নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিজয় দেখতে চাই

ক্যাপ্টেন ম্যাকক্লাস্কি

ক্যাপটেন অব দা মিশন আমার ফেবু আইডি- capten.mcclaskey

ক্যাপ্টেন ম্যাকক্লাস্কি › বিস্তারিত পোস্টঃ

খবরের কাগজ, সেকাল - একাল

০৭ ই জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৫৯



প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে মিত্র শক্তির বিজয়। ১৯১৬তে রুশ বিপ্লব। ১৯২০ থেকে ভারতে গান্ধিজির ইংরেজদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের শুরু। (তখনো মহাত্মা হননি গান্ধিজি)। দেশীয় ভাষায় প্রকাশিত হলো খবরের কাগজ। আনন্দবাজার, দৈনিক বসুমতি। বেড়ে গেলো পাঠকের সংখ্যা। তখনো বেতার, টেলিভিশনের কোনো অস্তিত্ব নেই। খবরের জন্য নির্ভর করতে হতো খবরের কাগজের সংবাদ প্রকাশের ওপর। খবর ছাড়াও সংবাদপত্রে প্রকাশিত হতে শুরু হলো নানা তথ্যমূলক রচনা, বাজার দরের তালিকা, নানান কাগজে নানা ধরনের নানান তথ্যমূলক সম্পাদকীয় প্রবন্ধ। খবরের কাগজের পাঠক সংখ্যা বেড়ে গেলো। দেশ-বিদেশে খবর সংগ্রহকারী এজেন্টও গড়ে উঠলো বেশ কয়েকটি। বিজ্ঞাপন প্রচারকরা নতুন মাধ্যম খুঁজে পেলো খবরের কাগজে। নতুন নতুন বাণিজ্য দ্রব্য, নতুন পেটেন্ট ওষুধ, প্রসাধনী, নতুন বিলাস দ্রব্যের বিজ্ঞাপনে শোভিত হলো খবরের কাগজের পৃষ্ঠা। কাগজে যোগ করা হলো খেলার পৃষ্ঠা, সিনেমার পৃষ্ঠা, প্রকাশিত হতে থাকলো নানা ভঙ্গিমায় সিনেমা তারকাদের নানান দৃশ্যের ছবি। পত্রিকায় পৃষ্ঠা সংখ্যা বাড়ানো হলো, দাম বেড়ে গেলো দুপয়সা থেকে তিন পয়সা। দাম বৃদ্ধি নিয়ে মৃদু আন্দোলন হলেও মেনে নিলো সকলে সেই এক পয়সার উপরি পাওনা।

তিরিশের দশক বাঙালিদের সৃষ্টি কলার উৎকর্ষতার ১০ বছর। রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের সঙ্গে গড়ে উঠেছে দেশের সাহিত্য, নাটক, সঙ্গীত এবং অঙ্কন শিল্পে নতুন ধারা। রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং আবির্ভূত হলেন তাঁর চিত্রকর্ম নিয়ে।

বাংলা গানের ধারায় বিপ¬ব ঘটালেন নজরুল গজল গানের সংযোগে। খবরের কাগজের পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হলো নানা বিবরণী এবং মন্তব্য প্রকাশে বিভিন্নজনের নানা মত। জনমত প্রকাশে দেশীয় সংবাদপত্রের মন্তব্যে শঙ্কিত হয়ে উঠলো দেশের ইংরেজ সরকার। প্রেস আইন গঠিত হলো বিভিন্ন মন্তব্য দমনে।

১৯৩৯-এ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরু। ইতিমধ্যে সংবাদপত্রের সঙ্গে বিশ্বময় সংবাদ প্রচারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বেতার। তবুও খবরের কাগজের পাঠকের সংখ্যা বাড়ছে দিন দিন। যুদ্ধে ভারতের স্বাধীনতা নিয়ে শুরু হয়েছে নানা প্রশ্ন। ইংরেজদের সঙ্গে জার্মানির যুদ্ধে ভারতকে জড়িত করে নানা জনমত গড়ে উঠেছে ভারতের ভবিষ্যৎ নিয়ে। ভারতের কংগ্রেসের সঙ্গে জড়িত মুসলমান সমাজ হিন্দু নেতাদের সঙ্গে একমত না হতে পেরে স্বতন্ত্র মত প্রচারে প্রকাশিত করেছে নিজস্ব সংবাদপত্রÑ ডন, দি মুসলমান। বাংলাতে আজাদ। দেশের স্বাধীনতার প্রশ্ন নিয়ে আন্দোলন বাড়ছে দিন দিন। দেশের স্বাধীনতায় দেশ বিভক্তির প্রশ্ন তুলেছেন মুসলমান নেতারা।

