![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কিছু বলার নাই,নিয়মিত ব্লগার হবারও কোন ইচ্ছা নাই। মাঝে মাঝে ... কিছু কথা যা মনকে উতলা করে প্রকাশ করতে!
* কাবেরী, নিচে শোরগোল কিসের?
* ম্যাডাম, আফনের লগে এক ভদ্রব্যাডা দ্যাহা করবার চায়।
* ভদ্রব্যাডা না ভদ্রলোক। এখন বল কে?
* আমি চিনি নাগো মাডাম! কিন্তুক চশমা পিন্দা, লম্বা চুল, কান্ধে একটা মাইয়াগো ব্যাগ ঝুলানো।
* গেটে কি রূপ দেখার জন্য তোমাকে রাখা হয়েছে। যাকে, তাকে কেন ঢুকতে দাও। কত বার না বলেছি, অপরিচিত কোন লোককে ঢুকতে দিবে না। কথা কানে যায় না?
* লোকটির কি চাই জিজ্ঞেস করেছ?
* তা আমি ক্যামনে কই? আমারে কি কইছে? শুধু কইছে আপনের সাথে দেখা করবো।
* ঠিক আছে। ওনাকে ভিতরে নিয়ে এসো।
কাবেরী আজিফকে নিয়ে ভিতরে এসে তার রুম দেখিয়ে দিয়ে গেটে চলে গেল। আজিফ দরজা ঠেলে কিছুটা ঠুকে একটা সালাম দিল।
* আসসালামু আলাইকুম। আমি আজিফ। আজ ও আগামী নামে পত্রিকার প্রতিবেদক।
* ওয়ালাইকুম আসসালাম। আমি নীলুফা আজহার। বসুন। কিছু মনে করবেন না। প্রথমেই বলি, আমি ব্যক্তিগতভাবে থ্রি - “প” পুরুষ, পুলিশ আর পত্রিকা, তিনটি খুবই অপছন্দ করি।
* আজিফ বসতে গিয়েই বলে ভেরি ইন্টারেস্টিং। বাট হোয়াই ম্যাডাম?
* ইটস্ মাই পারসোনাল ম্যাটার। ডোন্ট মাইন্ড প্লিজ।
* ইটস্ ওকে। তবে জানতে পারলে খুশি হতাম ।
* আজকে না হয় না-ই জানলেন। বাই দ্যা ওয়ে, আমি কিভাবে সাহায্য করতে পারি?
* দেখুন আপনি একজন মেয়ে। এত বড় একটা প্রতিষ্ঠানের এমডি আপনি। সফল একজন ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তা হিসাবে আমাদের পত্রিকাতে আপনার একটা সাক্ষাৎকার প্রকাশ করতে চাই।
* এই যে, ভুল বললেন। আমি সফল আপনি কিভাবে জানলেন?
* আপনার আজকের অবস্থান, আপনার প্রতিষ্ঠান দেখে তা সহজেই অনুমেয়।
* আসলে কি জানেন ভরা নদীর রূপ দেখে সবাই খুশি। সবাই বলে, “নদীরে” রূপ দেইয়া তোর হইয়াছি পাগল”। কিন্তু নদীর প্রত্যেকটি বাঁকে যে কত কষ্ট জমে আছে, তা কেউ বোঝে না। আছে না পাওয়ার কান্না, কিন্তু তা কেউ শোনে না। বেদনার যে করুন সুর তার অন্তরে বাজে, কে তার খবর রাখে? তেমনি জীবনের ঝাঁকে ঝাঁকে যে কত করুন কাহিনী লুকিয়ে থাকে, তা শুধু ভুক্ত ভুগীই জানে। আর কেউ না। কি জানতে চান বলুন।
* আজিফ আলোচনার বিষয় শুরু করলো। প্রথমেই থ্রি - “প” এর বিষয়ে জানতে চাইলে।
নীলুফা হাসতে হাসতে শুরু করলো, কেন? বুঝলেন না? এই যে, ধরুন, কালকে একটা ছোট কথা বলেছি। আমি ভুলে গেছি অথচ আপনি সেটা নিয়েই ঘাটা-ঘাটি করছেন। আমার কথাটা ঝাল-মসলা মাখিয়ে, খাঁটি, ঝাঁক যুক্ত সরিষার তেলে ভেজে রং রং করে সবার সামনে উপস্থাপন করেন। এতে করে যে আস¬ল ঘটনার দফা রফা ¬হয়ে যায়। সেই খেয়াল আপনাদের থাকে না। শুধু খেয়াল থাকে, কিভাবে বিষয়টা উপস্থাপন করলে কাজে নিজের নাম বাড়ে, প্রমোশন হয় ইত্যাদি ইত্যাদি।
দু’জনেই উচ্চস্বরে হাসতে থাকে।
* আজিফ হাসতে হাসতে বলে, আপনি অনেক রসিক মানুষ। দেখে একেবারে বিশ্বাসই করা যায় না।
* তাই নাকি?
