![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি আছি ব্যাক বেঞ্চার, আর কিছু ভাবনা আছে নিঃসঙ্গ। কিছু কথা আছে কাউকে বলতে না পারার- সেগুলো বলতেই আমার কিবোর্ড চাপাচাপি.।...।
প্রথমেই গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি জাতির সকল যোদ্ধাদের। সেই সাথে সকল শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
২৫ মার্চ,১৯৭১।
আচ্ছা, তুমি এমন কেন আজকাল?
-কেমন?
এই যে উদাসীনতা, আগে তো এমন দেখি নি! এই পৌনে দুঘন্টা যাবৎ আমি অপেক্ষা করেছি। তোমার কোন খবর নাই।
-তোমার কোন খবর না থাকলেও; আমি কিন্তু সারাজীবন অপেক্ষা করেই কাটিয়ে দিতাম।
হ, হয়েছে। আমাকে আর গলাতে হবে না। ভাগ্যিস ফতেকে পেয়েছিলাম, ওর সাথে গল্প করেই সময়টা গেল। না, হলে বিরক্ত হয়ে কখন চলেই যেতাম।
-আমি জানি তুমি যেতে না। তুমি আরো কয়েকঘন্টা দেরি হলেও আমার জন্য বসে থাকতে। তারপর আমার হলের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে।
কিরে করে জানো? অনুমান?
-নাহ, ভালোবাসা, বিশ্বাস, ভরসা।
হুহ, ঢং। আমি যতেষ্ট গলেছি, আর গলাতে হবে না। বসিয়ে রেখে ফতের দুই ঘন্টা সময় নষ্ট করেছি ,ওর অনেকগুলো মালা বিক্রি হত এতোক্ষণে। ওকে ওর পাওনা দাও।
- এদিকে আসো তো মামনি। এই নাও, তুমি এতোক্ষনে যা বিক্রি করতে তার চেয়ে বেশিই পেলে। এবার খুশি তো?
(ফুলের মালা বিক্রি করে যা সে পেত, উপরি পাওনা পেয়েছে তার চেয়ে বেশি। এই এতোক্ষনে মেয়েটির বুকে জমানো সব কষ্ট-স্বপ্ন প্রকাশ করতে পেরেছে। কেউ আগ্রহ নিয়ে তার কথাগুলো শুনেছে!!! মানুষ হিসেবে আমাদের প্রতি কেউ খুব আগ্রহ দেখালে, সে আমাদের প্রিয় হয়ে যায়। আচ্ছা, অন্যান্য প্রানীদের ক্ষেত্রেও কি এমনটা হয়?)
- দিদি, এই মালাটা তুমারে উপহার দেই? তুমার চুলে বাইনধা দেই?
(ফতে উত্তরের অপেক্ষা না করেই, একটি শিউলী ফুলের মালা কাকনের খোঁপায় বেঁধে দেয়ে। ফতের কনভিন্স করার শক্তি দেখে বেশ আনন্দিত হয়েছে কাকন, কিছু বলতে চেয়েও ভুলে যায়। তবে ফতের বুঝতে কষ্ট হয় না, সেও কাকনের কপালের লাল টিপের উপর একটি আলতো করে চুমু দিয়ে সামনে আগায়। আচ্ছা, ভালোবাসা কি এমনই? যা কিছু প্রকাশ না করা হয় তাও প্রকাশ করে দেয়!?)
বাহ! বেশ ভাব হয়ে গেছে তোমাদের এই এতোটুকু সময়েই! (জয়ের চোখ ভরা বিস্ময়)
- ওর কথাগুলো শুনলে তোমার সাথেও ভাব হয়ে যেত। এই টুকুন একটি পিচ্চি মেয়ে, কত কিছু বোঝে। ওর বাবাকে নিয়ে কত স্বপ্ন ওর! রেলে বাম পা টি কাঁটা পরেছে, জন্মথেকেই ডান হাতের কব্জি নেই। অথচ দেখো এই ছোট্ট মেয়েটা, কত স্বপ্নই না দেখে ওর বাবাকে নিয়ে!
