![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি আছি ব্যাক বেঞ্চার, আর কিছু ভাবনা আছে নিঃসঙ্গ। কিছু কথা আছে কাউকে বলতে না পারার- সেগুলো বলতেই আমার কিবোর্ড চাপাচাপি.।...।
একটি বই পড়েছি, বইয়ের কথাগুলো আমাকে দারূণ ভাবে প্রভাবিত করেছে।
এই প্রথম ৫২৭ পৃষ্ঠার একটি বই, প্রথম লাইন থেকে শেষ লাইন অবধি পড়ে শেষ করেছি! নিজের কাছে নিজেরে কেমন জানি ধৈর্যশীলদের তালিকাভুক্ত করতে ইচ্ছে করছে ।কিন্তু আমি জানি আমি সেটা না। বইটির কথাগুলো যে আমাকে আমাকে শুধু প্রভাবিত করেছে তা না, এর কথাগুলো আমাকে টেনে নিয়ে গেছে। এক চরিত্র থেকে আরেক চরিত্রে। এক গল্প থেকে আরেক গল্পে। একজন লেখক জীবনকে অক্ষর দিয়ে এতো জীবন্ত করে তুলে কিভাবে!
মাথার ভেতর ঘুড়পাক খাচ্ছিলো, হাটতে হাটতে রাস্তায় বের হলাম। উদ্যেশহীণ ভাবে হাটছি, একে বারে যে উদ্দেশ্যহীণ হাটছি তেমন না, মাঝে মাঝে এমন হয় না? কেউ জিজ্ঞাস করলো কোথায় যাচ্ছ? উত্তর হলো ‘না কোথাও যাচ্ছি না’, অথচ আমি যাচ্ছি!
হাটতে হাটতে ফজলুল হক হলের ভেতর দিয়ে দোয়েল চত্তর চক্কর দিয়ে এসে দাঁড়ালাম পুকুর পাড়ে। হাটতে হাটতে খেয়াল করছি কার্জন হলের বাড়ান্দায়, সিড়িতে, সবুজ গাসে জোড়ায় জোড়ায় জনগন বসে আছে। গুরুত্বপূর্ণ কোন আলোচনা তারা করছে কিনা জানি না, তবে একে অপরের কথায় তাদের গভির মনোযোগ দেখে খুব বেশিই গুরুত্বপূর্ণই মনে হয়েছে। আসলে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই মনোযোগ টা খুব বেশি দরকার।
রাতের অন্ধকার আর ড্রিম লাইটের আলো একটা ভালো লাগার পরিবেশ তৈরি করে পুকুর পাড়ে। ড্রিম লাইটের আলো না হয়ে, চাঁদের আলো হলে এই পরিবেশটা আরো বেশি কাছে টানতো পুকুড় পাড়ে স্টার্ন্ডাড ডেভিয়েশন বজায় রাখা জনগনদের। সূর্যের থাকে তেজ, তাই একে মেল ধরা হয়। আর চাঁদকে ধরা হয় ফিমেল, এর জোসনা কেমন মায়া লাগানো, নরম কোয়াশার মতো, তুলতুলে। বইটা আমাকে পেয়ে বসেছে, একটা নস্টালজিয়ায় পেয়ে বসেছে।
ঢাকার শহরে আমার পছন্দের একটি জায়গা এই ফজলুল হক হলের পুকুড় টা! এই পুকুড় সম্পর্কে অনেক ভয়ঙ্কর তথ্য আছে, অনেক গুলো মানুষ নাকি এখানে ডুবে মারা গেছে। তার পরেও এই পুকুরটা আমার খুব ভালো লাগে, কেন লাগে তা খতিয়ে দেখি নাই। তবে লাগে, পচন্ড রকম একটা মায়া আছে এখানটায়। যারা এখানে ডুবে মারা গেছে তারাও হয়তো এই মায়াকে অগ্রাহ্য করতে পারে নাই, মায়া কে অগ্রাহ্য করা খুব কঠিন।
আমি দাঁড়িয়ে আছি একা। একা অর্থে একা না, আশে পাশে অনেক মানুষ আছে আমি তাদের কাউকে চিনি না, সেই অর্থে একা । কারো খুব আপনজন কেউ মারা গেলে সে কান্নাকাটি করে, আমারে এই পৃথিবীতে একা রেখে তুমি চলে গেলা! অথচ এই পৃথবীতে সাতশো কোটি প্লাস মানুষ আছে, সেই অর্থে একা।
