নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সমাজে বিশেষত বাংলাদেশে দেখছি ইদানিংকালে লকডাউন শেষ হওয়ার পরে যেসব মানুষ দাঁড়ি, পাঞ্জাবি পাগড়ি পরা, আতর মাখা শুরু করেছে তারাই নাকি "দ্বীনের পথে" বা ইসলামের পথে চলে আসছে !!
দ্বীনের পথ কি নিজের পোশাক পরিবর্তন করে আরবীয় পোশাক পরিধানে ?? অথচ সমাজে প্রচলিত বিশ্বাস এমনই !
অথচ কোরআন ক্লিয়ারকাট বলে দিচ্ছে সত্যিকারের দ্বীনের পথ কোনটা, এসব আরবীয়করণ নাকি বিশুদ্ধ ঈমান ও চারিত্রিক এবং আত্মিক উন্নতি
অতঃপর সে ধর্মের ঘাঁটিতে প্রবেশ করেনি। আপনি জানেন, সে ঘাঁটি কি? তা হচ্ছে দাসমুক্তি অথবা দুর্ভিক্ষের দিনে অন্নদান। অথবা ধুলি-ধুসরিত মিসকীনকে অতঃপর তাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া, যারা ঈমান আনে এবং পরস্পরকে উপদেশ দেয় সবরের ও উপদেশ দেয় দয়ার। তারাই সৌভাগ্যশালী। [সুরা বা’লাদ - ৯০:১১-১৮]
তার মানে দাঁড়ালো দ্বীনের পথ বা ধর্মের ঘাটির মানে হলো আপাদমস্তক জোব্বা পরা, কপালে নামাজ পড়ে দাগ ফেলে দেওয়া, খেঁজুর খাওয়া, টাখনুর উপরে প্যান্ট পরা, আরবিতে কথা বলা, মেসওয়াক করা, আতর মাখা, আরবীয় পোশাক পরিধান করা বলতে আমরা যেই বিশ্বাস করি তার সাথে কোরআনের দ্বীনের পথের মিল নাই !
তো আল্লাহর দৃষ্টিতে দ্বীনের পথটা কি ? সেই পথ হলো মানবসেবা, অভাবীকে খাবার দেওয়া, মানুষকে সহযোগিতা করা, ধৈর্য ধরা, রাগ না করা, মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল হওয়া।
সৎকর্ম কি ? আসুন দেখি,
সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণে র উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্নীয়-স্ব জন, এতীম-মিসকীন , মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। আর যারা সালাত (আল্লাহর নিয়ম মেনে চলা) প্রতিষ্ঠা করে, পরিশুদ্ধতা অর্জন করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই ধার্মিক/পরহেযগার। [সুরা বাকারা - ২:১৭৭]
দান করার লিস্টটা একটু খেয়াল করেন। সোয়াবের আশায় মসজিদ মাদরাসায় আর মোল্লাদের অকাতরে দান করছেন ? এদের নামই নাই আল্লাহর লিস্টে ! ভুল নাম্বারে বিকাশে টাকা পাঠালে এর যেমন কোন ফায়দা নাই তেমনি আল্লাহর নির্দেশিত পথ ব্যাতিত অন্য কোথায় দান করলে তারও অবস্থা একই। নিজের বাবা মাকে বৃদ্ধাশ্রমে ফেলে রেখে মসজিদ মাদরাসা বানাচ্ছেন; কোন লাভ নাই ! আত্মীয়দের একটু খোঁজও নেন না, কিন্তু হুজুরকে শুক্রবারে দাওয়াত দিয়ে মাংস মিঠাই খাওয়াচ্ছেন, হুজুর পরকালে পার করে নিয়ে যাবে এই আশায়...হা হা, পরীক্ষায় কমন পরা তো দূরের কথা সিলেবাসেই নাই !
