নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
শকুন্তলা নাট্যাচার্য সেলিম আল দিনের ধ্রুপদী ধারার রচনাগুলির একটি।
ঢাকা থিয়েটারের রত্নভাণ্ডারে গুছিয়ে রাখা এক অমূল্য রতন। এই এক চিত্রনাট্যই আমাদের দেশের অভিনয় জগতের বহু অভিনয় শ্রমিককে কিংবদন্তিতুল্য শিল্পী বানিয়েছে।
এই নাটক যখন ডালাসে মঞ্চস্থ করার পরিকল্পনা হচ্ছিল, আমাদের অনেকেরই মনে কিছুটা হলেও শংকা ছিল, এই নাটককে সফল করার ক্ষমতা কি আমাদের স্থানীয় শিল্পীদের আছে? বা আমাদের দর্শককেরই বা এমন কঠিন নাটক বুঝার ক্ষমতা আছে?
আমাদের পরিচালক শহীদুজ্জামান সেলিম ভাই দৃঢ় কণ্ঠে বললেন, "আপনাদের কাজ আমার নির্দেশনামতন অভিনয় করা আর আমার কাজ দর্শকদের একটি সুপ্রিম থিয়েট্রিকাল এক্সপিরিয়েন্স দেয়া।"
আমি সবসময়ে একটি কথা মেনে চলি, "director is the captain of ship." যেহেতু কোন ক্যাপ্টেনই নিজের জাহাজকে ডুবাতে চান না তাই ক্যাপ্টেনের নির্দেশনা মেনে চলাটাই প্রতিটা শিল্পীর দায়িত্ব। আমি আমার ক্যাপ্টেনের কথায় নোঙ্গর তুললাম।
দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলল পরিশ্রম। বহু ভাঙ্গা গড়ার মধ্য দিয়ে এগিয়েছে আমাদের কাহিনী।
পেছনে ফিরে যখন তাকাই, অবাক হই, কোথা থেকে আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল, আর আজকে কোথায় চলে এসেছি! প্রতিদিন মনে হয় আরও কতদূর যাওয়ার ক্ষমতা আমাদের আছে! সেলিম ভাই আমাদের হাটতে শিখিয়ে দিয়েছেন, এখন আমরা দৌড়াচ্ছি। দৌড়ের গতি কখনও বাড়ছে, কখনও কমছে, কিন্তু দর্শক প্রতিবার দাঁড়িয়ে তালি বাজাচ্ছে।
গেল সপ্তাহের অস্টিন শো পরে গতরাতে সান আন্টোনিও শহরও তাঁদের ভালবাসা জানালো।
সান আন্তোনিও বড় শহর হলেও সেখানে বাঙালি কমিউনিটি অনেক ছোট। হাজারটা বাঙালিও হবেন কিনা সন্দেহ। ওদের কাছে আমরা নিয়ে গেলাম শকুন্তলার মতন মহাকাব্যিক প্রোডাকশন। দুর্ভিক্ষ পীড়িত এক জনগোষ্ঠীর কাছে হঠাৎ করেই কেউ যদি রাজসিক ভোজ নিয়ে হাজির হয়, তাঁদের অবস্থা হয়েছিল ঠিক সেরকম। আতিথেয়তার কোন কমতি রাখেননি। আমরা ঠিক মতন খাচ্ছি কিনা, আমাদের কোন অসুবিধা হচ্ছেনা, আমাদের কিছু লাগবে কিনা ইত্যাদি সব বিষয়েই ওদের নজর ছিল।
মঞ্চনাটক আয়োজনে তাঁদের অভিজ্ঞতা নেই, যে মঞ্চ আমাদের দিয়েছিলেন, সেটাকে আমরা আমাদের মতন গড়ে নিলাম। যা যা সহায়তা চেয়েছিলাম সব পেলাম। আমাদের সাথে তাঁরা প্রত্যেকে হাত বাড়ালেন। ছোট ছোট শিশুদের নিয়ে এসেছিলেন, ওরা বিস্মিত চোখে দেখছিল কিভাবে ওদের পরিচিত সাধারণ মঞ্চ হাজার হাজার বছর আগের পুষ্করবন হয়ে উঠলো। কিভাবে একটু আগেই হেঁটে চলে বেড়ানো মানুষগুলি পৌরাণিক চরিত্রে পাল্টে গেল।
সূত্রধার যখন "দৃশ্যকাব্য শকুন্তলার অভিনয় এখানেই শেষ হলো" ঘোষণা দিলেন, মন্ত্রমুগ্ধ দর্শক দাঁড়িয়ে এমন জোরালো করতালি শুরু করলো যে চোখে পানি আসার জোগাড়। দীর্ঘ পরিশ্রমের পরে নিজের ফসলকে পাকতে দেখে কৃষকের যেই অনুভূতি হয়, কালকে যেন ঠিক সেটাই পেলাম। দর্শকের একটাই প্রশ্ন, "আবার কবে আপনারা আসবেন?"
আমাদের বেশ কয়েকজনকে কাল নাটক শেষেই গাড়িতে চেপে ডালাসের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হয়েছে। বাড়িতে পৌঁছতে পৌঁছতে তিনটা বেজে গেছে। সকাল ছয়টায় উঠেই অফিসের কাজ শুরু। মাসের শুরু, অনেক কাজ জমে থাকে। শরীর ক্লান্ত, কিন্তু মন খুশিতে ভরপুর। পরপর দুইটা সফল শো নামিয়ে দেয়া গেছে। সামনে রইলো ডালাস! আমাদের লাস্ট ফ্রন্টিয়ার। নিজের আঙিনায়, নিজের লোকেদের সামনে বহু বছর পর ফিরছি। নার্ভাস লাগা ছাড়া আর সব ধরনের অনুভূতিই কাজ করছে।
পরিচিতদের বলছি এসে দেখে যেতে।
এমন প্রোডাকশন আমেরিকার মাটিতে তাঁরা আগে কখনও দেখেননি, এটি নিশ্চিত করে বলতে পারি।
©somewhere in net ltd.