলে একের অপরাধে অন্যে জবাবদিহি করবে না।

এখন যারা দাবি করে বেড়াচ্ছেন, অমুকের স্ত্রী মডেল, তাই সে মুসলিমই না, কিংবা এইরকমই নানা ছিদ্র অন্বেষণ করে বেড়ানোর চেষ্টা করেন, এমন দাবি তুললে গোটা দুনিয়াতেই কেউ মুসলিম থাকবে না। আমাদের প্রত্যেকেরই এমন কিছু আত্মীয় নিশ্চই আছেন, যারা নানা অপরাধকর্মে যুক্ত। এবং আমরা নিজেরাও কেউই ফেরেস্তা নই। আমাদের ধর্মও শিক্ষা দেয় মানুষের ছিদ্র না খুঁজে গুন খুঁজে বের করতে। আমাদের ধর্মই শিক্ষা দেয় কারোর প্রশংসা করতে না পারেন, চুপ থাকেন, কিন্তু বদনাম করবেন না। আমাদের ধর্মই শিক্ষা দেয়, কেউ যদি ভালোর দিকে কেবল একটি কদম বাড়ায়, আমরা যেন উন্মুক্ত বক্ষে সেটাকে স্বাগত জানাই।
আজকে যদি খেলোয়ারটার বৌ নেকাব-বোরখা পরাবস্থায় ছবি তুলতো, তাহলে এরাই সেই ছবি পোস্ট করে বলতো, মেয়েটাকে জোর করে বস্তা পরানো হয়েছে। এআর রেহমানের মেয়ের ছবি নিয়ে এমনই অসভ্যতা করা হয়েছিল ফেসবুক জুড়ে।
"ইসলামে গান বাজনাতো হারাম, তাহলে নেকাব পরার মানে কি?" - এমন সস্তা কমেন্টে রেহমানের সোশ্যাল মিডিয়া ডুবে গিয়েছিল। মেয়েটাকে বাবার ডিফেন্সে স্টেটমেন্ট পর্যন্ত দিতে হয়েছিল। কি লজ্জা! এরপরেও এদের ছোট মন বড় হতে শিখে না।

মরোক্কোর জনতা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম, বাংলাদেশেরও জনতা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম। আমরা যখন দেখতে পেলাম আফ্রিকার মতন অন্ধকার এক মহাদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠির একটি দল বিশ্বকাপের মতন মঞ্চে সবাইকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে, তখন স্বাভাবিকভাবেই আমাদের মনে আনন্দ আসার কথা। কারন ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার চাইতে ওদের সাথেই আমাদের কিছু কমন মিল আছে, সেটা ধর্মচর্চায়। বাঙালি বাদে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ সাধারণত তাঁর আত্মীয়, বন্ধু বান্ধবকে সাফল্য পেতে দেখলে বেশি খুশি হয়। মরোক্কানদের সাফল্যে বাঙালি মুসলিমদের খুশি হওয়ার এইটাই একমাত্র কারন।
এখন ওদের কোন নারী হিজাব করলো না, কোন খেলোয়াড়ের বৌ ন্যাংটা ছবি তুলল, ওরা ইজরায়েলকে স্বীকৃতি দিল কি দিল না, কোন আমলে ওরা কবে কি গণহত্যা করলো ইত্যাদি নিয়ে টানা হ্যাঁচড়া করলেতো মহাবিপদ। তাহলেতো ইউরোপের কোন দেশকেই সাপোর্ট করা যাবেনা। ব্রিটেন, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া, ইতালি কাকে বাদ দিয়ে কাকে রাখবেন? ফিফার সভাপতিরই উক্তিতে গত তিনহাজার বছরে ইউরোপ গোটা বিশ্বের সাথে যে আচরণ করেছে, আগামী তিন হাজার বছর ক্ষমা চাইলেও সেটা যথেষ্ট না।
অর্জেন্টিনা-ব্রাজিল সহ গোটা সাউথ আমেরিকান কোন দলেরই সাপোর্ট করা যাবেনা, কারন মাদকের ব্যবসা, সাপ্লাই ইত্যাদি করে থাকে। প্রচুর মানুষকে হত্যা করে। ভীষণ দুর্নীতিগ্রস্থ দেশ।
আমেরিকার সাপোর্ট করা যাবেনা, কারন বিশ্বে প্যাচ লাগিয়ে প্রচুর গণহত্যার জন্য দায়ী।
এশিয়ার কোন দলেরই সাপোর্ট করা যাবেনা, সবারই ব্যাকগ্রাউন্ডে কিছু না কিছু আছে। এমনকি নিজের দেশ বাংলাদেশকেও সাপোর্ট করতে পারবেন না। কারন পার্বত্য অঞ্চলে আমরাও ফেরেশতার মতন আচরণ করিনা।

তাই বলি ছিদ্রান্বেষণ বাদ দিন। মানুষের ভালোটা প্রচার করুন। অন্যকে ছোট করার চেষ্টায় সময় ব্যয় করলে নিজেই ছোট হবেন। উপর দিকে ছোড়া থুথু সবসময়েই নিজের মুখে এসে পড়ে।
লেখাটি পড়ে কারোর যদি মনে দুঃখ জন্মে আমি দুঃখিত নই। আপনাদের পোস্টগুলি আমার মেজাজ খারাপ করেছে বলেই এইসব লিখতে বাধ্য হলাম।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: পুরো পোষ্টের চেয়ে শেষের চার লাইনে যা বলার বলে দিয়েছেন। এরপর আর কিছুর প্রয়োজন নেই।

২| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: দেখুন, আপনার পোষ্টে কেউ মন্তব্য করে নাই। কারন আপনি কারো পোষ্ট পড়েন না, মন্তব্য করেন না।

৩| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৮:৩৮

ইমরান আশফাক বলেছেন: ইস্, এই কথাগুলিই আমি সাজিয়ে-গুছিয়ে আগে পোষ্ট করতে পারলাম না কেন? B-)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.