নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

কালকে আমরা জিতলে সেটা আফগানদের প্রতি জুলুম হতো।

২৫ শে জুন, ২০২৪ রাত ৯:৪৮

সেমিফাইনালে যেতে ১২.১ ওভারে ম্যাচ জিততে হতো।
আমাদের ছোটভাইরা আশায় ছিল বাংলাদেশ জিতবে। আহারে! বাচ্চা মানুষদের মন খারাপ হবে জেনে আগেভাগে কিছু বলি নাই। ওরা আমাদের দলটাকে চেনেই না, তাই এই প্রত্যাশা ছিল। সেই আকরাম বুল্বুল নান্নুদের সময় থেকে বাংলাদেশকে চিনি। কেনিয়া ছিল আমাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী, জিম্বাবুয়ের কাছে পাত্তাই পেতাম না। পাপুয়া নিউগিনিকে হারাতেই আমাদের "পাপুয়া" ছুটে যেত। আমি তখনকার বাংলাদেশ ক্রিকেটদলের দর্শক।
আমাদের একাউন্টিংয়ে "ট্রেন্ড" এনালাইসিস একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেকোন ব্যবসা চলে এই এনালাইসিসের ভিত্তিতেই। সহজ ভাষায় একটা নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিটা একাউন্টে আমাদের কোম্পানির পারফরম্যান্স কেমন ছিল সেটাই এনালাইজ করা। তা বাংলাদেশের ট্রেন্ড এনালাইজ করলেই বুঝতে পারতেন ঘটনা কি ঘটতে চলেছে, তাই আমি আশাও করিনাই বাংলাদেশ ১২ ওভারে জিতে নিবে। তবে প্রত্যাশা ছিল ম্যাচটা অন্তত জিতবে। সেটাও হয়নি। এবং অবাকও হয়নি।
আমাদের ছোটভাইদের ধারণা আমাদের দলে বাটলার, সল্ট, লিভিংস্টোন পর্যায়ের ব্যাটার আছে, যাদের ক্ষমতা আছে ৩ ওভারে খেলা শেষ করে দেয়ার। ১২ ওভারে আফগানদের সাথে জেতা কোন ব্যাপার?
নারে ভাই, আমাদের লিটন, সৌম্য, শান্তদের দৌড় ওদের আদিল রশিদ, প্যাট কামিন্সদের চাইতেও কম। নিজের দলের শক্তি, সামর্থ্য ইত্যাদি বুঝতে হবে, তারপরেই না প্রত্যাশা। আমার পকেটে নাই দশ টাকা, আমি মিলিওন ডলারের বাড়ি ক্যাশে কেনার স্বপ্ন দেখবো কোন লজিকে?