* একদম তাই। এবার ‘প’ = পুলিশ সর্ম্পকে কিছু শুনি।
* এদের সর্ম্পকে তো আপনারাই ভাল জানেন। এরা টাকা পেলে সব করতে পারে। খুনিকে জামাই আদরে ছেড়ে দেয় আবার টাকার কারনে ভাল মানুষকে জেলে ঢুকিয়ে দেয়, কোন কোন সময় গুম ও করে দেয়। আরও কত কি?
* আজিফ একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ে, আইন শৃঙ্খলা! বাদ দিন। আর কেউই নীতি নৈতিক্তার ধার ধারে না। বিচারের বানী নিরবে নিভৃতে কাঁদে।
* পুলিশ যখন ভি আই পি রোডে রিক্সা পারাপার নিষেধ করে তখন রিক্সা চালকেরা “দুই টাকা এক টাকার” নোট ভাঁজ করে হাতের মধ্যে রেখে রিক্সা নিয়ে এগিয়ে গিয়ে পাশে থাকা ট্রাফিক পুলিশের হাতে গুজেঁ দেয়। আর এ দিলেই রাস্তা পার হওয়া যায়। একদিন আমি অনেক্ষন দাড়িয়ে সেই দৃশ্য দেখেই আর হেঁসেছি। ভাল করে দেখার জন্য ট্রাফিকের খুব কাছাকাছি থাকায় একবার লেনদেনের সময় পুলিশের হাত থেকে টাকা হঠাৎ আমার সামনে পড়ে যায়। পুলিশ আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে টাকাটা তুলে নেয়। একবার ভেবে ছিলাম মোবাইলে এই সুন্দর ছবিটা তুলে রাখবব। কিন্তু ভয় পেয়ে গেলাম, পরে আবার কোন ধারায় চালান করে দেয় কে জানে! ও সব ধারা ধারা তো বুঝি না ভাই, নীলুফা বলে আর হাসতে থাকে।
* আর একটা ‘প’ ঝাঁকি! শুনতে ভালই লাগছে।
* তাই নাকি?
* অবশ্যই।
* পরবর্তী প - “পুরুষ” এটা শুনলে আপনার কষ্ট লাগবে।
* মোটেও না। আসলে কি জানেন! এই স্থানে যখন এসেছি, অনেক দুঃখ, কষ্ট, আবেগ ফেলে রেখে এসেছি। সব সময় বাস্তবতার মুখোমুখি দাড়ানোর চেষ্টা করি। জানিনা কতটুকু পারি। মানুষ তো, তাই সবকিছুর উর্দ্ধে উঠা হয়ত অসম্ভব।
* জীবনে বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছি। পুরুষ নামক জীবতলা জীবনের সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। তাই আমি পুরুষ জাতিকে মন থেকে মেনে নিতে পারি না। সামাজিকতা রক্ষা করে চলতে হয়, তাই চলা।
* সেটা অবশ্য আমি এতক্ষণে বুঝতে পেরেছি। অফিসে এত্তগুলো কর্মকর্তা, কর্মচারী অর্থাৎ লোকের সাথে দেখা হলো, তবে সবাই মেয়ে লোক। “প” এর পুরুষ একজন ও দেখলাম না।
দুজনে হাসতে থাকে। হঠাৎ নীলুফা অন্যমনস্ক হয়ে কিছুক্ষণ অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে। তার পর ভার ভার গলায় বলে।
* আজিফ ভাই, জীবনে কিছু কিছু ঘটনা থাকে যা কাউকে, কখনো বলা যায় না। আবার বুকের মধ্যে থেকে সেটা আবার নিজেকে কখনো স্বস্তি দেয় না। তবে কারো কাছে প্রকাশ করতে পারলে নিজেকে অনেক চাপমুক্ত মনে হয়। কিন্তু প্রকাশ করলেও ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকে।
* এই অধমকে ভরসা করতে পারেন। আশা করি, তার শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে হলেও আপনার বিশ্বাসের মর্যাদা রাখব।
* আমার ও মনে হচ্ছে আপনাকে বিশ্বাস করা যায়। তাই এত কথা বললাম। তবে আমার এত প্যাচাল শোনার মত এত লম্বা সময় আপনার হাতে আছে তো?