কাকন আমরা কিন্তু বলতে গেলে স্বপ্নের জন্যই বেচেঁ থাকি ।
- হুম,আচ্ছা, তুমাকে এমন নারভাস লাগছে কেন? কিছু সমস্যা?
সমস্যা না আবার সমস্যা। বঙ্গবন্ধুর ভাষনের পর থেকে দেশে একটা থমথমে অবস্থা খেয়াল করছো?
- হুম, তা তো ঠিকই। রেসকোর্স ময়দান, লাখো লাখো মানুষ, একটি ভাষণ, ভাষনের কথাগুলো- ফিরে ফিরে এই গুলোই ঘুড়ছে আমার মাথায়। কিছু একটা বীজ তিনি গোপনেই বপন করে দিয়ে গেছে, জনতার উত্তল সমুদ্রে। থমথমে অবস্থাটা কি সে জন্য নয়?
প্রতিবাদের একটা জোয়ার নির্বাচণের সময় থেকেই ছিলো। কিন্তু ভাষণের পরে সেই জোয়রের সাথে নতুন একটা মাত্র যোগ হয়েছে। থমথমে অবস্থাটা হয়তো হয়তো জন্যই।
- জয় তুমি বাড়ি যাবে কবে? আমার না খুব করে বাড়ি যেতে মন চাচ্ছে গত দু’দিন ধরে। মায়ের কথা খুব মনে পরছে।
ও, তুমাকে তো একটি কথা বলতে ভুলেই গেছি, গতকাল আমার কাছে একটি চিঠি এসেছে, চিঠির ভেতর দেখি আরো একটি চিঠি ছোট চিঠি। কে লিখেছে জানো? আমার রিয়ামনি! তার প্রথম লেখা চিঠি! কি লিখেছে জানো?
“দাদা, তুমি কবে আইবা বাড়িতে? এই বার তোমার ইসকুল ছুটি দিলেই কিন্তু চইলা আইবা। আর এইবার আমারে কিন্তু আর বকা দিতে পারবা না, আমি বানান না করেই এহন রিডিং পড়তে পারি!!!
কালকে মায়রে কইছি, বাড়িতে তো আমারে পড়া কইয়ে দেওনের কেউ নাই, দাদা আহে না ক্যা? মায় কি বলে জানো? মা কইছে এইবার তুমার জন্যে বউ আনবো। যে আমারে রোজ পড়া কয়ে দিবো। হি হি..
আর আহনের সময় আমার জন্য লাল চুড়ি, আর লাল টিপ নিয়া আইসো। ঠিক মত খাইয়ো..
তোমার রিয়ামনি।”
- ভারি মিষ্টি লিখেছে তো মেয়েটা! ওর সাথে আমার দেখা করাবা কবে? একদিন নিয়ে আসো না ওকে ঢাকায়..
ভাবছি আনবো একদিন। দেশের থমথমে অবস্থাটা কাটুক আগে। বিকেল হতে চলেছে, তুমার কি ক্ষুদা লেগেছে?
- হুম লেগেছেই তো। কিন্ত তারপরও ভালো লাগছে। এই যে তুমি আমার কোলে মাথা রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছো। আর আমি তুমার দিকে তাকিয়ে পৃথিবী দেখছি। এতো কাছ থেকে পৃথিবী, পৃথিবীর এমন রুপ! বড্ড ভালো লাগছে।
তুমি প্রাণিবিদ্যা না পড়ে সাহ্যিত পড়লে বেশি ভালো হতো। আমার একটা ইচ্ছে হচ্ছে জানো?
- কি?
আজকে তুমার হাতে খেতে।
- হুম, ভাবছি, আমাদের বিয়ের কথাটা বাসায় জানিয়ে দিব। আমার আর আলাদা থাকতে ভালো লাগছে না।
একটা চাকুরী ম্যানেজ করি তারপর বলো? (জয়ের চোখে রাজ্যের কাকুতি)
- আচ্ছা, বাবা ঠিক আছে। চলো আজকে আমি তোমাকে খাইয়ে দিবো, এতোদিনে তোমার একটা ইচ্ছে হয়েছে। আর কি কি ইচ্ছে তুমার হয়?
