নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনের কথা বলতে চাই

মাজেদ-উল হক চৌধূরী

মাজেদ

মাজেদ-উল হক চৌধূরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নাকি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ?

১৮ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১:৪৬

একজন মানুষ যেমন সোজা হয়ে দাড়াতে হলে তার মেরুদন্ড প্রয়োজন তেমনি একটা জাতি যদি পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাড়াতে চায় তবে তারও মেরুদন্ড প্রয়োজন। আর আমরা সবাই জানি শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষার উন্নতি ছাড়া জাতির উন্নতির কথা চিন্তা করা যায় না। আর তাই একটা দেশকে, একটা জাতিকে শিক্ষিত করে তুলার জন্য প্রয়োজন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের চাহিদার অনুপাতে মানসম্পন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বড়ই অভাব। আর এই সুযোগেই গত কয়েক বছর ধরে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরী করছে। তারা শিক্ষার চেয়ে ব্যবসার দিকটাকেই বেশী গুরুত্ব দিচ্ছেন যেহেতু তাদের প্রধান উদ্দেশ্য শিক্ষা নয় ব্যবসা। অসহায় ছাত্রদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন কষ্ঠার্জিত টাকা।



কিন্তু তাতেও তাদের পেট ভরছেনা। তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রয়েছে নিজস্ব কোচিং। সেখানে ছাত্রদেরকে ভর্তি করার জন্য তারা প্রত্যেক্ষ এবং পরোক্ষভাবে চাপ প্রয়োগ করে। কোচিং ব্যবসা জমজমাট করার জন্য তাদের কোচিং এ যারা পড়ে তাদেরকে তারা পরীক্ষার আগে প্রশ্ন বলে দিতেও কুন্ঠিত হয়না। তাদের কোচিং এর ছাত্ররা যতই দূর্বল হোক স্কুলের পরীক্ষায় কখনও ফেলও করে না যেহেতু উত্তরপত্র তারাই দেখে ! আর যারা ভর্তি হয়না তাদের উপর বিভিন্ন কৌশলে চালানো হয় মানসিক নির্যাতন। পরীক্ষার খাতায় ছাত্ররা যতই ভালো লেখুক না কেন তাদের খাতা গুলো দেখা হয় কঠোর নীতিতে কেননা তারা যে- স্কুলের কোচিং এ পড়ে না ! পরীক্ষায় রিজাল্ট খারাপ হওয়ার পর অবিভাবক কে স্কুলে নিয়ে তার ছাত্রের রিজাল্ট খারাপ হওয়ার জন্য তিরষ্কার করা হয় এবং সেই সাথে স্কুলের কোচিং এ ভর্তি হওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়। এক কথায় যেসব ছাত্র স্কুল কোচিং এ ভর্তি হয় না তাদেরকে সর্বক্ষেত্রেই খেসারত দিতে হয়। ফলে ছাত্ররা মানসিক ভাবে দূর্বল হয়ে যায়।



অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের আবার সরকারী অনুমোদনও নাই। তারা অন্য কোন অনুমোদিত স্কুলের অধীনে বোর্ডের পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে। তাছাড়া এরা অধিক লাভের আশায় মানসম্পন্ন শিক্ষকও নিয়োগ করে না। মান সম্পন্ন কোন শিক্ষক কি দেড় হাজার কিংবা দুই হাজার টাকায় তার স্কুলে চাকরী করবে ? অবশ্যই করবে না এবং প্রকৃতপক্ষে করছেও না। যোগ্য শিক্ষক বেশী দিন তাদের প্রতিষ্ঠানে থাকে না। তাই বছরে দুই-তিনবার একটি ক্লাসের শিক্ষক বদলাতে হয়। তাদের এই ঘনঘন শিক্ষক বদলানোর কারনে ছাত্রদের পড়ালেখায় প্রচুর ক্ষতি হয়।



পর্যাপ্ত পরিমান স্কুলের অভাবেই কিন্তু ছাত্ররা এসব স্কুলে ভর্তি হতে বাধ্য। যেহেতু বাংলায় একটা প্রবাদ আছে- “নাই মামুর চেয়ে কানা মামুই ভালো”। কিন্তু এই কানা মামু যখন লাভের আশায় গাড়ির ড্রাইভারের দায়িত্বে নিজেকে নিয়োজিত করে তখন যাত্রীদের যে কি অবস্থা হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।



প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বলতেই যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সেটা কিন্তু আমি বলি নাই। কারন আমাদের দেশে অনেকগুলো প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলোর ভূমিকা সত্যিই প্রশংসনীয়। কিন্তু ব্যঙ্গের ছাতার মত ওলিতে গলিতে গজিয়ে ওঠা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে চালিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের হাত থেকে আমরা মুক্তি পেতে চাই। শুধু মুক্তি পেতে চাই বলেই মুখ বন্ধ করতে পারছিনা, কিছু পরামর্শও দিতে চাচ্ছি। সেগুলো হলো ঃ-



* শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলোর প্রতি কর্তৃপক্ষের যথাযথ নজর দেয়া উচিত এবং সেগুলোতে মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগে পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।



* দেশের চাহিদা অনুসারে সরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরী করা উচিত। এবং দেশকে উন্নতির দিকে নিতে চাইলে অবশ্যই তা করতে হবে। অধিকাংশ লোক বলে, বাংলাদেশ একটি গরীব দেশ। তাই বাংলাদেশ সরকার পর্যাপ্ত পরিমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করতে পারছে না। কিন্তু আমি এই খোড়া যুক্তি সাথে একমত হতে পারছি না। সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে চেতনার নামে মূর্তি স্থাপন করতে পারে আর আমাদের মৌলিক চাহিদা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তা তৈরী করতে পারে না ! এটা কিন্তু মেনে নেয়া যায় না। তাছাড়া আমাদের দেশটা ভৌগলিক দিক থেকেও সুবিধাজনক স্থানে। আমাদের দেশের যে পরিমান তেল, গ্যাস ইত্যাদি খনিজ সম্পদ রয়েছে, যে পরিমাণ জনশক্তি ও দেশীয় কাচামাল রয়েছে তা অনেক উন্নত দেশেরও নাই। আসলে আমাদের কোন কিছুর অভাব নাই, অভাব শুধু মাত্র দেশপ্রেমের।



* দেশের মানুষের কাছে একটা সাধারণ ধারণা তৈরী হয়ে গেছে যে, সরকারী স্কুলে পড়ালেখার মান ভালো না এবং গরীবের ছেলে মেয়েরাই শুধু এসব স্কুলে পড়ে। ধারণাটা যদিও পুরোপুরি মিথ্যে নয় তাই সরকারী স্কুলের পড়ালেখার মান বৃদ্ধির জন্য কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া উচিত।





লেখক : ছাত্র, আইন বিভাগ, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.