নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
শেখ হাসিনা পদত্যাগের কয়েক দিন আগেই পোস্ট করেছিলাম যে ৭১এ যুদ্ধের একদম শেষ সময়ে রাজাকারদের পাছায় লাথি দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল হানাদার পাক বাহিনী। অথচ এই রাজাকারদের সাহায্য নিয়েই পুরো নয়টা মাস ওরা দেশজুড়ে খুনের হোলি খেলা খেলেছিল।
তেমনই, জালিম সরকারের নির্লজ্জ্ব গণহত্যার সময়েও যারা অন্ধভাবে সরকারের সমর্থন করে যাচ্ছিল, যারা মানুষ খুনের ঘটনার চেয়েও হাইলাইট করছিল ভাংচুরের ঘটনাকে, লীগের ছেলেদের হাতে বন্দুক, শটগান, রাইফেল দেখেও যারা হাউকাউ করছিল কেন "মেধাবীদের হাতে দেশি অস্ত্র/লাঠি" - ওদেরকেও এইসব নেতারা ফেলে পালাবে।
আমার কথা পাত্তা দেয়নি।
উল্টো হুমকি দিয়েছে "স্ক্রিন শট নিয়ে রাখলাম, তোদের ডিম থেরাপি দেয়া হবে। তৈরী হ।"
চার বছরের শিশুও যখন নিজ বাড়ির ছাদে মারা পড়ছে, সন্তান হারিয়ে হাহাকার করছে মায়েরা, রিক্সাওয়ালা পিতা গুলিবিদ্ধ এক আন্দোলনকারীকে হাসপাতালে নেয়ার জন্য নিজের রিক্সায় তুলে দেখেন ছেলেটা আসলে তাঁর, বাড়িতে সুস্থ রেখে কাজে বেরিয়েছিলেন - তখনও এদের উল্লাস করতে দেখেছি, "দশ মিনিটে রাজপথ সাফ করা হবে। রাজাকারের বাচ্চাদের উচিত শিক্ষা দেয়া হচ্ছে।"
বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশিরা যখন প্রোফাইল পিকচার লাল করে গণহত্যার প্রতিবাদ জানাচ্ছে, অংশ নিচ্ছে সংস্কৃতি অঙ্গনের শিল্পীরাও, তখন এরাই প্রোফাইল পিকচার দিচ্ছিল "শেখ হাসিনার পাশে আছি।"
এখন যখন ওরা দেখলো ওদের প্রানপ্রিয় নেত্রী ওদের পাশে নাই, ওদের পরোয়া না করে, বিক্ষুব্ধ দেশবাসীর হাতে ওদেরকে বিপদে ফেলে নিজের বোনকে নিয়ে উড়াল দিয়েছেন - এখন ওদের কারোর কারোর হুশ ফিরছে।
কেউ কেউ বলছে "যদি আপনি পালিয়েই যাবেন, তাহলে আমাদের কেন বললেন রাজপথে নামতে?"
হাজারের বেশি মানুষ খুন হয়েছে। অফিশিয়াল কাউন্টই অর্ধ শতাধিক। কারোর কারোর চোখ গেছে চিরদিনের জন্য। পঙ্গুত্ব নিতে হবে কয়জনকে কে জানে! এসবের কিছুই হতো না যদি নেত্রীর অন্যায় নির্দেশ মান্য করতে তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী পথে না নামতো।
পুলিশের উপর মানুষ তীব্র আক্রোশে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। খুন হচ্ছে, লুট হচ্ছে। প্রথমে বুঝিনি এত ক্ষোভ কেন। পরে বিভিন্ন ভিডিও ক্লিপ দেখলাম। নিরস্ত্র আবু সাঈদকে খুন। রামপুরা বনশ্রীতে ঠান্ডা মাথায় আটকে পড়া যুবককে খুন। রবিবার যাত্রাবাড়ীতে কীটপতঙ্গের মতন হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে পুলিশ। অবিশ্বাস্য! নিজের দেশের মানুষের উপর এমন নির্বিচার হত্যাকান্ড কিভাবে জাস্টিফাই করবেন? মিলিটারিরা পর্যন্ত এতটা পাশবিক হয়নি। স্বজনহারা মানুষের ক্ষোভতো থাকবেই। ওদেরকে কিভাবে সুশীল হতে বলবেন? দ্রুত নতুন সরকার গঠন করে পরিস্থিতি কন্ট্রোলে না নিলে ওদের কিছুতেই থামাতে পারবেন না।
অথচ এই পুলিশ যদি গুন্ডার সহায়ক না হয়ে "পুলিশের" দায়িত্ব পালন করতো, তাহলে এই দিন দেখতে হতো না।
