![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সবার মত গল্প কবিতা দিয়েই লেখালেখির শুরু, মুলত লোক সাহিত্যের বিষয়ক লেখা লিখে আমাদের লোকসাহিত্যের জন্য করতে চেয়েছি। বেশকিছু লেখা রয়েছে এই বিষয়ে। তবে সবচে বেশী প্রসার ঘটেছে ই কমার্স বিষয়ক লেখাগুলো। তবে দেশ সমাজ ও রাস্ট্র নিয়ে ইতিবাচক ও গঠনমূলক কিছু লিখতে চাই।
লোক সাহিত্য বিষয়ক প্রবন্ধ
বাংলার লোকজ খেলাধুলা
জাহাঙ্গীর আলম শোভন
জন্মের পর একটি মানব শিশু যতটা অসহায় থাকে ততটা অসহায় মনে হয় প্রাণীকুলের আর কোন শাবকই থাকে না। একটি ছাগশিশু কিংবা বাছুর কিছুক্ষণ পরপরই দৌড়-ঝাপ শুষ্প করে। সবুজ পৃথিবীর কৌতূহল জাগানিয়া পকৃতি হয় তার খেলার সাথী। এক পশুর সাথে অন্য পশুর কিয়ৎ পার্থক্য থাকলেও বলা চলে তুলনামূলক স্বল্প সময়ের মাঝে অন্য পশুপাখির নবজাতকের তুলনায় মানব জাতকের পরিপূর্ণতা খুব মন্থর গতিতে আসে। একটি মানব শিশু দুই পায়ে হাঁটতে প্রায় এক বছর, কথা বলা শিখতে প্রায় তিন বছর, এমনকি ভালো-মন্দ বোধ হতে কয়েক বছর সময় লাগে। সময়ের এই ব্যপ্তিতে মাতস্পর্শই শিশুটির বিকাশের একমাত্র অবল¤বন হয়ে দাঁড়ায়। এই সময়ে সযতœ মমতায় পালিত হয়ে ধীরে ধীরে একটি শিশু পরিপূর্ণতার পথ ধরে। হয়তো মানব জাতকের মানসিক এবং দৈহিক বিকাশের জন্যে দীর্ঘ সময়ব্যাপী প্রক্রিয়া আবশ্যক, প্রক্রিয়াটি সময় সাপেক্ষ বিধায় মানব সন্তান অন্য যে কোনো প্রাণীর চেয়ে বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন। মানসিক এবং দৈহিক বিকাশের পর্যায়টি বৈচিত্রে ভরা, কৌতূহল উদ্দীপক, বহুমুখী এবং সু-সমনি^ত। শিশুর চোখে ধারণকৃত চিত্র, কর্ণে পৌঁছা শব্দ, পার্থিব অনুভূতি, ক্ষুধা-ত™£ড়–া, ব্যথা-আরাম সব কিছুর অভিজ্ঞতাগুলো সঞ্চিত ও সঞ্জিত হয়ে পৃথিবী সম্পর্কে তার ধারণাকে পরিপুষ্ট করে।
সম্পূর্ণরুপে পূর্ণতা পেতে অর্থাৎ একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ হতে সময় লাগে আঠারো থেকে পঁচিশ বছর। এই সুদীর্ঘকালব্যাপী মানব সন্তানের জীবনের পূর্ণতার ক্ষেত্রে প্রকৃুত প্রদত্ত কতিপয় আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে। যা জীবনের শেকড়ের সাথে খনিত। মায়ের নির্মল হাসি শিশুটিকে নিরাপত্তার আশ^াস দেয়। সকলের আদর তার বিশ^াস জাগিয়ে তোলে। পৃথিবীর প্রতিকূলতা তার মাঝে সহনশীলতা বাড়ায় এমনি করে সে যখন বিকাশের প্রাথমিক স্তরটি ডিঙ্গিয়ে গুটি গুটি পায়ে বাড়ির ছোট্ট আঙ্গিনাটা