একা একা দাঁড়িয়ে আমার গল্প করতে ইচ্ছে হচ্ছে, নিজের সাথে গল্প। আচ্ছা নিজের সাথে গল্প করা যায়? আমি কেমন যেন ইংরেজী ভাষায় নিজের সাথে কথা বলার চেষ্টা করছি, অনেক সময়ই আমার এমন হয় নিজের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হয়। তবে ইংরেজীতে! কারণটা আমি কয়েকদিন আগে ধরতে পেরেছি, ইউনিভারসিটিতে সব কোর্স পড়তে হয় ইংরেজীতে, পরিক্ষা, ভাইবা সব দিতে হয় ইংরেজীতে। তাই ইংরেজী ভালো বলতে না পারলে উপায় নাই। এই নিরুপায় জিনিসটা আমাকে খুব তাড়া করে, এই নিরুপায়ের তারণায় অবচেতন মনেই নিজের সাথে নিজে ইংরেজীতে কথা বলি।
হলের ডাইনিং এ লাইন ধরে বসে ছাত্ররা ভাত খাচ্ছে। ইচ্ছে হচ্ছে খুব এখানে খেতে, কিন্তু নিয়মকানুণ জানি না। এখানে বহিরাগতরা খেতে পারে কিনা, কাউকে জিজ্ঞাসা করলেই পেয়ে যেতাম। কারণ আমি জানি যে পথিক প্রশ্ন করতে জানে সে পথ হারায় না। তবে আমার কেন যেন কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করলো না। চুপচাপ হেটে চলে চললাম, হঠাৎ মনে হলো আমার মনের ভেতর শব্দরা ভিড় করছে, গল্প তৈরি হচ্ছে এখন এই
শব্দগুলোরে ঠিকানা দিতে না পারলে আমাকে গুম করবে, হয়তো একই সাথে খুনও করবে।
ফিরতি হাটা শুরু করলাম রুমের দিকে।
আসার পথে হাজি বিরিয়ানির ঠিক একটু আগে দুনিয়ার সুন্দরতম একটি দৃশ্য দেখলাম। কিছুক্ষণ দেখতেই থাকলাম। চারজন টুকাই ছেলে, ময়লা জড়ানো মাথা, ছেড়া গেন্জি, এর একজনের তো গায়ে কাপড়ই নেই.. রাস্তার পাশের খালি জায়গায় মাটির ভেতর বসে রুটি খাচ্ছে। মাটির উপর একটি পলিথিনের ব্যাগে ডাল ভাজি, আর তাদের ময়লা হাতে দুইটি করে রুটি। তারা রুটি ছিড়ে যখন চারজন একই সাথে পলিথিন থেকে ভাজি নিতে যায় নিতে পারে না। একজন অন্যজনকে সেকরিফাইস করে ভাজি নিতে। আচ্ছা সেকরিফাইসের মানে কি ওরা বুঝে?? কিন্তু ওরা তো করে। আমরা তো সেকরিফাইসের মানে বুঝি, আমরা করি কি!!
বেশ কয়েক মিনিট ওদের এমন তৃপ্তি করে খাওয়া দেখলাম। সন্তুষ্টি দেখলাম, আসলে সন্তুষ্টির মানে কী? বহুদিন ধরে খুঁজতে ছিলাম পাই নাই। আজ না খুঁজেই পেয়ে গেলাম। আমারও মন চাচ্ছিলো, এই রাস্তার টুকাই ছেলেদের সাথে একটি রুটি ভাগ করে খেতে, ওই ভাজির পলিথিনে ওদের চারটি হাতের সাথে আমার হাতটিও যুক্ত করতে। পাচঁটি হাত হতো, আচ্ছা ওরা কি আমাকেও সেকরিফাইক করতো??
অামি তো ওদের পরিচিত না! আমরা তো কেবল যারা পরিচিত ফিরতি পাবার আসায় তাদের জন্য একটু সেকরিফাইস দেখাই! ওরাও কি তাই করতো? আমার কেন যেন মনে হলো, ওরা এটা করতো না, আমি ওদের সাথে খেতে চাইলে ওরা সানন্দে আকাকে রুটি ছিড়ে দিত। হয়তো তারা প্রতিযোগির মতই করতো, কার আগে কে ছিড়ে দেবে রুটি। একটি ভালো কাজ করার প্রতিযোগীতা।
তারপর ওদের এমন করে খাওয়া দেখতে দেখতে মনে হলো, সুখ জিনিসটা কাকে বলে? কোথাথেকে সুখ আসে? আমি কি সুখে আছি? আমার তো সব এবং সবাই আছে, ভালো থাকার কথা, তাহলে সুখে না থাকার তো কোন কারণ নাই। নিজেরে বুঝালাম ভালোই আছি কিন্তু বুকের কোথায় যেন একটা শূন্যতা অনুভব করলাম-
আমার আজকে খুব করে রাস্তার টুকাই এই ছেলে গুলোর দলে মিশে যেতে ইচ্ছে হলো।
সাধারণদের মাঝে এক অতি সাধারণ হয়ে মিশে যেতে। খুব করে মিশে গিয়ে ওদের মতো পথে পথে কুঁড়াতে ইচ্ছে হলো, ওরা খোঁজে বোতল, পেরেক, কৌটা!