মাশরাফির বাড়িতে হামলা হয়েছে। পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছে সব। অথচ কয়েক সপ্তাহ আগেও মাশরাফি ছিল দেশের সবচেয়ে বড় নায়ক। ভালবেসে যারা ওর গ্রাফিতি এঁকেছিল, ওরাই ঘৃনায় সেই গ্রাফিতিকে "ক্লাউন" বানিয়েছে। কিছুই হতো না যদি মাশরাফি নিজের প্রোফাইল থেকে শুধু বলতো "আমি এই অন্যায়ের তীব্র প্রতিবাদ করছি।"
রাজপথে নামতে হতো না। গুলি খেতে হতো না। শুধু একটি পোস্ট, জনতার মন মন্দিরে ওকে ভগবান বানিয়ে দিত। হয়তো এমপির পদ চলে যেত, হয়তো ছাত্রলীগের গুন্ডারা তাঁর বাড়িতে আক্রমনও করতো, সেগুলোতো এমনিতেও হয়েছে। কিন্তু যদি সে নিজে থেকেই পদত্যাগ করে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতো, আজকে ড ইউনূসের পাশাপাশি লোকে ওকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বে চাইতো। ও না চাইলেও পাবলিক জোর করে ওকে সেখানে বসাতো।
আজকে বললে কেউ বিশ্বাস করবে এই মাশরাফির জন্য একসময়ে মানুষ নিজের পা পর্যন্ত দিয়ে দিতে চেয়েছিল এক ভক্ত? বলেছিল "আমার পা নিয়ে নেন, তবু আপনি খেলেন।" এই মাশরাফি যেন বিশ্বকাপ খেলতে পারে গোটা নড়াইলবাসি সেই দাবিতে পথে নেমে এসেছিল।
ব্যারিস্টার সুমন। কত বড় বড় কথা! কত কাজ জনতার জন্য! তিনিও একেবারেই চুপসে গেলেন। নেত্রীর বিরুদ্ধে একটা কথাও বললেন না। মানুষের চোখে তিনিও ছিলেন অনেক বড় দেশপ্রেমিক। অথচ দেশ যখন তাঁকে চাইলো, তিনি গায়েব!
তৌহিদ আফ্রিদি - শুওরের নাতিটা সুসময়ে "হারুন চাচ্চু" বলে বলে মুখে ফ্যানা তুলে ফেলেছিল - সেও ডুবন্ত নৌকার (এই নৌকা সেই নৌকা না) হাল না ধরে বাতাসের দিক বুঝে পাল তুলার অপেক্ষা করলো। এখন যখন জনতা ওর বাপের টিভি ভেঙে দিয়েছে, তখন আলগা আবেগে ভরপুর কান্নাকাটির লাইভ পোস্ট করে। ফেসবুক, ইউটিউব থেকে বিদায় হবি হ, আলগা কান্নাকাটি করে ঘোষণা দেয়ার দরকার কি? নাকি আশায় আছিস পাবলিক তোকে বলবে "যেও না সাথী, ওঁওঁওঁওঁওঁওঁওঁওঁওঁ যেও না সাথী!"
বরং এই কান্নার ভিডিও দেখে আমারই ইচ্ছা করছে গিয়ে দুইটা চড় দিয়ে আসি। ফাজিলের ফাজিল!
অন্যদিকে সালমান আল মুক্তাদির নামের এক ইউটিউবার নিজের জীবন, ক্যারিয়ার সবকিছু বাজি রেখে পথে নেমেছিল। স্বৈরাচার জিতে গেলে ওর বারোটা বেজে যেত নিশ্চিত, ওর চ্যানেল খেয়ে ফেলতো, মামলায় ফাঁসিয়ে ওর ভবিষ্যৎ শেষ করে দিত, তবু সে পরোয়া করেনি।
এখন সে এর পুরস্কার পাবে। যেমনটা পুরস্কার পাচ্ছে যমুনা টিভিও। মানুষের ভালবাসায় ডুবিয়ে সিক্ত করা হচ্ছে টেলিভিশনটাকে। লোকে ওদের পুরুষ সাংবাদিককে কাছে পেয়ে যেভাবে শূন্যে ভাসিয়ে চুমু খেয়েছে, ওর আপন বৌও নাকি ওকে এত চুমু দেয়নি।
তবে এতকিছুর পরেও দুঃখজনক হচ্ছে অনেক ধান্দাবাজ লোক এর ফায়দা লুটতে শুরু করেছে। ব্যক্তিগত রোষানলের শিকার হচ্ছে অনেক পরিবার। ছাত্রদল, শিবির গত ১৫ বছরের প্রতিশোধ এই কয়দিনে তুলে ফেলছে। সাধারণ টোকাইরা দোকানপাট লুট করছে। "আওয়ামীলীগ করে" - এই ট্যাগিং এখন সবকিছুকে যেন হালাল করে দিচ্ছে। অথচ আওয়ামীলীগ যখন রাজাকার ট্যাগিং দিয়ে আমাদের মারছিল, তখন আমরাই প্রতিবাদ করেছিলাম। এখন আমাদের সময় প্রমান করার যে আমরা আসলেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি, নাকি নিজের স্বার্থের জন্য।
