নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"নিশ্চয়ই তিনি (হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল এবং শেষনবী।\" - সূরা আহযাব : ৪০

NurunNabi

লিখক শিক্ষাবিদ ও গবেষক

NurunNabi › বিস্তারিত পোস্টঃ

কাদিয়ানীদের \'বেহেশতী মাকবেরা\' সম্পর্কে দুনিয়ার অজানা তথ্য

১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৪

কথিত 'বেহেশতী মাকবেরা' নামে কাদিয়ানীদের দুর্নীতির গোমর ফাঁস

‘বেহেশতী মাকবেরা’ বাক্যটি ফার্সী আর আরবী শব্দ-যোগে একটি মিশ্র-বাক্য। অর্থ স্বর্গীয় গোরস্তান। মির্যা গোলাম আহমদের 'মালফুযাত' বইতে লিখা আছে, আল্লাহ তাকে ওহীর মাধ্যমে এক বিশেষ ধরনের কবর সম্পর্কে জানিয়েছেন, যে ব্যক্তি ইহাতে দাফন হবে সে বেহেশতি হয়ে যাবে।’ (মালফুযাত ২/৫২৬-২৭ উর্দূ এডিশন, ইলহাম তাং ১৮-১১-১৯০২ ইং)।

১৯০৫ সালে মির্যা কাদিয়ানী কর্তৃক রচিত 'আল ওসীয়্যাত' (বাংলা ষষ্ঠ প্রকাশ, মে ২০২৩) গ্রন্থে লিখা আছে, “আরও একটি স্থান আমাকে (স্বপ্নে) দেখানো হয়েছে এবং সেই স্থানের নাম রাখা হয়েছে 'বেহেশতী মাকবেরা' এবং প্রকাশ করা হয়েছে যে, উক্ত স্থান জামাতের সেসব মনোনীত ব্যক্তিদের সমাধিক্ষেত্র যারা 'বেহেশতী”। (আল ওসীয়্যাত পৃ-১৯)।

উক্ত গ্রন্থের একই পৃষ্ঠায় মির্যা কাদিয়ানী লিখেছেন “এ জন্য আমি আমার বাগানের কাছে নিজ মালিকানাধীন জমি, যার মূল্য হাজার টাকার কম হবেনা এ কাজের জন্য নির্দিষ্ট করেছি এবং আমি দোয়া করছি খোদা যেন এতে বরকত দান করেন এবং এবং একেই যেন 'বেহেশতী মাকবেরায়' পরিণত করেন।”

এখন কথা হল, কাদিয়ানী অনুসারীদের জন্য ঐ 'বেহেশত' পেতে হলে তাদেরকে অবশ্যই 'মুসী' হতে হবে অর্থাৎ ওসীয়্যত ফরমে স্বাক্ষর করে প্রত্যেক মুসী তার মৃত্যুর আগেই নগদ পেমেন্ট করতে হবে। নইলে ওসীয়্যত কনফার্ম হবেনা। বলে রাখা জরুরি যে, ওসীয়্যত বাবত প্রত্যেক কাদিয়ানীকে সর্বনিম্ন যে অর্থ পেমেন্ট করা বাধ্যতামূলক তা হচ্ছে, মুসীর পরিত্যক্ত সম্পত্তির সর্বনিম্ন ১০% আর ঊর্ধ্বে ৩% সম্পদ/সমপরিমাণ নগদ টাকা। সোজা বাংলায়, এ যেন দুনিয়াতে বসেই বেহেশতের সার্টিফিকেট বেচাকেনা। এই 'বেহেশত' বেচাকেনা চালু করেন মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী। তাও ওহী ইলহামের নামে, যা খুবই জঘন্য কবর ব্যবসার শামিল। তার অন্ধভক্ত সাধারণ কাদিয়ানীদের কী দোষ! তারা তো সরলমনেই মির্যার উক্ত 'ওসীয়্যতের' স্কিম বিশ্বাস করে নেয় এবং চোখবন্ধ করেই টাকা-পয়সা সব বিলিয়ে দিচ্ছে বেহেশত পাওয়ার লোভে! কিন্তু দুর্নীতির জায়গাটা কোথায় এবং কেন তা সাধারণ কাদিয়ানীরা হয়ত মোটেও ধরতে পারেনা। আমি ওদের ওসব কবর ব্যবসা নিয়ে ব্যক্তিগত কোনো মন্তব্য করতে চাই না। আমি শুধুমাত্র এর সাথে সংশ্লিষ্ট তাদের পরবর্তী কাদিয়ানী নেতাদের জঘন্য দুর্নীতি নিয়ে একটু লিখব।