কোরআনের শিক্ষার থেকে কতো যোজন দূরে যেয়ে এখন পোশাকি শিরকী বিশ্বাসে লিপ্ত হয়ে আজওয়া খেঁজুর খেয়ে জান্নাতের টিকেট কেটে ফেলছি আমরা
কোরআন বলছে মানুষকে ভালোবাসার কথা, অকাতরে দান করার কথা, ধৈর্যের কথা, প্রতিজ্ঞা বাস্তবায়ন করার কথা, মানুষকে সুপরামর্শ দেয়ার কথা, এগুলোই আল্লাহর কাছে সত্যিকারের "দ্বীনের পথ" অথচ আমরা ব্যস্ত দাঁড়ির সাইজ আর টুপির নকশা দেখে জান্নাতে যাইতে !
আসুন দ্বীনের পথ নিয়ে আরো কোরআন থেকে জেনে নিই,
আপনি কি দেখেছেন তাকে, যে বিচারদিবসকে মিথ্যা বলে? [সুরা মাউন - ১০৭:১]
সূরা মাউনের প্রথম আয়াতের অনুবাদ, বিদ্দিন (بِالدِّينِ ) এর অনুবাদ করেছেন বিচার দিবস, কিন্তু بِالدِّينِ এর অর্থ হলো দ্বীন বা জীবনব্যবস্থা। অন্য আয়াতের অনুবাদ দেখলেও দেখবেন এই দ্বীনের অর্থ কি করা হইছে।
তার মানে দাঁড়ালো সূরা মাউনে আল্লাহ বলেছেন
আপনি কি দেখেছেন তাকে, যে বিচারদিবসকে মিথ্যা বলে? [সুরা মাউন - ১০৭:১]
এবারে আসেন পরের হিসাবে,
আল্লাহ বলছেন আপনি কি দেখেছেন তাকে যে দ্বীন বা জীবনব্যবস্থাকে অস্বীকার করে।
আল্লাহ এর পরের আয়াতগুলোতে কি কি কাজ করলে দ্বীন অস্বীকার করা হয় এর একটা লিস্ট দিয়েছেন।
আসুন দেখি কি সেগুলো,
সে সেই ব্যক্তি, যে এতীমকে গলা ধাক্কা দেয় [সুরা মাউন - ১০৭:২]
এবং মিসকীনকে অন্ন দিতে উৎসাহিত করে না। [সুরা মাউন - ১০৭:৩]
অতএব দুর্ভোগ সেসব অনুসরণকারীর, [সুরা মাউন - ১০৭:৪]
যারা তাদের দায়িত্ব সম্বন্ধে বে-খবর; [সুরা মাউন - ১০৭:৫]
যারা লোক-দেখানোর জন্য করে [সুরা মাউন - ১০৭:৬]
এবং নিত্য ব্যবহার্য্য বস্তু অন্যকে দেয় না। [সুরা মাউন - ১০৭:৭]
তাইলে দেখা যাচ্ছে মিসকীনকে দান না করা, এতিমদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা, প্রতিবেশীদেরকে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র না দেয়াটা আল্লাহর কাছে তার দ্বীন অস্বীকার করার ব্যাপার !
এই মানবীয় গুণের সমন্বয়েই আল্লাহর প্রেরিত ইসলাম। যা মোল্লারা আজকে খেঁজুর, দাঁড়ি, টুপি, জুব্বা, মিসওয়াক এসবে নিয়ে গেছে !!
