নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
ইংল্যান্ড, সাউথ আফ্রিকা ইত্যাদি দেশগুলো আমাদের ধর্মীয় মতে "কাফের-ইহুদি-নাসারাদের দেশ।" ওদের সভ্যতা সংস্কৃতি ইসলামী সংস্কৃতি থেকে ভিন্ন হবে, সেটাই স্বাভাবিক। কোন ম্যাচ বা টুর্নামেন্ট জিতলে শ্যাম্পেন স্নান খুবই স্বাভাবিক ঘটনা।
এদিকে ইসলাম নিষেধ করে দিয়েছে, এলকোহল থেকে দূরে থাকতে বলেছে।
যদিও টেকনিক্যালি, শরীরে এলকোহল লেগে গেলে আপনার শরীর অপবিত্র হয়ে যাবে না। আমরা যে পারফিউম ব্যবহার করি, সেটাতে এলকোহল থাকে এবং সেটা মোটেই নাজাস (ঘৃণ্য/অপবিত্র/পেশাব-পায়খানা পর্যায়ের) নয়। আমরা পারফিউম গায়ে নামাজ পড়তেই পারি। কারন কেমিক্যাল হিসেবে "এলকোহল" নাজাস নয়। সেটা হলে আমাদের ওষুধে এলকোহল নিষিদ্ধ হতো, আমাদের হ্যান্ড স্যানিটাইজারে এলকোহল নিষিদ্ধ হতো। যে মসজিদে আমরা নামাজ পড়ি, সেই মসজিদের মেঝে জীবনামুক্ত করা হয় যে লিকুইড সলুশন দিয়ে, সেখানে এলকোহল মিশ্রিত থাকে।
কিন্তু শ্যাম্পেন স্নানে একটা বড় সুযোগ থাকে যে দুর্ঘটনা বা অসাবধানতা বশত আমাদের মুখে এলকোহল ঢুকে যেতে পারে। এলকোহল মিশ্রিত পানীয় সেবন (নেশার উদ্দেশ্যে/ওষুধ হিসেবে নয়) করা হারাম। সেটা একবিন্দু হলেও।
তাই দেখা যায় ইংল্যান্ড যখন চ্যাম্পিয়ন হয়, এবং ওরা শ্যাম্পেন স্নান করে, দলের প্রধান দুই ক্রিকেট স্তম্ভ মঈন আলী ও আদিল রশিদ দুইজনই ছুটে পালিয়ে আসেন। একই কাজ করতেন ইতিহাসের অন্যতম সেরা প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান হাশিম আমলা, বা তাঁর সতীর্থ ওয়েন পার্নেল। ডেল স্টেইন একবার পোস্ট করেছিলেন আমলা অবসরে কুরআন পড়েন, সেই ছবি।
আমরা দেখতে পাই মোহাম্মদ রিজওয়ান খেলার মাঠেই মাগরিবের নামাজ আদায় করে ফেলেন। ও নাকি সকালে ফজর পরে কুরআন পড়তে বসে এবং পারার পর পারা পড়ে যায়। (বলেছিল এক বসাতেই অর্ধেক কুরআন মানে পনেরো পারা পড়ে ফেলে, দ্রুত পড়লে আসলেই সম্ভব, কিন্তু একটু বেশিই বলে ফেলেছে মনে হলো)
আমাদের মুস্তাফিজ আইপিএলে খেলতে গিয়ে জার্সির গায়ে কোন জুয়া সংস্থার লোগো ব্যবহার করতে রাজি হয়নি। যেমনটা সাউথ আফ্রিকার ন্যাশনাল দলের প্রধানতম স্পন্সর ক্যাসেল লেগারের লোগো ব্যবহার করতো না ওদেরই প্রধানতম ব্যাটসম্যান হাশিম আমলা। বাবর-রিজওয়ানরা পিসিবির সাথে কন্ট্রাক্টে ক্লজ ঢুকিয়ে দিয়েছে - কোন রকম এলকোহলিক বেভারেজ কোম্পানি বা জুয়ার সাথে সম্পৃক্ত আছে এমন কোন কোম্পানির টাকা ওদের বেতনে যুক্ত হতে পারবে না। ওদের সাবেক ক্যাপ্টেন শরফরাজ আহমেদ কুরআনের হাফেজ।
ওদের কারোর ঈমান নিয়ে সন্দেহ নাই।
সমস্যা করে কিছু বাঙাল, যারা নামাজ রোজার ধারে কাছে নাই, দুয়েকটা ফতোয়া এদিক সেদিকে শুনে যাচাই বাছাই না করেই এক কথায় নিজের অজ্ঞতা প্রকাশ করে, "ক্রিকেট খেলাটাই হচ্ছে জুয়া!"
