নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

আসছে আমেরিকা!

০৮ ই জুন, ২০২৪ রাত ১২:১৪

গোটা ক্রিকেট বিশ্ব জুড়ে গতকাল থেকে একটাই আলোচনা, পাকিস্তানকে আমেরিকা হারিয়ে দিয়েছে! আমেরিকা পাকিস্তাআআআআনকে হারিয়েছে!!

আমেরিকা এইবারই প্রথম বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অংশ নিচ্ছে, অন্যদিকে পাকিস্তানের আছে সুদীর্ঘ গৌরবময় ইতিহাস। গত টি-২০ বিশ্বকাপেরই ফাইনাল খেলা দল ওরা। কারোর কারোর এখনও বিশ্বাস শাহীন ইনজুরড না হলে হয়তো ট্রফি বাবরের হাতেই উঠতো।
পাকিস্তানে ট্যালেন্টের অভাব নেই। বাবর, রিজওয়ান, ফাখার, শাহীন, আমির, নাসিম, হারিস - একেকটা ভীতিজাগানিয়া নাম।
অন্যদিকে আমেরিকায় কারা খেলে? নিজ মাতৃভূমিতে যারা রিজেক্টেড হয়ে আসেন, অথবা ক্রিকেটকে স্রেফ ভালবেসে ফুলটাইম চাকরি করে পার্টটাইম প্র্যাকটিস করে। ইন্ডিয়া/পাকিস্তান/কিউই/ওয়েস্টইন্ডিজ ইত্যাদি দেশের ইমিগ্র্যান্ট প্লেয়ারদের নিয়ে গড়ে ওঠা দল আমেরিকা। বিরাট সংখ্যক আমেরিকান জনগোষ্ঠীর কাছে ক্রিকেট এখনও ততটাই জনপ্রিয় আমাদের দেশে গল্ফ, রাগবি বা বেসবল যতটা। কাজেই "বিশ্বকাপ উন্মাদনা কই" - ধরনের প্রশ্ন জাগাটাই অযৌক্তিক। আমাদের দেশে বেসবল বিশ্বকাপ হলে "উন্মাদনা" চোখে পড়বে?

বাঙালি আরেক সাংবাদিকের ভুলভাল রিপোর্টিং দেখছিলাম, আমেরিকা নাকি "ভাড়াটে" খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া দল।
নিতান্তই অশিক্ষিত আহাম্মকের মতন কথা।
এমনটা হলে বলতে হবে "আমেরিকা জাতিটাই ভাড়াটিয়া মানুষে গড়া।" কারন এখানে সবাই ইমিগ্রেন্ট। পৃথিবীর সব প্রান্ত থেকেই মানুষ এসে এসে এদেশকে গড়ে তুলেছেন। এদেশের পাসপোর্টধারী একজন শ্বেতাঙ্গ ইউরোপিয়ান যতটা আমেরিকান, একজন কালো আফ্রিকানও ততটাই আমেরিকান। আমরা বাংলাদেশী, ইন্ডিয়ান, পাকিস্তানিরাও তাই। কাজেই এদেশের খেলোয়াড়দের "ভাড়াটে" খেলোয়াড় বলাটা ওদেরকে গালি দেয়ার সামিল। মাইক হাতে ক্যামেরার সামনে কন্টেন্ট বানানোর আগে বেকুকটার এই জ্ঞান থাকাটা জরুরি।

এখন আসি মূল বিষয়ে, এই জয়ের পেছনে সবচেয়ে বড় কারনটা কি ছিল।

সবাই জানি পাকিস্তান শক্তির বিবেচনায় আমেরিকা থেকে কোটি গুণ এগিয়ে, কিন্তু আমেরিকা বরাবর একটা বিষয় মেনে চলে, বাইবেলের ডেভিড বনাম গলায়েৎ বা দাউদ নবীর ঘটনা। যেখানে খর্ব শক্তির দাউদ (আঃ) শক্তিশালী জালূতকে বুদ্ধি খাটিয়ে বধ করেছিলেন। শুধু যুদ্ধক্ষেত্রই না, যেকোন ক্ষেত্রই হোক, পড়ালেখা বা কর্পোরেট, সেটা হচ্ছে, তোমার যা শক্তি আছে, সেটার উপর ফোকাস করে এমন স্ট্র্যাটেজি বানাও যেন তোমারও শ্রম কম লাগে, টার্গেটও এচিভমেন্ট হয়।

