নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

কোটি টাকার গরু - হালাল/হারাম?

০৫ ই জুন, ২০২৪ রাত ১১:১৭

সাদেক এগ্রোর গরুর দাম নিয়ে অনেক চিৎকার চ্যাঁচামেচি শুনছি। গালাগালি চলছে খুব, তাই এই বিষয়ে কিছু কথা বলা যাক।

প্রথমত এত দামে গরু কেনাবেচা কি হারাম?
আগেই বলেছি, কোন কিছুকে হারাম ঘোষণা করার আগে সেটি হালাল কেন নয় তা প্রমান করতে হবে। তাও কাকে? যে "হারাম" "হারাম" বলে চ্যাঁচাবে তাঁকে। নাহলে সবই বাই ডিফল্ট, হালাল।
এই ট্রানজ্যাকশন হারাম হতে হলে কিছু ঘটনা ঘটতে হবে, যেমন:

১. সাদেক এগ্রো মিথ্যা/ভুলভাল তথ্য দিলে। বলছে টেক্সাসের জেডি হাজিন্সের রেজিস্টার্ড ব্রাহমা, ওর লিনিয়েজ আছে, ওর বাপ ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন ইত্যাদি ইত্যাদি কিন্তু ধরিয়ে দিচ্ছে কিশোরগঞ্জ থেকে আনা ক্রস ব্রিডের কোন শাহিওয়াল, তাহলে এটি কোটি টাকা না, বরং পাঁচ টাকা দামে বিক্রি করলেও হারাম। ইসলামিক ট্রানজ্যাকশনে মিথ্যা তথ্যের ঠাঁই নেই।
২. এমন কোন তথ্য ইচ্ছা করে গোপন করলে যা ক্রেতার ক্ষতির কারন হয়। যেমন সাদিক এগ্রো জানে গরুটা কোরবানি পর্যন্ত সারভাইভ করবে না, কিন্তু বিক্রি করে দিল। মালিক বাড়িতে গিয়ে দেখে গরু শেষ।
৩. গোটা মার্কেটের গরু বিক্রি বন্ধ করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরী করে দাম বাড়ালে।

এইরকমই কিছু না কিছু ঘটতে হবে যাতে বিক্রেতা ক্রেতাকে ঠকাবে।
ক্রেতার আয় বৈধ নাকি অবৈধ সেটার উপর সাদিকের ট্রানজ্যাকশন হারাম হবেনা। আপনার সাধারণ মুদির দোকানে কেউ পাউরুটি কিনতে আসলে আপনি কি ওর আয়ের উৎসের ব্যাপারে খোঁজ খবর নেন? বা আপনি অফিসে কাজ করে যে টাকা আয় করেন, নিজের মালিক আর কোন কোন উৎস থেকে সেটা আয় করছেন সে ব্যাপারে খোঁজ নেন? আপনার কাজ রুটি বিক্রি করা, ও ঘুষ খেয়ে টাকা আয় করেছে নাকি সুদ খেয়ে সেটার জন্য ও জবাবদিহিতা করবে। সমাজের চিহ্নিত দুর্নীতিবাজকে আল্লাহর খাতিরে আপনি বয়কট করতে চাইলে সেটা ভিন্ন বিষয়। বয়কট আর হারাম এক নয়। যদিও বাঙালি হারামকে একেবারেই সস্তা বানিয়ে ফেলেছে।