রেফারেন্স? "অমুক মোল্লা, তমুক হুজুর বলেছেন।"
তা হুজুররাতো অনেক কথাই বলেন, ওদেরই কারোর কারোর মতে তোমার জন্মটাও জায়েজ না। তা তুমি নিজে পড়াশোনা করে কি জেনেছো সেটা বলো?
ফ্রুটফুল কোন উত্তর নেই।
তো আজকের বিষয় হচ্ছে, ক্রিকেট খেলা কি আসলেই জুয়া? হারাম? হলে সেটা কেন হারাম?
প্রথমেই জানিয়ে রাখি, ইসলামি আইন শাস্ত্রের rule of thumb হচ্ছে, কোন কিছুকে হারাম ঘোষণা করতে হলে অবশ্যই আগে প্রমান করতে হবে "কেন সেটি হালাল নয়।" কারন পরম করুনাময় আল্লাহপাক দুনিয়ায় মানুষের জন্য বেশিরভাগ বস্তুই হালাল করেছেন, গুটিকয়েক বস্তুকে হারাম করেছেন। তাই by default, সবকিছুই হালাল, যদি না শরিয়া অনুযায়ী প্রমাণিত হয় সেটি হারাম।
যেমন মদ, জুয়া, ব্যাভিচার ইত্যাদি শরিয়া অনুযায়ীই হারাম। এখানে তর্কের কোন সুযোগই নেই। ক্রিকেটকে অনেকে জুয়া বলছেন, তাই আসুন আগে জানা যাক জুয়া কি?
জুয়া হচ্ছে, আমি, আপনি এবং কয়েকজন কোন টুর্নামেন্ট খেলবো। এন্ট্রি ফী পঞ্চাশ টাকা প্রতিদল। মোট উঠলো তিনশো টাকা। চ্যাম্পিয়ন দল পাবে ২০০ টাকা, রানারআপ পাবে ১০০, বাকিরা লাড্ডুগুড্ডু।
এইটা জুয়া। সেটা ক্রিকেট হোক, ফুটবল হোক, লটারি হোক বা যেটাই হোক। কেন? কারন এখানে আমি নিজের পকেট থেকে টাকা দিয়ে টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছি। এতে আমার আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা আছে।
কিন্তু, এখন যদি এমন একটা টুর্নামেন্ট হয়, যেখানে বিসমিল্লাহ রেস্টুরেন্টের সত্বাধিকারী কুদ্দুস মিয়া ঘোষণা দিল উনি চ্যাম্পিয়ন দলকে দুইশ টাকা দিবেন, রানারআপকে একশো টাকা, তাহলে কিন্তু টুর্নামেন্টটা হালাল হয়ে যাবে। কেন? কারন প্লেয়াররা নিজের পকেট থেকে টাকা দিয়ে খেলছে না। হয়তো জার্সির জন্য, ক্রিকেট গিয়ারের জন্য পয়সা দিবে, কিন্তু এগুলো ওরা নিজেদের জন্যই কিনবে। পুরস্কার আসবে থার্ড পার্টি থেকে এবং এতে হারামের কিছু নেই তাতে।
একই খেলার দুইরকম টুর্নামেন্টের পার্থক্য বুঝাতে পেরেছি?