পাড়ি দিতে শিখে তখন এই সুন্দর বসুন্ধরা তার খেলার মাঠ। অসংখ্য উপাদান তার সঙ্গী। এক অফুরন্ত আনন্দের জগতে প্রবেশ করে সে। কখনো আপন মনে স্পন স্পন, কখনো ইড়ে–মত ছুটোছুটি আবার কখনো এটা সেটাবা খেলনা নিয়ে নাড়াচাড়া। মূলত: এভাবেই খেলাধুলার জন্ম। সারাবিশ^ব্যাপী এমনি করে অসংখ্য ক্রীড়া প্রদর্শনী হয় প্রতিনিয়ত। কোনো কোনো খেলার জনপ্রিয়তা সে খেলাকে আন্তর্জাতিকতা দিয়েছে। কোনো খেলা সঠিক চর্চা ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে হয়েছে বিলীন। এখনো বাংলার গাঁয়ের বাঁকে বাঁকে রয়েছে মজাদার, বুদ্ধি দিপ্ত, শরীর এবং মনের বিকাশ উপযোগী অনেক খেলা।
খেলা যে শরীর এবং মনের জন্য কতটা টনিকত্ব রাখে সে কথা যতদিন আসছে, বিজ্ঞানের ততই সায় দিচ্ছে। ক্রীড়া নৈপুন্য মানুষের একটি বিশেষ গুণ। অলিম্পিয়া মন্দিরের ক্রীড়ানুষ্ঠান বৈশি^ক রুপ পেয়েছে। সে তুলনায় আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যের প্রতীক গ্রামীণ খেলাগুলোকে আমরা ক্রমশ: কোণঠাসা করে ফেলছি। অথচ আমাদের খেলাগুলোর চিত্তাকর্ষকতা ও বৈচিত্র ঢের বেশি। অভাব শুধু উদ্যোগের।
শুধুমাত্র বিভিন্ন খেলার কথাই যদি এ নিবন্ধের বিষয়বস্তু হয় তবে তা ব্যাপক হতো। আজ এতে সে খেলাগুলোর কথা আসবে যেগুলো বাংলার প্রকৃত জনের খেলা। তাদের নির্মল আনন্দের উৎস। সমৃদ্ধশালী ও নিরোগ জীবনের উপাদান এবং ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির গৌরব গাঁথা। গাঁয়ের মাঠ-ঘাট প্রান্তরে বেড়ে ওঠা মানুষ, পল্লীর ধুলাবালি, কাঁদমাখা শিশু, গ্রামীণ মুক্ত প্রক™£তির খেলার সাথী। প্রান্ত জনদের কাছে এসব খেলার কথা নিতান্তই সাধারণ শোনাবে। শহুরে ইটকাঠ পাথরে জীবনে মনে হবে এ এক অন্য জগৎ।
আসলে কি তাই। আমাদের এই বাংলা গাঁয়ের পরতে পরতে বঙ্গ জননীর শরীরের ভাঁজে ভাঁজে যে সাহিত্যিক রস সঞ্চিত সে সাংস্কৃতিক সমúদ গচ্ছিত যে ক্রীড়া ঐতিহ্য সুলালিত তার মতো নিটোল বিনোদনের প্রত্যক্ষ অনুভূতি আজকের প্রযুক্তি বা মিডিয়ায় কতটা জোগান দিতে পারে।
বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কাবাডি। যার ঐতিহ্য আজ বিলীয়মান। এখন ঢাকঢোল পিটিয়ে গ্রামান্তরের লোক জড়ো হয়ে হাডুডু খেলার আয়োজন করতে কদাচিৎ শোনা যায়। অথচ এমন একটি আনন্দদায়ক ক্রীড়া আমাদের জাতীয় ক্রীড়া জীবনের অংশ হওয়া উচিত বৈ কি? এক নিশ^াসে কবাডি কাবাড্ িবোল ধরে নিশ^াসের স্থায়ীত্বের পাশাপাশি বল ও কৌশলের পরীক্ষা দিতে হয় অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়কে। বুদ্ধিমত্তা ও সাহসও লাগে।
