আবাহমান পর্ব ২

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৩৯

ভোর পাঁচটা বাজে। লেপ আর কাথার ভেতর থেকে বের হতে ইচ্ছা করে না এই সময়। এক আরামদায়ক আলস্য থাকে এই ভোরে। তানিকে এই শীতের কনকনে অবস্থাও ঘরে আটকে রাখতে পারে না। পাখির কলরব শুনার সাথে সাথে উঠেপড়ে সে। একটা বাঁশের তৈরি ঝুড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে রেল লাইনের পাশে বকুল গাছটার তলায়। উদ্দেশ্য ফুল কুরানো। বকুল তলা থেকে যাবে নেদেমি মাসীর বাড়িতে। তাদের একটা শিউলী গাছ আছে। ভোরে গাছের তলায় সাদা-কমলায় যেন ছেয়ে থাকে। তার বয়সী সব বাচ্চারা এই ফুল কুড়ানর প্রতিযোগিতা করে। যে যত বেশি ফুল কুড়িয়ে সব থেকে বড় মালা গাঁথতে পারবে তার কথা সারাদিন সবাইকে শুনতে হবে। এটাই এই খেলার নিয়ম। যদিও তানিদের বাড়িতে এই ধরনের খেলা দেখলে রাগ করে তার পরেও তানি চুপি চুপি বেরিয়ে পরে।

বকুল তলায় পৌঁছে তানি একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। না আজ আর হবে না তার জেতা। পাশের গ্রামের মেয়ে রা তার আগেই চলে এসেছে। না এখানে আর কোন লাভ নেই। তার পরেও তানি হাল ছাড়েনা। হুড়ো হুড়ী করে সব মেয়েদের সাথে পাল্লা দিয়ে টপাটপ ফুল কুড়িয়ে হাতের ঝুড়িতে ফেলতে থাকে। তার ঝুড়ি প্রায় ভরে এসেছে এ সময় আসমা এক ধাক্কা দিয়ে তানিকে মাটিতে ফেলে দেয়। তানির সকল ফুল পরে গেল। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় একটু আর্তনাদ করে উঠল তানি। হাতের কোথাও লেগেছে প্রচণ্ড। তানি উঠে দারায়। রাগে ফুঁসছেঃ

- অই এইটা কি করিলু?

রাগত স্বরে জিজ্ঞেস করে আসমা কে তানি।

- কি করিনু ফের?

একটা গো-বেচারা মতো ভাব চোখে মুখে ফুটিয়ে তুলে তানিকে পালটা প্রশ্ন করে আসমা। খালেদা, আঞ্জু, রেবেকা, ময়না আরও তিন চার জন এটা দেখে খ্যাঁক খ্যাঁক করে হাসতে থাকে। তানির তা দেখে রাগ হয় আরও বেশি।

- কি করিনু মানে? মোর তামান ফুল ফেলাই দিলু। আর এখন কহেচি কি করিনু?

তানি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে।

- মুই কি কিছু করিছু নাকি? অই খালেদা কহেক না তে!

আসমা সম্মতির জন্য খালেদার দিকে তাকায়। খালেদা কলের পুতুলের মতো মাথা নেড়ে সায় দেয়।

- দেখিলু এমরাও কহেচে যে মোর দোষ নাই।

হাসতে হাসতে বলে আসমা।

তানি একটা ঝগড়া মতো শুরু করতে গিয়ে আর করল না। বাড়ি ফিরতে হবে তাড়াতাড়ি। আজকে বড় ফুপু আসবে তাই এই সব করে সময় নষ্ট করতে নারাজ তানি। বাবা কে পটাতে হবে যেন আজ ইস্কুলে যেতে না হয়।

কোন কিছুতেই যখন কাজ হোল না তখন তানি নিজের পেট ব্যাথা করছে বলে ঘষনা দিল। মা তাকে বিছানায় শুইয়ে রাখল।

০ টি +০/-০