বাবর রিজওয়ান নিঃসন্দেহে বিশ্বের সেরা টি-২০ জুটি। কিন্তু ওদের অসংখ্য দুর্বলতা আছে। সেটাতে আক্রমন করো। তাই দেখা যায় ওদের বিরুদ্ধে বাঁহাতি বোলিং দিয়ে আক্রমন শুরু হয়। তাও শুরুতেই স্পিনার। কেন? ওরা এনালাইসিস করে দেখেছে বাবর এবং রিজওয়ান দুইজনেরই বাঁহাতি বোলিংয়ে দূর্বলতা আছে। নিজের দলের নেটে শাহীন/আমির/ইমাদ থাকার পরেও ওদের এই দুর্বলতা কাটেনি। এবং মাইক্রো এনালাইসিসের যুগে সেটা খুঁজে বের করতে প্রতিপক্ষের কোন অসুবিধাও হয়নি। কে এই নিষ্টুস কেনিয়েগে? কে এই নেত্রাভাল্গার? বা আলী খান? কে চিনে ওদের? অথচ ওরাই কালকে পাকিস্তান টপ অর্ডারকে সেই যে চেপে ধরলো, এরপরে ওরা আর ম্যাচেই ফিরতে পারলো না।
ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রেও তাই। গোটা দুনিয়া জানে শাহীন প্রথম ওভারে ফুল পিচ ইনসুইংগিং ডেলিভারি দিয়ে এলবিডব্লিউ বা বোল্ড করে। ওরা আগে থেকেই সেভাবে প্রস্তুত থেকেছে। চাপে পড়ে পাকিস্তান ভুল করেছে, ওরা প্রতিটা বাজে বলের ফায়দা তুলেছে।
আসল খেলাতো দেখিয়েছে সুপার ওভারে। এর আগে হারিস রউফের শেষ বলে ঠান্ডা মাথায় চার মেরে ম্যাচ টাই করা। তার দুই বল আগের ফুলটসকে একেবারে ছক্কা মারা। সবই নিজেদের নার্ভ ধরে খেলার ফল।
সুপার ওভারে মোহাম্মদ আমিরের মতন ঝানু মালকেও বোকা বানিয়েছে। ওয়াইড করেছে, বল উইকেট কিপারের হাতে, তবু দৌড়ে রান তুলে ফেলেছে। বাউন্ডারির বন্যা বয়ে যায়নি, তবুও সুপার ওভারের এক ওভারেই ১৯ রান তুলে ফেলেছে।
কালকে কিন্তু পাকিস্তান একই দিনে দুইবার আমেরিকার কাছে হেরেছে। প্রথমে ২০ ওভারের ম্যাচে। টাই, তবুও সেটা হারেরই সমান। এবং সুপারওভারেতো অফিসিয়ালিই হেরেছে।

পাকিস্তান আমেরিকার হাতে বধ হওয়া দ্বিতীয় টেস্ট পরাশক্তি। প্রথমে বাংলাদেশ হয়েছিল, এই কিছুদিন আগেই। আমরা গেল গেল রব তুলেছিলাম। কিন্তু আমেরিকা যে উঠে আসছে, সেটা কেউ বুঝতে পারছি না।

