নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
আমার বন্ধু, সবার কাছে "সুপার কপ" হিসেবে পরিচিত মাশরুফ হোসেন এমনিতেও একজন ভাইরাল মানুষ। ইদানিং সে ভিন্ন কারনে আরও বেশি ভাইরাল হয়েছে। পত্রিকায় খবর এসেছে, ওর বাবা সাবেক বন কর্মকর্তা একজন দুর্নীতিবাজ অফিসার। দেশের সম্পদ লুটে তিনি ১১২ কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন।
এই বিষয়েই কিছু কথা বলি।
ও আমার বন্ধু বলেই যে অন্ধ সমর্থন করবো বা অতীতে অনেক বিষয়ে ওর সাথে আমার মতের অমিল হয়েছে বলে যে ওর বিরোধিতা করবো, এমন স্বভাব আমার মধ্যে নেই। আমি বরং এই সিচ্যুয়েশনটা নিয়েই স্পেসিফিক কিছু কথা বলি।
নবীজির (সঃ) জীবনী থেকে আমরা পাই, আমাদের মা আয়েশার (রাঃ) নামে চরম কুৎসা রটনা করেছিল মদিনার মুনাফেকরা। মদিনার প্রতিটা ঘরে ঘরে এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল, মা আয়েশা (রাঃ) অসুস্থ হয়ে অচেতন অবস্থায় শয্যাশায়ী, এদিকে নবীজির (সঃ) বুকের ভিতর তোলপাড় চলছে। ঝড় বইছে তাঁর (সঃ) ব্যক্তিগত জীবনে। তিনি কি করবেন? একদিকে তাঁর স্ত্রী, অন্যদিকে তিনি রাসূলাল্লাহ! কেয়ামত পর্যন্ত আগত প্রতিটা মুসলিম তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকবে। এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিবে।
জাহেলি আরবের সামাজিক নিয়মে তিনি কোন তথ্য প্রমান ছাড়াই স্ত্রীর পক্ষ নিয়ে কথা বলতে পারতেন, এতে তাঁর স্ত্রীর মন রক্ষা হতো, শ্বশুরবাড়ি খুশি থাকতো, তাঁর বিরুদ্ধে একটা শব্দ তোলারও কেউ থাকতো না। কিন্তু সেটা কি "ন্যায়" হতো? "যদি" আসলেই আয়েশা (রাঃ) দোষী হয়ে থাকেন, তাহলে? রাসূলাল্লাহ (সঃ) কিভাবে অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতে পারেন?
এমনটা করলে প্রতিটা মুসলিম অন্ধভাবে নিজের আপনজনের পক্ষে কথা বলতো। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ যে বলেছেন "ন্যায় সাক্ষ্য দিতে প্রয়োজনে নিজের, নিজের পিতা মাতা ও নিকটাত্মীয়ের বিরুদ্ধে হলেও যাও" - এই আয়াতটি লোকে ভুলে যেত।
অন্যদিকে তিনি যদি গুজবের ভিত্তিতে স্ত্রীর প্রতি কোন অন্যায় করে থাকেন, তাহলেতো সেটি হবে সরাসরি জুলুম। মানুষ তাঁর কোন ক্ষতিই করতে পারবে না, কিন্তু তাঁর প্রভু, তাঁর মালিক আল্লাহ, যার ভয়ে তিনি প্রতিটা মুহূর্তে ভীত, তিনি কি তাঁকে ছেড়ে দিবেন?
