প্রার্থনা

০৬ ই জুন, ২০১৬ রাত ১২:১৮

'আজকে জুম্মা পড়তে না গেলে দুপুরে খাবার বন্ধ', প্রতি শুক্রবার সকালের সাবধানবাণী ছিল মা'এর। সুতরাং; পাঞ্জাবি টুপি লাগিয়ে ১২'টার মধ্যে প্রস্তুত, দাদা আর আমি। বাস্তবতা আজ মা থেকে দশ হাজার হাজার মাইল দুরে সরিয়ে এনেছে, আর দাদা চলে গেছে সম্ভবত দশ আলোকবর্ষ দুরে। তাগাদা দেয়ার কেও নেই তাই, আজ শুক্রবার 'জগিং দিবস', ঘর থেকে আরো ১০ মাইল দুরে। তারপর ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফেরা, একটা চার্চ'এর ঘন্টা বাজছে। সময় ১২:৩০, জুম্মার সময়; অগত্যা চার্চ'এ প্রবেশ। আমি আর আমার পাপ।
দ্বিধা আর কিঞ্চিত ভয় নিয়ে নিঃশব্দে শেষের সারিতে বসলাম। হালকা কোনো ধর্মীয় সংগীতে শুদ্ধতার বাতাস। প্রায় ৪০০ কেদারায় দু-একটা মানুষ। উচু উচু জানালার কাঁচ ভেদ করে ঈশ্বরের আলো। একজন নান এসে বললেন 'তুমি সামনে এসে বসো, এখনি প্রার্থনা শুরু হবে'।
'আমি মুসলিম, আমি প্রার্থনা করতে আসিনি'।
'একই ঈশ্বর'কে ডাকবো আমরাও, চলো'।
প্রার্থনা শুরু হলো। ১৫ জন আলখেল্লা পরিহিত নান আর পাদ্রী, ২ জন স্বেচ্ছাসেবক, ৭ জন অনুসারী, ১ জন গৃহহীন পাগল আর আমি, বেসবল ক্যাপ পরিহিত ১ জন মুসলিম। অজানা সেই প্রার্থনার একপর্যায়ে ইচ্ছা হচ্ছিলো কনফেশন ঘরে গিয়ে সব পাপ স্বীকার করি। কিন্তু ফাথার বোঝেনা বাংলা আর আমার ফ্রেঞ্চ ঈশ্বর'ও বুঝবে না।
ক্ষণে ক্ষণে মা-মরিয়ম'কে কুর্নিশ করছে সবাই। হিন্দুরাও তাই করে; মা'এর প্রতিমা'কে প্রনাম। ঈশ্বর'ও তো মা'কেই পছন্দ করেছিলেন সৃষ্টিকে পৃথিবীতে পাঠানোর জন্যে। এই কথা আমি বলেছিলাম বলে এক মুসলিম ভাই আমাকে বললেন 'লা হাউলা ... তওবা করেন! আল্লাহ'তায়ালা 'কুন ফায়া কুন' বলেই সমগ্র বিশ্ব-ভ্রমান্ড সৃষ্টি করেছেন আর তিনি নিবেন নারীর সহায়তা'?
তবুও নারীর গর্ভেই আমাদের সৃষ্টি করেন ঈশ্বর। তবুও নারীকেই জীবন্ত কবর দিতাম আমরা। মুহাম্মদ (স বলে গেছেন এই কথাও, শুধু এইটাই কানে ঢোকেনি আমাদের। 'মা' তুলে গালিগালাজ করা আমাদের স্টাইল। আমি ক্ষমাপ্রার্থী মা মরিয়ম।
বাইরে এলাম, মিলিটারী দাড়িয়ে। ব্রাসেলস নিরাপদ নয়, ধর্মের কিতাবের উপর দাড়িয়ে যুদ্ধ চলছেই।

২ টি +০/-০