প্রচলিত ভাবে দ্বীন অস্বীকার মানে যে দাঁড়ি রাখে না, টাখনুর উপরে প্যান্ট পরে না, আরবীয় জ্বালানি তৈলাক্ত কালচার পালন করে তারা অন্যদিকে আল্লাহর দৃষ্টিতে কারা সেই দ্বীন অস্বীকারকারী মিলিয়ে দেখুন।
কোরআনে আলোকে এর একটি কাজও মানুষের কোন কাজে লাগবে না। আপনি ৫০০ ওয়াক্ত নামাজ পড়লে বা পাঁচ হাত দাড়ি রাখলেও আপনার প্রতিবেশীর কিচ্ছু যায় আসে না ! আপনার উত্তম চরিত্রই আসল ও দানশীলতা পরোপকারই আসল(সূরা মাউন)। সৎকর্মও এটাই(২:১৭৭), শুধু হড়বড় করে মসজিদে যেয়ে আল্লাহর কাছে হাজিরা দেয়া না। বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের স্রষ্টার কারো মুখের গুণকীর্তন শোনার জন্য বসে থাকার দরকার নাই। মানুষ ও অন্যান্য সৃষ্টির সাথে আপনি কতোটা সদয় ও সৎ সেটাই আল্লাহ দেখতে চান।
ইসলাম মানতে হলে এসব মানবীয় গুণ অর্জন অত্যাবশক। আপনার আরবীয় লেবাসের নাম ইসলাম না, পিসলাম।
প্রচলিত কোরআন বিরোধী ইসলামে কতো ধরণের অফার,
সারাজীবন যাই করেন না করেন একবার হজ্জ করলে নিষ্পাপ, শুক্রবার জুমার নামাজ পড়লে নিষ্পাপ, শবই বরাতে নামাজ পড়ে মাফ চাইলে নিষ্পাপ, ২৭ রমজান শবই কদরে নামাজ পড়লে ৮৩ বছরের ইবাদত একবারেই হয়ে যায় - একজীবনের জন্য যা যথেষ্ট, সারা জীবন যা-ই করেন শেষ বয়সে দাড়ি রেখে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামায়াতবদ্ধ হয়ে আদায় করলে, আর মাঝে মাঝে নামাজের জন্য কিছু মানুষকে ডাকলে নিষ্পাপ। সুতরাং যেভাবে খুশি চলেন, যা ইচ্ছা করেন, নিষ্পাপ হওয়ার অসংখ্য দুয়ার খোলা রয়েছে। জান্নাত আপনার হাতের মুঠোয়!
আহা ! এতো অফার থাকলে মানুষের মানবিক চরিত্রাবলীর কি কোন দরকার হয় ? আকাম কুকাম করে যেয়ে কালো পাথরে চুম্মা দিয়ে ফকফকা ক্লিয়ার মুমিনবান্দা হওয়া যায় ! কি দরকার আর তাহলে এতিমের সম্পদ লুট করা থেকে বিরত থাকার, কি দরকার মানুষের সাথে বাজে ব্যবহার না করার, মুশকিল আসানের জন্য তো নানা তরিকা আছেই !
ধার্মিকের এপিঠ-ওপিঠ
প্রচলিত বিশ্বাস মোতাবেক একজন মুসলিম ধার্মিক ব্যক্তি যিনি-
একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম , তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণেও নামাজ কাজা করবেন না । যত দীর্ঘ যথাক্রমে দিনই হোক কেন রোজা ভাঙবেন না । লাখ টাকা দিলেও শূকরের মাংস মদ আর সুদ খাবেন না । সামর্থ্য থাকলে একাধিকবার হজ করবেন, ওমরা করবেন । রাত জেগে তাসবিহ-তাহলিল কোরআন তেলাওয়াত করবেন (অর্থ না বুঝেই) । দাড়ি, টুপি পাঞ্জাবী বা হিজাব তো অবশ্যই । মসজিদের জন্য মাদ্রাসার জন্য মুক্ত হস্তে দান করবেন ।
আরেক ভাবে দেখা যাক বিষয়টা (কোরআনের আলোকে)