প্রথমে মির্যা কাদিয়ানীর বই “আল ওসীয়্যত” (ভাষান্তর, এ.এইচ.এম আলী আনোয়ার, পুনঃ মুদ্রন জুন ২০১৪ ইং) এর পৃষ্ঠা নং ৩৮ এবং ৩৯ এর আলোকে নিচের সারকথাটি ভালোমত খেয়াল করুন,

মির্যা কাদিয়ানীর সম্পূর্ণ লিখা থেকে পরিষ্কার বুঝা যায় যে, তার প্রবর্তিত 'বেহেশতি মাকবেরা' একাধিক কোনো গোরস্তান নয়, বরং ভারতের পাঞ্জাবের “কাদিয়ান” নামক গ্রামের নির্দিষ্ট ও একমাত্র গোরস্তানটিই উদ্দেশ্য। প্রত্যেক মুসী (ওসীয়্যতকারী)-কে সেই গ্রামেরই নির্দিষ্ট গোরস্তানে কবর দিতে হবে। যেজন্য বাহিরের কোনো দেশের ওসীয়্যতকারী কাদিয়ানীর লাশ যদি কাদিয়ানে পৌঁছানো তৎক্ষনাৎ সম্ভব না হয় তাহলে ঐ লাশটিকে যেন সিন্দুকের মধ্যে রেখেই আপাতত নিজ এলাকায় দাফন করে ফেলে। কিন্তু বর্তমানে কাদিয়ানী নেতারা কবর ব্যবসার সাথে এমনভাবে জড়িয়ে গেছে, ফলে তারা খোদ মির্যার শিক্ষা ও নির্দেশকেও পাত্তা দিচ্ছেনা। এখন এ কথাগুলোই সাধারণ কাদিয়ানীদের বুঝানোর সাধ্য কার? রাষ্ট্রপক্ষ-ও চাইলে এ জঘন্য কবর ব্যবসার সাথে জড়িত প্রতারক দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে পারে! কিন্তু এর জন্য তো কাউকে না কাউকে আইনী প্রক্রিয়ায় বাদী হওয়া জরুরী!

আমি কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের সচেতন মানুষগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, তারা “আল ওসীয়্যত” (বাংলা সংস্করণ জুন ২০১৪ ইং) বইটির পৃষ্ঠা নং ৩৮ এবং ৩৯ ভালোমত পড়ে নিবেন। অত:পর কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রশ্ন করবেন। তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন যে, বইটির ঐ কথাগুলো সঠিক না ভুল? যদি সঠিক হয় তাহলে এদেশের "কাদিয়ানী মুসীদের" লাশ কিজন্য কাদিয়ানে পাঠানো হয়না? এদেশের ভেতরেও নানাস্থানে “বেহেশতি মাকবেরা” নামে যত্রতত্র বেহেশতখানা খুলে রাখা হয়েছে কেন? বেহেশতি মাকবেরা কি একাধিক হতে পারে বলে মির্যা বলে গেছেন? মির্যার কোন ইলহামে একথা বলা হয়েছে যে, প্রত্যেক রাষ্ট্রেই যত ইচ্ছে 'বেহেশতি মাকবেরাহ' এর কোম্পানী খুলে বসা যাবে? এগুলো কি এক দিকে মির্যা কাদিয়ানীর শিক্ষারও পরিপন্থী নয়? তবে একথা সত্যি যে, এধরণের প্রশ্ন করার মত হিম্মত সাধারণ কাদিয়ানীদের নেই। আর তাই তারা অন্তত নিরব প্রতিবাদ হিসেবে ওসীয়্যত থেকে বিরত থাকতে পারে কিংবা যারা ইতিমধ্যে "মুসী" হিসেবে ফরম পূরণ করে ফেলেছেন তারা সেটিকে ওসীয়্যাতের ৬৪ নং ধারা মুতাবিক বাতিল করতে পারেন এমনকি ৬৫ নং ধারায় মুসীর স্থাবর সম্পত্তি যদি আঞ্জুমানে আহমদীয়ার দখলেও থাকে তা অবশ্যই ফেরত পাবে। প্রত্যেক 'মুসী' (ওসীয়্যাতকারী) নিরব আন্দোলন শুরু করতে পারেন, যতক্ষণ না দুই নম্বরি পন্থার কবর-ব্যবসা থেকে জামা'তী নেতারা ফিরে আসে এবং আপনাদের সাথে ন্যায়সঙ্গত আচরণ করে।