প্রেমের কিছুদিনের মধ্যে জয় আর কাকণ বিয়ে করে নিয়েছে, খুব কাছের তিনজন বন্ধু ছাড়া কেউ জানে না ব্যাপারটা। একটি চাকুরীর অপেক্ষায় থেকে থেকে ছ’সাত মাস হলো বিয়েটা গোপনই রয়েছে। এদেশে একটি চাকুরী অনেকগুলো স্বপ্ন, অনেকগুলো ইচ্ছে পূরণের হাতিয়ার। একটি চাকুরীর জন্য অন্জন আর বেলা বোসের প্রেমের পরাজয়ের গানের কথাগুলো জয়ের খুব করে মনে পরছে এখন!
খাবার শেষে কাকন বাম হাতে ওড়নার আঁচল দিয়ে জয়ের ভেজা মুখটা মুঁছে দেয়। বেসিনের সামনে আয়নায় জয় দেখতে পায় কাকনের চোখ ভরা মমতা। এই আচলের ভেতরও কি এক অসম্ভব দরদ। অসম্ভব ভালোবাসা। ভালোবাসাই নাকি দরদ, আর দরদই নাকি ভালোবাসা! তাহলে কথাটা কি ঠিক?
আজকের মতো ভালো সময় তাদের স্মৃতির পাতায় অনেক আছে। কাকনের ডায়েরী লেখার ভালো অভ্যাস, বলতে গেলে জয়ের সাথে সম্পর্কের পরেই শখটা অভ্যাসে পরিণত হয়। প্রথম যেদিন জয়ের থেকে ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি’ লেখা ছোট একটি চিরকুট পেয়েছিলো সেদিন রাতে তার ঘুম হয় নি! সারারাত সে ডায়েরীতে নানা রকম ছন্দ কবিতার লাইন লিখে কাটিয়েছে! বিষয়টা মনে করে কাকন মনে মনে হেসে উঠে। তার একটি মতবাদ আছে – সুখের স্মৃতিগুলো তুলে রাখতে হয়, পরে মনে করে করে যেন মুচকি হাসা যায়। আর দুঃখের ঘটনাগুলো স্মৃতিতে জায়গা দিতে নেই-মনে পরলেই কষ্ট বাড়ে। তবে কষ্টের ঘটনা গুলো নিজে থেকেই কি স্মৃতির পাতায় জায়গা নিয়ে বার বার কষ্ট দেয় না?
মধ্যরাতের ঝিরি ঝিরি বাতাস কাঁচ ভাঙা জানালা দিয়ে রুমটাকে শীতল করে দিচ্ছে। রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতা উপন্যাসটি হাতে নিয়ে জয় বেডে শুয়ে আছে। জয় ভাবছে বইটির নাম শেষের কবিতা, অথচ এটি একটি উপন্যাস। কেমন গোলমেলে না? আমাদের জীবনে অনেক কিছুই গোলমেলে, কাকণের সাথে হঠাৎ করে তাতের বিয়ে ওটাও একটা গোলমেলে- এসব ভাবতে ভাবেতেই তার রাত আরো গভির হয়। এই ঢাকার শহর, সমস্তা ঢাকা ঘুমিয়ে পরলেও ইউনিভারসিটি, হলের ছাত্ররা ঘুমায় না। তারা শেষ রাত পর্যন্ত রাতকে পাহারা দেয়। জরুরী কাজে যে তারা রাত জাগে এমন না- কেউ কার্ড খেলে, কেউ আড্ডা দেয়। এগুলোই বা জীবনের জন্য কম জরুরী কিসের। জয়ের একটি বিশ্বাস আছে আছে, ঘুমাতে যাবার আগে কিছুসময় বই পরলে, সারাদিনের চাপ উধাও হয়ে যায়। শান্তির ঘুম হয়।
অচমকা বিকট শব্দ, ঘুম ঘুম চোখে চমকে গিয়ে জয়ের হাতের বইটা তার বুকের উপর আছরে পরে। লাফ দিয়ে জানালায় দেখে ননস্টপ কামানের গোলা, আগুন আর আগুনের শিখা। জগন্নাথ হলের দিক থেকে প্রথমে ভেসে আসছে আর্তনাদ, তারপর চারদিক থেকে ভারি গোলার আওয়াজের সাথে, ভাড়ি কান্নার মিশ্রনে এক আতঙ্ক!। সবাই চারদিকে ছুটোছুটি করছে। চিৎকার করছে, দৌড়াদৌড়ি করছে। জয় কি করবে ভেবে পাচ্ছে না, হঠাৎ এমন আক্রমনে তার থতমত লেগে গেছে!