শান্ত ইন্টারভিউতে বলেছে প্রথম তিন উইকেট পড়ে যাওয়ার পরেই দল ডিফেন্সিভ মাইন্ড সেটে চলে যায়, এবং তখন সেমিফাইনাল বাদ দিয়ে জেতার জন্য খেলতে থাকে।
যদিও মাহমুদুল্লাহ আসার আগে পর্যন্ত সেটা বুঝা যায়নি। মাহমুদুল্লাহ চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে দলের প্রত্যাশা ও প্ল্যান কি।
এখানে লোকে মাহমুদুল্লাহকে গালাগালি করছে, কিন্তু আমি শুধুই ওকে দোষ দিব না। ওরা হচ্ছে ফুটসোলজার বা মাঠকর্মী। আসল সিদ্ধান্ত আসে ওপর মহল থেকে। ওরা প্লেয়ারদের ভূমিকার ব্যাপারে বলে দেয়, প্লেয়ারদের দায়িত্ব চোখ বন্ধ করে সেটা ফলো করা।
সহজ উদাহরণ দেই।
গেল ওয়ানডে বিশ্বকাপে রোহিত শর্মাকে পিঞ্চহিটার হিসেবে নামানো হয়েছিল, আর কোহলিকে এঙ্কর। রোহিত একটা ফ্লাইং স্টার্ট এনে দিবে, আর কোহলির দায়িত্ব হবে পুরো ৫০ ওভার খেলা। বাকিদের রোল ছিল কোহলিকে সাপোর্ট দেয়া এবং রানের গতি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
যদিও রোহিতের ট্যালেন্ট কোন অংশেই কোহলির চাইতে কম না, বরং ক্ষেত্র বিশেষে বেশি বলা যায়। রোহিতই একমাত্র ব্যাটার যে ওয়ানডেতে তিনটা ডবল সেঞ্চুরি করেছে। ওর ন্যাচারাল খেলার স্টাইলই হচ্ছে শুরুতে সময় নিবে, তারপরে থিতু হয়ে চালিয়ে খেলবে।
দলের প্রয়োজনে সে নিজের খেলার ধরণই পাল্টে ফেলে। অহেতুক ঝুঁকি নিতে গিয়ে আউটও হয়েছে, কিন্তু থেমে থাকেনি। ওর নিজেকে প্রমান করার কিছু নেই। তাই এখন আর সেঞ্চুরি, হাফ সেঞ্চুরি ইত্যাদির পেছনে ছুটে না। যতক্ষন মাঠে থাকে, চালিয়ে খেলে।
আর এই বিশ্বকাপে কোহলিকে ওপেনিংয়ে নামিয়ে দিয়েছে। এঙ্করিং না, সে নেমেছে পিঞ্চহিটার হিসেবে। কিছুই করতে পারছে না, তবু ব্যাট চালাচ্ছে, কারন দল ওকে সেটাই বলেছে।
যদিও বাংলাদেশ আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল কোহলিকে ফর্মে ফিরিয়ে আনতে, তানজিম সাকিবটাই বাগড়া বসালো! ওভাবে স্যার ভিরাট কোহলিকে কেউ বোল্ড করে?
তো আমাদের ম্যানেজমেন্ট যদি বলে "১২.১ ওভারে জেতার চেষ্টা করতে হবেনা, শুধু জয়টা নিশ্চিত করো" তাহলে প্লেয়াররা সেভাবেই খেলবে। সেটার উল্টোটা করতে গিয়ে যদি আউট হয়, তবে এই বোর্ড, এই ম্যানেজমেন্ট, এই সিলেকশন কমিটি ওর ক্যারিয়ারের বারোটা বাজাবে। বাঙালি দর্শক ফেসবুকে গালাগালি করা ছাড়া কিছুই করতে পারবে না। এর আগেও আমরা দেখেছি বহু যোগ্য প্লেয়ার দলে সুযোগ পায়নি, আবার অযোগ্যরা দলের সাথে ঝুলে ছিল ও আছে বহুবছর। পাপন বাপের সম্পত্তির মতন চেয়ার আঁকড়ে বসে আছে। আমাদের হাউকাউয়ে কারোর কিচ্ছু যায় আসেনা। এইটা ফ্যাক্ট।

এখন লোকে বলতেই পারে কেন বাংলাদেশের বাইরে আমি দল হিসেবে ইংল্যান্ডকে পছন্দ করি। কেন ইন্ডিয়া-পাকিস্তান না?
প্রথমত, ইংল্যান্ডের ইনটেনশনটাই আমার ভাল লাগে। ওরা নামেই প্রতিপক্ষকে গুড়িয়ে দেয়ার মানসিকতায়। ওদের সামনে এই টার্গেট দিলে ওরা চেষ্টা করতো ১০ ওভারেই খেলা শেষ করার। ওদেরকে আপনি আঘাত করতে একটা উইকেট ফেলবেন, ওরা তখন আপনার দিকে দ্বিগুন বেগে তেড়ে আসবে। মরগ্যান যেভাবে দলটাকে পাল্টে দিয়েছিল, সেটাই বাটলার ধরে রেখেছে। এখনতো ওদের "বাজবল" টেস্ট ক্রিকেটও ভাল লাগে। গেল এশেজটা ছিল স্মরণকালের অন্যতম সেরা কোন টেস্ট সিরিজ।
ওদের দলটাই এমন, মন মানসিকতাই জয়ের বিকল্প কিছু মানতে নারাজ।
আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, ওদের বোর্ডও আমাদের মতন দুর্নীতিগ্রস্থ, স্বজনপ্রীতি আর রাজনীতিতে ভরপুর কোন দল নয়। ওদের একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে, সেই লক্ষ্য অর্জনে যে যার কাজের ব্যাপারে সচেতন, একটা দল হিসেবেই ওরা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে চায়। যখন যে প্লেয়ার নিজেকে দলে ফিট মনে করবে না, সে নিজে থেকেই সরে যাবে।
ওদের দলের মধ্যে খাচ্চর পর্যায়ের রাজনীতি, প্রেস কনফারেন্স ডাকাডাকি, বেহুদা কান্নাকাটি, আবেগী প্রলাপ, এমপি হওয়ার লালসা ইত্যাদি দেখতে পারবেন না। ওদের ফোকাস ক্রিকেটে, সেটাই ওরা করে।
অস্ট্রেলিয়াও তাই। এই টুর্নামেন্টে ব্যর্থ হয়েছে মানে এই না যে ওরা ধ্বংস হয়ে গেছে। আগামী টুর্নামেন্টেই ওরা চ্যাম্পিয়ন হয়ে ফিরে আসবে। ওদের রক্তই এমন। ইনফ্যাক্ট ওরা সেমিতে উঠলে দেখতেন কেয়ামত নামায় ফেলতো। নকআউট স্টেজে অস্ট্রেলিয়াকে বধ করতে বিশ্বএকাদশও যথেষ্ট না।
আমাদের মতন "আমাদের লক্ষ্য পরের বিশ্বকাপ" টাইপ ফাঁকিবাজিতে ওদের বিশ্বাস নেই। ওদের হচ্ছে "আজ নগদ, কাল বাকি।"

