নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
পশ্চিমা দেশে শিশুরা যখন স্কুলে যায়, ওদের শুধু পড়ালেখা ছাড়াও আরও নানান এক্টিভিটির ক্লাস থাকে। খেলাধুলা, নাচ, গান, অভিনয়, ছবি আঁকা ইত্যাদি নানা বিষয় ওদের সামনে তুলে ধরা হয়। সেখানেই ওদের কোন হিডেন ট্যালেন্ট আইডেন্টিফাই করা হয়। যখন সেটা ধরা পড়ে, তখন তার আলাদা যত্ন নেয়া শুরু হয়। যাদের পড়ালেখায় মাথা কম চলে কিন্তু জন্ম থেকেই এথলেট, ওদেরকে খেলা বন্ধ করে মেরে ধরে পড়ালেখা করিয়ে ওদের এথলেটিকতো বটেই, গোটা জীবনের ক্যারিয়ারেরই বারোটা বাজানো হয়না। উল্টো ওদের সামনে আরও বহু সুযোগ সুবিধা এনে দেয়া হয় যাতে ও ওর পটেনশিয়ালকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দিতে পারে। স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি সব জায়গায় খেলোয়াড়দের জন্য আলাদা স্কলারশিপ থাকে। অনেক বড় বড় ইউনিভার্সিটি বড় বড় খেলোয়াড়দেরকে নিজের দলে টানার জন্য ফ্রি স্কলারশিপ+বেতন ইত্যাদির প্রস্তাব দিয়ে নিয়ে নেয়।
আর খেলায় সফল হওয়ার পুরো বিষয়টা ট্যালেন্টের পাশাপাশি আসলে পরিশ্রমেরও ব্যাপার।
আপনার প্রচুর ট্যালেন্ট আছে, কিন্তু আপনি পরিশ্রমী নন, আপনার তাহলে কিছুই হবেনা। শচীন টেন্ডুলকার সকালে স্কুলে যাওয়ার আগে মাঠে সময় কাটাতো, তারপরে এসে ট্র্যাকস্যুট পাল্টে ধুয়ে স্কুলে যেত। স্কুল শেষে বাসায় যখন ফিরতো, ততক্ষনে ভেজা কাপড় শুকাতো না। সেই ভেজা কাপড়েই দুপুরের প্র্যাকটিসে দৌড়াতো। দিনে দুই তিনটা আলাদা আলাদা ম্যাচে গিয়ে ব্যাটিং করতো।
ওয়াসিম আকরাম ঘন্টার পর ঘন্টা নেটে বল করে যেত। একটা বলে সামান্য একটু সুইং, সামান্য একটু সিম কন্ট্রোল আনতে মাসের পর মাস, হাজারে হাজারে বল করতে হয়।
সবাই লেজেন্ডদের সফলতা দেখে, সফলতার পেছনে ঝরানো ঘামের খবর কেউ নেয়না।
তো যা বলছিলাম - ওয়েস্টার্ন দেশগুলোতে শৈশবেই এথলেট শিশুদের আবিষ্কার করা হয়। ওদের নানান সুযোগ সুবিধা দিয়ে বাড়তে দেয়া হয়। নানান বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলানো হয়। ওদের নির্দিষ্ট ডায়েট ফলো করতে বলে। দিনের পর দিন, কঠোর পরিশ্রম করতে করতে ওরা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে। জাতীয় দলের হয়ে নিজের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে।
পুরো বিষয়টাই দারুন গোছানো একটি সিস্টেম। একজন খেলোয়াড়কে গড়ে তোলার পেছনে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা আর অগণিত মানুষের পরিশ্রম ব্যয় হয়।
সেদিক দিয়ে আমাদের দেশগুলো আসলেই "মায়ের দোয়া" দল।
প্রথমত আমাদের সংস্কৃতিতে এখনও খেলাধুলাকে সম্মানের চোখে দেখা হয়না। কোন ছেলে যদি খেলাধুলায় সিরিয়াস হতে চায়, বাবা মা ওর জন্য কড়া শিক্ষকের ব্যবস্থা করেন, যে পিটিয়ে মাথা থাকে খেলার ভূত নামায়।