ভাল লাগছে এইটা দেখতে যে প্রচুর মানুষ নিজ উদ্যোগে হিন্দু মন্দির পাহারা দিচ্ছেন।
এখানে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। ছাত্রলীগ, আওয়ামীলীগ বা "আধুনিক মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি" এখন জোর করেই চাইবে প্রমান করতে যে মানুষ যেন উপলব্ধি করে "এরচেয়ে হাসিনা সরকারই ভাল ছিল" বা "এই হচ্ছে স্বাধীনতা?" বলতে। রাজনীতির এইটা বহু পুরানো চাল। এ থেকেও মানুষকে সাবধান হতে হবে।
আরেক যন্ত্রণার নাম এখন বিএনপি। ওরা গর্ত থেকে বেরিয়ে এসে সুযোগের ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে। আশা করি জনতা এইবার অন্তত একই ভুল করবে না। মার্কা নয়, বরং মানুষ হিসেবে ভোট দিবে। যদি দেখি আমার এলাকায় কোন ভাল মানুষ নির্বাচনে দাঁড়ায় নাই, আমি যেন আমার পরিচিতদের নিয়ে আমাদের এলাকার বিশ্বস্ত সৎ আর ভাল মানুষ কাউকে দাঁড় করাই। যে ভুল আমরা ও আমাদের পূর্বপুরুষেরা গত পঞ্চাশ বছর ধরে করে এসেছে, আমরা ও আমাদের ছেলেমেয়েরা যেন একই ভুল আর না করে।
আল্লাহ বিপদ দেন মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য। ইসলামী ভাষায় আমরা একেই ফিতনা বলি। ফিতনার সময়েই মানুষের আসল চেহারা বেরিয়ে আসে। স্বৈরাচারী সরকারের পদলেহন করে ফেসবুকে দেশপ্রেম সেন্টিমেন্ট আর মানবতা বিক্রি করে সেলিব্রেটি বনে যাওয়া ভন্ডদের চেহারা বেরিয়ে আসে এইসব ফেতনার সময়েই। নিঝুম মজুমদার, অমি রহমান পিয়ালরা হয়ে যায় আধুনিক রাজাকার। আর ইন্টারনেট আসক্ত কোন যুবক, যে হয়তো কোন কালেই দেশকে নিয়ে চিন্তা করেনি, ওর জীবন কাটতো ইন্টারনেট, গেমিং, বন্ধুবান্ধবের আড্ডা আর পড়াশোনা নিয়ে - হঠাৎ একদিন পথে নেমে জাতীয় বীর হয়ে যায়।
আমাদের জীবনে ফিতনার প্রয়োজন আছে।
মানুষের আসল রূপ চিনতে আমাদের ফিতনার প্রয়োজন আছে।
এখন যখন চিনেই ফেলেছি, দ্রুত যেন ভুলেও না যাই।
২| ০৮ ই আগস্ট, ২০২৪ রাত ১২:৫৩
মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: দেশ এগিয়ে যাবে এই প্রত্যাশা করি।
৩| ০৮ ই আগস্ট, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬
আরশাদ রহমান বলেছেন: বহু দিন পরে ব্লগে ঢুকলাম। সাম্প্রতিক সবকিছু দেখে মনেহয় আমাদের চরিত্র বদলাই নাই। আমারা মোটামুটি অসভ্য রয়ে গেছি। আমরা একটা অন্যায় আরেকটা অন্যায় দিয়ে বদলাতে চাই। আমরা বুঝতে পারিনা একই সাথে।এক সত্যের পিছনে কুচক্রী দের আরেক সত্য ঘটনা ফলাফল বদলায়।
আমরা বড় নির্বোধ জাতি।।বড় সার্থপর।
৪| ০৮ ই আগস্ট, ২০২৪ সকাল ১০:২৮
জ্যাক স্মিথ বলেছেন: আমি আপনার সাথে একমত, সময় এসেছে এখন এদের ধরে ধরে শক্ত হাতে দমন করার।
৫| ০৮ ই আগস্ট, ২০২৪ সকাল ১১:১৫
ধুলো মেঘ বলেছেন:
সবাই এইভাবে যার যার জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন শুরু করে দিলে কেউ আর ট্যাক্স ফাঁকি দিতে পারবেনা।
©somewhere in net ltd.
১| ০৭ ই আগস্ট, ২০২৪ রাত ১১:৪৪
ঊণকৌটী বলেছেন: আপনি ভালো মানুষ, আপনার মতো মানুষের দরকার আজকের বাংলাদেশে