ক্রেতার জন্য কোরবানিটা কখন বাতিল হবে?
১. যদি এটি আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি না হয়ে মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্যে বা অন্য যেকোন উদ্দেশ্যে হয়। যদি আয় হালালও হয়, তাহলেও বাতিল, কারন সেটা কোরবানি হচ্ছে না।
২. যদি অবৈধ সম্পদ থেকে গরুটা কেনা হয়ে থাকে। যদি নিয়্যত থাকে কেবলই আল্লাহর উদ্দেশ্যেই কোরবানি করা হবে, কিন্তু পশু কেনা হচ্ছে ঘুষের টাকায়, তাহলেও বাতিল।
কোটি কোটি টাকা থাকা মানেই লোকটা দুই নম্বরি, এইটা খুবই ছোটলোকি মানসিকতা। আপনি পরিশ্রম করে অবশ্যই হালাল পথেই কোটিপতি হতে পারবেন। দেশেই এমন প্রচুর ব্যবসায়ী বা উচ্চপদস্থ চাকরিজীবী/পেশাজীবী আছেন যারা আল্লাহর ভয়ে ভীত, তটস্থ, অথচ কোটি কোটি টাকার মালিক। হালাল ব্যবসা করে ধনী হওয়া সম্ভব। পরিশ্রমই মূল সূত্র। বিদেশে যত ধনী দেখি, বেশিরভাগই মাথার ঘাম পায়ে ফেলে হালাল পথে ধনী হওয়া মুসলিম/অমুসলিম। এখন কেউ কোটি টাকা দিয়ে কোরবান করতে চাইলে সেটা ওর ব্যক্তিগত ব্যাপার। আপনার আমার সেখানে কথা বলার অধিকারটা কে দিয়েছে?
৩. "এক কোটি দিয়ে একটা গরু না কিনে একশোটা কিনে গরিবদের বিলিয়ে দিতে পারতো।" - খুবই আল্লাদি কথাবার্তা, কিন্তু এইটা কোন ট্রানজ্যাকশন হারাম হওয়ার জন্য দলিল নয়। কুরবানী হবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে, তা থেকে সে গরিবদের দিতে চাইলে খুবই ভাল, সওয়াব পাবে, নিজের আত্মীয়দের দিলেও সওয়াব পাবে, আর যদি পুরোটাই নিজে খেয়ে ফেলে, তাও সমস্যা নাই। গরিবদের দেয়াটা অপশনাল, অবশ্য কর্তব্য নয়। ওর টাকা, ওর ইচ্ছা ও সেটা দিয়ে একটা গরু কিনবে নাকি একশোটা - যে এমন আল্লাদি কথা বলে সে কয়টা গরিবকে সাহায্য করে? বেশিরভাগ সময়েই ওদের দেখা পাবেন না। ওদের দৌড় অন্যকে উপদেশ দেয়া পর্যন্তই।

তা এইরকমই কিছু ক্রাইটেরিয়া থাকবে ক্রেতার জন্য পশুটি হারাম হওয়ার জন্য। কিন্তু সে যদি কারোর ক্ষতি না করে, কাউকে না ঠকিয়ে, নিজের হালাল আয়ের টাকা থেকে হালালভাবে কোরবানি দিয়ে থাকে, আপনি কে সেটাকে হারাম ঘোষণা বা সমালোচনা করার? নাকি কেউ কোটি টাকায় কোরবানি দিয়ে দিচ্ছে বলে আপনার "বুকে কুব বেতা হচ্ছে?" পরশ্রীকাতরতা আমাদের মানবিক বৈশিষ্ট্য কিনা!

