![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যা আছি তা নিয়ে সুখী, ভান নেওয়া অপ্রয়োজনীয়। ভালোলাগে জোৎস্নায় রাস্তায় হাটাহাটি, শীতের সকাল আর বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা। নিজের ভুল স্বীকারে আপত্তি নেই কিন্তু অনুতপ্ত নই।
এক.
মৃদু বৃষ্টির শব্দ ভেসে আসছে। জানালার বাহিরে তাকালাম। যদিও কিছুই দেখা যাচ্ছে না তবে শব্দ শুনে বোঝা যাচ্ছে বেশ জোরেশোরে শুরু হয়েছে। ঘাড় নাড়াতেই সুক্ষ্ম একটা ব্যথা অনুভব করলাম। টানা ঘন্টাখানেক ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে থাকার ফল আরকি। কিছুক্ষণ ম্যাসেজ করার পর অবশ ভাব চলে যেতে শুরু করলো। তবে খুব আস্তে আস্তে। সবথেকে ভালো হতো যদি অন্যকেউ এ কাজটা করেতো। কোনপ্রকার আপত্তি ছাড়া একাজ করার মত একজনই আছে। মনিটর থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম। ল্যাপটপের মনিটর হালকা আলো ছড়াচ্ছে। তবে সেই আলো তানিয়ার ঘুমন্ত চেহারা বোঝার জন্য যথেষ্ট। এ মুহুর্তে তানিয়াকে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশী মায়াবী লাগছে। ওর এলোমেলো লম্বা চুল মুখের অর্ধেক ঢেকে রেখেছে। সম্ভবত ঘুমানোর আগে চুল বেঁধে নেওয়ার কথা মনে ছিলোনা। ও কে ঘুম থেকে তুলে বলা যায় ঘাড়ব্যথার কথা। তাহলে ও হয়তো কিছু একটা ব্যবস্থা করে দিবে। বিয়ে করার এই একটা সুবিধা। আমি এখন চাইলেই ও কে ডেকে তুলতে পারবো। বলতে পারবো আমার ঘাড়টা টিপে দিতে। ও কিছুই বলবে না। হয়তোবা বিরক্ত হবে, কিন্তু কখনো কিছু বলবে না। ল্যাপটপ অফ করে পাশের টেবিলে রেখে দিলাম। সাথে সাথে অনুভব করলাম রুমটা বেশিই অন্ধকার। কি ব্যাপার ! এতটা অন্ধকার হওয়ার কথা না । কয়েক মূহুর্ত লাগলো বুঝতে রুমের ডিম লাইট জ্বালানো হয়নি। আজকে তানিয়া সম্ভবত ভুলে গিয়েছে। নাহ্ সম্ভবত ভুলেনি। ও কিছু একটা বলতে চেয়েছিলো আমাকে। আমি বলেছিলাম একটু অপেক্ষা করতে, আর ও অপেক্ষা করতে করতে হয়তোবা ঘুমিয়ে পরেছে। আসলে হাতের কাজগুলো শেষ করা জরুরি ছিলো। ঠিকমতো কাজ না করলে চাকরি থাকবে না। আর চাকরি চলে গেলে বেশ যন্ত্রণায় সম্মুখীন হবে হতে। যদিও এই চাকরির কারনে তানিয়াকে সময় দিতে পারছি না। তবে আমার কিছু করার নেই। তানিয়ার পাশে শুয়ে পরলাম। হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নিলাম। ঘুমের মধ্যে বিড়বিড় করে কি যেন বললো ও। যদিও তার বলা কথাগুলোর কিছুই বুঝতে পারিনি । আরো কাছে টেনে নিলাম ওকে। একেবারে বুকের মাঝখানে চলে আসলো ও। হালকা নড়াচড়া করে আমার বুকের উপর মাথা দিয়ে ঘুমাতে লাগলো। জানালা দিয়ে আসা লাইটের আলোতে বাচ্চা মেয়ের মত লাগছে ওকে। নিষ্পাপ এক বাচ্চার মতো। কয়েক মূহুর্ত ভাবলাম ওকে ডেকে তুলবো কি না। পরক্ষণেই না করে দিলাম নিজের চিন্তাটাকে। ওর ঘুমটা নষ্ট করার কোন মানে হয় না। সারাদিন যথেষ্ট কষ্ট হয় ওর। তানিয়া জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর চেষ্টা করছি। সুন্দর একটা গন্ধ আসছে ওর শরীর থেকে। মাতাল করা গন্ধ।
