| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হাসি, আনন্দ আর ভালবাসা গুলো ছড়িয়ে দিতে চাই নিজের ও নিজের আসেপাশের কিংবা ভালবাসার মানুষদের কাছে । আর রাগ, ঘৃণা , দুঃখ ,ক্ষোভ অথবা কষ্ট গুলো থাকনা নিজের মাঝে- বদ্ধ ঘরে । আমার ও আমাদের ক্ষুদ্রতার শৃঙ্খল আমাদের বঞ্চিত করে মিলনের আনন্দ থেকে । তাই ভেঙ্গে ফেলি চল নিজের ক্ষুদ্রতার শৃঙ্খল
মাসের ১-১০ তারিখ টিউশনিতে মোটামুটি রেগুলার যাওয়া হয় । ইচ্ছে করে দাঁড়ি গোঁফ লম্বা করি । কবি হওয়ার চেষ্টায় নয় ; অভিভাবক কে স্বরন করিয়ে দেয়ার জন্য টাকা দেয়ার সময় হয়ে গেছে । বন্ধু সাকিলের এ বুদ্ধি টি ভাল এ কাজ করে ।
আজ অন্যান্য দিনের মত বুক ভরা আশা নিয়ে দাঁড়ি গোঁফ বড় করে তকি কে পড়াতে গেলাম । এইচ এস সি পরীক্ষার শুরুর পর হাতে একটি মাত্র টিউশনি । ক্রেডিট ফি টা ও বাকি পড়ে আছে ।
তকি কে পড়ান শেষে একটু জানান দিয়ে বের হওয়ার প্রচেষ্টায় উদ্দত হলে তকির আম্মু ডেকে বলল বাবা তোমার বেতন টা নিয়ে যাও । মনে আনন্দের জোয়ার বইয়ে গেল । তিনি সযত্নে একটা নতুন খাম ধরিয়ে দিলেন । আমি খাম টা পকেটে পুরে বিদেয় জানিয়ে বিদেয় হলাম । ২ তলা থেকে নেমে খাম টা বের করে টাকা টা গুনে নিলাম । গত মাসের অনুরোধে বেতন টা বাড়ান হল । তিন হাজার থেকে চার হাজার এল । পুরো মাসের ক্লান্তি নিমিষে ই মিটে গেল ।
তকির বাসা গুয়াবাড়ি । গুয়াবাড়ি থেকে সুরমা রিকসা ভাড়া ২০ টাকা । রাতে বেড়ে হয় ৩০ টাকা । আজ অনেক দেরি হয়ে গেল তাই আজ আর রিকসা মিলল না । অবশ্য মাসের অধিকাংশ দিন হেঁটে ই আসা যাওয়া করি । কিন্তু পকেটে টাকা নিয়ে হেঁটে যাওয়া মানানসই না তাই আরও কিছুক্ষন অপেক্ষা করলাম । নাহ রিকসা আজ আর মিলল না । অগত্যা হাঁটা ধরলাম ।
গুয়াবাড়ি থেকে রাগিব আলি হল পর্যন্ত সবসময়ই আন্দকার । তার উপর আজ আবার লোডশেডিং । যদিও কৃত্রিম আলো এখানে তেমন কোন প্রভাব ফেলে না । হেঁটে হেঁটে যখন ক্রমশ অন্ধকার রাস্তায় আসতে শুরু করলাম আমার ভয়টা পাল্লা দিয়ে বাড়তে লাগল । এমনটা সচরাচর ঘটে না আজ কেন এমন হচ্ছে বুজতে পারলাম না । কেউ একজন মনে হচ্ছে মাথার ভিতর বলে যাচ্ছে মাসুম আজ আর এ রাস্তায় যাস না । বাধা না শুনে আমি বীরদর্পে এগিয়ে গেলাম । কিছু দূর এগোনের পর দুই যুবক আমার পথ আগলে দাড়াল । আমি পাশ কাটিয়ে হাঁটতে চেষ্টা করলাম । এরপর তাদের মুখে কড়া আদেশ এই দাড়া । আমি দাড়ালাম । একজনের হাতে কিছু একটা চক চক করে তার উপস্থিতি জানান দিল । শরীর টা শিতল হয়ে গেল । একটুখানি বাতাস শরীরে কাপুনি দিয়ে গেল । আমি বুঝতে পারলাম আমি জীবনে প্রথম বারের মত ছিনতাইকারীর কবলে পড়ছি । সারা মাসের কষ্টে উপার্জিত এ টাকা গুলো কি হাতছাড়া হয়ে যাবে । আমি বহু কষ্টে নিজেকে সামাল দিলাম । ওরা সেনা বাহিনীর ক্যাপ্টেনের মত আদেশ দিল মানি ব্যাগ বের কর । আমি সিপাহীর মত হুকুম তামিল করলাম । ওরা ওদের কাজ শেষ করে চলে গেল । আমি দাঁড়িয়ে থেকে ওদের চলে যাওয়া দেখলাম । আমি নির্বাক । চোখদুটি ভিজে এল । ধুর আমি এ কি করছি । সামান্য কয়টি টাকা মাত্র । নিজেকে বুজাতে চেষ্টা করলাম – ব্যর্থ হলাম । আমি আবার হাঁটা ধরলাম । অন্ধকার পেরিয়ে আলোর দিকে ।
©somewhere in net ltd.