এখন আসা যাক মূল বিষয়টাতেই, মানে গরুর দামে। কোটি টাকা কি সহজ কথা? একটা ব্রাহমা গরুর দাম কি আসলেই এত হয়? টেক্সান অরিজিন?
না। আলহামদুলিল্লাহ, গত চার বছর ধরে টেক্সাসে ব্রাহমা গরুই কোরবান দিচ্ছি, পিওর ব্রিড, তার উপর আমাদের গরুগুলি মাঠে স্বাধীনভাবে ঘাস খেয়ে বেড়ে উঠে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফার্মে মাংস উৎপাদনের মেশিন হিসেবে তৈরী হওয়া গরু না। কাজেই অর্গানিক বলেই ফার্মের গরুর তুলনায় কেজি প্রতি আমাদের গরুগুলির দাম একটু বেশি পড়ে। তারপরেও আমি বলবো আমাদের গরুই যদি দেশে প্লেনে করে উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করা হয়, এককোটি টাকা খরচ পড়ার কথা না।
হ্যা, রেজিস্টার্ড ব্রাহমার (বা যেকোন গরুর) দাম হয়তো একটু বেশি পড়তে পারে। কিন্তু কোরবানির ক্ষেত্রে সেসব গৌণ বিষয়। এই যে সাদেক আলী বলছেন "আপনি গুগল করেন, এর একশো দশ বছরের পূর্বপুরুষের ইতিহাস সামনে চলে আসবে।"
তো? কি যায় আসে? গরুর বাপ, দাদা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ছিল, রানার্সআপ ছিল নাকি বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম ছিল, তার উপর কিই বা যায় আসে? আল্লাহর কাছে সওয়াব কম বেশি হবে তাতে?
সাদিক এগ্রো প্রচার করছে "ব্রাহমা গরুর কোলেস্টরল লো" - কথা ভুল না, কিন্তু দিন শেষে এটা গরুই, মানে রেড মিট। এমন না যে আপনি ব্রাহমার মাংস খেলে হার্টের সব ব্লক খুলে ফকফকা হয়ে যাবে, বাইপাসের পেশেন্ট কোন অপারেশন ছাড়াই সুস্থ হয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিবে।
"এটিকে সাধারণ সাতশো টাকা কেজি দরের মাংসের সাথে তুলনা করা উচিত না" - এই কথাটা ঠিক। আমেরিকাতেও সাধারণ গরু, প্রিমিয়াম গরু (এঙ্গাস/ব্রাহমা/ওয়েগু ইত্যাদি), ঘাস খাওয়া গরু, ফার্মের গরু, বুইড়া গরু, জোয়ান গরু ইত্যাদি গরুর মাংসের দামে পার্থক্য থাকে। প্রতি পাউন্ড তিন চার ডলার যেমন আছে, তেমনই পাউন্ডপ্রতি চল্লিশ পঞ্চাশ ডলার দামের মাংসও আছে। বাংলাদেশেই সব জাতের গরুর মাংসের সমান দাম রাখা হয়, খুবই বিরক্তিকর। যে গরুর খরচ কম, সেই গরুর দাম কেন ৭০০ হবে? আর যেটার খরচ বেশি, সেটাকেই বা মাত্র ৭০০তে বিক্রি করতে হবে কেন? এর ফলে সাধারণ মানুষ প্রতিবেলায় গরুর মাংস খেতে পারেনা।
জাপানিজ অথেন্টিক গরুর (ওয়েগু) সাইজ এঙ্গাস/ব্রাহমা/ফ্রিজিয়ানের তুলনায় অত্যন্ত ছোট, মাংস কম হয়, চর্বি প্রচুর হয়, কিন্তু দুনিয়ার সবচেয়ে দামি গরু সেটা। পাউন্ড বিক্রি হয় দুইশো ডলারে। আর সেটা যদি "কোবি A৫" হয়ে থাকে তাহলে ছয় সাত হাজার ডলারে প্রতি পাউন্ড বিক্রি হয়। এক্সোটিক রেস্টুরেন্টগুলো ওদের প্রিমিয়াম কাস্টমারের জন্য সেসব কিনে থাকে। স্টেক খেতে যাবেন, বিল আসবে ১২ হাজার ডলার, ২০ হাজার ডলার। মেসি, রোনালদো, বড় বড় হলিউড স্টাররা, বড় বড় ব্যবসায়ীরা সেসব রেস্টুরেন্টে যায়। ওটা আমার আপনার ব্যাপার না।
সেসব রেস্টুরেন্টে বাঙালি ফুড ভ্লগার নিজের কন্টেন্ট ভিডিও বানাতে ম্যানেজারের ইন্টারভিউ নিবে "আচ্ছা ভাই, আক্কাসের বিরিয়ানি হাউজেতো মাত্র একশো টাকায় বিরিয়ানি পাওয়া যাচ্ছে, তাও পাঁচ পিস্ মাংস দেয়! আপনার এখানে কেন ১২,০০০ ডলার দাম?"
প্রশ্ন শুনে ম্যানেজার তখন খাঁটি ব্রিটিশ উচ্চারনে শেক্সপিরিয়ান শব্দাবলী থেকে কিছু পংক্তি আবৃত্তি করবে "যা ভাগ ফকিরনী কোথাকার.....(ছাপার অযোগ্য) দূরে গিয়া মর!"

