"ফেরা"\'র বৃহস্পতিবার!

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:১৯

সে অনেক অনেকদিন আগের কথা, তখন আরবের লোকেরা খেজুর নিজেরা খাওয়ার পাশাপাশি দেশের বাইরেও রপ্তানি করছে। সেই খেজুর খেতে যেয়ে একদিন হঠাৎই আমার পিতৃদেব এর মনে হলো, গান-বাজনা বড়ই আচানক জিনিষ, ইহাতে চিত্ত-চাঞ্চল্য হয়। তাই গান শোনা যাবেনা। পুত্রকে সুপুত্র হিসেবে গড়ে তুলতে চিত্ত রাখতে হবে দীঘির পানির মত শান্ত, স্থির। ফলাফল, বাসার প্যানাসনিক "টুইন-ওয়ান" টা প্লাস্টিকের প্যাকেটে মুড়ে আলমারি বন্দী।

সম্ভবত সেটাই ছিল ভুল। নিষিদ্ধ জিনিষের প্রতি আকর্ষন চিরায়ত। নিষিদ্ধ গন্ধম ফলের মত ব্যান্ড সংগীতের খোঁজ পেয়ে যাই মগবাজার কলোনীর পাশের বাসায় এক বড় ভাই তাঁর বাসায় গান শোনার সময়।

ক্লাস ৮-৯ এ পড়ার সময় একটু "লায়েক" হই, স্কুলের বন্ধুরা এর ওর বাসায় যাওয়া শুরু হয় শুক্র-শনিবারগুলোতে। আমার প্রয়াত বন্ধু নূর, তখনই ইংরেজি গান শুনত। একদিন দল ধরে এলো আমার বাসায়, সাথে কিছু TDK D60 ক্যাসেট। পিতৃদেব অফিসে সেদিন, সুযোগে সেই টুইন-ওয়ান বের করা হলো। ক্যাসেট চলে, কিন্ত আওয়াজ জড়ানো। নূর বুদ্ধি দিল, কাপড় আর আফটার শেভ(!) নিয়ে আসতে। তাই দিয়ে "হেড" মুছে শুনলাম বন জোভির "রানয়াওয়ে"...তার আগ পর্যন্ত আমার জানা পৃথিবীর ইংরেজি সংগীত শিল্পী ছিল ৪ জন, মাইকেল জ্যাকসন, ম্যাডোনা, মডার্ন টকিং আর বনি এম! নূর না থাকলে হয়ত গানই হতোনা...

কলেজের শুরুতে আমার বাবা টের পায়, যে আমি শুধু গানই শুনিনা, হালকা পাতলা বাজাইও! টিভি তে খবর দেখতে বসে খবরের পরেই ছেলেকে বন্ধু বান্ধবসহ "গান করে পৃথিবী উল্টিয়ে ফেলব" টাইপ আশ্বাস দিতে দেখে তাঁর বুকের বাম পাশে চিন-চিনে ব্যাথা উঠে। এরপর যথারীতি ফাঁপর।

এখন আরো বড় হয়েছি, কিন্ত সেই ভয় এখনো কাজ করে। আব্বাকে শো থাকলে কখনো বলিনা। নিয়মতান্ত্রিক জীবনে অভ্যস্ত আমার পিতা রাত ১১ টা বাজতেই ঘুমিয়ে পড়েন। ভাগ্যিস টিভি লাইভ শো সব শুরুই হয় রাত ১১ টা বা এরপরে।

আমার ধারনা, সব ঠিক থাকলে আগামীকাল শুক্রবারও আব্বা ঘুমিয়ে পড়বে, আর রাত ১১ টায় SA TV তে আমি বাজাবো। আব্বা ঘুমাবে, তাই ভয়-ডর ছাড়াই, নিজের জন্য বাজাব, অনেকদিন পরে।

অনেকদিন পরে ফেরার এই বৃহস্পতিবার, দেখা হবে! প্রোমো'র লিঙ্ক এখানে

https://mobile.facebook.com/story.php?story_fbid=1145072075502940&id=581375395205947

শুভ সপ্তাহান্ত!

৬ টি +০/-০