তানিয়ার সাথে যদিও বিয়ের আগে তেমন উল্লেখযোগ্য পরিচয় ছিলো না। এক আত্মীয়ের বিয়েতে আমার পুরো পরিবারের দাওয়াত ছিলো। আর সেখানেই প্রথম দেখি ওকে। ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম আমি। অথবা বলা যায় নিজের সবকিছু ক্যারিয়ার কেন্দ্রীয় করে তুলেছিলাম। প্রায় বছর ছয় আগে এক মেয়ের কাছে থেকে ধোঁকা, বছরখানেক বিভিন্ন পাগালামীর তারপর আস্তে আস্তে ক্যারিয়ার কেন্দ্রিক। পড়াশোনা শেষ তারপর চাকরির জীববন শুরু। যাই হোক সেদিন তানিয়াকে দেখে ভালো লেগেছে বা প্রেমে পরেছি এমন কিছুই হয়নি। তবে তাকে খারাপ লাগেনি এটা সত্য। আলাদা করে কিছু ভাবিনি আর প্রেম তো বহু দূরের ব্যাপার। যদিও এটা অস্বাভাবিক কিছু না, কারন বহু আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম বিয়ে করবো না। তানিয়াকে নিয়ে আমার মধ্যে কোন ফিলিংস থাকলেও, আমার পরিবার তানিয়াকে কে পছন্দ করে এবং কিছু না জানিয়ে খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করে। আমাকে জজিজ্ঞাসা করে কোন লাভ নেই এটা আমার পরিবার অজানা নয়। আগেও কয়েকবার আমার জন্য মেয়ে দেখেছিলো এবং আমি প্রতিবারই না করে দিয়েছি। আগের থেকে এবারও ভিন্ন কিছু হবেনা এ বিষয়ে তাদের কোন সন্দেহ ছিলোনা। যদিও আমাকে না বললেও আমার ক্লোজ বন্ধু সাব্বির ও সৈকতকে বলেছিলো। সব খোঁজ খবর নেওয়া শেষে আমাকে জানানো হয়। একদিন আমাকে বাবা বলে যে আমার বিয়ে ঠিক, আমার হাতে মাত্র পনের দিন সময় আছে। প্রচন্ড অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। কারন আমার আগের রিলেশন, বিয়ে না করার প্রতিজ্ঞা তাদের অজানা ছিলোনা। তারপরও কিছু না বলে সোজা বিয়ে ঠিক ! মেনে নেওয়া সম্ভব না তাই সোজাসাপ্টা না বলে দিয়েছিলা যদিও সুবিধা করতে পারিনি। চিল্লাচিল্লি করতাম, কিন্তু বাবার ধমক আর তার মুখের উপর কথা বলার দুঃসাহস আমার নেই। আগে যতবার বিয়ের কথা হয়েছিলো তখন মা, বড় ভাই, ভাবী এরা জানাতো। তাদের কে না বলে দেওয়া সহজ ছিলো। বাবার মুখের উপর কথা বলার সাহস আমার নেই এটা তারা জানতো। তাই সরাসরি তার মাধ্যমে আমাকে জানানো হয়েছে। আমার মতামত শোনার মত লোক না তিনি। সরাসরি বলে দিয়েছিলেন তিনি যদি বিয়ে না করতে চাই তাহলে যেন তার বাড়ি থেকেবেরিয়ে যাই। কয়েকদিনের মাথায় সিদ্ধান্ত নিলাম বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো। কাউকে নিয়ে নতুন করে শুরু করা আমার জন্য অসম্ভব। বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার প্রস্তুতি হয়ে প্রায় শেষ। তখন সাব্বির আর সৈকত বললো একবার দেখা করতে মেয়ের সাথে। পাত্রীকে না দেখে এতটা ওভার রিএক্ট করা ঠিক হচ্ছে না। ওদের অনেক চাপাচাপিতে শেষ পর্যন্ত নিমরাজি হয়ে দেখা করলাম। যদিও আমার প্লান ছিলো পাত্রীকে বুঝিয়ে বলবো আমার বিয়ে করা সম্ভব না। সে যেন বিয়েতে না বলে দেয় । তাহলে আমার সমস্যাগুলো আর থাকবে না। বাসা ছেড়ে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না এবং সবকিছু আবার আগের মত চলবে। কয়েকদিন পর দেখা করি ওর সাথে। আমার ইচ্ছে ছিলো কোন চাইনিজে দেখা করার, তবে তানিয়া বলেছিলো কোন খোলা জায়গায় বেড়াতে যাবার কথা। কিছু না ভেবেই রাজি হয়ে গিয়েছিলাম। একবারই তো দেখা হচ্ছে, তাই তার ইচ্ছেটাকে মেনে নিলে কোন ক্ষতি তো নেই। যদিও শেষ পর্যন্ত কোন প্লানই কাজে আসেনি। বলা হয়ে ওঠেনি বিয়েতে না করে দেওয়ার কথা।
দুই.