দীর্ঘ একটি মাস কেটে গেল। মুনাফেকদের লাগানো গুজবের আগুন দাবানল হয়ে ছড়িয়ে গেছে গোটা আরব সমাজে। মদিনার সুলতানের সামনে কেউ আওয়াজ তুলছে না, কিন্তু সবার মনেই ঝড় বইছে।
মায়ের (রাঃ) কাছে যখন এই গুজবের সংবাদ পৌছালো, তিনি মূর্ছিত হলেন। তিনি সম্ভিত পাথর হয়ে গেলেন যখন শুনলেন তাঁর স্বামী, আল্লাহর রাসূল স্বয়ং বলছেন "যদি তুমি নিরপরাধী হয়ে থাকো, তাহলে কোনই চিন্তা নেই। আর যদি অপরাধী হয়ে থাকো - তবে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নাও। নিশ্চই তিনি ক্ষমা করবেন।"
"যদি" মানে কি? তাঁর স্বামী "যদি" শব্দটা কেন ব্যবহার করলেন? তার মানে কি তাঁর মনেও সন্দেহ আছে?
অবিশ্বাস ভরা দৃষ্টিতে তিনি তাঁর পিতা আবু বকরের (রাঃ) দিকে তাকালেন। অসহায় পিতা কন্যার চোখে চোখ রাখতে পারলেন না। একদিকে রাসূলাল্লাহ (সঃ), অন্যদিকে তাঁর ঔরষজাত কন্যা, পরমকরুনাময় এ কেমন কঠিন পরীক্ষায় তাঁকে ফেলে দিলেন?
চোখ বন্ধ করে তিনি আল্লাহর সাহায্য চাইলেন।
আয়েশা (রাঃ) নিজের মায়ের দিকে তাকালেন। মাও তাঁকে সান্তনা দিতে অক্ষম।
অসহায়, অভিমানী, কিশোরী আয়েশা (রাঃ) বুকফাটা কষ্ট চেপে তাঁর কাছে ফিরলেন যিনি পাশে দাঁড়ালে স্বর্গ মর্ত্যের আর কারোর কাছে থাকার প্রয়োজন নেই।
"আমি ইউসুফের (আঃ) পিতার মতন নিজের রবের মুখাপেক্ষী হলাম। তাঁর উপর আমার আস্থা আছে, তিনিই আমাকে সাহায্য করবেন।"
সেদিনের সেই কিশোরী জানতেন তাঁর রব তাঁকে সাহায্য করবেন, কিন্তু তাঁর নামে যে কুরআনের আয়াত নাজেল হবে, যা কেয়ামত দিবস পর্যন্ত প্রতিটা মুসলিম পাঠ করবে - এ তিনি ঘুনাক্ষরেও অনুমান করেন নি।
সূরা নূরের ১১-১৮ আয়াতগুলো হযরত আয়েশার জন্য নাজেল হলেও কেয়ামত পর্যন্ত আগত প্রতিটা মানুষের মনে হাতির বল দেয় যে তাঁরা যদি নির্দোষ হয়ে থাকে, তবে রাব্বুল আলামিন অবশ্যই তাঁর বান্দাদের সাহায্য করেন।
কেউ কেউ বলতে পারেন, কোথায় হজরত আয়েশা (রাঃ), কোথায় মাশরুফের পিতা। ওদের জ্ঞাতার্থে, আল্লাহ নবী রাসূল ও তাঁদের আশেপাশের লোকজনদের এই কারণেই পাঠিয়েছিলেন যাতে আমরা তাঁদের জীবনেরই নানান ঘটনা থেকে শিক্ষা নিতে পারি। এখানে হজরত আয়েশাও (রাঃ) গুরুত্বপূর্ণ না, বরং তাঁর সাথে ঘটা ঘটনাটাই প্রধান চরিত্র। তাঁর সাথে না ঘটে অন্য সাধারণ কারোর সাথে ঘটলেও এর শিক্ষার এদিক সেদিক হতো না।
তা আল্লাহই বলেছেন এমন পরিস্থিতিতে আমাদের কি করণীয়।
"তোমরা যখন একথা শুনলে, তখন ঈমানদার পুরুষ ও নারীগণ কেন নিজেদের লোক সম্পর্কে উত্তম ধারণা করনি এবং বলনি যে, এটা তো নির্জলা অপবাদ?"