এর পরের ঘটনা প্রবাহ সকলেরই জানা। দেশ বিভাগ প্রশ্নে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে দাঙ্গা। আমেরিকা যুদ্ধে যোগ দিয়ে জার্মানি ইতালির সঙ্গে জড়িত অর্ধ এশিয়া বিজয়ী জাপানের দুটি জনবহুল শহর হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে বর্ষণ করলো আনবিক বোমা, ধ্বংস হয়ে গেলো লাখ লাখ মানবাত্মা। দুটি বোমার আঘাতেই স্থগিত হয়ে গেলো বিশ্বময় যুদ্ধ।

ভারত দেশ স্বাধীন হলেও দুইভাগে বিভক্ত

মুসলমানদের পাকিস্তানও দুভাগে বিভক্ত, পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তান। দেশ বিভক্তির আগে পূর্ব পাকিস্তানে কোনো খবরের কাগজই ছিল না। সমস্ত সংবাদপত্রই প্রকাশিত হতো কলকাতায়। ঢাকায় পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী স্থাপনার পর সবকিছুই গড়ে তুলতে হয়েছিল নতুন করে শূন্যতা থেকে।

সময়ের পটভূমিতে আজ ঢাকা থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্র ও পত্রপত্রিকার সংখ্যা স্বাধীনতার পর ঢাকায় প্রকাশিত পত্রপত্রিকার সংখ্যা নির্ণয় করা সত্যি দুরূহ ব্যাপার।

ঢাকা কোলকাতাকে ছাড়িয়ে যায় আনেক আগেই। কোলকাতায় ৫-৬ টি, ঢাকায় শতাধিক। কয়েকটি ৪০-৫০ পৃষ্ঠার বহুল প্রচারিত কাগজও আছে।

খবরের কাগজের পড়য়াদেরও রকমভেদ আছে, কেউ শুরু করেন দেশের পলিটিকস নিয়ে, কেউবা শুধু খেলাধুলার খবর। অনেকে খুঁজে ফেরেন ধর্ষণ-হত্যার খবর। অ্যাকসিডেন্ট, রাহাজানি, ছিনতাইয়ের ঘটনায় প্রাধান্য দেন অনেকে। চাকরি খালির বিজ্ঞাপন বড়ো হয়ে উঠে অনেকের কাছে।

মেয়েরা রাজনীতি, দেশের খবরাখবরের পৃষ্ঠাই খোলেন না অনেকে, ফিল্ম কিংবা টিভির নায়ক-নায়িকার নানা চরিত্র বিবরণে আনন্দ খুঁজে পান তারা। কেউ কেউ শুধু ছবি ও ফ্যাশন শোর পৃষ্ঠা খুলেই খবরের কাগজ পড়া শেষ করেন।

নিউজ প্রিন্টিং-এর বদলে বর্তমানে বাজারে এসেছে হোয়াইট প্রিন্টিং পেপার। প্রায়ই দৈনিক খবরের সঙ্গে ছাপা হচ্ছে সাপ্লিমেন্ট কিংবা অতিরিক্ত পৃষ্ঠা। হেডলাইনের রকমারি ও নানা বর্ণের সমাবেশ দৃষ্টি আকর্ষণ করছে পাঠকদের। খেলাধুলার প্রাধান্য আজকাল সব কাগজে। ক্রিকেট খেলা খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে দেশে, প্রায়ই খেলা নিয়ে অতিরিক্ত পৃষ্ঠা প্রকাশিত হচ্ছে কাগজে। বাংলাভাষা আমাদের সরকারি ভাষা হলেও অনেকে পুরোনো অভ্যাস মতো ইংরেজি ভাষায় খবর পাঠ না করে পরিতৃপ্ত হন না। ইংরেজি দৈনিকও আমাদের দেশে প্রকাশিত হচ্ছে বেশ কয়েকটি। অনেকে খেলা কিংবা রাজনীতিক প্রসঙ্গ কয়েকটি কাগজে মিলিয়ে মিলিয়ে পাঠ করেন। সকালে বাড়িতে রাখা সংবাদপত্র পাঠ করেও তারা পত্রিকা স্টলে গিয়ে বেছে বেছে হেডলাইন দেখে অন্য পত্রিকা কিনে নিয়ে আসেন।