কখন ঘুমিয়ে পরেছিলাম নিজেরই খেয়াল নেই। ঘুম ভাঙার পর সময় দেখে বুঝতে পারলাম হাতে সময় খুব অল্প। দ্রুত রেডি হয়ে, মুখে হালকা কিছু গুঁজে দিয়ে অফিসের উদ্যেশে বের হচ্ছি এমন সময় তানিয়া পাশে এসে দাঁড়ালো। এটা ওর প্রতিদিনকার অভ্যাস। সাধারনত বিদায় জানানোর জন্য আসে তবে আজ সম্ভবত কিছু বলতে চাচ্ছে। জিজ্ঞাসা করলাম কিছু বলবে কি না। কয়েক মূহুর্ত পর বললো আজকে যেন একটু তারাতারি বাসায় ফিরে আসি। কি জন্য বললো জিজ্ঞাসা করলাম না । শুধু বললাম আচ্ছা, আসবো দ্রুতই। যেদিন তারাতারি বাসায় যাবার প্রয়োজন হয় সেদিন কাজকর্মে আরো বেশি ঝামেলা বাঁধে আজক আবার প্রমাণ পেয়েছি। শত চেষ্টা সত্ত্বেও রাত নয়টায় আগে অফিস থেকে বেরুতে পারলাম না। যদিও নরমাল অফিস টাইম নয়টা পাঁচটা। তবে বেছে বেছে আজকেই অনেকগুলো ঝামেলা বেঁধেছে । তাই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও তারাতারি বাসায় ফেরা সম্ভব হলোনা। এ মূহুর্তে বেশ ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। গাড়ির জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালাম। বড় বড় বৃষ্টির ফোঁটা জানালার কাঁচে এসে আঘাত করছে। খুব পরিচিত দৃশ্য, সাথে সাথে আমার প্রিয় দৃশ্যগুলোর একটি।
সাব্বির আর সৈকতের কথায় তানিয়ার সাথে দেখা করতে যাই। মায়ের কাছে তানিয়ার সেলফোনের নম্বর চাইতে মা খুশিই হয়েছিলো । ছয় দিন আছে বিয়ের আর এখন পর্যন্ত আমি পাত্রীর ছবিটাও দেখতে চাইনি। আর এখন সরাসরি মোবাইল নম্বর চাচ্ছি। মা এটাকে ভালো লক্ষন ভেবে খুশী মনে তানিয়ার নম্বর আমাকে দেয়। তানিয়াকে ফোন করে পরিচয় দেই সাথে সাথে বলি যে দেখা করার জন্য। ও খুশি মনে রাজি হয়ে যায় তবে একটা শর্ত জুড়ে দিয়েছিলো। খোলামেলা কোন জায়গায় দেখা করতে হবে। ওদিকে আমার ইচ্ছে ছিলো চাইনিজে দেখা করার। কিন্তু একদিনের বিষয় তাই ওর কথা মেনে নেই। নিজেই ড্রাইভিং করে ওর বাসার সামনে দিয়ে তানিয়াকে তুলে নেই। হালকা সেঁজেছিলো ও। মিষ্টি হাসি দিয়ে আমার পাশের সিটে বসে পরলো। তানিয়ার সাথে সামনাসামনি এটা আমার দ্বীতিয়বারের মত দেখা। প্রথম বার দেখা হয়েছিলো ওই আত্মীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে । সারা রাস্তায় তানিয়া বেশ বকবক করলো। আমি শুধু হ্যাঁ, হু, আচ্ছা, তাই এসব শব্দ দিয়ে চালিয়ে নিচ্ছিলাম। গাড়ি চালিয়ে গাজীপুরে চলে আসলাম। রাস্তায় দুপাশে গাছ আর গাছ। বিশাল বিশাল গাছগুলো যেন আকাশ ঢেকে দিতে চাইছে। কথাটা ভাবতে ভাবতে আকাশের দিকে