নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমাদের দেশে দুটো ভাষাই মূলত যোগাযোগের ক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত যথাক্রমে বাংলা ও ইংরেজি । আমাদের অধিকাংশেরই মাতৃভাষা বাংলা, এছাড়াও সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ হিসেবে আমাদের দেশে ইংরেজিও শিখতে হয় । এই ভাষা শেখার ফর্মুলা কি ?
খুব ছোট থেকে আমরা যখন মাতৃভাষা বাংলা শিখি তখন কিন্তু আমরা আগে ব্যাকরণ পড়তে যাই না, বরঞ্চ ভাষা রপ্ত করার পরে যেয়ে ব্যাকরণ অধ্যয়ন করতে হয় আমাদেরকে ক্লাসে ! তার মানে দাঁড়ালো ভাষা শিখতে ব্যকরণ আবশ্যক নয় । আমাদের ভুল ত্রুটি তো হবেই, সেগুলোকে শোধরানোর জন্য আমাদের বয়স ও অনুশীলনই আমাদেরকে সহায়তা করে । যেমন আমরা সন্ধি, সমাস, ধ্বনি পরিবর্তন এসব না শিখেই কিন্তু কথা বলতে শিখে যাই । এসবের জন্য আমাদের ভাষার বিকাশ থমকে থাকে না । আমাদের দেশের স্কুলেই শিক্ষার্থীদেরকে ব্যাকরণের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়, ফলে তারা ভাষা রপ্ত করতে পারে না ঠিকমতো । সহজেই ব্যাপারটা আমাদের বোধগম্য হবে একটি বিষয় খেয়াল করলে । আমরা তো স্কুল কলেজে না যেয়েও বাংলা ভাষায় যোগাযোগ দক্ষতা অর্জন করি তাহলে স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত শতশত মার্কের ইংরেজি পড়েও আমরা ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জন করতে পারছি না সেইভাবে, আমাদের সাথে কটা লোক পাওয়া যাবে যারা অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলতে পারবেন ? খোঁজ নিলেই দেখা যাবে সংখ্যাটা খুবই সীমিত । অথচ ঠিকই ক্লাস ওয়ান থেকে ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত ইংরেজি শিখে এসেছি আমরা !!! এখানেই বুঝা যাচ্ছে প্রচলিত সিস্টেমের দুরাবস্থা । এতো এতো ব্যকরণ তো পড়া ও জানার কথা যারা ভাষাবিদ হবেন ভবিষ্যতে । এই ছোট ছোট শিক্ষার্থীদেরকেও কেন এতো সন্ধি, সমাস, কারক, বিভক্তি পড়া লাগবে । এগুলো ভালো মতো না জেনেও কি আমরা ভাষা দক্ষতা অর্জন করতে পারি না নাকি !
ভাষা দক্ষতা বলতে আমাদের আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ে কি আসে ? চারটি স্কিল তাইনা ? শোনা, বলা, পড়া ও লিখা !!! কিন্তু আদতেই কি এটাই নাকি শুধু ভাষা দক্ষতা ?
কেন একজন শ্রবণ প্রতিবন্ধী বা অটিস্টিক শিশুও তো কথা বলতে পারে না বা লিখতেও পারেনা আমাদের মতো, তাহলে তাদের জন্য কি এই চারটি স্কিল কোন কাজে আসছে ?? খুবই স্পষ্টত দেখা যাচ্ছে, এই চারটি স্কিলের আলোকে ভাষাকে বেঁধে ফেললে এই মানুষগুলো বঞ্চিত হয়ে যাচ্ছে । তাদের জন্য কোন কৌশলই দেখাতে পারছে না এই চারটি স্কিলের ভাষা চর্চা ।
ভাষা কি শুধুই পড়ে, লিখে, বলে, শুনে আদানপ্রদান করার বিষয় ? কেন কেউ তো একটি চিত্র এঁকেও তার মনের ভাব প্রকাশ করতে পারেন , কেউ চাইলে তার অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমেও মনের ভাবকে প্রকাশ করতে পারেন, এগুলো কি ভাষার দক্ষতা হবে না ? তাহলে এই বিষয়গুলির আসছে না কেন ভাষার দক্ষতা অর্জনের প্রশ্নে ?