আমি না হয়, সুখ খোঁজে বেড়াবো, কুঁড়িয়ে বেড়াবো!
তারপর মনে হলে, আমার অতখানি সাহস এখনও সঞ্চয় হয় নাই। ওই পরিমান সাহস জমাতে হলে আমার আরো এমন বই পড়তে হবে। যেই বই আমাকে টানে, টানতে টানতে পরিচয় করিয়ে দেয়, নিজের সাথে নিজেরে।
ধন্যবাদ লেখক।
হাবিব রহমান।
২১.০৩.২০১৮
ঢাকা।
২৩ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১২:৫৬
মো:হাবিবুর রহমান(হাবিব) বলেছেন: ধন্যবাদ জানবেন রসায়ন। তখন তাড়াহুড়া করে লিখে পোস্ট করে দিয়েছিলাম.। এখন কিছুটা ঠিক করে দিতে চেষ্টা করলাম.
২| ২২ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:৪৪
আখেনাটেন বলেছেন: হলের ডাইনিং থেকে টোকাই দেখা অনেক কিছুই জানলাম। ভালো। চিন্তাগুলো পরিষ্কার।
*বানানের ব্যাপারে মনে হয় আরো সতর্ক হতে হবে।
চালিয়ে যান লেখক। আমরা আছি আপনার সাথে।
২৩ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১২:৫৮
মো:হাবিবুর রহমান(হাবিব) বলেছেন: ধন্যবাদ জানবেন আখেনটেন। আপনাদের পাশে পেয়ে ভালা লাগছে.। তখন তাড়াহুড়া করে লিখে পোস্ট করে দিয়েছিলাম.। এখন কিছুটা ঠিক করে দিতে চেষ্টা করলাম. আর কিছু ভুল থাকলে জানাবেন দয়া করে
৩| ২২ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:৫৩
নীল মনি বলেছেন: চমৎকার প্রকাশভঙ্গি। আমার কিন্তু সেই বইয়ের নাম জানতে ইচ্ছে করছে।
২৩ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১:০০
মো:হাবিবুর রহমান(হাবিব) বলেছেন: ধন্যবাদ জানবেন নীল মনি।
বইটার নাম “মানবজনম”
লেখক সাদাত হোসাইন।
৪| ২৩ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১:১০
সুমন কর বলেছেন: লেখায় বিষন্নতা ফুঁটে উঠেছে....+।
২৩ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১:২১
মো:হাবিবুর রহমান(হাবিব) বলেছেন: হয়তো বিষন্নতা না, তারচেয়েও ঢেড় বেশি কিছু। যা প্রকাশ করার সঠিক শব্দ আমরা খুজে পাই না.। বিষন্নতা বলতে কম হয়ে যায়
৫| ২৩ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১:৫১
এম কে বলেছেন: সময়টা বড্ড বেহিসাবী তাই না??? কত দ্রুতই লেখাটা শেষ হয়ে গেল। সত্যি ভাই সকল অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ সম্ভব না কিছু উপলব্ধী করে নিতে হয়। মানবজনম পড়বার ইচ্ছাটা পেয়ে বসল। এমন অসংখ্য লিখা পড়তে চাই আর প্রতিক্ষায় রইলাম।
২৩ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ২:০৫
মো:হাবিবুর রহমান(হাবিব) বলেছেন: ধন্যবাদ জানবেন #এম কে। আপনার এমন কমেন্টে কেমন যেন একটা উৎসাহ খুজে পেলাল অারো লেখবার।
৬| ২৪ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:৪৮
এম কে বলেছেন: আপনার ভিতর প্রচুর লেখা জমা হয়ে আছে সেগুলো প্রকাশ করুন। জাস্ট প্রকাশে আনুন। হাবিব ভাই বানানে একটুখানি সতর্ক হবেন।
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:৩৭
রসায়ন বলেছেন: লিখা ভালো লেগেছে । তবে বানানগুলো শুদ্ধ করুন ।