* আজ্ঞে ম্যাডাম, হ্যাঁ। হাসতে হাসতে জবাব দেয় আজিফ।
নীলুফা এবার তার চেয়ার থেকে উঠে জানালার গ্রিল ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে।
* প্রায় বিশ বছর আগের কথা। সবে মাত্র কলেজে যাওয়া শুরু করেছি। নতুন ক্লাশ, নতুন জীবন, কি দারুণ রঙিন জীবন। এক ক্লাস মেটের সাথে খুব ঘনিষ্ঠতা হয়ে উঠে। নাম শাহেদ। খুব সুন্দর চেহারা, মুগ্ধ হওয়ার মত। আমিও মুগ্ধ হয়েছিলাম। বান্ধবীরা বলতো, শাহেদকে চেয়েছি সবাই, কিন্তু ভাগ্যবতী তুই। লক্ষী মেয়ে, তোর জীবনটা সার্থক। তখন মোটেও বুঝতে পারিনি, ভাগ্যবতীর ঘাড়ে অলক্ষী ভর করে সুন্দর জীবনটাকে ব্যর্থতার চাঁদর দিয়ে ঢাকতে শুরু করেছিল। কলেজ থেকে ফেরার পথে একদিন শাহেদ তার এক বন্ধুর মেসে বেড়াতে নিয়ে যায়। আমি অনেক চেষ্টা করেও নিজেকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হই। নিজেকে কোন মতে সামলে নিয়ে বাড়ী ফিরে আসি।
কয়েক দিন কলেজে যাওয়া বন্ধ রাখি। বন্ধবীরা দেখতে আসে। আমার কি হয়েছে জানতে চায়। বাবা-মাও জানতে চায়। সব কিছু গোপন রেখে আবার কলেজে যাওয়া শুরু করি। শাহেদ সামনে এসে হাত জোড় করে ক্ষমা চায়। আমি কিছু না বলে চলে আসি। বান্ধবীরা প্রশ্ন করে শাহেদের সাথে কোন ঝামেলা হয়েছে কিনা। কেউ বিষয়টি জানুক, এটা চাই না বলে আবার শাহেদের সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রেখে চলি। দু’একদিনের মধ্যেই স্বাভাবিক হয়ে যায়। আবার এক সাথে বেড়ানো, হাসি, ঠাট্টা সব কিছু। বয়সটা কখন বেড়ে যৌবনের সিঁড়িতে পা দিয়ে তরতর করে উপরে উঠে যাচ্ছে, মোটেও বুঝতে পারিনি। শাহেদ মাঝে মধ্যে মজার মজার কথা আর বিভিন্ন ভঙ্গিতে উসকে দেয়, মাঝে মধ্যে দু’একবার আমিও রাজি হয়ে গিয়েছি।
একদিন এই সুখ আর থাকল না। কোথা থেকে যে কি হয়ে গেল! শাহেদ বলল, চল ইউরিন টেষ্ট করাই। গেলাম ক্লিনিকে। আমার স্বামীর নামের জায়গায় শাহেদের নাম নিজের নাম দিয়ে ভর্তি করাল। টেষ্টে রেজাল্ট পজিটিভ হল। চিন্তায় মাথা এলোমেলো হয়ে গেল। এখন উপায়! মাথায় কিছু আসছে না। শাহেদকে বললাম, চল বিয়ে করে ফেলি। কিন্তু সে কোন মতেই রাজী না। শাহেদ বলে এখন কোনমতেই বিয়ে সম্ভব নয়। চল হাসপাতালে যাই। এখন যে সমস্যা তা আগে সমাধান করি। পরে একটা ডিসিশন নেওয়া যাবে। আমি তো তোমাকেই বিয়ে করবো। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না। কোন উপায় না দেখে আমি হাসপাতালে গিয়ে এমআর করে নিলাম।
কেন যেন আস্তে আস্তে শাহেদ আমার থেকে দূরে সরে যেতে থাকলো। বুঝতে পারছিলাম না। বেশ কিছু দিন কলেজেও দেখলাম না। ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে। পড়া শুনাতে একেবারেই মন বসছে না। শাহেদের চিন্তায় আমি অস্থির হয়ে যাচ্ছি। সে কেন আমাকে এড়িয়ে চলছে? আমি এখন কি করবো। সে যদি আমাকে ঠকায়, আত্মহত্যা ছাড়া কোন পথ থাকবে না। আমি অন্য কারো সাথে জীবনে সংসার করতে পারব না।
