![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি আসলে একজন বইপোকা। লেখালেখির অভ্যাস কখনওই ছিলনা। কিন্তু একটা বই পড়ার পর সেটার ভাল লাগা মন্দ লাগা মানুষকে জানাতে ইচ্ছে করত। সাহস করে একদিন লিখে ফেলললাম একটা বইয়ের রিভিউ। পাঠকের অনেক প্রসংসাও পেলাম। সেখান থেকেই আমার লেখালেখি শুরু। কেউ কেউ বলতো, আপনি রিভিউয়ে কাহিনীর এত সুন্দর বর্ণনা করেন ইচ্ছে করে মূল বই থেকে আপনার লেখা রিভিউটাই বার বার পড়ি। এরকম মন্তব্য হয়তো আমার শুভাকাঙ্খিরা আমাকে খুশি করার জন্য করতো। কিন্তু আমি লেখালেখির সাহস পেয়েছি এসব মন্তব্য থেকেই।
আব্দুল জব্বার সাহেবের সুখের সংসার। কোনও কিছুর কমতি নেই সংসারে। আল্লাহর ইচ্ছায় ভালই টাকা-কড়ি কামিয়েছেন তিনি। ঢাকা শহরে দুটা বাড়ি আছে তার, গাড়িও আছে কয়েকটা। তবে এতকিছুর মধ্যেও তার মধ্যে একটা আপূর্ণতা রয়ে গেছে। তার বড় মেয়ে তার কাছে নেই। কেন নেই? সে এক লম্বা ইতিহাস।
নাজমার সাথে খুব ধুমধাম করেই বিয়ে হয়েছিল জব্বার সাহেবের। বিয়ের একবছর পর্যন্ত খুব আনন্দেই কাটল তাদের দিন। বিয়ের দেড় বছরের মাথায় তার স্ত্রী যখন মেয়ের জন্ম দিল তারপর থেকেই ঘটনার সূত্রপাত। অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকায় নিজের স্ত্রীকে সময় দিতে পারতেন না তখন। সবসময় টাকার পেছনে ছুটে বেড়িয়েছেন। এর মধ্যে স্ত্রীর হৃদয় দখল করে নিয়েছে হাটুর বয়সী একটা ছেলে। তিনি প্রথম দিকে সন্দেহ করলেও প্রমাণের অভাবে কিছু করতে পারেননি। একটা সময় বুঝতে পারলেন তার স্ত্রীর জৈবিক চাহিদা মেটাচ্ছে ১৬ বছর বয়সি ঐ ছেলেটা। একদিন নিজের বেডরুমে হাতেনাতে ধরেও ফেললেন দুজনকে। নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারেননি জব্বার সাহেব। সাথে সাথে স্ত্রীকে তালাক দেন তিনি। যাওয়ার সময় একমাত্র মেয়েটাকে সাথে নিয়ে যায় তার স্ত্রী। তারপর বেশকিছুদিন পর আবার বিয়ে করেছেন জব্বার সাহেব। দুটা ছেলে হয়েছে। সুখে সংসার করছেন এখন। বড় ছেলে এবার এইচ এস সি দিচ্ছে ছোটটা ক্লাস টেন এ পড়ে।
অফিসে নিজের কামরায় বসে পুরনো দিনের কথা ভাবছিলেন জব্বার সাহেব। হঠাৎ করে রুমে সেক্রেটারি ঢুকায় তিনি ভাবনার জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরে এলেন। উনার সেক্রেটারি রুমা কেমন যেন। পোশাকগুলো একটু বেশিই আটোশাটো পড়ে। মাঝে মাঝে কথা বলার সময় বুক থেকে ওড়না পড়ে যায়। এসব কী ইচ্ছাকৃত নাকি কাকতালীয় তিনি বুঝতে পারছেন না। তবে এটা ঠিক বুঝতে পারছেন পঞ্চাশ বছর বয়সেও উনার শরীরে যৌবন জাগে, কাম জাগে। উলটা পালটা ভাবতে ভাবতে তিনি একটা স্বিদ্ধান্ত নিলেন। তখন যদি জানতেন কত বড় ভুল তিনি করতে যাচ্ছেন তাহলে এই স্বিদ্ধান্ত নেয়ার কথা স্বপ্নেও ভাবতেন না। হঠাৎ করেই তার ইচ্ছা হল কচি বয়সের একটা মেয়ের সাথে প্রেম করবেন। রুমার ভাবভঙ্গিতে বুঝা যায় যে ও কিছুটা উনার উপর আকৃষ্ট। কিন্তু ওর সাথে প্রেম করা যাবেনা। অফিসে উনার স্ত্রী আসেন প্রায়ই। উনি চাননা আরেকবার উনার সংসার নষ্ট হোক।