তাকালাম। সাথে সাথে চমকে উঠলাম। ভয়ানক কালো মেঘে পুরো আকাশ অন্ধকার। আর হঠাৎ করেই শুরু হলো ঝড়ো হাওয়া। রাস্তার পাশে খোলা একটা জায়গা দেখে গাড়িটা থামালাম। ঝড়বৃষ্টি থামলে গাড়ি চালানো ভালো হবে। কারন যেরকম বাতাস তাতে দুই একটা গাছ ভেঙে যাওয়া অসম্ভব না। কথাটা ভাবতে ভাবতে রাস্তায় একটা গাছ ভেঙে পরলো। নিজের ভাগ্যকে ধন্যবাদ দিচ্ছি। যদি গাড়ি ড্রাইভ করতে থাকতাম তাহলে গাছটা নির্ঘাত গাড়িটার উপরেই পরতো। কিছুক্ষনের মধ্যেই বৃষ্টি শুরু আর বাতাস জোর কমে আসলো। বড় বড় বৃষ্টির ফোঁটা জানালার কাঁচে এসে আঘাত করছে। ঝড় শুরু হওয়ার পরপরই তানিয়া কথা বলা থামিয়ে ঝড়বৃষ্টি দেখছে। একপলক ওর দিকে তাকালাম তারপর চোখ ঘুরিয়ে নিলাম রাস্তার দিকে। অনেকদিন বৃষ্টিতে ভেজা হয়নি। দরজা খোলার শব্দ শুনে তানিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি এরমধ্যে সে দরজা খুলে বেরিয়ে গিয়েছে। অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখছি ওকে। এই ঝড়ের মধ্যে বৃষ্টিতে ভেজার কোন দরকার আছে। ধমক দিতে গিয়েও দিলাম না ওকে। আজকেই আমাদের শেষ দেখা তাই কি দরকার।
গাড়ি থেকে নিজে কখন বের হয়েছি নিশ্চিত না। বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে, বেশ ভারী বৃষ্টি। রাস্তার মাঝখানে দাড়িয়ে দুহাত ছড়িয়ে সেই বৃষ্টিতে ভিজছে তানিয়া। গাড়ির দরজাটার পাশে চুপচাপ দাড়িয়ে রয়েছি আমি। চারপাশে আবছায়া আলোয় সবকিছু অস্পষ্ট আবার স্পষ্ট। মাঝেমধ্যে হালকা বিদ্যুৎ চমকে উঠছে। আর সেই বিদ্যুতের আলোয় মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছি ওকে। মাথা ঘুরিয়ে ও তাকালো আমার দিকে। এরপর ছোট ছোট পদক্ষেপে আমার দিকে এগিয়ে আসলো। মাথা নিচু করে মাটির দিকে তাকিয়ে রয়েছে তানিয়া। কিছু বলবে কি না বোঝার চেষ্টা করছি। কিছু বললো না, শুধু চোখ তুলে আমার দিকে তাকালো। তারপর পা একটু উঁচু করে আমার ঠোঁটের কাছে ওর ঠোঁটজোড়া এগিয়ে নিয়ে আসলো। বোঝার চেষ্টা করছিলামখকি হচ্ছে তবে আমাকে সে সুযোগ দেয়নি তানিয়া। নরম মিষ্টি একজোড়া ঠোঁট আমার ঠোঁটের উপর চেপে বসলো। সাথে মিষ্টি মাদকতাময় এক গন্ধ। ওকে সরিয়ে দেওয়ার বদলে কখন যে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছিলাম নিজেও বলতে পারবো না। বৃষ্টির ফোঁটা জোরেশোরে আমাদের শরীরে এসে পরছিলো । তবে আমি কিছু অনুভব করছিলাম না। আমার পৃথিবী হঠাৎ শব্দশূন্য। শুধু ওর ঠোঁটের স্পর্শটাই অনুভব করছিলাম। মাতাল করা স্পর্শ।