ডাঙগুলির খেলার মতো একটি সুসজ্জিত বৈজ্ঞানিক খেলাও আমরা ভুলতে বসেছি। নিয়মের পরিপূর্ণ ধাবাহিকতা, নৈপুণ্যের সুযোগ।আজ এ খেলার জন্ম যদি ইউরোপে হতো হয়তো সেটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তো।এই খেলার সাথে ক্রিকেটওে মিল রয়েছে। প্রতিদ্বন্দি¡তায় পূর্ণ উত্তেজনায় ভরা এমন একটি খেলা ডাঙগুলি। এই ডাংগুলি খেলাটির পরিকল্পিত ক্রীড়া-সরঞ্জাম এমনকি খেলার সাথে রয়েছে জীবনের দারুন মিল। খেলার মাধ্যমে ফুটে ওঠা জীবনের রুপক প্রকাশ আমরা কেমন করে ভুলি। বড় একটি কাঠি গর্তে রাখা একটি ছোট কাঠিকে দূরে নিক্ষেপ করে। তা ধরার পর্ব থাকে। আবার শুরু হয়ে কাটি দিয়ে ছড়িকে দূরে নেয়ার প্রতিযোগিতা, সবল, দুর্বলের এমন প্রতীক উপস্থাপন বুঝি বাংলায়ই সম্ভব! আবার ছন্দে ছন্দে গ্রন্থিত এ খেলায় ধারা বর্ণনা মনের ছন্দিত গৃহ কোণে সুরের আবহ তৈরি করে বিলিয়ে দেয় অকত্রিম বিনোদন এবং বিশুদ্ধ মানসিক প্রশান্তি। তেরি, ছুরি, চম্পা, জেক, জেবলক, জান এগুলি এই খেলার নামতা বা ইউনিট।
শারীরিক কসরত, উত্তেজনাপূর্ণ, পরিকল্পিত, নন্দিত এবং দর্শক মোহিত একটি খেলার নাম দাড়িয়াবান্ধা। কেমন সুন্দর পরিকল্পিত দাগ কাটা ঘরে একজন একজন করে খেলোয়াড় বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়দের ফাঁকি দিয়ে পার হতে পারলেই জয়। দ্রুত চলন পারদর্শী ও সবল ব্যক্তি এ ক্রীড়ায় পারদর্শিতা দেখাতে পারে। যদি জানা যেতো খেলাটি কে চালু করছেন তাহলে তার প্রতিভার স্বীকৃতি নিশ্চিত পাপ্য ছিলো তার।
ইচিং বিচিং খেলাটির ধরন আমোদপূর্ণ এবং দর্শনীয়। কে বলবে এটি সুন্দর খেলা নয়? দুই পাশে দুই জন বসে পা সামনে বাড়িয়ে একজনের পায়ের সাথে পা মিলিয়ে হাতের উপর হাত রাখা হয়। তার উপর দিয়ে লাফ দিয়ে পার হতে হয় অন্য খেলোয়াড়কে। এসব খেলা যারা খেলে তাদের আনন্দের সাথে কোনো আনন্দের তুলনা তো চলেই না বরঞ্চ যারা দেখে তাদের ভালো লাগা ও আনন্দ নির্মল ও খাঁটি।
হৈ চৈ হৈ হুলোড় আর অত্যানন্দ ভরা খুব একটি সাধারণ খেলা কানামাছি। কিন্তু বাঙালি মাত্রই জানেন যে গ্রাম বাংলায় এ খেলাটির আবেদন কতটুকু এবং এতে গাঁয়ের শিশুর কিশোররা কতটা বিনোদিত এবং ক্রীড়ামোদিত হয়। কানামাছ্রি মতো লুকোচুরি খেলায়ও খেলার আমেজ আর মজা এবং শিহরন কোনটারই কমতি নেই
তথ্যসূত্র: কাশফুল, সাহিত্যপত্রিকা।
©somewhere in net ltd.