জাপানে নিলামে আস্ত ওয়েগু কয়েক লাখ ডলারে বিক্রি হয়ে থাকে। কেউ কেউ নিজের মনকে সান্তনা দেন এই বলে যে ওয়েগুকে বিয়ার খাইয়ে বড় করা হয়, ম্যাসাজ করা হয়, টেলিভিশনে "ইত্যাদি" অনুষ্ঠান দেখানো হয় - সবই বোগাস কথাবার্তা। ও একটা গরু, গরুর মতোই ওকে বড় করা হয়। ওয়েগুর ক্রস ব্রিড করা হয়না, জীবিত ওয়েগু জাপানের বাইরেও যেতে পারেনা। জেনেটিক্যালি পিওর ব্রিড ওয়েগুর মাংসে চর্বির মার্বেলিংটাই মূল বৈশিষ্ট্য। এই এক্সক্লুসিভিটির কারণেই জাপানিজ ওয়েগু, টুনা, তরমুজ ইত্যাদি আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে।
এখানে সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে, ওয়েগু কাটার আগে বলা মুশকিল এর দাম কত হবে। পুরোটাই ওর মাংসে চর্বির মার্বেলিংয়ের উপর নির্ভর করে। মাংস দেখে তখন নিলাম হয়।
তাই বলে আমরা কান্নাকাটি করি না যে "এখন স্টেক খাওয়ার জন্য কিডনি বিক্রি করা লাগবে!"
না, ওয়েগু স্টেক না খেতে পারলেও আমাদের জীবন কেটে যাচ্ছে ভালই। আমাদেরতো সবচেয়ে বড় সমস্যা ওয়েগুর দাম না, "হালাল উপায়ে জবাই" হওয়াটা। হালাল ওয়েগু পাওয়া কঠিন। তাই দাম অনেক বেশি হয়ে যায়।
কেউ কেউ এখানেও মাতবরি ফলায়। "ওয়েগু বিয়ার খায়, তাই আমাদের জন্য হারাম।"
না, মদ-বিয়ার মানুষের জন্য হারাম, পশুর জন্য নয়। গরু হেরোইঞ্চি হলেও সেই গরু বিসমিল্লাহ বলে জবাই দিয়ে বিসমিল্লাহ বলে খান, কোনই সমস্যা নাই। এই লজিকেতো আমাদের জন্য জেনাহও হারাম, তাই বলে কি ঐ ভদ্রলোক গরু-গাভীকে বিয়ে দিয়ে ওদের বৈধ সন্তানকে বড় করে কোরবানির হাটে নেন? আপাতত ফাইজলামি করে বললেও আমি নিশ্চিত সাদিক এগ্রো এই কামটাই আগামী কয়েক বছরের মধ্যে শুরু করবে। "১০০% হালাল গরু। ওর বাবা মায়ের বিয়ে আমরা দিয়েছি, ওর জন্ম হয়েছে আমাদেরই গোয়ালে। জন্মের সময়ে আকিকাও করেছি। ওর দাম পাঁচ কোটি টাকা!"

তো, এখন কেউ যদি ওয়েগু কোরবান দিতে চায়, সেটা কি হারাম হবে? দাম, বিয়ার খাওয়ার বদনাম ইত্যাদি অভিযোগতো আছেই। কোরবানি হারাম হয়ে যাবে?
অবশ্যই না। জাপানিজরাতো তাহলে কোরবানিই দিতে পারবেনা।
কিন্তু সেখানেও দেখবেন কোন জনৈক জনদরদী বাঙালি ভাই, গরিববান্ধব ফেসবুকার কমেন্ট করবে, "ছয় হাজার ডলার প্রতি পাউন্ডে গরু না কিনে সাতশো টাকা প্রতি পাউন্ডে গরু কিনলে অনেক গরিবের উপকার হতো।"