আজ একটু সকাল সকাল অফিস থেকে বের হয়ে পড়লেন জব্বার সাহেব। ড্রাইভারকে বিদায় দিয়ে তিনি একাই গাড়ি নিয়ে বের হলেন। যমুনা ফিউচার পার্ক থেকে একটা জিনস এর প্যান্ট, লাল রঙের একটা পোলো টি-শার্ট, একজোড়া কনভার্স এবং একটা সানগ্লাস কিনলেন। ট্রায়াল রুম থেকে স্যুট বুট বদলিয়ে এগুলো পড়েই বের হলেন। শোরুমের বড় আয়নায় নিজেকে দেখলেন। আমেরিকান প্লে-বয়দের মতই লাগছে। উনার ছেলেরা এই পোশাকে উনাকে দেখলে ভিমড়ি খেত, কথাটা ভেবে খুব হাসি পেল জব্বার সাহেবের।
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সামনে গাড়ির গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন জব্বার সাহেব। কোথায় যেন একটা প্রতিবেদনে পড়েছিলেন ঢাকা শহরের অনেক নামি দামি ইউনিভার্সিটির মেয়েরা বয়স্ক লোকের সাথে প্রেম করে ভার্সিটির খরচ চালায়। সেজন্যেই এখানে আসা। কোনও মেয়ে যদি উনাকে পছন্দ করে। প্রায় সন্ধ্যা পর্যন্ত উনি এখানে দাঁড়িয়ে থেকে তারপর বাসার দিকে রওনা দিলেন। বাসায় ঢুকার আগে গাড়িতে বসেই কাপড় পালটে নিতে ভুললেন না। এভাবে বেশ কয়েকদিন নর্থ সাউথের সামনে ডিউটি দেয়ার পর একদিন উনার কপাল খুলল। ২০ বছর বয়সি একটা মেয়ে, টাইট জিন্স আর টিশার্ট পড়া, উনার সামনে এসে বলল “ বেশ কয়েকদিন ধরেই দেখছি আপনি আমাকে ফলো করছেন, আমার দিকে তাকিয়ে থাকছেন। ঘটনা কী?” জব্বার সাহেব একথা শুনে মনে মনে খুশি। তিনি আসলে কোনও নির্দিষ্ট মেয়ের দিকে তাকাননি। সব মেয়ের দিকেই তাকিয়েছেন, চোখ দিয়ে সবাইকে মেপেছেন। কিন্তু মেয়েটা মনে করছে, শুধু তাকেই উনি নজরে রেখেছেন। উনি একটু সাহস নিয়ে বললেন “তোমার জন্যই প্রতিদিন দাঁড়িয়ে থাকি এখানে, হয়তো বিশ্বাস করবেনা তোমাকে একনজর দেখার জন্যই এখানে দাঁড়িয়ে থাকি। প্রথমদিন তোমাকে দেখেছিলাম যমুনা ফিউচার পার্কে। তারপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই তোমাকে দেখার আশায় এখানে এসে দাঁড়িয়ে থাকি” কথাগুলো এক নিশ্বাসে বলে শেষ করলেন জব্বার সাহেব। মনে হয় কিছুটা কাজে লেগেছে। মেয়েটা উনার দিকে আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে। অবশেষে মেয়েটা মুখ খুলল, “ আমাকে ভালবাসতে চান? আমার ভালবাসা কিন্তু অনেক দামী। দাম দিতে পারবেন?” অর্থপূর্ন হাসি দিয়ে বলল মেয়েটি। জব্বার সাহেব জবাব দিলেন, “তোমার ভালোবাসা পেতে আমি যেকোনও দাম দিতে প্রস্তুত”। “তাহলে চলুন কোনও রেস্টুরেন্টে বসে কথা বলা যাক” মুচকি হেসে কথাটা বলে গাড়িতে উঠে পড়ল মেয়েটি।