মানে হচ্ছে, যখনই কারোর নামে কোন গুজব/অভিযোগ/রটনা আমাদের কানে আসবে, আমাদের প্রথম দায়িত্ব হবে সেটাকে "নির্জলা অপবাদ" হিসেবে ধরে নিয়ে সেই গুজবের আগুনে পানি ঢেলে দেয়া। সত্যের আত্মপ্রকাশ পর্যন্ত অপেক্ষা করা।
আমি আংকেলকে ব্যক্তিগতভাবে চিনিনা। কাজেই তিনি দোষী নাকি নির্দোষ, তা নিয়ে কোন কথা বলে আমি আমার আল্লাহর কাছে অপরাধী হতে আগ্রহী নাই। এমনিতেও আমার ব্যাগে পাপের কোন কমতি নেই। শুধু শুধু এত বড় বোঝা বাড়াবার আগ্রহ নেই।
আমার জন্য এইটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে যে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ তদন্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা, যেমনটা আমাদের নবীজি (সঃ) করেছেন।
এখানে একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ, পরিচিত সাংবাদিকরা বলছেন, মেইনস্ট্রিম সংবাদে (কোন ভুয়া অনলাইন পোর্টাল বা কারোর ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ না) যখন এমন গুরুতর রিপোর্ট আসে, এর মানে ওদের হাতে অবশ্যই জোরালো কোন তথ্য প্রমান থাকেই। নাহলে সাংবাদিকের নিজের চাকরি, সম্পাদকের চাকরি, পত্রিকার লাইসেন্স ইত্যাদি সবই ঝুঁকিতে থাকে। বিষয়টা আইন আদালত পর্যন্ত গড়ালে, সেসব তথ্য প্রমান পেশ করা হয়।
এখন যদি আংকেল দোষী প্রমাণিত হন?
তবে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাঁর শাস্তি হবে, এখানে আমার কি করণীয় আছে?
মোট কথা, বিষয়টাকে নিয়ে আমাদের এত ঘাঁটাঘাঁটির কিছু নাই। ওটা ওর পারিবারিক আর সরকারের বিষয়। ব্যক্তিগতভাবে ও আমার যেমন বন্ধু ছিল, তেমনই থাকবে। ওর আব্বুর পরিচয়েতো ওর সাথে মেলামেশা করি নাই। ও যদি দুর্নীতি করে ধরা খায়, তখনও আমি দোয়া করবো ও যেন সঠিক পথে ফেরত আসে। সেজন্য আমার পক্ষে যা যা করণীয়, আমি তাই করবো। প্রতিটা মানুষ কবরে যাওয়ার আগে পর্যন্ত আমি তাঁদের সঠিক লাইনে ফেরার জন্য দোয়া করি। আমারতো এর বেশি কিছু করার নেই।
যেটা খুবই বিরক্তিকর লাগছে, তা হচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় এই মিডিয়া ট্রায়াল। একদল লোক দাবি করছে উনি দুর্নীতি করতেই পারেন না। কারন তিনি মাশরুফ হোসেনের বাবা। অথচ হজরত ইব্রাহিমের (আঃ) পিতাই ছিল তখনকার যুগের সবচেয়ে বড় কাফের। নূহ (আঃ) নবীর ছেলেও ছিল ওর যুগের সবচেয়ে বড় কাফেরদের একজন। আমার নিজের পরিবারেই সুফী সাধু লোক যেমন আছেন, আবার ইবলিসের খাস লোকও আছেন। এইটাই আমাদের মানব বৈশিষ্ট্য। একজনের কারনে আরেকজনকে নিয়ে এই টানা হ্যাচড়া কি ধরনের নোংরামি? ওদের পক্ষে হাস্যকর সব যুক্তিও দিচ্ছে কেউ কেউ। এতে ওদের ইমেজের ক্ষতি ছাড়া লাভের লাভ কিছুই হচ্ছে না, আশা করি ওরা এইটা ওরা দ্রুত বুঝতে পারবে।
আরেক দিকে যে ওকে চিনে না, যে ওকে এমনিতেই হিংসা করে, যে ওর উপর নানা কারনে বিরক্ত, সেতো ঝাঁপিয়ে পড়েছেই - এমনকি অতীতে ওর সাহায্য যারা পেয়েছিল, ওরাও ঝাঁপিয়ে পড়ছে। সেখানেও হাস্যকর সব যুক্তি পরিবেশনা। ও লুইচ্চা নাকি লাফাঙ্গা, ও মুসলিম নাকি নাস্তিক - এর সাথে ওর আব্বার দুর্নীতির কি সম্পর্ক থাকতে পারে?