একজন মুসলমান মাত্রই সে জীবন-মৃত্যুর মাঝখানেও মিথ্যা কথা বলে না । না খেয়ে মারা গেলেও চুরি করে না । প্রতারণা করে না । আমানতের খেয়ানত করেনা । কোন অবস্থাতেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে না । মানুষের অনুপস্থিতিতে তার দোষ ত্রুটি নিয়ে কথা বলে না । কারো নামে মিথ্যাচার করে না । ব্যবসায় অনিয়ম করে না, মজুতদারী, জালিয়াতি, ভেজাল করে না । অহংকার, হিংসা, লোভ মুক্ত । যা আছে তাতেই সন্তুষ্ট । অসহায় বিপদগ্রস্ত যেকেউ তার কাছে গেলে খালি হাতে ফিরবে না । চরম শত্রুরও অমঙ্গল কামনা করে না ।
হ্যাঁ, এই দ্বিতীয়টার নামই ইসলাম, আল্লাহর ইসলাম, কোরআনের ইসলাম। কোরআনের শিক্ষা এটাই।
আমার আপনার নামাজে কার কি আসে যায় ! আমি ৫০০ ওয়াক্ত নামাজ পড়লে আপনার কি লাভ ! আমি এক হাত লম্বা দাঁড়ি রাখলে এলাকার রিকশাচালক মজিদ মিয়ার কি আসে যায় ? এসবের কোন সামাজিক প্রভাব নাই। অথচ এইগুলোই এখন ইসলামের নাম দিয়ে সমাজে চালানো হচ্ছে।
তেলের মূল্য বৃদ্ধির এই সময়টায় টিভিতে দেখলাম অনেক "সুন্নতী লেবাস" ধারী ব্যক্তিরা ধরা খেয়েছেন তেল মজুদ ও বেশী দামে বিক্রির কারণে ! আহা !! এই ফেক লেবাসী ইসলাম কিভাবে কোরআনে থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে আমাদেরকে ! একজন প্রকৃত মুসলিম যে কোরআন অনুসরণ করে শুধু, সে জানে একটা কওমকে আল্লাহ আযাব দিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন শুধুমাত্র বেঁচাকেনায় ২ নাম্বারি করার জন্য ! সেসব মানলে আজকে বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম নীতিশীল ও মানবিক দেশ হতো !
এই হলো আল্লাহর ইসলাম ও মোল্লার পিসলামের পার্থক্য
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই মে, ২০২২ দুপুর ২:০৩
রাজীব নুর বলেছেন: ইবলিশ কে কখনও দেখেছেন? ফেরেশতাকে কখনও দেখেছেন? জ্বীনকে দেখেছেনে? যে জিনিস নাই সেটা দেখবেন কি করে? এখন নিশ্চয়ই আপনি ভাবছেন আমি 'নাস্তিক'। শুনুন, দুনিয়া চলে লজিকের উপর। লজিকের বাইরে কিচ্ছু নাই। আপনি কেন লজিকের বাইরে চিন্তা করছেন? প্রচুর পড়াশোনা করুণ। নিজের মনের ভুল গুলো শুধরে যাবে। কুসংস্কার গুলো বের হয়ে যাবে। আর কতকাল অন্ধ বিশ্বাস নিয়ে থাকবেন? নিজের মেধা খাটান। বিবেকটাকে জাগ্রত করুন।
একসময় মানুষ জ্ঞান বিজ্ঞানে উন্নত ছিলো না। তখন তাঁরা ইবলিশ, ফেরেশতা ইত্যাদি অদেখা বস্তু গুলোকে বিশ্বাস করতো। এখন মানুষ অন্ধকার যুগে নেই। এখন মানুষ শুধু বিশ্বাস করে না। প্রমান চায়। বিশ্বাসের দিন শেষ। অযোক্তিক কিছু মানুষ মানে না। সেই দিন কি আর আছে? বহু আগে যারা এসব ধর্মীয় গ্রন্থ লিখেছে, তাঁরা কোনো দিনও ভাবতে পারেনি মানুষ জ্ঞান বিজ্ঞানে এত উন্নত হবে। ধর্মীয় লোকগুলো কোনঠাসা হয়ে গেছে। তাদের ইনকাম কমে গেছে। জ্ঞানের অভাবে মানুষ কুসংস্কার বিশ্বাস করে।