খবরের কাগজের পৃষ্ঠা বেড়ে যাচ্ছে দিন দিন, দামও বাড়ছে। কয়েক বছরের মধ্যেই চার টাকা থেকে বেড়ে সাত টাকা, আট টাকায় বিকাচ্ছে। আবার ২টাকারও আছে। বই আকারে আলাদা সাপ্লিমেন্টও প্রকাশিত করছে অনেকে।

দৈনিক কাগজের কর্পোরেট/রাজনীতিক পৃষ্ঠপোষকতা আছে। একসময় প্রায় সবগুলো কাগজই আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিল, এখনো আছে। কোনোটা জাতীয়তাবাদীদের সমর্থক হয়ে প্রকাশিত হচ্ছে। বলা শক্ত, দল নিরপেক্ষ শুধু সঠিক সংবাদ সংবাহক সংবাদপত্র খুঁজে পাওয়া কঠিনতম প্রয়াস।

পত্রিকা প্রকাশেও নানা বৈচিত্র্য ঘটছে দিন দিন। অক্ষর সাজানো কম্পোজের দিন শেষ হয়ে গেছে অনেক দিন আগে। বর্তমানে কম্পিউটারে অক্ষর সন্নিবেশ করে সাজানো হচ্ছে কাগজের পৃষ্ঠা। সাদা কালোর পরিবর্তে রঙিন পৃষ্ঠায় সেজে উঠছে কাগজ। বেতার-টেলিভিশনের শত চ্যানেল থাকলেও খবর কাগজের পৃষ্ঠায় সংবাদের বিবরণ যাচাই করে নিতে চান অনেকে।

ছাপার অক্ষরকে এখনো অনেকে বেতার-টেলিভিশনের খবর পরিবেশনের চেয়ে বিশ্বাসযোগ্য মনে করেন। খবরের কাগজ হাতে নিয়ে যতোবার খুশি পড়া যায়, বিশে¬ষণ করা যায়, বিতর্ক করা যায় খবরের সত্য-সত্যতা নিয়ে। একই খবরের কাগজের বিভিন্ন ধরনের রিপোর্ট নিয়ে পর্যালোচনা করা যায়।

খবর ছাড়াও দৈনিক কাগজের সম্পাদকীয় কিংবা মতামত প্রকাশের পৃষ্ঠায় তুলে ধরা হয় সম্পাদকের যুক্তিপূর্ণ বিশেষ বক্তব্য, মতামত প্রকাশের বিভিন্নতাই আকৃষ্ট করে সংবাদ পাঠকদের।

টেলিভিশনের ছবি একবার দেখার পরই মুছে যায়। কিন্তু ছাপার অক্ষর জীবন্ত হয়ে ভেসে থাকে চোখের ওপর, যতোবার খুশি পড়া যায়।

আগেই বলা হয়েছে খবরের কাগজের প্রকাশ সাধারণত দলগত, কাজে কাজেই সংবাদ প্রকাশে নিরপেক্ষতা ধরে রাখা কঠিন। মত প্রকাশের অনেকটা স্বাধীনতা থাকাতে সরকারি কর্মকাণ্ডও নানাভাবে সমালোচিত হচ্ছে কাগজের পৃষ্ঠায়। মতামত প্রকাশে বৈরিতারও সৃষ্টি হয় কাগজে কাগজে, পাঠকদের কাছে প্রায়ই সুখপাঠ্য হয়ে উঠে সেই সকল বৈরিতা প্রকাশ।

স্বচক্ষে অনেকে ঘটনা দেখার পরও প্রতিক্রিয়া জানার জন্য সংগ্রহ করেন খবরের কাগজ। বর্তমানের খবরের কাগজ মানেই বিভিন্ন ঘটনার সমাবেশ। ঈদ, নববর্ষ, স্বাধীনতা দিবস নিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে বৃহদাকারে বিশেষ সংখ্যা, নিয়মিত সংখ্যাতেও যোগ হচ্ছে চিকিৎসা এবং আইন সংক্রান্ত রচনা, ছাত্রদের জন্য পরীক্ষার প্রশ্ন-উত্তর নিয়ে বিশেষ পৃষ্ঠা। বাজার দর, ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে নানা তথ্য, শেয়ার বাজারের মূল্যসূচি সবই স্থান পাচ্ছে খবরের কাগজের পৃষ্ঠায়। খবর ও খবর সংগ্রহ একটি বড়ো বৃত্তি এখন দেশে। বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে উঠেছে সাংবাদিকতা বিভাগ।

দেশের জনমত গঠনে সংবাদপত্রের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জুন, ২০১২ সকাল ৯:৩৩

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন: ব্লগে স্বাগতম ..

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.