হঠাৎ একদিন শুনতে পেলাম শাহেদ আমারই এক বান্ধবীর বাড়িতে ঘরে গেলে যে কোন কারণে তাকে সবাই মিলে বিয়ে দিয়ে দেয়। আমি নিজেকে আর ধরে রাখতে পারি না। দুচোখে আধাঁর দেখতে থাকি। এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিই আত্মহত্যা করবো। নিজের ঘরের দরজা আটকে দিয়ে ফ্যানের সাথে ওড়না পেচিয়ে ঝাঁপ দেই, বিধি বাম। বাঁধন ভাল না হওয়ায় ওড়না পিছলে পা মাটিতে ঠেকে যায়। ধপ করে পা পড়ে যাওয়ার শব্দ হওয়ায় মা পাশের ঘর থেকে সন্দেহ করে জানালায় চোখ রেখে আমাকে দেখে চিৎকার করলে বাবা দরজা ভেঙ্গে আমাকে পাপ মুক্তির পথ থেকে সরিয়ে আনেন।
আজিফ খেয়াল করে দেখল নীলুফার চোখের পানি গাল বেয়ে পড়ছে।
* আজিফ বললো, আমাকে মাফ করবেন। কষ্ট দেওয়ার জন্য আসলে আমি শুনতে চাইনি।
নীলুফা হয়ত শুনলই না। বলেই চললো, সেই যাত্রায় বেচে গেলাম। বাবা দ্রুত আমায় বিয়ে দিয়ে দিলেন। ছেলে রাজনীতি করে, টেন্ডারের ব্যবসা করে, টাকা পয়সা ভালই উপার্জন করে।
বেশ সুখেই কেটে যাচ্ছিল আমার আর রবিনের জীবন। কিন্তু কয়েক মাস যেতে না যেতেই আমার পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ায় শাহেদ। শুনলাম যাকে সে বিয়ে করেছিল তাকে যৌতুকের জন্য খুব নির্যাতন করত। এতটাই খারাপ ছিল সে, যে তাকে গলায় ফাঁস দিয়ে খুন করে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রেখেছিল। পুলিশ ধরলেও উপযুক্ত প্রমাণের অভাব আর টাকার জোরে জামিনে মুক্তি পেয়েছে।
অবশেষে শাহেদ আমার সুখের ঘর ভাঙ্গার জন্য উঠে পড়ে লাগলো। রবিন বাড়ীতে না থাকলে সে এসে আমাকে বিরক্ত করতে থাকে। বলে রবিনকে ডিভোর্স দিয়ে তাকে বিয়ে করতে হবে। আমি নাকি শুধু তার। তার জন্য আমার জন্ম, আরও কত কি? আমি তাকে পরিষ্কার জানিয়ে দিই যে, তাকে বিয়ে করা আমার পক্ষে আর সম্ভব নয়। আমাকে আর কখনো বিরক্ত করবে না। আমি সুখে আছি। আর সুখের ঘর ভেঙ্গো না। সে আমাকে জানিয়ে যায়, তোর সুখের ঘরে আমি দুঃখের আগুন জ্বালিয়ে দেব।
পরের দিন রাত্রে সত্যি আমার ঘরে দুঃঘের আগুন জ্বলতে লাগল। রবিনের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, আগুন জ্বলছে। হাতে কিছু কাগজ। সে খুব বিশ্রী ভাষায় গাল দিতে দিতে ঘরে ঢুকলো। তার মুখের ভাষা শুনে আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। এত খারাপ ভাষায় মানুষ গালি দিতে পারে? আমি শুধু কাঁদলাম। রবিন ঐ কাগজগুলো আমার মুখের সামনে ফেলে দিল। আমি কাঁদতে কাঁদতে খুলে দেখলাম এগুলো সেই ক্লিনিক আর হাসপাতালের কাগজ, যেখানে সব রিপোর্ট আর হাসপাতালের কাগজ, যেখানে সব রিপোর্ট লিখা আছে আর স্বামী হিসেবে লিখা আছে, ঐ অমানুষের নাম।
রবিন দুই দিন বাড়ীতে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিল। শুধু গালি দেয় আর বলে তোর সাথে সংসার আর নয়। নিজে মর নয়তো বাবার বাড়ীতে চলে যা।
এত দুঃখ কষ্ট, তারপর দুইদিন খাওয়া দাওয়া নেই। মনে হচ্ছিলো এই আমি মরে যাবো, ভাবলাম অনেক। বাবা মাকে মুখ দেখাবো কি করে। সবাইতো খারাপ খবরগুলো জেনে যাবে।