এখন যারা হারাম হারাম করেন, উনারা কি মনে করেন সাকিব আল হাসান, নাজমুল শান্তরা নিজের পকেটের টাকা দিয়ে টুর্নামেন্ট খেলতে যায়? ভক্সওয়াগনগিরি না করে পাড়া মহল্লার আর ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটের পার্থক্য কি সেটা বুঝার চেষ্টা করেন।
হ্যা, ফুটবলের সাথে এখানে ক্রিকেটের বেসিক পার্থক্য হচ্ছে ফুটবলে হাফপ্যান্ট পরতে হয়, হাঁটুর উপর চামড়া দেখা যায়, কাজেই সেখানে পর্দার খেলাপ হয় (পুরুষেরও পর্দা আছে, কয়জন বাঙালি পুরুষ জানে সেটা একটা প্রশ্ন), সেক্ষেত্রে পোশাক একটা সমস্যা। কিন্তু আপনি যদি হাঁটু ঢেকে নামেন, তখন আবার ভিন্ন হয়ে গেল।
কিছু মূর্খ "ক্রিকেটে পর্দার খেলাপ হয়" বলে আর্গু করতে আসে। তা কোন ক্রিকেটার হাফপ্যান্ট পরে বা স্কিন টাইট পোশাকে মাঠে নামে আগে সেটা বলেন, তারপরে পর্দা নিয়ে আলোচনা হবে। মুখস্ত বা নকল বিদ্যা চালাতে আসলেতো সমস্যা!
এখন ধরা যাক সেই একই টুর্নামেন্টে বিসমিল্লাহ রেস্টুরেন্টের মালিক কুদ্দুস মিয়া আসলে বিরাট গ্রূপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক। রেস্টুরেন্ট ছাড়াও ওনার বার আছে, পতিতালয় আছে, জুয়ার আড্ডা আছে। মানুষকে ধার দিয়ে তিনি সুদের কারবারও করেন।
এখন টুর্নামেন্ট জিতে উনার টাকা নেয়াটা কি হালাল হবে?
এই আর্গুমেন্টই লোকে বেশি করে। "মুস্তাফিজ যে দলে খেলে, ওদের স্পন্সর জুয়াড়ি, ওদের টাকায় মুস্তাফিজ বেতন পায়। তাই ও হারাম কামাচ্ছে।"
অবাক হতে পারেন শুনে যে, না, এখানেও ইনকামের টাকা অটো-হারাম হচ্ছে না। কারন, মুস্তাফিজ জুয়া খেলার জন্য, মদ বেচার জন্য টাকা কামাচ্ছে না, খেলার জন্য বেতন পাচ্ছে। মালিক যেন কিছুতেই নিজের হারাম ব্যবসায় ওকে ব্যবহার করতে না পারে, সেজন্যই নিজের জার্সি থেকে লোগো সরিয়েছে।
আমি যদি পাড়ার টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ঘোষণা দেই, সবাই কুদ্দুস ভাইয়ের জুয়ার আড্ডায় গিয়ে ড্রিংক করুন, আড্ডা দিন, আমাদের সাফল্যের পেছনের রহস্য এটাই - বা কিছু না বললেও নিজের জার্সিতে "কুদ্দুইচ্চার বিয়ার বার" লোগো পরে থাকি, তাহলে আমার আয় হারাম হবে।
আরও সহজ উদাহরণ দেই। আপনি ডাক্তার, রোগীর চিকিৎসা করেন, বিনিময়ে বেতন নেন। এখন বেতন নেয়ার সময়ে কি তদন্ত করেন যে রোগীর আয়ের উৎস কি? পতিতাবৃত্তির টাকা থেকে আপনাকে বেতন দিচ্ছে কিনা? তাহলেতো শিক্ষকরা স্কুলের বেতনও নিতে পারবেন না। কারন একশো দেড়শো শিশুর একেকটি ক্লাসের অর্ধেকের বেশি বাচ্চার বাপ ঘোষখোর, সুদখোর!