ভাষার ওই প্রচলিত ফোর স্কিল ফরম্যাট আমাদেরকে এমনভাবে বেঁধে ফেলেছে যে আমরা এর বাইরে কাউকে ভাবতে পারছি না, জোর করে হলেও তাকে এই ফরম্যাটে আনতেই হবে আর যদি সেটা ব্যর্থ হয় তাহলে তাকে Deaf and Dumb. আখ্যা দিয়ে আমাদের কাজ শেষ করে ফেলতে চাই । এই সিস্টেমের কারণে একজন শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকেও লিখেই বা বলেই তার পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় । কি অদ্ভুত একটা নিয়ম !!! পরীক্ষায় আমরা ইমেইল লিখার প্র্যাকটিস করি, খাতায় ইমেইল লিখে !!! ডায়ালগ প্র্যাকটিস করি সেটাও ওই খাতায় লিখে ! কি আজব এক সমস্যার মাঝে আছি আমরা ! মানে ওই চার স্কিলের বাইরে যাওয়া কোনমতেই চলবে না । আর এই চার স্কিলের এত আধিক্যের কারণ কি ? কারণ আর কিছুই না, সার্টিফিকেট ব্যবসা ! খারাপ শোনালেও এটাই বাস্তবতা, ভাষাকে এই চারটি স্কিলে বেঁধে না ফেললে তো বিশ্বজুড়ে ভাষাকেন্দ্রিক সার্টিফিকেট ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে ।
আসলে যদি আধুনিক ভাষা দক্ষতার দৃষ্টিভঙ্গিগুলো দেখি তাহলে কি দেখা যায় একটু জেনে নেয়া যাক ।
ভাষা কোনমতেই চারটি স্কিলে আবদ্ধ করার জিনিস না । ভাষা দক্ষতাকে দুটো ভাগে ভাগ করে শেখানো ও অনুশীলনের কাজ করলে যেভাবে আরকি এটা সবার প্রবলেম ও ক্যাপাসিটিকেই এড্রেস করতে পারবে, সেটাই ভালো উপায় হয়। ভাষা দক্ষতাকে receptive & expressive এই দুটো ভাবে ভাগ করে ভাষানুশীলন করলে এতে সবাইকে নিয়ে আসা সম্ভব । রিসেপ্টিভ স্কিলে শিক্ষার্থীদের ভাষা অর্জনের সকল প্রক্রিয়াই অন্তর্ভুক্ত থাকবে, শুধু শোনা আর পড়াই না। আবার এক্সপ্রেসিভ স্কিলে শুধু বলা আর লিখাই থাকবে না বরং এটি ভাষাকে প্রকাশের সকল উপায়কেই অন্তর্ভুক্ত করবে। যেমন, একজন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী যে কিনা লিখতে বা পড়তে সমস্যায় পড়েন তার জন্যে সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ কিংবা ছবি আঁকা কিংবা অভিনয়ও হতে পারে ভাষার দক্ষতা ।
আমাদের মাথাকে যতভাবে একটি বিষয়ের ইনপুট দেওয়া যাবে আমাদের শিখন ততই স্থায়ী ও কার্যকরী হয় । যেমন, কমলার বর্ণনা দিলে যে ধারণা হবে সেটি ধরতে দিলে, খেতে দিলে, ঘ্রাণ নিতে দিলে, দেখতে দিলে যে ধারণা হবে সেটি অবশ্যই স্থায়ী ও কার্যকরী হবে । অর্থাৎ মাল্টিসেনসরী ইনপুট আমাদের লার্নিংয়ের জন্য কার্যকরী । ভাষাকেও এই মাল্টিসেনসরী ফরম্যাটে শিখানো গেলে আমাদের এই ১২ বছর পরেও ভাষা না শিক্ষার দুরাবস্থা কিংবা শ্রবণ প্রতিবন্ধীদেরও লিখিতভাবে উত্তর লিখার মতো বিড়ম্বনা এড়ানো সম্ভব হবে । আর এই ফরম্যাটে শিখতে গেলে গ্রামারেরও আধিক্যও আমাদের আটকাবে না । মাল্টিসেনসরী ফরম্যাটে এগোলে যাদের যেসব সেন্সে ঘাটতি আছে তারা বাকি সেন্সগুলো কাজে লাগিয়ে শিখতে পারবে আর যাদের সব সেন্সই কাজ করে তারাও একটা স্পষ্ট ধারণা পাবে । যেমন কমলা কি জিনিস সেটা একজন শ্রবণ প্রতিবন্ধী ও স্বাভাবিক শ্রবণ ক্ষমতা সম্পন্ন শিক্ষার্থীকে একত্রে বুঝাতে গেলে মুখের কথা(অডিটরি ইনপুট) শ্রবণ প্রতিবন্ধী না পেলেও সে কিন্তু ঠিকই স্মেল(ঘ্রাণ), ট্যাকটাইল(স্পর্শ), টেস্ট(স্বাদ), ভিজুয়াল(দৃশ্য) ইনফরমেশন পাবে ফলে সেও জানতে পারবে বিষয়টি সম্পর্কে । আর অন্য শিক্ষার্থীটি সেও কিন্তু এই প্রক্রিয়ার দ্বারা কমলা সম্পর্কে জানতে পারবেন ।
তাহলে এতকথার মূল কথা হলো ভাষার শেখানোর ফরম্যাটে আমাদের পরিবর্তন দরকার । গ্রামার কেন্দ্রিক ভাষার ধারণা থেকে বেরিয়ে অনুশীলন কেন্দ্রিক ভাষার শিখনে আমাদের এগোতে হবে । আর ভাষা শিখনে এই চারটি স্কিলের ধারণার পরিবর্তন দরকার । ভাষা কেন শুধু বলে শুনে পড়ে লিখেই প্রকাশ করা হবে, বরঞ্চ রিসেপ্টিভ ও এক্সপ্রেসিভ এই ফরম্যাটে এনে ভাষাকে সবার কাছে শিখনপোযোগী করে তুলতে হবে ।
২| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:২৫
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
দারুন একটা বিষয়ের অবতারণা করেছেন।
এগুলো কেন আমাদের শিক্ষাবিদদের মগজে
ঢুকেনা আল্লাহ মালূম। ইংরেজরা কিন্তু গ্রামার
না পড়েই ইংরেজীতে কথা বলে যেমন আমরা
ব্যকরণ না পড়েই কথা বলতে পারি!
৩| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৩৪
রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন।
পোষ্ট টি পড়ে ভালো লাগলো।
আরো লিখুন।
©somewhere in net ltd.
১| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:৫৪
এলে বেলে বলেছেন: বিষয়টি দারুনভাবে তুলে ধরেছেন। সময়ের সাথে সাথে আমাদের শিক্ষাগ্রহনের পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে। ধন্যবাদ।