![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন স্টুডেন্ট তাই ভালো কিছু করতে চাই।
উত্তরাঞ্চলের নীলফামারীসহ রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলায় মানুষজনের এখন নুন আনতে পান্থা ফুরায় না। এখন কাজ ও খাদ্যের অভাবে মানুষজনকে আহাজারির সুরে কাঁদতেও হয় না । আশ্বিন শেষে শুরু হচ্ছে কার্তিক মাস। এক সময় এই কার্তিক মাস ছিল এই এলাকার মানুষজনের কাছে দত্তদানবের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তাই প্রবাদ ছিল হাতিকে ঠেলা যায়, কার্তিককে নয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে হাতির পাল থেকে কার্তিকের কৃত্তিকাকেও সহজে ঠেলে দিতে পারছে কর্মমুখী মানুষজন। ঋতু পরিক্রমার প্রকৃতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে সভ্যতার চরম উৎকর্ষতায় উঠে আসা সমগ্র মানবজাতির অংশ হিসেবে নিকট অতীতেও মঙ্গাপীড়িত পরিচিত বৃহত্তর রংপুরের ৫ জেলার মানুষ সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এখন খুঁজে পেয়েছে জীবন-জীবিকা। তাই যে সময়টায় মঙ্গা পরিস্থিতি বিরাজ করত সে সময় এখন এই ৫ জেলার মানুষের তথা প্রান্তিক কৃষক এবং কায়িক শ্রমিকদের মুখে হাসি ফুটেছে। আগাম জাতের রোপা আমন যেমন ঘরে উঠেছে তেমনি আগাম জাতের শীতকালীন সবজি উঠতে শুরু করেছে। শুধুমাত্র কচু খেয়ে জীবন বাঁচানোর দিন শেষ। যে কচু বা সজী কম দামে পাওয়া যেত সেই কচু ও এখন আলুর চেয়েও দামী। তাই রংপুর অঞ্চলের মঙ্গা এখন ভুলে যাওয়া এক শব্দ। পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। জীবন ধারণ, সংসার জীবন, পরিবার-পরিজন নিয়ে চলমান সময়ের সঙ্গে পালা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে জীবন ধারা। সময়ের সঙ্গে পাল্টে যাচ্ছে মঙ্গার চিত্র। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, দেশে মঙ্গা পরিস্থিতি আর আগের মতো নেই। সরকারের বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প গ্রহণ ছাড়াও স্থানীয়দের আপ্রাণ চেষ্টায় মঙ্গা এলাকায় বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে। মঙ্গার ভয়াবহতা আস্তে আস্তে কমে আসতে শুরু করেছে। সরকার কৃষি খাতে এবং কৃষকদের উন্নয়নে ব্যাপক অর্থ বরাদ্দ করেছে। খাদ্য উৎপাদনে বিভিন্ন কর্মসূচীর কারণে মঙ্গা এলাকার মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে। মঙ্গা বা অভাব দূরীকরণে বর্তমান সরকার অক্লান্ত চেষ্টায় কৃষি সেক্টরে ফসলের বহুমুখীকরণ থেকে ক্ষুদ্র কুটির শিল্প এবং ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রকল্পের উদ্যোগ মাইলফলক সৃষ্টি করেছে। আগাম আমন ধান ঘরে উঠেছে, সেই জমিতে কৃষক আলু বুনছেন, বুনছেন শাকসবজি। প্রতি কাজে কায়িক শ্রমিকদের কদর বেড়েছে। চারদিকে ফসলের মাঠে কাজ আর কাজ।এ ছাড়া খরাসহিষ্ণু বিশেষ আগাম জাতের ধান চাষ হওয়ায় এখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। ফলে অভাবের এই চরম মুহূর্তে পাকা ধান গোলায় তুলতে পেরে কৃষকের মুখে ফুটছে হাসি। এলাকার কৃষকরা জানান, শস্য নিবিড়তা বৃদ্ধির মাধ্যমে আশ্বিন-কার্তিকের মঙ্গা নিরসন, কর্মসংস্থান ও খাদ্যনিরাপত্তা বিধানে একই জমিতে বছরে ৪ বার ফসল ফলানোর লক্ষ্যে তাঁরা দুই জাতের ধান রোপণ করেছেন। এতে অল্প সময়ে তাঁরা বিঘাপ্রতি ১৫ থেকে ১৮ মণ ধান পাচ্ছেন। উদ্ভাবনের যেন শেষ নেই। ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভিটামিনযুক্ত জিংক ধান রংপুরের নীলফামারী, কুড়িগ্রাম লালমসিরহাট, গাইবান্ধা ও রংপুর জেলাগুলোর মানুষকে আরেকটি নতুন উৎস খুঁজে দিয়েছে। কারণ এ অঞ্চলে বেশিরভাগই ভূমিহীন, চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। কামলা খেটে জীবন চালায়। কাজ না পেলে অনাহারে থাকে। এদের অপুষ্টি থেকে রক্ষায় জিংক ধান এসেছে। এই ধান বিষয়ে ড. আলমগীর হোসেন বলেন, ৪০ ভাগ শিশু যাদের বয়স ৫ বছরের নিচে তারা অপুষ্টিতে এবং তাদের মধ্যে ৪৪ ভাগ আবার জিংক স্বল্পতায় ভুগছে। এছাড়া প্রায় ৬০ ভাগ মহিলা জিংক স্বল্পতাজনিত রোগে ভুগছে। যেহেতু ধান আমাদের প্রধান খাদ্য, তাই জিংক সমৃদ্ধ ধান চাষ ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এই ধানের ভাত খেলে মেধা বিকাশের পাশাপাশি শারীরিক বৃদ্ধিও ঘটবে। সাধারণ ধানে ৯ থেকে ১২ মিলিগ্রাম জিংক থাকলেও এ জাতের ধানে জিংক রয়েছে ২৪ মিলিগ্রাম। তিনি জানান, পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশেই প্রথম জিংকসমৃদ্ধ ধান উৎপাদন করা হয়েছে। এটিই প্রথম উচ্চ ফলনশীল জিংকসমৃদ্ধ জাত।
©somewhere in net ltd.