বাংলাদেশে কোন সার্ভিসের বিনিময়েই আপনার আয় হালাল হবেনা, কারন আমাদের হারাম কামানেওয়ালা মানুষের অভাব নেই।
লজিক পেলেন? এই কারণেই বলি, বেহুদা লাফালাফি না করে একটু চিন্তাভাবনা করবেন। কোথায় যেন এক বিজ্ঞ ব্যক্তির আর্টিকেল পড়েছিলাম যেখানে তিনি অতি হতাশার সাথে বলেছেন বর্তমান প্রজন্ম মুখস্ত বিদ্যার দিকে ঝুঁকছে, কোন বিষয়ের ব্যাপারে প্রশ্ন করতে ভুলে গেছে।
তাই সব সময়েই বলি, পড়াশোনা করতে। পড়ালেখা করলেই আমরা সহীহ আল বুখারীর ৫৪৩০ নম্বর হাদিসে পাই, একদিন নবীজি (সঃ) মা আয়েশার (রাঃ) ঘরে দুপুরের খাবার এতে এলে দেখেন চুলায় মাংস রান্না হচ্ছে। কিন্তু খাবার দেয়ার সময়ে উনাকে (সঃ) কেবল রুটি ও স্যুপ দেয়া হয়। নবীজি (সঃ) মাংসের ব্যাপারে জানতে চাইলে আয়েশা (রাঃ) বলেন, "ওটা বারীরাহকে (আয়েশার (রাঃ) মুক্ত করা দাসী) একজন সদকা হিসেবে দিয়েছে এবং ও আমাদের সেটা উপহার দিয়েছে।"
আমরা সবাই জানি নবীজির (সঃ) জন্য দানের কিছু খাওয়া হারাম ছিল, তিনি কারোর কাছ থেকে দান খয়রাত গ্রহণের অনুমতি পাননি। তবে, উপহার হিসেবে কেউ দিলে সেটা নিতে পারতেন।
তখন নবীজি (সঃ) বলেন, "ওটা বারীরাহর জন্য দান ছিল, কিন্তু আমাদের জন্য উপহার (যেহেতু বারীরাহ সেটাকে "উপহার" হিসেবে দিয়েছেন)।"
আশা করি আর ভেঙে বুঝাতে হবে না। /
কিছু পন্ডিত, তর্ক করেন, "ইসলামেতো তীরন্দাজি, তলোয়ারবাজি, ঘোড়/উটসোয়ারি, কুস্তি ইত্যাদি ছাড়া বাকি সব খেলা হারাম! হাদিসে আছে।"
এখানে পয়েন্ট হচ্ছে, শব্দটা "sports" না, শব্দটা "contest/competition" মানে হচ্ছে, আপনি নিজের পকেটের পয়সা দিয়েও যদি অংশ নেন, তারপরেও এইসব প্রতিযোগিতা আপনার জন্য হালাল। উপরে জুয়ার দোহাই দিয়ে পাড়ার ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হারাম বললাম যে কারনে, এখানে কিন্তু সেটা প্রযোজ্য না। কেন? কারন এখানে যেগুলোর কথা বলা হয়েছে, যুদ্ধক্ষেত্রে সেটাই কাজে লাগতো। তাই হেরে পয়সা নষ্ট হলেও স্কিলটা বৃথা যেত না, উম্মাহর উপকারেই ব্যয় করা যেত।
ক্রিকেটতো নবীজির (সঃ) সময়ে আবিষ্কারই হয়নি, হালাল/হারামের সরাসরি হাদিস আসবে কিভাবে?