সর্বশেষ আমি সাধারণ কাদিয়ানীদের পক্ষ হতে কবর ব্যবসায়ী কাদিয়ানী নেতাদের কয়েকটি প্রশ্ন করব।

1 মির্যা কাদিয়ানীর 'আল ওসীয়্যাত' (পৃ-৩৮, ৩৯) বইতে পরিষ্কার লিখা আছে, “প্রত্যেক ব্যক্তি যিনি কাদিয়ান থেকে দূরবর্তী দেশের অন্য কোনো অংশে বসবাস করেন এবং উল্লিখিত শর্তাবলি যথাযথভাবে পালন করেন সেক্ষেত্রে তার উত্তরাধিকারীরা মৃত্যুর পর তার লাশ একটি সিন্দুকে রেখে কাদিয়ান পৌঁছে দেবেন। এ কবরস্থান সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত হবার পূর্বে অর্থাৎ সেতু, ইত্যাদি নির্মাণের আগে কারো মৃত্যু ঘটলে, যিনি শর্তানুসারে এই কবরস্থানে সমাহিত হবেন, তার লাশ আমানত স্বরূপ সিন্দুকের মধ্যে রেখে স্ব-স্থানে দাফন করতে হবে। অত:পর কবরস্থান সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কার্যাদি সমাপ্তির পর তার লাশ আনতে হবে। কিন্তু যাকে সিন্দুক ছাড়া দাফন করা হয়েছে, তাকে কবর থেকে বের করে আনা সঙ্গত হবেনা।”

এখান থেকে বুঝা গেল, মির্যা কাদিয়ানীর শিক্ষানুসারে 'বেহেশতি মাকবেরা' একমাত্র কাদিয়ানের সেই নির্দিষ্ট কবরস্থান, যেটি 'আল ওসীয়্যাত' বইটি রচনাকালেই প্রস্তুত করার প্রক্রিয়া আরম্ভ হয়েছিল, সেতু ইত্যাদি নির্মাণের কাজ তখনও ধীরগতিতেই চলছিল। ফলে দূরদেশের কোনো মুসীর মৃত্যু হলে তখন কী করণীয় তা একই বইতে পরিষ্কার করে বলেও দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ উক্ত কবরস্থান প্রস্তুত হবার পর মুসীর উত্তরাধিকারীরা তার লাশ একটি সিন্দুকে রেখে কাদিয়ান পৌঁছে দেবেন। আর প্রস্তুত হবার আগ পর্যন্ত স্ব-স্থানে দাফন করে ফেলবে। অত:পর কাদিয়ানের উক্ত কবরস্থান সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কার্যাদি সমাপ্তির পর তার লাশ যেন নিয়ে আসা হয় এবং কাদিয়ানেই দাফন করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের কাদিয়ানী নেতারা কি মির্যার উক্ত শিক্ষার পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত হয়ে গেল না? যেহেতু তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে পৃথক পৃথক 'বেহেশতি মাকবেরা' তৈরি করে চলছে এবং সেগুলো "বেহেশতি মাকবেরা" নামেই চালিয়ে দিচ্ছে!