কথাতো হচ্ছে ওর আব্বু আসলেই দুর্নীতি করেছেন কিনা সেটা নিয়ে, তাই নয় কি? তাহলে ওর ব্যক্তিগত চরিত্র, অতীতে বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়া ইত্যাদি টানাটানির মানে কি?
হ্যা, আংকেল যদি অন্যায় করে থাকেন এবং মাশরুফ যদি পিতার অন্যায়কে জাস্টিফাই করতে আগডুম বাগডুম বলে থাকে, তাহলে ওকে ট্রল করা জায়েজ হবে। তার আগে কেন? ওর নিজের ব্যক্তিগত জীবন আছে, বৌ আছে, সংসার আছে।
সবশেষে শুধু এইটা বলি, সে আইনের লোক। আইন অনুযায়ীই এর সমাধান হবে এইটাই আশা করি।
বন্ধু হিসেবে কুরানের সূরা আল ইনশিরাহর আয়াত (৫-৬) উল্লেখ করবো, "কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে। নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে।"
তদন্ত রিপোর্ট আসা পর্যন্ত আশা করি সবাই ধৈর্য্য ধরার চেষ্টায় থাকবেন।
২| ১১ ই জুলাই, ২০২৪ সকাল ১১:১৭
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
"সুপার কপ" মাশরুফ হোসেন অনেক বই পড়তেন। উনার প্রিয় বইয়ের তালিকায় ছিল ভগবৎ গীতা। তিনি মাঝে মাঝেই পড়তেন। কি লাভ হয়েছে জানি না।
শুভজিৎ ভৌমিকের লেখা পড়েছিলাম। সুশান্ত পাল আর মাশরুফ হোসেন কে নিয়ে লেখা ছিল। কোন এক ঘটনায় নাকি মাশরুফ হোসেন এর বান্দরবনে পোষ্টিঙ হয়েছে , লাইব্রেরিয়ান হিসেবে। তাকে নাকি পুলিশিং করতে দেয়া হয়না।
আপনি তাকে নিয়ে পোস্ট না দিলে মাথা ঘামাতাম না।
৩| ১১ ই জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭
করুণাধারা বলেছেন: ভালো লিখেছেন।
৪| ১২ ই জুলাই, ২০২৪ সকাল ১১:০৫
নতুন বলেছেন: পিতার অপরাধে যেহেতু পুত্রের সাজা হয় না, তাই পিতা খারাপ হলেই যে পুত্র ভালো হতে পারেনা সেটা ঠিক না।
যদি পুত্র পিতার অপরাধের পক্ষে সাফাই না গায় এবং নিজে ভালো জীবন জাপন করে তবে আমি সেই পুত্রকে ভালোই বলবো।
©somewhere in net ltd.
১| ১১ ই জুলাই, ২০২৪ সকাল ৯:১৮
আহলান বলেছেন: যেভাবে নবী আম্বিয়াদেরকে টেনে নিয়ে উদাহরণ দিয়ে বর্তমানে অভিযুক্ত দূর্ণীতিবাজদের ঘটনার ব্যাখ্যা দিলেন তাতে মনে হলো তাঁদের সাথে সাধারণ মানুষের কোন পার্থক্য নাই ...