একমাস হলো জব্বার সাহেব মেয়েটির সাথে প্রেম করছেন। প্রতিদিনই অফিস থেকে আগে আগে বের হয়ে পোশাক পালটে মেয়েটির সাথে দেখা করতে যান। মেয়েটিকে উনার খুব ভাল্লাগে। নজড়কারা ফিগার। উনার সাথে যখন টাইট জিন্স আর টপস পড়ে বের হয় তখন বার বার উনার ভিতরে কামনার আগুন জ্বলে উঠে। এই এক মাসে উনি বেশ কিছু টাকা মেয়েটাকে দিয়েছেন। মেয়েটা চায়নি যদিও, উনি জোড় করেই দিয়েছেন। বলেছেন, পছন্দের কিছু কিনে নিতে। অনেক কাহিনীর পর মেয়েটা আজকে তার সাথে হোটেলে যেতে রাজি হয়েছে। বলেছে, শুধু একঘন্টা থাকবে হোটেলে, এরমধ্যেই যা করার করতে হবে।
ঢাকার একটি অভিজাত আবাসিক হোটেলের বিলাসবহুল একটা কামরায় দুজন মুখোমুখি বসে আছেন। জব্বার সাহেব আস্তে আস্তে মেয়েটির গায়ের কাপড় খুলে ফেললেন। মেয়েটি শুধুমাত্র অন্তর্বাস পড়ে চোখ ঢেকে বসে আছে। জব্বার সাহেব বললেন ঃ-
- তোমাকে খুব ইয়ে লাগছে, ঐ যে তোমাদের বয়সি ছেলে মেয়েরা কথায় কথায় একজন আরেকজনকে বলো না?
- সেক্সি?
- হ্যাঁ হ্যাঁ, সেক্সি। তোমাকে খুব লাগছে ওটা।
- যাহ! কি যে বলেন না, আপনি খুব নটি হয়ে গেছেন।
- আমার কী দোষ? তোমার পাগল করা ফিগার আমাকে নটি করে দিয়েছে।
জব্বার সাহেব মেয়েটির শরীরের স্পর্শকাতর জায়গায় হাত বুলালেন কিছুক্ষণ। তারপর জিজ্ঞেস করলেন ;-
- আচ্ছা, তোমার বাবা-মা যদি আমাদের ব্যাপারটা জানতে পারে তাহলে কী হবে?
- আমার বাবা নেই, আমি যখন খুব ছোট তখন কার এক্সিডেন্টে মারা গেছে। জানার মধ্যে মা জানলে হয়তো কিছু বলবে। কিন্তু কী করব, ভার্সিটির খরচ মা একা চালিয়ে উঠতে পারেন না। সেজন্যে আমি আপনার বয়সি লোকেদের সাথে প্রেম করে কিছু টাকা কামাই।
- আহা রে! বেচারি। কষ্ট দিয়ে ফেললাম তোমাকে।
এই বলে মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন জব্বার সাহেব। মেয়েটাও মুখ লুকিয়ে কিছুক্ষণ কান্না করল। জব্বার সাহেব আবার জিজ্ঞেস করলেন ;-
- আচ্ছা, তোমার বাবার নাম কী ছিল?
- আব্দুল জব্বার
- বাহ বাহ, আমার নামে নাম। তোমার মায়ের নাম কী?
- মিসেস নাজমা জব্বার
জব্বার সাহেবের শরীর ঘামছে। হৃদপিন্ড ঢিব ঢিব করে শব্দ করছে। তিনি সাহস করে জিজ্ঞেস করলেন ;-
- তোমার নানার নাম কি আবুল কালাম?
- হ্যাঁ, কেন? আপনি জানলেন কী করে?
এই কেনর উত্তর জব্বার সাহেব দিতে পারেনি। তার দুর্বল হৃদপিন্ড আর সহ্য করতে পারেননি। ওখানেই স্ট্রোক করে হৃদপিন্ড বন্ধ হয়ে যায় তার।
০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৩৪
মাসুম আহমেদ আদি বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা জুন, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৪
বিজন রয় বলেছেন: করুণ পরিণতি।
আপনি ভাল লিখেন।