টুর্নামেন্ট শুরুতে আমার পার্সোনাল প্রেডিকশন ছিল ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং ইন্ডিয়া সেমিফাইনাল খেলবে।
ইংল্যান্ড এবং ইন্ডিয়া গোছানো দল হিসেবে খেলে জিতেই সেমিফাইনালে পৌঁছেছে। ওদের দলগুলো যথেষ্ট ব্যালেন্সড, যথেষ্ট ভাল ক্রিকেটও খেলে। অবাক হওয়ার কিছু নেই।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং অস্ট্রেলিয়া বাদ পড়ে গেল। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নিয়ে আশায় ছিলাম ড্যারেন স্যামির জন্য। এই লোকটা জিনিয়াস। দুইটা বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক। নানা কারনে বিভক্ত ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের এক ঝাঁক খামখেয়ালিপনায় মত্ত একঝাঁক ক্রিকেটারকে কিভাবে যেন সে একটি দলে পাল্টে ফেলতে পারে। এইবার নিজ মাটিতে ওরা খেলছিলও ভাল। কিন্তু ভাগ্যটাই ওদের পক্ষে ছিল না, এই যা।

অন্যদিকে সাউথ আফ্রিকা কুতায় কাতায় হলেও প্রতিটা ম্যাচে জিতে পৌঁছে গেছে। চোকারদের থেকে যা অবিশ্বাস্য! ওরাতো নেপাল/বাংলাদেশের হাতেই মরতে গিয়েছিল, অথচ সব ম্যাচের ফল ওদের পক্ষে গেছে। কে জানে, ওরা যদি আসলেই চোকপ্রুফ হয়ে যায় তবে হান্সি ক্রনিয়ে যে অবিশ্বাস্য দল নিয়েও বিশ্বকাপ ট্রফি জিততে পারেনি, মার্করাম, ডি কক, রাবাদারা সেটাই করে দেখাবে কিনা!

আমার কথা হচ্ছে, সফলতা তাঁদেরই পাওয়া উচিত যাদের সেটা প্রাপ্য। "মায়ের দোয়া" টাইপ দলগুলো যদি সফলতা পেয়ে যায়, তবে দুর্নীতিবাজ, ফাঁকিবাজ বোর্ডকর্তারা লাই পেয়ে যাবে। সেটা বরং অন্যায় হবে। সৌভাগ্য ওদেরই ধরা দিক যারা পরিশ্রমী।
বাংলাদেশ যদি বোর্ডে পরিবর্তন না আনে, নড়ে চড়ে না বসে, "মায়ের দোয়া" দল থেকে যায়, তাহলে ওদের ইচ্ছা। টুর্নামেন্ট খেলার বাহানায় আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ ভ্রমন হচ্ছে, শপিং হচ্ছে, মন্দ কি?
মাত্র একটা রান নিতে অস্বীকৃতি জানানোয় ক্ষোভে ব্যাট ছুঁড়ে মারে রশিদ খান। হেরে গেলে সেমিফাইনালের স্বপ্ন অধরা রয়ে যাবে, সেই টেনশনে ছল ছল চোখে মাঠের দিকে তাকিয়ে থাকা রহমানুল্লাহ গুরবাজের চেহারাগুলো কালকে দেখেছেন? বা গুলবেদীন নাঈমের অতি অভিনয়, যা দেখে রশিদ নিজেও বিরক্ত ছিল? একটি করে বাংলাদেশী উইকেট পড়ে আর ওদের ড্রেসিংরুমে পোলাপান মোনাজাত করে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে। বা ক্রুশাল মোমেন্টে একটি বাউন্ডারি হয়ে যাওয়ায় জনাথন ট্রাউট লাথি দিয়ে নিজের চেয়ার ফেলে দিয়ে ভিতরঘরে চলে যায়।
সবই বুঝায় দেয় যে ওদের ইনটেনশন কি ছিল।
আর অতি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ডাব্বা মেরে আমাদের এমপি সাব ঠ্যাংয়ের উপর ঠ্যাং তুলে চিল করছিলেন, হাতুরু এবং স্টাফ রিল্যাক্সড মুডে খেলা দেখছিলেন, কি যায় আসে?
কালকে আমরা জিতলে সেটা আফগানদের প্রতি জুলুম হতো।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.