খেলার ব্যাপারে ইসলামী ফতোয়া হচ্ছে "যে খেলার কারনে আপনার ফরজ ইবাদত, যেমন নামাজ/রোজা/হজ্ব/যাকাত/ঈমান ইত্যাদি ছুটে যায়, পর্দার খেলাপ না হয়, সেটা খেলা হারাম। যে খেলায় সময় নষ্ট হওয়া ছাড়া কোন লাভই হয় না, সেটা হারাম। যে খেলায় আপনার শরীরের উপকার হয়, সেটা হালাল।"
ক্রিকেট খেলতে গিয়ে আসর মাগরিব ছুটে যাচ্ছে, রোজা রাখতে পারছেন না, তাহলে আপনার জন্য খেলাটা হারাম। কারন এখানে প্রায়োরিটি আল্লাহর ইবাদত, বাকি সব পরে।
রোজা রেখে খেলতে পারছেন, বিরতিতে নামাজ পড়ে ফেলছেন, সেই খেলায় কোনই সমস্যা নাই।
প্রশ্ন তুলতে পারেন, "খেলে টাকা কামানোর ব্যাপারে হাদিস কি বলে? খেলে টাকা উপার্জনকেইতো জুয়া বলে।"
মাথানষ্টের মতন কথা না বলে আগে দেখেন নবীজির (সঃ) সময়ের খেলাগুলোয় কোন থার্ডপার্টি স্পন্সরের কাছ থেকে টাকা আসতো, নাকি প্লেয়াররা নিজেদের পকেট থেকে টাকা দিয়ে খেলতো। উত্তর পেয়ে যাবেন।
আরেকবার এক হুজুরকে বলতে শুনেছিলাম "বিশ্বকাপ আয়োজন উপলক্ষে পতিতাবৃত্তি ব্যবসা জমে উঠে, জেনাহ বেড়ে যায়। তাই ক্রিকেট/এই জাতীয় খেলাগুলো হারাম।" - খুবই ফালতু যুক্তি। লজিকটা এমন যে "ফলের রসে এলকোহল মেশালে মদ হয়, তাই ফলের রস হারাম।" হুজুরদের শুধু কুরআন হাদিস ছাড়াও জেনারেল লাইনের বেসিক লেখাপড়া করা উচিত। এমন ফালতু লজিক থেকে নিজেরাও বাঁচবেন, অনেককে বাঁচাবেন।
আরেকটা অতি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট, সাধারণ মানুষ এবং তারকাদের মাঝে পার্থক্য হচ্ছে, সাধারণ মানুষকে কেউ তেমন পাত্তা দেয়না, কিন্তু তারকাদের কথা, চালচলন মানুষ ফলো করে। মোহাম্মদ আলী, দা গ্রেট বক্সার মোহাম্মদ আলী মুসলিম হওয়ার ফলে ইসলাম সম্পর্কে সাধারণ আমেরিকানরা যতটা জেনেছে, বহু প্রতিষ্ঠিত আলেমের দ্বারা সেটা সম্ভব হয়নি। এইটা হিস্টোরিক্যাল ফ্যাক্ট। একে অস্বীকারের উপায় নাই। কাজেই কথায় কথায় হালাল/হারাম ঘোষণার আগে ইম্প্যাক্ট বোঝাটাও জরুরি।
আমার মূল বক্তব্য শেষ।
অমুক স্কলার এই বলেছেন, সেই বলেছেন বলে অনেক দীর্ঘ আর্গুমেন্ট উপস্থাপন করতে পারি, মূল পয়েন্ট এটাই থাকবে যা বলেছি।
ইচ্ছা হলে যেকোন "স্কলারের" (ওয়াজে চিল্লাফাল্লা করা পাবলিক মাত্রই স্কলার না, যে আসলেই পড়াশোনা করেছে, যে কারেন্ট এফেয়ার্স সম্পর্কে ধারণা রাখে, যে কুয়ার ব্যাঙ না - ওকেই বলে "আলেম") সাথে কথা বলে পয়েন্টগুলো যাচাই বাছাই করে নিতে পারেন। ইউটিউব ভিডিওর বিটস এন্ড বাইটস ক্লিপ্স না শুনে নিজে পড়ুন, বুদ্ধি খাটান, নিজের ও দশের উপকার করুন।
আমেরিকায় আমাদের মসজিদগুলোতে নামাজের ঘর ছাড়াও লাইব্রেরি, জিম ইত্যাদি থাকে। জিমে বাস্কেটবল/ইনডোর সকার/ব্যাডমিন্টন খেলার আয়োজন থাকে। বিশ্ব বিখ্যাত EPIC মসজিদে ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন হয়। অনেক হাইকোয়ালিটি ক্রিকেট হয় সেখানে। ইন্ডিয়ান/পাকিস্তানী/বাংলাদেশিরা অংশ নেয় তাতে। যে গতিতে একেকটা বাউন্সার ছুটে আসে আর ব্যাটম্যানরা হুক বা পুল করে, বুঝা যায় ওরা স্রেফ স্ট্রিট ক্রিকেট খেলা পাবলিক না।
