![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুনীর সাহেব অফিস থেকে বের হয়ে একমাত্র মেয়েকে স্কুল থেকে আনার জন্য পাজেরো চড়ে স্কুলে যাচ্ছিলেন। পথে...
- কি ড্রাইভার, আবার কি অইলো? জটলা কিসের?
- কি জানি স্যার। মনে হয় রাস্তা বন্ধ কইরা সাপের খেলা দেখাইতেসে!
- কি গাঁইয়া গাঁইয়া কথা কও! নাইমা গিয়া দেইখা আসো। নাহ, এই সরকাররে নিয়া আর পারা গেল না!
একটু পর ড্রাইভার হাঁপাতে হাঁপাতে এসে কইলো..
- অনেক সাংঘাতিক, অনেক অনেক সাংঘাতিক স্যার..
- এত সাংবাদিক এখানে কি করে? ভিআইপি মোভমেন্ট আছে নাকি?
- সাংবাদিক না স্যার। মারাত্মক সাংঘাতিক। কোপাইতেসে স্যার কোপাইতেসে..
- কি বল? ইনটারেস্টিং তো। দাঁড়াও দেখে আসি। কোপা শামসু কোপা হা হা..
- চলেন স্যার আমিও যাই। মাইয়াটারে দেখি উদ্ধার করা যায় কিনা।
- মাইয়া নাকি? ইয়ে.. বয়স টয়স কত হবে, অনুমান করতে পারছো? শাড়ি পড়া নাকি?
- বয়স বুঝতে পারি নাই স্যার। শাড়িমাড়ি বুঝি নাই, দূর থেকে সব লাল দেখা যাইতেসে..
- লাল শাড়ি! ধুর হারামি, আগে কইবি না! কি জিনিষ মিস করলাম। জলদি চল জলদি!!
মুনির সাহেব জটলা ঠেলে সামনে গেলেন। স্মার্টফোন আগেই ভিডিও মুডে অন করে রেখেছিলেন। তিরিশ চল্লিশ গজ দূরে রক্তাক্ত একটা কিশোরি মেয়ে কাটা মুরগির মত দফাদফি করতেছে। "বাবা, বাবা গো আমারে বাচাও বাবা"। গলাফাটা চিৎকার মেয়েটির। একটা বখাটে উপর্যপুরি ছুরি চালাচ্ছে মুখে বুকে।
মুনির সাহেব অন্য সবার মত দূর থেকে ঘটনার নিখুঁত ভিডিও করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। কোপ দেয়ার মুহুর্তগুলো জুম করার চেষ্টা করছে। মেয়ের শরীরের উলঙ্গ অংশগুলো বার বার জুমে আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হচ্ছেন, পরিষ্কার না। লাল রক্তাক্ত। মুখ তো বোঝাই যাচ্ছে না। ধুর, ভিডিওটা ভাল হল না। গতবারেরটার মত ফেইসবুকে হিট নাও হতে পারে
সন্ত্রাসী মোটর সাইকেলে করে বাংলা সিনেমার ভিলেনের মত অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে করতে চলে গেল। এই দিকে পুলিশের গাড়ির পঁ পঁ শব্দ আস্তে আস্তে জোরালো হচ্ছে। ড্রাইভার বলল, স্যার চলেন আমাদের গাড়িটা দিয়ে মেয়েটারে হসপিটাল নিয়ে যাই। ঐ যে, মনে হচ্ছে এখনও নড়ছে, মারা যায় নাই। তাড়াতাড়ি হসপিটাল নিতে পারলে বেঁচেও যেতে পারে, আহারে। মুনীর সাহেব ড্রাইভারকে চোখ রাঙিয়ে বলল, ওগুলো পুলিশের কাজ। বেশি মানবদরদী হতে যেওনা। নিজেও ফাঁসবা, আমারেও ফাঁসাইবা। চল চল এমনেই দেরী হয়ে গেছে, জেরিনের স্কুল ছুটি হয়ে গেছে আরো আধা ঘন্টা আগে। এতক্ষণে নিশ্চয়ই স্কুল গেইটে দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়া আমার চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করতেছে মাইয়াটা।
মুনির সাহেব গাড়িতে উঠেই প্রফুল্লচিত্তে বিড়বিড় করতে লাগল। যাক, এই ভিডিও টপ হিট হবেই হবে। এক্ষুণি আপলোড করতে হবে। আমার আগে আর কোন হালায় দেবে..হুম? কার মুখ দেখে যে আজ বের হইছিলাম..ও টমি, টমি। কুত্তাটার মুখ দেখে বাইর হইলেই দিনটা ভাল যায়। জয়বাবা টমি। হুমম.. ভিডিওর শিরোনাম কি দেয়া যায়! পাইছি... "কুকুর শেয়ালের মত খুন হচ্ছে মানুষ, সরকার ব্যর্থ।"
- কি বল ড্রাইভার, হেডিংটা জোশ হইছে না?
- এখানে সরকার আইল ক্যামনে স্যার?
- ওই মিয়া, সরকার কি জিনিষ বুঝো? হুদাই কথার মধ্যে বাম হাত দাও।
- মাইয়াডারে মারার সময় ছিলাম তো স্যার আমি আপনি আমরা, সরকার ছিলনা
- কথা কম, দেইখা গাড়ি চালাও
- একটা পোলায় কোপাইলো, আর আমরা এতজন লোক দুধ-আবালের মত খাড়াইয়া খাড়াইয়া দেখলাম
- ওই ওই ব্যাটা, দুধ-আবাল কি রে?
- দুধ-আবালও চিনেন না স্যার? ছোটবেলায় ষাড়ের বিচি ফেলে দিলে বড় হলে এদের দুধ-আবাল কয় (মনে মনে, এই ধরেন আপ্নেরা)
স্কুল গেইটে দারোয়ান কইলো, জেরিন অনেক্ষণ অপেক্ষা করে হেটে চলে গেছে বাসায়। মুনীর সাহেবের মাথায় রক্ত উঠে গেল। রাস্তা ঘাটের যে অবস্থা, কোপাকুপি খুনাখুনি, আর মেয়েটা কিনা বস্তির মেয়ের মত হেটে চলে গেল, শিট। গাড়ি বাসার দিকে যাচ্ছে। মুনীর সাহেব ফেইসবুক চেক কের দেখলেন, ভিডিওটি ইতিমধ্যে এক হাজারের উপরে শেয়ার হয়ে গেছে। যাহ শালার... একদিনেই সেলিব্রিটি!
বাসার সামনে গাড়ি আসতেই দারোয়ান দোড়াইয়া আসলো...
- ম্যাম সাব দোড়াইতে দোড়াইতে বাইর হইয়া গেসে স্যার
- কেন কেন কি হইছে? কই গেছে?
- ফোন আইছিল, জেরিনরে রাস্তায় কোন পোলা কোপাইছে.. হাসপাতাল নিতে নিতে মারা গেসে
- (বুকে হাত দিয়ে রাস্তায় পড়ে গেলেন, আর উঠলেন না মুনীর সাহেব)
০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৮
মো: মহসীন বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ২:৩৯
মোটা ফ্রেমের চশমা বলেছেন: টুইস্টটা ভালোই লাগলো।