কোরবানির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভুল যেটা করা হয় সেটা হচ্ছে এই মাংস কেজিপ্রতি পশুর দাম নির্ণয়।
"এই গরুতে তিন মন মাংস হবে, তাই এর দাম এত হবে।"
খুবই বড় ভুল। আপনিতো কসাইর দোকান থেকে মাংস কিনছেন না যে কেজিপ্রতি দাম করে কিনতে হবে। এটি হবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবান, মানে হচ্ছে মাংস যদি আপনার ভাগ্যে নাও জোটে, তাহলেও সেটা নিয়ে খচখচ করবেন না। আমাদের অনেকেই যেমন আফ্রিকা, বাংলাদেশ ইত্যাদি অঞ্চলে টাকা পাঠিয়ে দেই, নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ পশু কোরবান করে গরিব, এতিম, মিসকিনদের মাঝে বিলিয়ে দেয়। সেখানেতো সেই পশুর এক টুকরা মাংসও ওর পাতে উঠছে না। অথচ সেই একই ব্যক্তি নিজের ব্যক্তিগত কোরবানির সময়ে মাংসের হিসাবে দাম নির্ধারণ করে কেন?
আপনি জিতেছেন নাকি ঠকেছেন হিসাবটা দামে নয়, তাকওয়ায় হবে। তাকওয়া ঠিক করেন।

সেজন্য আপনি প্রথমেই নিজের মন ক্লিয়ার করবেন। "আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি দিতে চলেছি।"
তারপরে নিজের বাজেট নির্ধারণ করবেন। "এক লাখ টাকার বেশি আমি কোরবানির সামর্থ্য রাখি না।"
তারপরে পশুর হাটে গিয়ে নিজের বাজেটে পশু দেখবেন, গরু/ছাগল/মহিষ/ভেড়া পছন্দ হলে কিনবেন। বাজেট ফেল করলে কিছু করার নাই, আপনার উপর তাহলে কোরবানি ফরজ না। আপনি অভিযোগ করবেন কেবলই আল্লাহর কাছে যে তিনি যেন আপনাকে দ্রুত সামর্থ্য দেন কোরবানি করার।
"পাশের বাড়ির লাল মিয়া কালা গরু কোরবানি দিচ্ছে, আর আমি ধলা মিলা লাল গরু কোরবানি দিতে পারছি না!" ভেবে ঘুষ খেয়ে, দুই নম্বরি করে কোরবান দিতে গেলে সেটা মাংস খাওয়া উৎসব হবে, কোরবানি হবেনা।

দেশের ব্যবসায়ীরা লাভের আশায় দাম বেশি চাইবেই, আপনি দামদর করে কিনবেন। অমুক তমুক এগ্রো ফার্মের বড় বড় গরুর ভিডিও হাইলাইট হচ্ছে, কারন বড় গরু সবাই দেখতে পছন্দ করে। আমি নিজেও বড় গরুর ভিডিও দেখি, বাজারে গেলে ওদের সাইজ দেখে মুগ্ধ হই। আপনার যদি মনে হয় ওটা আপনার দরদামের মানসিকতার উপর প্রভাব ফেলে, তাহলে এইসব ভিডিও বা ওসব গরুর দিকে তাকাবেন না। আপনি আপনার সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে কিনেন বলেই কিন্তু বাজারে বস্তুর দাম কমছে না। দেশবাসী গরু খাওয়া কমায় দেয়ায় মাংসের কেজি ১২০০ থেকে নেমে ৭০০-৮০০তে এসেছে, এভাবেই বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ওরা সিন্ডিকেট তৈরী করলে আমরা কেন আমাদের নিজেদের সিন্ডিকেট তৈরী করতে পারবো না?