নিজের গাড়ি হওয়া সত্ত্বেও পৌনে এগারোটা আগে বাসায় পৌছাতে পারলাম না। বাসায় প্রবেশ করে বুঝলাম বাবা মা সহ সবাই ঘুমিয়ে গিয়েছে। নিজের রুমে চলে আসলাম। তানিয়াকে রুমে না দেখে কিছুটা অবাক হচ্ছিলাম। জামাকাপড় চেঞ্জ করার সময় নাম ধরে ডাকলাম কয়েকবার। কোন সাড়াশব্দ নেই। রান্নাঘরে এসে বুঝলাম তানিয়া সেখানেও নেই। জানালা দিয়ে বাহিরে দৃষ্টি চলে গিয়েছে, এখনো বেশ বৃষ্টি হচ্ছে। কি মনে হয়েছিলো নিশ্চিত না, ছাদের উদ্যেশ্য সিঁড়ির ধাপগুলো ভাঙতে লাগলাম। অন্ধকার চোখে সয়ে নেওয়ার সাথে সাথে এদিক ওদিক তাকিয়ে ওকে খুঁজে নিতে সময় লাগেনি। তেমন শব্দ না করে তানিয়ার পাশে বসলাম। চুপচাপ বৃষ্টিতে ভিজছে ও।
- কত সময় বৃষ্টিতে ভিজছো ? কোন উত্তর আসলো না ওর থেকে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে বললাম, চলো ঘরে চলো, নাহলে ঠান্ডা লাগবে। এবারও কোন কথা বললো না ও।
- তোমাকে আজকে তারাতারি আসতে বলেছিলাম না ? খুব আস্তে তানিয়া জিজ্ঞাসা করলো।
- চেষ্টা করেছি কিন্তু হঠাৎ এতো কাজের চাপ....
- সবসময়ই শুধু তোমার কাজ। তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসো না।
কথাটা বলে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুধু করলো তানিয়া। হটাৎ এভাবে কান্না করার কারনটা ধরতে পারছি না। আগেও অনেকবার এবারের থেকেও দেরী হয়েছিলো, তখন তো এমনটা করেনি। চুপচাপ মেনে নিয়েছিলো সব। তাহলে আজকে কি হলো ! জড়িয়ে ধরলাম ওকে। এ মূহুর্তে আমার বুকের মাঝখানে ও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছে। অপেক্ষা করছি কখন ওর কান্না থামবে। এক সময় থেমে গেল। কিছুক্ষণ চুপ থেকে শুধু বললো,
- শুভ......আমি প্রেগন্যান্ট।
অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছি ওর দিকে। কি বলবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। বৃষ্টির মাত্রা বেশ বেড়ে গিয়েছে আর তার সাথে একটু পর পর বিদ্যুৎ চমকে উঠছে। বিদ্যুতের ঝলসে ওঠা আলোতে ওকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। একটু মাথা নিচু করে তাকিয়ে রয়েছে ও। যেমন তাকিয়ে ছিলো আমাকে প্রথমবার চুমু খাবার পর। মাথাটা একটু উঁচু করে আমার দিকে তাকালো ও, খুব পরিচিত দৃষ্টি। যে দৃষ্টি আমাকে আবার প্রেমে পরতে বাধ্য করেছিলো । নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছি বেশ খানিকক্ষণ আগে। এ মূহুর্তে মিষ্টি একজোড়া ঠোঁটের স্বাদ পাচ্ছি। ভালোবাসায় সিক্ত মাতাল করা স্পর্শ।
(সমাপ্ত)
©somewhere in net ltd.