মুহুর্তের মধ্যে আগুনের ধোঁয়ায় ঢাকার আকাশ ছেঁয়ে যায়, টগবগে তাজা রক্তে অঙ্কিত হয় বাংলাদেশের মানচিত্র। কিছু সময়ের ব্যবধানে ঘুময়ে থাকা দেশ, হারিয়ে ফেলে তার বহু সম্পদ।
বুকের ছটফটানিতে কাটে তার বাকি সময়। ভোরের আলো ফুটতেই সে কাকনের সন্ধানে বেরোয়, চারিদিকে দেখে সবকিছু লন্ডভন্ড! কোন জ্যান্ত দানব তার বিশাল পায়ে দুমরে-মুচরে গেছে সব। সে কাকন বা তার পরিবারের কারো কোন সন্ধান পেলো না, দুপুর পর্যন্ত সে একটি ভাঙা ইটের উপর বসে থেকে বিকেলে ফিরে আসে হলের দিকে। তার মাথা কোন কাজ করছে না, চোখ দিয়ে, কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে, কিন্তু মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না।
তার থেকে থেকে মনে হলো, তার সব স্বপ্ন, সব ইচ্ছে শেষ। স্বপ্ন নিয়েই মানুষ বেঁচে, তার তো বেঁচে থাকার কিছু থাকলো না।
তবুও সে বেঁচে থাকলো। নতুন স্বপ্ন প্রতিষ্ঠার জন্য আরো কিছুকাল বেঁচে থাকার শপথ নিলো।
সত্যি মানুষ স্বপ্ন ছাড়া বাঁচে না, এই যে এখন বুলেটের মুখোমুখি মানুষ বেঁচে আছে। হানাদারদের রক্তের নেশায় বেচেঁ আছে।
স্বাধিনতার স্বপ্নে বেঁচে আছে।
(প্রথম পর্ব: কল্পনার পাতায় স্বাধিনতা
লেখাঃ হাবিব রহমান।)
26318
(বি.দ্রঃ আমি স্বাধিনতা যুদ্ধ দেখিনি। কিন্তু এই যুদ্ধ সম্পর্কে বিভিন্ন ভাবে যতটুকু জেনেছি, ভাবনার জগতে মাঝেই যেন সেই যুদ্ধের ছবি ভেসে ওঠে আবছা করে। কল্পনার ক্যানভাস থেকে তাই যুদ্ধকালিন আবছা ছবিখানা লেখার মধ্যে ফুটিয়ে তুলার একটু চেষ্টা করলাম মাত্র। এই সবই আমার ছোট মনের কল্পণা মাত্র।
গভীর ভাবে স্মরণ করছি জাতির সকল যোদ্ধাদের। তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি)
২৬ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:৩৪
মো:হাবিবুর রহমান(হাবিব) বলেছেন: জ্বি দাদা, ধন্যবাদ।
পরের বার ছোট করে লেখতে চেষ্টা করবো-
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৩
চাঁদগাজী বলেছেন:
শুভেচ্ছা।
পোষ্ট আরো ছোট আকারে লিখুন, পড়ে দেখবেন, আপনি সহজেই বুঝে কিনা!