হঠাৎ ভিতর ভিতর কেমন যেন প্রতিশোধের নেশা জাগল। আত্মহত্যা নয়, হত্যা করবো। রবিন বাড়ী আসা বন্ধ করে দিল। আমি বিদায় না হওয়া পর্যন্ত সে বাড়ী আসবে না। এই কলঙ্কিনীর মুখ আর দেখবে না।
আমি শাহেদকে খবর পাঠালাম যে, তোমাকে বিয়ে করবো, তুমি আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও। শাহেদ দ্রুত চলে এলো। রবিনের রিভলবারটা আমার ব্যাগে ঢুকিয়ে বাড়ী থেকে বেড়িয়ে গেলাম ভোরে। বললাম, আমরা এমন জায়গায় যাব যেখানে আমাদের কেউ চিনবে না। বিকাল বেলা ঢাকাতে চলে এলাম। হোটেলে খাওয়া দাওয়া করে রেললাইনের উপর দিয়ে হাঁটতে লাগলাম। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। হঠাৎ রেলের হুইসেলের শব্দ শুনে সুযোগ মতো কাজ শেষ করে দিলাম। শাহেদ রেলের উপর মুখ থুবড়ে পড়ে গেল। আমি সাইডে লুকিয়ে দেখলাম রেলে চাকাটা তার মাথাটাকে গলিয়ে দিয়ে চলে গেল। এখন কেউ বুঝতে পারবে না এটা খুন হয়েছে। মুখটাও চেনার উপা না। বেওয়ারিশ লাশ হিসাবে হয়ত দাফন করবে। রিভলবার টা ফেলে দিয়ে মনের জোর বাড়িয়ে অনেক কষ্টে আমার এক বান্ধবীর বাসায় উঠলাম। এরপর শুরু হল জীবন। নতুন জীবন। আমার বান্ধবীর স্বামী আজ আমাকে এ অবস্থানে নিয়ে এসেছে। তিনি তার বাড়িতে রেখে নিজের বোনের মত আমাকে সাহায্য করেছেন। আমাকে হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ কেন্দ্রেও ভর্তি করিয়ে দিলেন। ছয় মাস ট্রেনিং এর পর আমি ঐ খানেই কাজ করে কিছু পয়সা উপার্জন করতে থাকি। শুরু হয় আমার নতুন জীবন। এখানে ওখানে কয়েক বছর কাজ করার পর নিজে এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলি। নিজের শরীরের রক্ত, ঘাম সব কিছু পানি করে তিলে তিলে আজকে এ অবস্থানে এসেছি।
আজকে আমার তৈরী দ্রব্য বিদেশে পাঠাই। এই ছোট্ট জীবনের এতগুলো ঘটনার পর তাই পুরুষ লোককে আর বিশ্বাস করতে পারি না।
* আমাকে যে বিশ্বাস করলেন আপনি? আজিফ বলে।
* মনে হলো আপনাকে বিশ্বাস করা যায়। আপনি হয়ত আলাদা তাই। চোখ মুছতে মুছতে নীলুফা বলে। মাফ করবেন। অনেক আজে বাজে কথা শুনিয়ে দিলাম। যাক ওসব কথা। আপনার পরিবারের কথা বলেন। বাচ্চা-কাচ্চা, ভাবীর খবর।
* সে নিজেরই খবর জানে না, তার আবার সংসার!
* কি বলেন এসব? নীলুফা প্রশ্ন করে, এতটা বয়স হলো?
* ভাগ্যদেবী সহায় হননি। ভালবেসে নিঃস্ব হয়ে ঘুরছি ভালবাসার কাঙাল হয়ে। সমস্ত স্বপ্ন ভেঙে দিয়ে রাণী আমার চলে গেছে অন্যের হাত ধরে। আজও সেই স্মৃতি হাতরে বেড়াচ্ছি।
অনেকদিন পর স্মৃতি মনে হয়ে আজিফের চোখটাও ভারী হয়ে এলো। চোখটা মনে হয় আটকে যাচ্ছে। সে বার বার চোখটা মুছতে থাকে।
* নীলুফা তার অজান্তেই আজিফের ঠোঁটের উপর রাখা হাতের উপর নিজের হাত রাখে, আপনাকে কষ্ট দিয়ে ফেললাম। আমরা মেয়ে, আমাদের উপায় নেই। কিন্তু আপনারা তো পুরুষ, সব পারেন।
* দেখুন, ভালবাসার ক্ষেত্রে সবাই সমান। প্রকৃত ভালবাসা যদি চুরি হয়, সে যেই হোক, নিঃস্ব হয়ে যায়। জড় বস্তুতে পরিণত হয়ে যায়। পাথর হয়ে যায়।
* আজিফ সাহেব, একটা প্রশ্ন করব?
* অবশ্যই করুন।
* পাথরে কি ফুল ফোঁটে না?
...................................
©somewhere in net ltd.