এলেন মসজিদে (সম্প্রতি সাকিব-রিয়াদরা যে মসজিদে ফান্ড রেইজিং ইভেন্টে গিয়েছিলেন) ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট হয়। এছাড়া সাপ্তাহিক প্র্যাকটিস/মিনি টুর্নামেন্টতো আছেই।
আশেপাশের মসজিদগুলোয় বাস্কেটবল, ফুটবল ইত্যাদি টুর্নামেন্ট নিয়মিতই হয়। বাচ্চাদের, তরুণদের মসজিদমুখী করার অব্যর্থ প্রয়াস। আসরের নামাজ জামাতে পড়, খেলো, জামাতে মাগরেব পড়ে বাসায় চলে যাও। কোন জবরদস্তি নেই। কেউ না পড়লেও সমস্যা নাই। ইসলামে ধর্মের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি করতে পারবে না। তাই অমুসলিম অনেকেই আসে খেলতে।
এতে উপকার যেটা হয় তা হচ্ছে নিজের বন্ধুবান্ধব খেলার সাথীদের নামাজে দাঁড়াতে দেখে কেউ কেউ চক্ষুলজ্জায় হলেও দাঁড়িয়ে যায়। হয়তো বাসায় থাকলে নামাজ পড়তো না। ধীরে ধীরে ওর মধ্যে ঈমান তাজা হয়। সে প্র্যাকটিসিং মুসলিম হয়। এককালের এগ্নস্টিক নোমান আলী খান নিজের এক বন্ধুর সাথে ঘুরাফেরা করতে করতেই আজকের নোমান আলী খান হয়েছে। সেই বন্ধু সাধারণ মুসলিমই থেকে গেছে। কিন্তু নোমান আলীর যাবতীয় পুণ্যের ক্রেডিট নিজের খাতায় ভরে নিচ্ছে।
আবার এমনও হয়েছে খেলতে এসেই মুসলিমদের "নামাজ কালচারের" সাথে পরিচিত হয়ে অনেক অমুসলিম ইসলাম সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়। মসজিদেরই লাইব্রেরি থেকে বই, ইন্টারনেট ঘেঁটে মুসলিম হয়। সাউথ আফ্রিকান ওয়েন পার্নেলের নাম উপরে নিয়েছিলাম, ও কিভাবে মুসলিম হয়েছে? আগ্রহ জেগেছিল, পড়তে পড়তে একদিন সিদ্ধান্ত নিল মসজিদে গিয়ে বলবে আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই, মুহাম্মদ (সঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। যে কারনে প্রায় প্রতি মাসেই আমরা বিদেশী মসজিদে দেখি লোকজন ইসলাম গ্রহণ করছে।
মসজিদে খেলাধুলা? "লা হাওলা ওয়ালাকুয়াতা ইল্লা বিল্লাহ" বলার আগে একটু খোঁজ খবর নিন, জানতে পারবেন নবীজি (সঃ) নিজেই একবার তাঁর মসজিদে নববীতে আবিসিনীয়ার কিছু এক্সপার্টদের অংশগ্রহনে বর্শা নিক্ষেপের প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেছিলেন।
আমি কোন এককালে শুধু একবার লিখেছিলাম আমাদের দেশের পাড়ার মসজিদগুলো কেন বাচ্চাদের জন্য এমন টুর্নামেন্টের আয়োজন করে না?
ওরে আল্লাহ! ফেসবুকীয় মাওলানারা তখন নিজেদের বিদ্যার জাহাজ খুলে বসেছিল।
আজকেও হয়তো তেমনই কিছু টাইটানিক এসে হাজির হবে।
০৩ রা জুন, ২০২৪ রাত ১০:৫৩
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: বহু মাওলানাও ক্রিকেট খেলে।
©somewhere in net ltd.
১| ০৩ রা জুন, ২০২৪ রাত ১০:২৮
জ্যাক স্মিথ বলেছেন: কিছু অতি উৎসাহী লোকজন সবকিছুতে হালাল, হারাম টেনে নিয়ে আসে। বহু মাদ্রসার ছাত্র ক্রিকেট খেলে এবং ক্রিকেট খেলার ভক্ত।