2 'আল ওসীয়্যাত' (ষষ্ঠ বাংলা প্রকাশ ২০২৩ ইং) গ্রন্থের ১৯ নং পৃষ্ঠায় পরিষ্কার করে লিখা আছে যে, “খোদা যেন এতে বরকত দান করেন এবং এবং একেই যেন 'বেহেশতী মাকবেরায়' পরিণত করেন।” এখন কাদিয়ানে অবস্থিত মির্যার নিজেস্ব মালিকানাধীন একমাত্র কবরস্থানটি-ই যেখানে 'বেহেশতি মাকবেরা', সেখানে বাংলাদেশের কাদিয়ানী মুসীদের লাশ কিজন্য সেই স্থানটিতে পাঠানো হচ্ছে না? যদি পাঠানো না হয় তাহলে কি পরে পাঠানোর ব্যবস্থা হিসেবে সিন্দুকে রেখে লাশ স্ব-স্থানে দাফন করা হচ্ছে? যদি বলেন যে, হ্যাঁ এভাবেই দাফন করা হয় তখন আবার প্রশ্ন জাগে যে, তাহলে এ পর্যন্ত কতজন সিন্দুকে রেখে কবর দেয়া মুসীকে কবর থেকে উঠিয়ে কাদিয়ান পাঠানো হয়েছে?

3 মুসী হওয়াই কি জরুরি? যদি তা জরুরি হবে তাহলে কাদিয়ানী চতুর্থ খলীফা মির্যা তাহের আহমদের কবর কিজন্য লণ্ডনে হল? তিনি কেন বেহেশতের লোভ করলেন না? নাকি 'বেহেশতি মাকবেরা'র প্রতি তার বিশ্বাসে ক্রুটি ছিল? যদি বলেন, আইনী জটিলতা ছিল। তাহলে প্রশ্ন আসবে, তার লাশ পরবর্তীতে কাদিয়ান স্থানান্তরের লক্ষ্যেই সিন্দুকে রেখে লণ্ডনে দাফন করা হয়েছিল? আর যদি বলেন, তিনি খলীফা ছিলেন বলে কাদিয়ানে দাফন হওয়ার প্রয়োজন ছিলনা। তখন প্রশ্ন আসবে, খলীফা হলেই যে কাদিয়ানে দাফন হওয়ার প্রয়োজন নেই এটা মির্যা কাদিয়ানী কোথায় বলেছেন?

4 যারা 'মুসী' হচ্ছে, অর্থাৎ অর্থের বিনিময়ে বেহেশত-সার্টিফিকেট নিচ্ছে তাদের জীবনের সমস্ত কবীরা গুনাহ, সুদ-ঘুষ, জেনা ব্যভিচার, মানুষের হক্ব নষ্ট করা ইত্যাদি গুনাহ-ও কি ক্ষমা হয়ে যাবে? যেহেতু বহু মুসী'কেও দেখা গেছে তারা ওসীয়্যতের শর্তে (ওসীয়্যাত : পরিশিষ্ট-১, ক্রমিক নং ৭) পুরোপুরি উত্তীর্ণ হয়নি, তারপরেও আঞ্জুমানে আহমদীয়া তার কাছ থেকে পেমেন্ট গ্রহণ করেছে এবং ওসীয়্যাতের ফরম মঞ্জুর-ও করেছে। এর পক্ষে বহু প্রমাণ দেয়া যাবে। যাইহোক, 'বেহেশতি মাকবেরা' ধরণের কোনো কনসেপ্ট ইসলামে নেই। যার ফলে এটি ইসলামে নতুন শরীয়ত বা নতুন সংযোজন। অথচ ইসলামী শরীয়তে নতুন যে কোনো সংযোজন বিদয়াত, আর যদি ওহী বা ইলহামের নামে হয় তাহলে সুস্পষ্ট কুফুরী। কেননা মির্যা কাদিয়ানীর বইতেও পরিষ্কার লিখা আছে, মুহাম্মদী শরীয়তে এক বিন্দু সংযোজন বা বিয়োজন কোনোটাই সম্ভব নয় ও বৈধ নয় ('আমাদের শিক্ষা' দ্রষ্টব্য)। মজার ব্যাপার হল, মির্যা সাধারণ মানুষকে এগুলো লিখে বোকা বানাতে চেয়েছিল, সত্যি হল, সে নিজেও নতুন শরীয়তবাহক নবী ও রাসূল দাবী করে এবং নিজেকে বুরুজী মুহাম্মদ (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দ্বিতীয় সত্তা) দাবীও করেছে। নাউযুবিল্লাহ। দেখুন, 'একটি ভুল সংশোধন' বাংলা অনূদিত কপি, মূল মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী
এডমিন - রদ্দে কাদিয়ানী (গুগল অ্যাপ)

#বেহেশতি
#মাকবেরা

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.