![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন স্টুডেন্ট তাই ভালো কিছু করতে চাই।
দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছেন এ দেশের সেনারা। বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা মিশনের সদস্যদের পদচিহ্ন সারা বিশ্বে। পূর্ব তিমুর থেকে হাইতি, ক্রোয়েশিয়া থেকে নামিবিয়া, ইউরোপ থেকে উষ্ণ পূর্ব এশিয়া এবং সাহারার মরুপ্রান্তরেও বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের বিচরণ। শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ১৯৮৮ সাল থেকে। সেনাবাহিনীর ১৫ জন অফিসারের ইরান-ইরাক (UNIMOG)-এ সামরিক পর্যবেক্ষনই প্রথম মিশন। এরপর অতি অল্প সময়েই বাংলাদেশ জাতিসংঘের সবচেয়ে বেশি সেনা প্রদানকারী দেশের স্বীকৃতি লাভ করে। এ পর্যন্ত বিশ্বের ৪০টি শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১ লাখ ৭ হাজার ৪৮৭ জন সদস্য অংশ নেন। প্রায় এক যুগ ধরেই বাংলাদেশ শীর্ষ চারটি দেশের মধ্যে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে। বর্তমানে আট হাজারের বেশী সেনা শান্তিরক্ষী নিয়ে বাংলাদেশ শীর্ষ অবস্থানে আছে। চলমান কার্যত্রমেও রয়েছে ১২টি দেশ। এসব মিশনে এ দেশের নারী অফিসাররা উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় অংশ নিচ্ছেন। ২৫ বছর ধরে বিদেশ-বিভূঁইয়ে বাংলাদেশি সেনা শন্তিরক্ষীদের অর্জন অনেক। সাফল্যের পর সাফল্যে আমাদের সেনা সদস্যরা বাংলাদেশকে অসামান্য উচ্চমর্যাদায় আসীন করেছে। এসব দেশের মধ্যে, যুগোস্লাভিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো, আইভরি কোস্ট, দক্ষিণ সুদান, মোজাম্বিক, সিয়েরা লিয়ন, লাইবেরিয়া, হাইতি, পূর্ব তিমুর শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাফল্য ঈর্ষণীয়। ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী বাহিনী সাবেক যুগোস্লাভিয়ার বিহাচে (Bihac) পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার ক্ষেত্রে কঠিন ভূমিকা পালন করে। বসনীয় ও ক্রোয়াট বাহিনী দ্বারা বেশ কয়েক সপ্তাহ অবরুদ্ধ থাকার পরও বাংলাদেশি সেনা সদস্যরা বিহাচে দৃঢ়তা ও সততার সঙ্গে তাঁদের অর্পিত দায়িত্ব পালন করে জাতিসংঘের ভাবমূর্তি অক্ষুন্ন রাখেন। ১৯৯৫ সালে সোমালিয়ার ইউনোসোমে (UNOSOM) জটিল অবস্থার মুখে পড়েও বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী বাহিনী তাঁদের সাহস ও মনোবলের মাধ্যমে শান্তি মিশন শেষ হওয়া পর্যন্ত জাতিসংঘের বেসামরিক কর্মীদের এবং অন্যান্য সামরিক কন্টিনজেন্টের জন্য নিরাপদ প্রস্থানের পরিবেশ নিশ্চিত করেন। ২০০৩ সালে ব্যাপক সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে কঙ্গোর ইতুরি প্রদেশে হাজার হাজার মানুষ মারা যায়। এসময় বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা তৎক্ষণাৎ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সচেষ্ট হন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ কঙ্গোর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সেনা অভিযানকে সফল করে। আইভরি কোস্টে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন-পরবর্তী উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে সবচেয়ে গোলযোগপূর্ণ এলাকা আবিদজান, ডালোয়া, মান এবং বহুল আলোচিত গালফ হোটেলে অবস্থানরত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রেসিডেন্ট আলাসান ওয়াতারার নিরাপত্তার দায়িত্বে সাফল্যের সঙ্গে নিয়োজিত ছিলেন। আবিদজানে নিয়োজিত বাংলাদেশি কন্টিনজেন্টগুলো বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের ৬০ জনেরও বেশি কূটনীতিককে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার দায়িত্বও সফলভাবে সম্পন্ন করে। দক্ষিণ সুদানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জুবা অঞ্চলে নিয়োজিত বাংলাদেশি কন্টিনজেন্টগুলো তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে জাতিসংঘ আয়োজিত গণভোট সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন করে। আইভরি কোস্টের গোলযোগপূর্ণ পরিস্থিতি চলাকালে লাইবেরিয়ায় নিয়োজিত বাংলাদেশি কন্টিনজেন্টগুলো প্রত্যক্ষভাবে শরণার্থী পরিস্থিতি মোকাবিলায় সীমান্ত অঞ্চলে নিয়োজিত ছিল। শরণার্থী নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশি কন্টিনজেন্ট বুটুও নামক স্থানে একটি নতুন ক্যাম্পও স্থাপন করে। সামগ্রিকভাবে লাইবেরিয়ার আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট উন্নয়নে বাংলাদেশ প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখে চলেছে। এ ছাড়া লাইবেরিয়ার সেনাবাহিনীকে বাংলাদেশ ব্যানইঞ্জিনিয়ার কম্পানির প্রশিক্ষণের বিষয়টি ওই দেশের সরকার বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অবদান আজ সারা বিশ্বে স্বীকৃত। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আজ বাংলাদেশ একটি আদর্শ। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে নেতৃত্বসম্পন্ন। এ দেশের শান্তিরক্ষীরা বিদেশের মাটিতে শত্রুর সামনে কখনোই মাথা নত করেননি কিংবা বিপদের মুখে বা সংকটময় পরিবেশে পিছু হটেননি। জীবনঝুঁকির মধ্যেও জটিল ও বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে কাজ করে থাকেন। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৯১ জন শান্তিরক্ষী বিশ্বশান্তি রক্ষায় প্রাণ উৎসর্গ করেছেন। ১৩৯ জন শান্তির জন্য লড়াই করতে গিয়ে বিভিন্নভাবে আহত হয়েছেন। শান্তিরক্ষায় কাজ করতে গিয়ে এ দেশের সেনাবাহিনীর সদস্যরা নানা বিপদের সম্মুখীন হলেও তা কখনো তাঁদের মনোবল ভাঙতে পারেনি। এছাড়া জাতিসংঘের ২৫টি শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে (ইউএনপিকেও) এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর এক হাজার ৫১৬ জন অফিসার ও নাবিক অংশ নিয়েছেন। বর্তমানে আটটি ইউএনপিকেওতে ৫২৬ জন অফিসার ও নাবিক পর্যবেক্ষক, এসও ও কন্টিনজেন্ট সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৯৩ সালে বসনিয়া-হার্জেগোভিনায় ইউএনপিআরওএফওআরে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হয়। এরপর ১৯৯৫ সালে ইউনিকমে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী হেলিকপ্টারসহ অংশ নেয়। আট বছর ধরে ওই অভিযান অব্যাহত ছিল। ২০১১ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ২১টি দেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর দুই হাজার ৬৫৯ জন সদস্য সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব সম্পন্ন করেন। ১৯৮৯ সাল থেকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অন্যান্য বাহিনীর পাশাপাশি বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা অংশ নিচ্ছেন। এ পর্যন্ত মোট সাত হাজার ৫২২ জন পুলিশ সদস্য অংশ নিয়েছেন। বর্তমানে ৯টি মিশনে দুই হাজার ৫৩ জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন আছেন। উপরোক্ত বিষয়গুলি পর্যালোচনা করলেই বুঝা যায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অবদান অসামান্য।
©somewhere in net ltd.