![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ফরহাদ বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়ার জন্য তাদের নিয়মিত আড্ডাখানা সুরুজ মামার টং দোকানে এসেছে। বসার মূহুর্তেই তার ফোনে কল বেজে উঠলো। কলারের নাম সোনা বউ। সোনা বউ নামের পাশে লাল রঙের লাভ ইমুজি।
তার একমাত্র আপন গালফ্রেন্ড তারিনের নাম্বার এটা। তারিন ঢাকার বাইরের স্বনামধন্য এক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। কল রিসিভ করলো ফরহাদ। ফোনের ওইপাশে উচ্ছ্বসিত গলার কথা শুনা গেলো, 'জানু, শুনতে পারছো? খুশির সংবাদ আছে।'
খুশির সংবাদের কথা শুনে হার্টবিট বেড়ে গেলো সেটা টের পেলো ফরহাদ। মেয়েটা ডেঞ্জারাস ধরণের খারাপ খবরকে বলে খুশির সংবাদ। এবার কী জানি বলে! ভয় ভয় লাগছে ফরহাদের।
ফরহাদকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তারিন আবার বললো,' ক্লাস বয়কট করেছিলাম আজকে। কালকের সকালের ট্রেনেই ঢাকা ফিরছি।'
ফরহাদ বললো, 'হঠাৎ! কোনো ঝামেলা হয়েছে?'
'হু। তুমি জানো না? দেশে করোনা ভাইরাস ছড়াচ্ছে। ৩১ তারিখ পর্যন্ত দিয়েছে, আমাদের বয়কটের ফল এটা। তুমি মহাকাশে থাকো নাকি? করোনা তে কতো মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে।মারা যাচ্ছে অনেকেই। এ সময় ক্লাস করে মরতে যাবো নাকি?হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। বুঝেছো?'
'হু বুঝেছি। তোমার পরিক্ষা কেমন হলো? নেক্সট কোন পরিক্ষা?
' আরে! পরিক্ষার কথা ছাড়ো। করোনার কারণে ছুটি হলো। এখন পরিক্ষা হবে নাকি?', ফরহাদকে কিছু বলতে না দিয়ে সে আবার বললো,' আমি ঢাকা এসে নেই তারপর দুজনে মিট করবো। আমাদের রেগুলার মিট করা রেস্টুরেন্টে। তারপর ঘুরাঘুরি হবে। অনেকদিন একসাথে ঘোরাঘুরি হয় না।'
'তুমি না মাত্র বললে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে?'
ফরহাদ কোনো রিপ্লাই পেলো না। ফোন রেখে দিয়েছে তারিন।
এতক্ষন ফোনে কথা বলায় ফরহাদ খেয়াল করে নি তার সাথের মানুষগুলোও করোনা নিয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করছে।
কাস্টমারের খাওয়া চায়ের কাপ একবার পানিতে ধুয়ে আবার নতুন করে কাপে চা ঢালতে ঢালতে সুরুজ মামা বললেন, 'করোনা মারাত্মক অসুখ। পরিষ্কার থাকাটা জরুরি। মানুষের সাথে ঘষাঘষি কম করলে এইটা ছড়াইবো কম।'
পাশে বসা বয়স্ক হারুন চাচা সিগারেটে একটা টান দিয়ে বললেন,'টিভি তে দেখলাম তোমগোর মতো জোয়ান পোলাপানদের কিচ্ছু হইবো না। যত সমস্যা আমার মতো বুড়াগুলার। একবার হইলে মরণ ছাড়া জামিন নাই।'
ফরহাদের বন্ধু এতক্ষণ ট্যুরের প্ল্যান করছিলো। সবার কাছ থেকে মতামত নিচ্ছিলো সাজেক,কক্সবাজার নাকি সিলেটের কোনো সুন্দর জায়গায় যাবে? আর বাজেট কম হলে কিশোরগঞ্জের নিকলী হাওড়।
সে এখন করোনা নিয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় যোগ দিয়েছে,' মানুষ তো খুব ইতর! বুঝলেন চাচা? এটা নিয়ে কারো মধ্যে কোনো সিরিয়াসনেস দেখলাম না। চীন, ইতালি, ইরানে মশার মতো মানুষ মারা যাচ্ছে। অনেক দেশেই এখন করোনা ঢুকে পরেছে। আমাদের দেশে ভালো করে আসলে পিপড়ার মতো মানুষ মরবে।'
মাস্ক খুলে হাত দিয়ে না ঢেকেই সবার সামনে ফরহাদের আরেক বন্ধু ইমন হাচি দিয়ে বললো, 'স্পেনে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছেই। লা লিগা স্থগিত। মেসির খেলা দেখা ছাড়া এতোদিন বাচবো কিভাবে?'
পাশে বসা রোনালদো ফ্যান রাজুও যোগ দিলো। ইতালির অবস্থা সম্পর্কে অনেক কিছু বড়বড় করে বললো। রোনালদো নাকি করোনা আক্রান্তদের জন্য নিজের হোটেলকে বিনামূল্যে করোনা চিকিৎসার হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।
একথা ইমন মানলো না। এটা মিথ্যা, গুজব প্রমাণিত করার চেষ্টা শুরু করে দিলো।
সুরুজ মামার দোকানের টিভিতে দেখাচ্ছে। করোনা সন্দেহভাজন একজন চেক করার আগেই ভয়ে এয়ারপোর্ট থেকে পালিয়ে গিয়েছে। সাংবাদিকরা হাসপাতালের সামনে ভিড় করে করোনা সম্পর্কে নিউজ দিচ্ছে।
ফরহাদের ফোনে আবার কল এসেছে। এখন ফোন করেছে তার মা। তার মা কে ফরহাদের মামার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সকাল থেকে পাগল করে তুলছে ফরহাদকে। তার মামা গতকাল ইতালি থেকে দেশে ফিরেছে। হোম কোয়ারেন্টাইনে আছে ১৫ দিনের জন্য। মা কে অনেক বুঝানোর পরেও তিনি বুঝলেন না। তিনি যাবেনই নিজের ভাইকে দেখতে। তাই বন্ধুদের থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় চলে গেলো সে।
ফরহাদ এখন তার মামার বাড়িতে। তার মামা বাসায় নেই। ঘরের ভেতরে তার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো, তাই আশেপাশে ঘুরতে বের হয়েছে। ফরহাদের মামার শশুড় বাড়ির লোকজনরাও এসেছে। তাছাড়া এই এলাকারও অনেক মানুষ ফরহাদের মামাকে দেখতে ভিড় করেছে বাসায়।
ভাইয়ের শশুড় বাড়ির লোকদের দেখে ফরহাদের মা ফরহাদের কানের পাশে আসতে করে বললেন,' দেখ দেখ শয়তান গুলা চলে এসেছে। তোর মামা কি বিদেশ থেকে কী আনছে দেখার জন্য। আজকে সব নিয়ে যাবে।'
ফরহাদ বললো,' তুমিও কী এটার জন্যই এসেছো? তোমার ভাই কী কী নিয়ে আসছে দেখার জন্য। তার বউ বাপের বাড়ি চালান করে দেয় কিনা সে ভয়ে?'
ফরহাদের দিকে অগ্নিদৃষ্টি দিলো তার মা। ফরহাদ সে দৃষ্টি অগ্রাহ্য করে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো।
.
.
- সায়েল মুহাম্মদ
©somewhere in net ltd.