একটা গোপন খবর দেই, ব্যবসায়ীরা নিজেরাও চায় ওদের গরুগুলো বিক্রি হয়ে যাক। ওরা ভাল করেই জানে এইসব বড় গরু কোরবানির মৌসুম ছাড়া ওরা বিক্রি করতে পারবে না। একবার গরু যদি অবিক্রিত অবস্থায় বাড়ি ফেরত যায়, তখন ওর অবস্থা হয় লগ্নভ্রষ্টা কন্যার মতন - না পারে গিলতে, না পারে উগরে ফেলতে। একেকটা গরুর পিছনে মাসে হাজার হাজার টাকা ব্যয় হয় কেবল খাওয়াতেই। ওষুধ বা অন্যান্য খরচ হিসাবে ধরলে কেউ কেউ বলে লাখ টাকা। তাছাড়া গরু যত বুড়ো হতে থাকে ওর মাংসের স্বাদ তত কমতে থাকে। এর মাঝে মরে গেলেতো পুরাই লস। গত বছরের এপ্রিলে টেক্সাসের একটি ফার্মে এক দুর্ঘটনায় ১৮,০০০ গরু জীবিত পুড়ে মারা গিয়েছিল। কল্পনা করতে পারেন? ১৮,০০০ গরু! মালিক কর্তৃপক্ষের কি ব্যাপক ক্ষতি! এই কারণেই গত দুই বছর ধরে আমাদের এলাকায় গরুর দাম অনেক।
যেকোন ব্যবসায়ীর আয়ের সোর্স হচ্ছে পণ্য বিক্রি। বিক্রি না হলে পরবর্তী পণ্যের পেছনে খরচের টাকাটা আসবে কোত্থেকে? এই কারণেই ওরা এক কোটি টাকা চাইলেও হয়তো ৫০ লাখেরও কমে সেই অতি উচ্চবংশের গরু ছেড়ে দিত। কিন্তু কেউ যদি সেটা কিনে ফেলে, পরের গরুটাই ওরা দেড় কোটিতে তুলবে। বলবে, "এই গরুর সুপার পাওয়ার আছে। আপনি হার্ট এটাক করলে এই গরু স্টেথেস্কোপ কানে লাগিয়ে আপনার চিকিৎসা করবে। আপনি বরিশালের লঞ্চ মিস করলে ও নিজের কাঁধে চাপায়ে আপনাকে লঞ্চের আগেই বরিশাল পৌঁছে দিবে। এই গরু কিনলে আমেরিকার পাসপোর্ট-সিটিজেনশিপ ফ্রি। এই গরুর পূর্বপুরুষের পিঠে চেপেই বাবর ইন্ডিয়া এসেছিলেন। সম্রাট আলেকজান্ডার ছোটবেলায় এর দাদির দুঃখ খেত। নিউইয়র্কে ওয়াল স্ট্রিটে যে ষাঁড়ের মূর্তি দেখেন, সবাই ছবি তুলে, ওটা এর গ্রেট গ্র্যান্ড ফাদার ছিল। এর গায়ে নাম্বার দেখেন। গুগল করলেই এর সব ইতিহাস পাবেন! এর মাংস ডায়মন্ডে তৈরী, কাবাবে দেখবেন চুমকির সূক্ষ্ম কারুকাজ করা।"
তখন আপনি জোরে ধমক দিয়ে বলবেন "এই তুই অফ যা! পঞ্চাশ লাখে দিলে দে না দিলে মুড়ি খা!"

ফি আমানিল্লাহ!

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৭

ঢাকার লোক বলেছেন: এটি ৪ মিলিয়ন ডলার দামের গরু, ব্রাজিলের!

https://images.app.goo.gl/2fAyrxdpx6ByVKfR7

২| ০৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ১২:৩৯

কামাল১৮ বলেছেন: হালাল হারাম ইসলাম ধর্মের বিষয়।অন্যথায় যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয় তা সবই খাওয়া যায়।সবাই খায়

৩| ০৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ১:৪২

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: হালাল হারামের ব্যাখায় গেলে
সারারাত ঘোরপাক খেতে হবে ।
তাই চীনারা মনে করে মুসলিমরা মানসিক রোগী ।

৪| ০৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ৩:২৯

আরেফিন৩৩৬ বলেছেন: গরু নিয়ে লিখা গরু রচনা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.