তারপরেও ছেলে যদি খেলাধুলা চালিয়ে যায়, ওর ব্যাট বল পুড়িয়ে ফেলা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদেরও আছে খেলোয়াড় কোটা কিন্তু অনেকেই সেটার ভুল ফায়দা তোলে। ক্লাব থেকে সার্টিফিকেট লিখিয়ে এনে খেলোয়াড় কোটায় ভর্তি হয়। খেলার সাথে ওদের অনেকেরই দূর দূরান্ত পর্যন্ত সম্পর্ক নেই।
সাথে যোগ করেন সংশ্লিষ্টদের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, রাজনীতি। সুযোগ সুবিধার অভাবতো বাদই দিলাম। আরও বহু সমস্যা থাকে।
যে কারনে মাত্র দুই কোটি মানুষের জনসংখ্যার অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটে হেক্সা চ্যাম্পিয়ন। ওদের দেশে ক্রিকেট ততটা জনপ্রিয়ও না। ক্রিকেট যেখানে ধরমতুল্য সেই শত কোটি জনসংখ্যার ইন্ডিয়া-পাকিস্তান-শ্রীলংকা-বাংলাদেশ চার দেশ মিলিয়েও মোট মাত্র চারবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। কেন? ঐ যে বললাম, ওদের সিস্টেমটাই সুশৃঙ্খল।
এখন আমরা আমাদের দলকে "মায়ের দোয়া দল" বলে ক্রিটিসাইজ করি। এই দলটাই জিতে গেলে আমরা খুশিতে আত্মহারা হয়ে যাই।
কিন্তু একটু গভীরে চিন্তা করলে দেখবো, মায়ের দোয়া দলগুলি সফল হলে আসলে আমাদেরই ক্ষতি।
মানুষ যখন সফল হয়, তখন নিজের ভুলভ্রান্তি, দোষত্রুটি খুঁজতে তেমন সময় নষ্ট করেনা।
কিন্তু যেই মুহূর্তে হারতে শুরু করে, তখনই দেখবেন ভুলভাল যা কিছু আছে সবাই সেগুলিকে চোখের সামনে তুলে ধরে।
"শান্ত ওভাবে ব্যাট ধরে কেন? ওর তো স্টান্সেই সমস্যা, আউটতো হবেই।"
"লিটন এইভাবে মুখস্ত বিদ্যায় আর কতদিন।"
"সৌম্যর কাছে কি হাতুরুর কোন গোপন ভিডিও আছে? নাহলে এত চান্স পায় কিভাবে?"
"পাপন এত বছর ধরে কি ঘোড়ার আণ্ডাটা করছে?"
তখন কথা উঠে কেন আমাদের কোন অবকাঠামো নাই। কেন আমাদের টুর্নামেন্ট, আমাদের পিচ, আমাদের কাঠামো বিশ্বমানের না? যদি আমরা দোয়ার বরকতে চ্যাম্পিয়ন হতাম, তাহলে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড খোঁজ নিত আমরা কি করছি যা ওরা করছে না, এবং অবাক হয়ে দেখতো আমরা মায়ের দোয়ায় চলা পাবলিক! ওরা ভাবতো দুনিয়ায় পরিশ্রম করে আর কি লাভ যদি দোয়ার বরকতেই সব হয়? গোটা দুনিয়াই তখন বরবাদ হয়ে যেত।
হাদিস বলে "আগে উটের দড়ি বাঁধো, তারপরে নামাজে দাঁড়াও।"
কুরআনেও আমরা নির্দেশ পাই, আল্লাহ নির্দেশ দিচ্ছেন এইটা করো, ঐটা করো ইত্যাদি।
অথচ আমরাই ভুলে যাই, কেবল দোয়ার ভরসায় বসে থাকাটা কোন কাজের কথা না।
অগোছালো কোন দলের কেবল দোয়ার জোরে সফল হওয়াটাও ন্যায়বিচার না।
দেখেন ইন্ডিয়াকে, ওরা নিজেদের সিস্টেমকে কিভাবে গুছিয়ে দাঁড় করিয়েছে। যেকারনে ওদের পাইপলাইনে খেলোয়াড়ের অভাব নেই। টেন্ডুলকারের রিপ্লেসমেন্ট যারা কোহলি/রোহিতদের দিয়ে করিয়ে ফেলতে পারে, এবং ওদের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে গিল, ইয়াশাসভিরা, এটা কি কেবল মায়ের দোয়ার ফল, নাকি ওদের সিস্টেমই ওদের আইডেন্টিফাই করেছে?
©somewhere in net ltd.