সামনে বহুদূর যাওয়ার বাকি, তবে মাত্রই শুরুটা হয়েছে। ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। কেন? কারন আমেরিকা খেলোয়াড়দের বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, শ্রীলংকা প্রমুখ দেশ থেকে উন্নত ফ্যাসিলিটি দান করে। দেখুন, ট্যালেন্ট প্রতিটা দেশেই জন্মে। উগান্ডাতেও হয়তো এমন সব হীরা জন্মে যারা জহুরির অভাবে ঠিক মতন কদর পায় না। অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড দেশগুলো নিজেদের গুটিকয়েক ট্যালেন্টকেই ঘষে মেজে এমন চকচকে বানায় যে গোটা দুনিয়া চমকে দেয়। আর আমরা ন্যাচারাল ট্যালেন্ট অপচয় করতে করতে যারা উঠে আসে, ওদেরকেও পলিটিক্সের শিকার বানিয়ে ফেলি।
ইন্ডিয়া হঠাৎ গত তিন দশকেই বহুদূর এগিয়ে গেছে। কেন? কারন ওদের ফ্যাসিলিটি বেড়েছে। খেলোয়াড়দের বাছাই করো, খেলোয়াড়দের সুযোগ সুবিধা দাও, ট্রেনিং দাও, ফোকাস বাড়াও, সুযোগ দাও - তারপরে তামাশা দেখো। খুবই সহজ সমীকরণ, দুর্নীতিবাজ দেশগুলো মিলাতে পারেনা।
আমেরিকায় আসেন, বাংলাদেশের সাংবাদিকরা মাথায় হাত দিয়ে বলছে, "আপনাদের এক শহরেই এতগুলো ইনডোর ফ্যাসিলিটিজ! আমাদের গোটা দেশেইতো এত নাইরে ভাই!"
ইনডোর ফ্যাসিলিটিজ কিসের? ক্রিকেটের। যেখানে স্পন্সর পাওয়া কঠিন।
তাইলে বাকি জনপ্রিয় খেলা যেমন আমেরিকান ফুটবল, বাস্কেটবল, বেজবলের অবস্থা কি হতে পারে! এখানকার পোলাপানের একটা বিরাট অংশ স্কুলে যায় বড় হয়ে এথলেট হওয়ার জন্য। আর আমাদের সংস্কৃতিতে খেলাধুলা স্রেফ টাইম পাসের বিষয় ধরা হয়।
ফুলটাইম চাকরি করে অফিস শেষে প্রতিদিন সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত প্র্যাক্টিস করেই যারা বাংলাদেশ ও পরে পাকিস্তানকে ভূমিতে আছড়ে ফেলতে পারে, যখন ওরা ফুলটাইম প্রফেশনাল ক্রিকেটার হবে, তখন ওদেরকে কি বলবেন?
একটু অপেক্ষায় থাকেন, ক্যারিবিয়ান দানবীয় ফাস্টবোলাররা যখন আমেরিকায় নাম লেখাতে শুরু করবে, তখন ইন শা আল্লাহ, আমরাও দেখে নিব কে অস্ট্রেলিয়া, আর কে ইংল্যান্ড!
ওদের দিকে তাকিয়ে ইন শা আল্লাহ, আমরা বলবো "আহো ভাতিজা! আহো!"

মন্তব্য ২ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জুন, ২০২৪ দুপুর ১:৩৬

মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: ভারত হয়ত আমেরিকাকে নিয়ে ভাবছে।

২| ০৮ ই জুন, ২০২৪ রাত ১০:১৮

ঢাবিয়ান বলেছেন: রুজি রোজগারের প্রয়োজনে আরেক দেশে সেটল করা, পাস্পোর্ট নেয়া এক জিনিষ আর নিজে দেশের জার্সি খুলে ফেলে আরেক দেশের পাসপোর্ট নিয়ে সেই দেশের হয়ে খেলতে যাওয়া আরেক জিনিষ। যদি আমেরিকার টীমের সবাই বাই বর্ন আমেরিকান হয়ে থাকে তাহলে বলার কিছু নাই। কিন্ত যদি তা না হয় তবে ভাড়াটিয়া দল বলায় কোন দোষ দেখছি না। আমাদের সাকিব আল হাসানকে আর কয়েক বছর পর আমেরিকার হয়ে ভাড়া খাটতে দেখলে অবাক হব না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.